Friday, April 13, 2018

10) গল্পগাছা - একটা বাইকের জন্য




‘প্রত্যেক বছর কতগুলো করে লোক মারা যায় জানো, এই বাইক একসিডেন্টে?’
‘প্রত্যেক বছর কতগুলো লোক মারা যায় জানো যাদের বাইক নেই ? ‘ 
‘বলতে কি চাও? শোনো, আমি তোমার সাথে তর্ক করতে চাইনা।  তুমি জেতার জন্য ভুলভাল যুক্তি দিতে খুব পটু। ‘
‘যুক্তিটা মোটেও ভুলভাল নয়।  তুমি যদি তুলনা করে দেখো তাহলে বুঝতে পারবে রেশিওটা একদম বাইক কেনার পক্ষে’ 
‘এতো সুন্দর গাড়ি থাকতে তোমার কেন এতো বাইকের পেছনে টান? জীবনে তো বাইক চালাওনি। আজ কেন? ‘
‘সেই জন্যই তো কিনবো। তোমাকে পিছনে চাপিয়ে হাজার হাজার মাইল ড্রাইভ করবো। ‘ 
‘এই ঠান্ডাতে? আর শোনো, এই সব ন্যাকামো বিয়ের পর আর পোষায় না। ‘ 
‘বিয়ের পর আমি তো ঠান্ডা হয়ে যাইনি।  আর এখন যদি একটা বাইক কিনি তাহলে তোমার সমস্যা কোথায়। ‘
‘ সমস্যা অনেক।  এটা আমাদের দেশ নয়।  একসিডেন্ট হয়ে পরে থাকলে দেখবে কে ? ‘ 
‘ তুমি, আবার কে? গাড়ির একসিডেন্ট যেন হয় না।  ফ্রিওয়ের ওপর দিয়ে চালাতে চালাতে ওই হোর্ডিং গুলো দেখেছো তো? ‘ 
‘কি হোর্ডিং?’
‘ওই যে , এবছর এখনো পর্যন্ত রোডকিল কতগুলো হয়েছে। ’ 
‘আমি তো সেটার কথাই বলছি। ‘ 
‘ না।   সেটার মধ্যে ৯০% গাড়িতে হয়।  মোটেও বাইকে হয় না। ‘ 
‘আচ্ছা মিশিগানে তো ঠান্ডায় অর্ধেক দিন বেরোনোই যায় না বাড়ি থেকে।  তুমি বাইক কি করে চালাবে। ‘ 
‘ যতদিন বেরোনো যায় , ততদিন নিয়ে বেরোবো।  বাকি টাইম ঘরে থাকবে। ‘ 
‘ ব্যাপারটা একটু বেশিই লাক্সারি হয়ে যাচ্ছে না? ‘ 
‘ দেখো শখের মধ্যে তো শুধু খাওয়া।  যদি একটা অন্য শখ মিটিয়ে নিই তাহলে খারাপ কি আছে।’ 
‘ আরো হাজার শখ আছে।  হাজার হাজার শখ ছেড়ে , হঠাৎ এই বাইকের পিছনে কেন পড়লে? ‘
‘ তুমি কি পুরুষ মানুষ? ‘ 
‘ না , কিন্তু তোমাকে হাজার বছর ধরে চিনি।  আচ্ছা একটা কথা বলতো , কেসটা কি ? হঠাৎ সব ছেড়ে বাইক কেন?’
‘দু মিনিট তেত্রিশ সেকেন্ড আগে , একই ভাষায় একই প্রশ্ন করলে? ‘ 
‘ জবাব টা দাও। ‘ 
‘ আমি বাইকের লাইসেন্স পেয়ে গেছি। ‘ 

হাঁ হয়ে গেলো শৈলী।  আজ বছর পাঁচেক হলো সে বিয়ে করেছে অর্পণকে।  তারও বছর পাঁচেক আগে থেকে তাদের প্রেম।  এতবছর এক সাথে থেকে শৈলীর এইটুকু কনফিডেন্স এসে গেছে যে এ আমাকে ছেড়ে বেরোবে না।  কিন্ত পুরুষ মানুষ কুত্তার জাত।  তাই ভয়ে ভয়ে থাকে শৈলী, বকলেসটা কষে ধরে থাকে।  কিন্তু অর্পণ কোনোদিন চেষ্টাও করে নি ছুটে চলে যেতে।  অফিসের আটঘন্টার মধ্যে অন্তত দশটা মেসেজ করে সে বৌকে।  এটা নয় যে শৈলী খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মেসেজ করায় , এমনিই করে, নিজে থেকেই করে ।  কখন খেয়েছি , কখন ঝাড় খেয়েছি , আজ দেরি হবে , তাড়াতাড়ি চলে আসবো , হাগু হয়নি , গ্যাস হচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি।  শৈলীও বেশ শান্তিতে কাজ করতে পারে। 

