Monday, April 2, 2018

হাবিজাবি - দুই হাজার



  • হাবিজাবি - প্রথম হাজার




    • তার সাথে এমন এমন জটিল জিনিস মানুষ বার করে ফেলেছে যার মাথা মুন্ডু কিছু নেই।  যেমন ধর্ম আর
      প্রেম।  এ নিয়ে তো কোটি কোটি লেখা হয়েছে, তবু তো সারাজীৱণ বই থেকে মুখ না তোলা ভ্যাবলা, বিয়ের জন্য মেয়েই পেলোনা।  এরকম হয়।  সময়ের কাজ সময়ে না করলে এরকমই হয়।  এই দেখোনা , সারা জীবন শুনে এলাম মাথা উঁচু করে হাঁটো , যখন ভুঁড়িটা বাড়লো তখন শুনতে হলো মাথা নিচু করে পা ধরার চেষ্টা করো।  তাই কোনো কিছুকেই বিশেষ পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে চলার নামই জীবন।  কি সহজে ডেফিনিশন দিয়ে দিলাম।  জ্ঞান দেওয়া খুব সোজা কিন্তু জ্ঞান মেনে চলা খুব কঠিন। যেমন ধরো , প্রচন্ড মুত পেয়েছে , এদিকে বৌ বাথরুমে।  এক ঘন্টার আগে বেরোবে না।  
      পরে থাকা বিয়ারের বোতলে মুতে, যদি কিচেন সিংকে গিয়ে ঢেলে দিয়ে আসি তাহলে কি আমি আনসিভিলাইজড বিস্ট।  মোটেই না।  তার জন্যই সেই জ্ঞানায়ুধ লোক গুলো স্থান-কাল-পাত্র নামক এক মোক্ষম অস্ত্র বার করেছেন।  সব কিছুকে এই দিয়ে বিচার করে সব ভুল গুলোকে ঠিকে পরিণত করা সম্ভবপর হয়ে দাঁড়ায়।  ঠিক যেমন কোনো কিছু না হলে ভগবান ইস দা বেস্ট ডাস্টবিন।  ঠিক সেরকমই সবকিছুকে স্থান কাল পাত্রে বিচার করলে সব কিছুকেই মনে হয়, না-না, হয়তো খুন করেছে কিন্তু আত্মরক্ষার জন্য করেছে।
      বাবা যদিও অন্য থিওরি নিয়ে বলে , সব কিছুকে পয়সা দিয়ে বিচার কর, সব ঠিক হয়ে যাবে। সেই বিধবা কেন নিরামিষ খায় সেটাও এই থিওরি দিয়ে পরিষ্কার এক্সপ্লেইন করা যাবে , কিন্তু আমি এই চিরন্তন উপমায় যাবো না।  তার থেকে বিচার করা যাক দোদোমা কেন দু বার ফাটে।  একবার নিচে , একবার উপরে।  পাশেও তো যেতে পারতো চকরির মতো।  কিন্তু না , একবার উপরে একবার নিচে।  তার কারণ একটাই,  পয়সা।  ধরো তুমি একটা শানবাঁধানো বারান্দায় তোমার বন্ধুবান্ধবদের সাথে বাজি ফাটাচ্ছ।  এখন ওরা যখন চরকি ফাটাচ্ছে , তখন ওরা তোমার লোকেশন পেনিট্রেট করছে।  তাতে
      তোমার কি লাভ হচ্ছে , ওই যে পাশের বাড়ির পেয়ারা গাছ যখন তাদের দেয়াল টপকে তোমার দিকে নুইয়ে পরে তখন তুমিও তার ফল টুক করে ঝেঁপে দাও।  ঠিক সেই ভাবেই তুমি এখানে চরকি না ফাটিয়েই তার আনন্দ পাচ্ছ।  কিন্তু তার বদলে তোমার জায়গা তুমি ওকে ছেড়ে দিচ্ছ।  মিউচুয়াল অ্যাডজাস্টমেন্ট।  কিন্তু তুমি যখন রকেট ফাটাচ্ছ তখন কিন্ত ওরা বিনা ইনভেস্ট করে শুধু স্থান আর কাল কে ইউটিলাইজ করে শুধু ঘাড় হেলিয়ে তোমার ইনভেস্টমেন্ট এর ফায়দা