শৈলীর অফিস আর অর্পনের অফিসের দূরত্ব তাদের বাড়ি থেকে সমান , কিন্তু দু দিকে।  তাই দুজনে দুজনার গাড়ি নিয়ে অফিস যায়।  অফিস থেকে বেরোলেই শৈলীর ফোনে মেসেজ আসে , ‘অর্পন’স  লোকেশন চেঞ্জড ‘ . অর্পনেরও তাই।  এইটা অটোমেটিক , একটা অ্যাপ এই কাজটা করে দেয়।  বিশ্বাস তাই অটুট ছিল।  কিন্তু হঠাৎ এ কি ? অর্পণ, যে জীবনে কোনোদিন বাইক চালায়নি , সে কি করে বাইক চালিয়ে, ট্রেনিং নিয়ে , পরীক্ষা দিয়ে , লাইসেন্স আপডেট করে বাড়ি এসে বলছে বাইক কিনবো ? অর্পনের ধরা পরে যাওয়া সন্ত্রস্ত মুখের দিকে তাকিয়ে , শৈলীর মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে , ‘ তুমি কবে লাইসেন্স করলে ? তুমি জানো বাইক চালাতে?’
‘ শিখলাম। ’ 
‘শিখলে ? কবে ? কোথায় ? কেন ?’ 
‘ একটা কোর্স আছে কমিউনিটি কলেজে। মোটে পঞ্চাশ ডলারে ৩ দিন। ‘ 
‘ কবে গেছিলে? ‘ 
‘ গত সপ্তাহে। অফিস থেকে দু ঘন্টা আগে বেরিয়ে গেছিলাম। ‘ 
‘ কিন্তু আমার কাছে তো কোনো আপডেট আসেনি। ‘ 
‘ লোকেশান সার্ভিস অফ করে রেখেছিলাম।  যাতে তুমি জানতে না পারো। ‘ 
‘ মানে? কেন? আমি জানলে কি হবে ? ‘ 
‘ ফ্যাকড়া তুলবে।  এই এখন যেমন তুলছো। ‘ 
‘ পয়েন্ট সেটা নয়।  তুমি তাহলে কি এরকম করে আরো কাজ করে বেড়াচ্ছ অফিসের নাম করে? ‘ 
‘ কি যা তা বলছো? ‘ 

শৈলীর মাথায় তখন বাজ পড়েছে।  বিশ্বাস গুলো মনের মধ্যে ভাঙছে মট-মট করে।  সে ভাবতেই পারেনি এরকমও করা যায়।  টেকনোলজি নিয়ে পড়েছে দুজনেই , কিন্ত অর্পণ যে ভাবে সারাদিন টেকনোলজি নিয়ে পরে থাকে , শৈলী তা ভালোবাসে না।  কিন্ত আজ সেই জন্যই সে এইরকম ভাবে ধুলো দিতে পেরেছে শৈলীর চোখে। সে স্মৃতির পথে পেছনের দিকে হাঁটতে থাকে।  সন্তর্পনে খুলতে থাকে সেই বিশ্বাসে ঢাকা মোড়ক গুলো যেগুলোর ভিত্তিতে সে এতদিন শান্তিতে ঘুমাচ্ছিলো ।  এক একটা ঘটনা , এক একটা দিন সে বিচার করতে থাকে।  কিছুই তো সন্দেহজনক মনে পড়ছে না।  দেরীও তো করেনি কোনোদিন।  ঠিক টাইমেই তো অফিস থেকে বেরোয়।  হতে পারে অফিস টাইমে কিছু করছে , কিন্ত শৈলী তো ওর বসকে চেনে, হেব্বি টাইট।  বাঁদরামো সহ্য করবে না।  ছুটি গুলো চলে যাচ্ছে না তো।  অর্পনের মেয়ে কলিগদের ওপর মনে মনে সন্দেহের চোখ বুলিয়ে নেয় শৈলী।  সবাই শৈলীর বন্ধু।  কিছু গন্ডগোল দেখলে নিশ্চই খবর দিতো।  কিন্ত কিছুই তো। …… 