      তুলছে।  এখন দোদোমা ব্যাপারটা তাই এক মধ্যপন্থা বার করেছে।  সেটা নিচেও ফাটছে তোমার এবং তোমার চারপাশের লোকেদের জন্য, আর ওপরেও ফাটছে , কিন্তু উপরে উঠে শুধু আওয়াজ করছে , যা কোনো রকম আনন্দ দিচ্ছে না।   ফাইনান্সিয়াল কনফিউশন।  এই গুবলেট পাকিয়ে দিয়েই পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ আজ দেবোত্তম।  মানুষকে কনফিউস করে দিলেই মানুষ আর কিছু ভাবতে পারেনা।  ভাবতে পারে হয়তো , কিন্তু ভাবতে চায়না।  কারণ ভাবলেই তার মনে হবে সে ভুল ভাবছে, আর তার থেকেই সৃষ্টি হয় নিজের প্রতি অবজ্ঞা।  এই অবজ্ঞাজড়িত মানুষ ভরসা করে অপরের চিন্তাভাবনার ওপর।
       আর তখনিই সময় আসে বেচার।  ঠিক এই  সময়টা ধরতে পারলেই যা ইচ্ছা বেচা যায়।  যেমন ধরুন আপনি গেছেন বৌ এর জন্য একটা শাড়ি কিনতে।  এনিভার্সারিতে গিফট দেবেন। জীবনে কখনো শাড়ি পরেও দেখেননি, যেহেতু পড়তে দেখেছেন এবং সময়মতো খুলেছেন।  যেহেতু হাতে নিয়েছেন , এবং চোখে দেখেছেন সেহেতু আপনার মনে হয়েছে আপনি কিনতে পারবেন।  কিন্তু যখন গিয়ে হাজির হলেন দোকানে তখন দেখলেন হাজার হাজার শাড়ি।  
      এবং যতই বড়োলোক হননা কেন , সব শাড়ি আপনার বাজেটে নেই।  কিন্তু একটা তো কিনতে হবে।  তাহলে আপনি দেখতে শুরু করলেন।  প্রথমেই দোকানদার আপনাকে জিজ্ঞেস করবে কি শাড়ি দেখাবো?  যদি বলেন মেয়েদের পড়ার শাড়ি তাহলে সমুদ্রে পেচ্ছাপ করছেন বলে লোকে ইগনোর মারবে। এটা আপনি জানেন।  মোটামুটি রিসার্চ করে কোটি কোটি শাড়ির নামের মধ্যে থেকে ভালো লেগেছে তাঁতের শাড়ি।  সহজ চয়েস।  ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছেন।  বাংলার তাঁতের শাড়ি ,
      কুটিরশিল্প।
       ভূগোলের বইতে অনেকবার মুখস্থ করতে হয়েছে।  যে মুহূর্তে আপনি বললেন তাঁতের শাড়ি,  দোকানদার বলে উঠলো , ও! কাজের লোককে দেবেন? ব্যাস সব গুবলেট হয়ে গেলো।  তাহলে কি বৌকে তাঁতের শাড়ি দেওয়া যাবে না।  ভ্যাবাচ্যাকা খাচ্ছেন, এই মুহূর্তে আবার দোকানদার বলে বসলো ,  ঢাকার তাঁত না এদেশের।  আপনি জানেন  ঢাকা একটা মেট্রোপলিটন আর শান্তিপুর একটা মফস্স্বল।  শান্তিপুর তাঁতের জন্য বিখ্যাত আর ঢাকা ভাষা শহীদের জন্য।  আপনি ব্যাকফুটে গিয়ে অপেক্ষা করে স্মার্ট হওয়ার চেষ্টা করবেন।  একবার মনে হবে দোকানদারের কাছেই জিজ্ঞেস করি। কিন্তু না , তার থেকে তাঁতের জায়গায়  সিল্ক বললেই ব্যাপারটার স্টাটাস কাজের লোকের থেকে বেড়ে যাবে। বলেই যখন ফেললেন।