‘ কোথায় হারিয়ে গেলে ? ‘ 
‘ তুমি সত্যি করে বলতো।  কি হয়েছে তোমার। ‘ 
‘আবার এক কথা।  কি হবে।  আর ভ্যান ভ্যান ভালো লাগছে না।  তোমার কথাই শুনে এসেছি সারাজীবন।  এবার আমার একটা কথা মেনে নিতে তোমার এতো সমস্যা হচ্ছে কেন?’ 
‘ তোমার ভালোর জন্যই মেনে নিতে পারছি না। ‘ 
‘ তোমার ভয় তো তোমার নিজের জন্য। আমার কিছু হয়ে গেলে তোমার কি হবে, সেই নিয়ে।  আর আমার নিজের কিছু স্বাদ আহ্লাদ নেই? ‘ 
‘ কেন থাকবে না।  তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে তুমি কি করেছো?  আর আমি তোমায় কোন কাজে বাঁধা দিয়েছি? ‘ 
‘ কোনটা করতে দিয়েছ ? যাই করতে যাই , তাতেই তোমার কোনো না কোনো সমস্যা আছে। ‘ 
‘ তুমি কাজ গুলোই এমন করো। ‘ 
‘ কি কাজ করি।  কি খারাপ কাজ করতে দেখেছো আমাকে? ‘
‘ তার লিস্ট অনেক বড় , এখন সেই নিয়ে আমি বসতে পারছি না।  তুমি চা খাবে ? ‘ 
‘ এই তো না।  ফট করে দোষ চাপাতে ভালো লাগে।  দোষ চাপিয়ে জেলে দিলে ঢুকিয়ে , এবার যতক্ষণ না আমি নিজেকে নির্দোষ প্রমান করবো , ততদিন আমি জেলের ঘানি টানবো। ‘ 
‘ তুমি চা খাবে কি ? আমি উঠলাম।  আমার কথাই ফাইনাল।  বাইক কেনা হবে না। নো ডিসকাসন।’ 
‘ এই ব্যাপারটা আমি তোমার কথা মানতে পারলাম না, সরি।  আমি কিনবোই। ‘ 
‘ চুজ বিটুইন মি এন্ড বাইক ‘
‘ বাইক। ‘

এবার ব্যাকফুটে শৈলী।  ব্যাপারটা কি ? এরকম ব্যবহার তো কখনো করে না অর্পণ।  ঝগড়াতে পিছু হটে যাওয়াতে অর্পণ সিদ্ধহস্ত।  আজ তবে কি হলো।  সমস্যা তো “কে” নয় “কি”। বাইকের প্রেম নিশ্চই এতটা গাঢ় নয় যে হঠাৎ করে সব কিছু পাল্টে দেবে।  তাহলে কি হতে পারে। একটু ভেবে দেখে শৈলী।  ফুটন্ত দুধে চা পাতা দিতে দিতে গত কয়েক মাস পেছনে চলে যায় এক দিন এক দিন করে। নাঃ , সেরকম কিছু মনে পড়ছে না যা শৈলীকে ভাবিয়ে তুলতে পারে।  এদিকে অর্পণ এসে পেছনে দাঁড়ায়।  

‘ তুমি যখন যা চেয়েছো আমি কি কিছু বারণ করেছি। আমি কি তোমায় কোনো কিছুর জন্য জোর করেছি। ‘ 
‘ তুমি কি চাও।’ 
‘ আমি বাইকটা কিনতে চাই। দেখো তুমি চাকরি করতে চেয়েছো।  আমি বাধা দিইনি।  আমি চেয়েছি দেশে ফিরে যেতে,  তুমি চাওনি , আমি মেনে নিয়েছি।  তুমি বিয়ের পাঁচ বছর পরেও মা হতে চাওনি , সেটার জন্যেও আমি জোর করিনি। . ‘ 

শৈলী ঘুরে দাঁড়ায় , ‘ এটাই কি তাহলে আসল কারণ? ‘ 
‘ কোনটা? ‘ 
‘ এই বাচ্চা না নেওয়া। ‘ 
‘ আমি কি বলেছি? ‘ 
‘ এই কথাটা এলো যখন তখন নিশ্চই এটা তুমি ভাবছো। ‘ 
‘ ভাবিনি , কিন্তু ভাবাচ্ছ। তুমিই ব্যাপারটা পিছিয়ে দিচ্ছ। কিন্তু বাইক কেনার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। ‘ 

শৈলী তখন সম্পর্ক খুঁজছে।  বেশ কিছুদিন ধরেই অর্পণ এই বাচ্চা নেওয়ার প্রসঙ্গ তুলছে।  মাঝে মাঝেই নানা কথার মধ্যে দিয়ে উঠে আসছে তার বাবা হওয়ার ইচ্ছাটা।  কিন্তু শৈলীর কাছে এখন কেরিয়ার অনেক বেশি প্রাধান্য।  শুধু কেরিয়ার নয়।  আসল শব্দ হলো  ‘স্থৈর্য্য‘ বা স্টেবিলিটি।  ভিসার চক্করে যে কোনো দিন এই দেশ থেকে তাড়িয়ে দিতে পারে।  কি দরকার আরেক হ্যাপা মাথায় নেওয়া।  তার থেকে আর কয়েকদিন পর যদি পাকাপাকি ব্যবস্থা হয় তাহলে না হয় বাচ্চার কথা ভাবা যাবে।  

শৈলীর বাড়ি থেকে চাপ আসেনি, আসেনি শশুর বাড়ি থেকেও।  সবাই জানে এই সমস্যার কথা।  সবাই তাই অপেক্ষা করছে।  চাপ এসেছে পারিপার্শ্বিক।  সব বন্ধুদের বাচ্চা বড় হয়ে যাচ্ছে। ঘোরতর সংসারী হয়ে সেই বন্ধুগুলো আজকাল সব কিছুর থেকে সরে যায়।  পার্টি শেষ হয়ে যায় রাত দশটায়।  পার্টিতে এলকোহল ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেছে।  সবার প্রায় এক অজুহাত , বাচ্চাকে খাওয়াতে হবে।  অর্পণ শৈলীর দাম্পত্যে এখন তাই নেটফ্লিক্স আর আইপ্যাড এর রমরমা।  

শৈলী বুঝতে পারে সমস্যা।  কিন্তু এই গুরুভার ওঠানোর মতো সময় এখনো আসেনি বলেই সে মনে করে।  অর্পন চাইতে পারে , কিন্তু এখনো দেওয়ার সময় আসেনি।  অর্পণ ঘরকুনো মিষ্টি পুরুষ।  ভালো বাবা হওয়ার উপযুক্ত মেটিরিয়াল।  কিন্তু কোথায় যেন মনে হয় দরকাঁচা।  তার থেকেও বড় কথা সে নিজে এখনো মা হওয়ার কথা ভাবতেই পারেনা।  অর্পনের জন্য কিছুই করতে হয় না তাকে।  স্বয়ংক্রিয় রোবটের মতো সে টুক টুক করে নিজের ব্যাটারি নিজেই চার্জ করে।  শৈলীও নিজের মতোই থাকে।  নিজেদের মতো নয়।  সব কিছুই আছে , অথচ কিছুই নেই।  