       তখন দোকানদার আবার প্রশ্ন করবে , গিন্নির জন্য না মায়ের জন্য।  দুজনার বয়সের বিস্তর ফারাক থাকলেও যেহেতু দুজনে দুজনার শাড়ি পরে বলে এতকাল ভেবেছেন দুজনার শাড়ি সমান।  কিন্তু আসলে তা নয়।  তা এই দোকানদারের কথা থেকে স্পষ্ট।  আপনি কিন্তু তখনও লড়ে  যাচ্ছেন। কিন্তু টার্গেট অডিয়েন্স না জানলে ইভেন্ট ডিসাইড করা যায় না।  তাই বলেই ফেললেন আপনার বৌ এর জন্যই কিনছেন।  নেক্সট প্রশ্ন আপনি আশা করছেন যে বাজেট জিজ্ঞেস করবে।  কিন্তু আপনার মাথায় জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম থেকে ব্যাপারটা বুঝে নিয়ে দোকানদার আরো ঘুরিয়ে প্রশ্ন করলো , ‘বয়স কত? ’ মেয়েদের বয়স
      জিজ্ঞেস করলে লোকে খেপে যাবে বলে একটু পাল্টে দিয়ে বললো - জামদানি কিন্ত গাঢ় নীল বা লালে মানায় ভালো - নামাই? আপনি তখন সব দিক দিয়ে গুবলেট হয়ে আছেন।
       মানে মুরগি মারার আগে শিরদাঁড়ায় এক ঘা মারলে মুরগি প্যারালাইস হয়ে যায়।  তখন আপনার ঠিক সেরকম অবস্থা।  সেই অবস্থায় সাদা গদির সামনে ফেলে এবার আপনাকে কোপানো শুরু হলো।  এখন আর কথা নয় , একের পর এক শাড়ি এসে পড়তে লাগলো। নানা রং , নানা রূপ , নানা বুননের  সাথে ইতিহাস ভূগোল জ্যামিতি সব একসাথে আপনার সামনে এসে হাজির হলো।  যখন প্রচুর চয়েস এসে সামনে হাজির হয়, আপনি তখন ঘেঁটে ঘ হয়ে যান।  আর সেই মুহূর্তে দোকানদার মিষ্টি হেসে বলবে , ‘আপনি আমার কথা শুনুন , এটা নিয়ে যান।  বৌদি খুশি হয়ে যাবে।  আমরা এতকাল ধরে বৌদিদের খুশিই তো করে এসেছি। ’ সুস্থ মস্তিষ্কে সবিতা ভাবীর জায়গায় নিজের বৌকে বসাতে দেখে ফটাং করে আপনার রাগ হয়ে যেতে পারতো।  কিন্তু তখন তো আপনি আধমরা।  প্রফেশনাল এক্সিলেন্স দেখছেন।  ভয়ে ভয়ে দাম জিজ্ঞেস করে একটু দাম করার ইচ্ছা থাকলেও “একদর” বোর্ড দেখিয়ে দেওয়ায় আপনি একটু থামলেন।  কিন্তু বাজেট তখন ছাড়িয়ে কাটোয়া পৌঁছে গেছে।  কিন্তু আপনি কনফিউসড এবং  মৃত।  তাই হয়ে গেলো মুরগির ঝোল।  বাড়িতে  গিয়ে ভেবেছেন বাহবা পাবেন।  পেলেন  পয়সা খরচ করার জন্য উদোম ঝাড়।  এই ঝাড় জীবনে, মানে সারা জীবন  চলতে থাকে।  শুধু দাম্পত্যে না। আড়ায় পাড়ায় আস্তাকুঁড়ে।  জন্মেছেন ঝখন তখন ঝাড় খেতেই হবে।  কারণ ভুল আপনি করবেনই জীবনে।  জীবনে যে ভুল করে না সে নাকি জীবনে কোনো কিছু চেষ্টাই করেনি।



      -------------------২০০০----------------------


      No comments:

      Post a Comment