‘ লেটস মেক এ ডিল। ‘ অর্পণ চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বলে ওঠে , ‘ তুমি আমার সেফটির কথা চিন্তা করে আমাকে বাইক কিনতে দিচ্ছ না তো ?  আমিও তোমার সেফটির কথা চিন্তা করি।  কিন্তু যেহেতু তুমি চাকরি করো আর আমিও করি তাই দুজনার ব্যবস্থা দুজনা ঠিক করে নিতে পারবো। ‘ 
‘ তুমি একটা বাইকের জন্য আমায় ডিভোর্স দেবে ? ‘ 
‘ ধ্যার।  কোথা থেকে এসব মাথায় ঢোকে তোমার।  আমি বলছি লেটস মেক এ ডিল। দেখো লাস্ট পাঁচ বছরে না তুমি অসুস্থ হয়েছো , না আমি।  না আমি তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছি , না তুমি আমাকে।  তাই না তোমার আমাকে দরকার আছে , না তোমার। ‘ 
‘ আমার তোমাকে খুব দরকার। ‘ 
‘ আরে ওসব রোমান্টিক আঙ্গেল ছাড়ো। হিসেব করে দেখতে গেলে , অদূর ভবিষ্যতে তখনিই তোমার প্রথম আমাকে দরকার পড়বে যখন তুমি প্রেগনেনট হবে।  তাহলে ততদিন পর্যন্ত ডিল করা যাক।  আই প্রমিস যে তুমি প্রেগন্যান্ট হলেই আমি বাইকটা বেচে দেব। কি বল ? ‘ 
‘ এটা বোকা বোকা কথা। ‘ 
‘ মোটেও বোকা বোকা নয়।  ভেবে দেখো , আমি আমার শখ মেটাবো , আর তোমার সময় এলে আমি তোমার পাশে থাকবো।  আর কি চাও। ‘ 
‘ এটা ঠিক হচ্ছে না। ‘ 
‘ শোনো তোমার ইচ্ছায় তুমি চলো , তোমার কথায় আমার ইচ্ছায় আমি। যখন ইচ্ছাটা আমাদের হবে তখন না হয় আমরা আমাদের কথা শুনবো।  এর থেকে একটা গোল ও সেট হবে আর ইচ্ছাও মজুদ থাকবে। ‘ 

শৈলী সেদিন শেষমেশ মেনে নিলো।  অনেক চেষ্টা করেও অর্পনের যুক্তিতে পেরে উঠলো না।  পরেরদিন ঘরে এলো একটা বিশাল বড়সর হারলে ডেভিডসন।  মাসে মাসে পাঁচশো ডলার।  সেকেন্ড হ্যান্ড কিন্তু দিব্যি চকচকে।  মনে ভয় থাকলেও অর্পনের পেছনে বসে শৈলীর টিনেজ জীবনের ইচ্ছাগুলো মনে পরে যেতে লাগলো।  ঐহিকের বাজাজ পালসারের পেছনে বসে যখন সুদীপ্তা মুখ বেঁকিয়ে চলে যেত , তখন অর্পণ আসতো সাইকেল নিয়ে।  দুজনে পাশাপাশি সাইকেল চালাতো।  শৈলী বার বার বলতে চেষ্টা করেছিল তার ইচ্ছার কথা, কিন্তু কোনোদিন অর্পণ তার মুখ দেখে শুনতে পায়নি। চূড়ান্ত গতিতে যখন হারলে ডেভিডসন বাইকের সারি তাদের গাড়িকে টপকে বেরিয়ে যায়, তখনও পাশ ফিরে শুয়ে থাকা মনটা মাথা ঘুরিয়ে মাঝে মাঝে দেখে।  ওই গতি , ওই উড়তে থাকা চুল , ওই চামড়ার জ্যাকেট হাতছানি দিলে ছোট্টোখাট্টো মিষ্টি গোলগাল অর্পনের দিকে তাকিয়ে থাকে সে।  

মাসখানেক আগে শৈলীর পাশের ডেস্ক মডিফাই করা হয়েছে হুইলচেয়ারের জন্য ।  ছেলেটি প্যাসিফিক কোস্ট হাইওয়ে দিয়ে লস এঞ্জেলেস থেকে সান ফ্রান্সিস্কো যাচ্ছিলো তার হায়াবুসাতে।  পেছনের সিটে তার সদ্য হওয়া গার্লফ্রেন্ড।  বিক্সবি ব্রিজের কাছে কাঁধে চাপ দিয়ে হঠাৎ উঠে দাঁড়ায় মেয়েটি।  বছর খানেক আগের ডিসলোকেশান হয়ে যাওয়া কাঁধে পুরানো যন্ত্রনায় হাত পড়তে টাল মাটাল হয়ে ব্রিজের রেলিঙে ধাক্কা মারে ছেলেটি।  গতি ও স্থিতির মিশ্রনে মেয়েটি ছিটকে গিয়ে ব্রিজ থেকে পরে যায় দুশো ফিট নিচে।  ছেলেটির দুই পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায় পাশ দিয়ে যাওয়া এক ফোর্ড এক্সপ্লোরার।  কাল অর্পণ বেচে দিয়েছে তার হারলে ডেভিডসন।  আজকে শৈলীর প্রথম ডাক্তার এপয়েন্টমেন্ট।           

বাকি গল্পগুলো



No comments:

Post a Comment