Saturday, April 28, 2018

৫০) আধ্যানের ডায়েরী - দেশে বিদেশে ( শেষ পর্ব )

এতকিছু হওয়ার পরের দিন সব ঠিক।  এবার আবার মাসির বাড়ি যাওয়ার পালা।  ওখানেই বাকিটা সময় থেকে আবার আমি আমার দেশে। বাকিটা সময় ওখানে আর বেশি কিছু ঘটেনি। অনেক কিছু শব্দ শিখেছি।  দিদা দিন রাত আমাকে বলতে থাকতো চল চল চল।  আমিও একদিন জিভটাকে মুখের ওপরের দিকে লাগিয়ে আওয়াজ করতেই বেরিয়ে এলো চ।  দু তিনবার করতেই বেরোলো চ-চ-চ।  তখন দিদার হাতই ধরা ছিল।  দেখলাম দিদাও বললো ঠিক আছে চ।  দিয়ে এগিয়ে গেলো।  আমি বুঝলাম চ মানে এগিয়ে যাওয়া।  তাই যখনিই কাউকে কোথাও নিয়ে যেতে হতো বলতে আরম্ভ করলাম চ-চ-চ।  দেখলাম সবাই ঠিক ঠাক এগিয়ে যাচ্ছে।  

একদিন  মাসির সাথে বসে বসে চু চু টিভি দেখছি।  সেখানে বলছিলো এস ফর ষ্টার।  আমার বেশ লাগে ষ্টার বলতে।  আমি বললাম এস - ষ্টার।  “ফর” বলতে বেশ প্রব্লেম , ঠোঁট টোট নাচাতে হয়।  মাসি আমার দিকে ঘুরে বললো।  “সিস্টার ? “ আমি বললাম এস-স্টা-আ-আ-র। মাসি তো খুব খুশি।  মাসি ভেবেছে আমি নাকি মাসিকে সিস্টার বলছি।  ভেবে খুশি হলেই হলো।  তারপর থেকে আমি মাসিকে দেখলেই বলতে আরম্ভ করলাম এস-ষ্টার।  কিন্তু ধীরে ধীরে আমার কথাও পাল্টে বেরিয়ে আসতে লাগলো সিস্টার।  সবাই খুব খুশি।  আমিও খুশি।  

এবার মায়ের বন্ধুদের পালা।  একদিন রাতে আমরা আবার টোটো চেপে একজনের বাড়ি গিয়ে হাজির হলাম।  যাবার আগে মা বলে দিয়েছিলো কোনো ঝামেলা না করতে।  মা নাকি বহু বছর পর তার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে আসছে।  বাবার কেসটা কেঁচিয়ে দেওয়ার পর মা বেশ চাপে ছিল।  যে লোকটা আমাকে টোটো থেকে কোলে তুলে নিলো সেটাকে দেখিয়ে মা বললো , ‘ এটা কাকু-মামা’ । সে আবার কি।  সেই কাকু মামা নাকি মা বাবার বিয়ের কারণ।  আর বাবা মা দু তরফেরই বন্ধু।  ইম্পরট্যান্ট পিপল।  বেশ আদর টাদর করে দিলাম।  সবাই খুশি।  ওখানে গিয়ে দেখি আমার তিন তিনটে বন্ধু।  খুব খেললাম, কিন্তু ঝগড়া বাঁধলো সেই গাড়ি নিয়ে। ওরাও ছাড়বে না।  আমিও ছাড়বো না।  ছাড়বো কেন ? গাড়ি গুলো কি সুন্দর।  আমার যেটা ইচ্ছা সেটা আমি নেবো।  কেউ যেন ঝামেলা না করে। ওরা করতে এলো আমিও ঝাঁঝিয়ে দিলাম।  কিন্ত এরা তো দেখি ফাইট ব্যাক করে।  কিন্তু আল্টিমেটলি আন্টি এসে সব ঠিক করে দিলো।  পুরো ট্রিপটাতে আমি শুধু বাবাকে বার বার সরি বলে গেছি আর মা আমাকে থ্যাঙ্ক ইউ বলে গেছে।   
সিস্টার একদিন আমাকে কোলে করে বারান্দায় ঘুরছিলো।  দেখি একটা লোক টু লিটিল মানকি নিয়ে ঘুরছিলো।  ঠিক আমাদের জানলার সামনে আমাকে দেখতে পেয়ে , থেমে গেলো। দুটো মানকিও থেমে গেলো।  আমি জানি মাংকিরা বেড এ জাম্প করে।  মাংকি গুলো দারুন ছিল কিন্তু লোকটাকে আমার কিছুতেই পছন্দ হচ্ছিলো না।  কি ভাবে মাংকি গুলোকে বেঁধে রেখেছে।  আমি টেনশন করছিলাম যে যদি মানকি গুলো আমার বেড এ উঠে এসে জাম্প করতে চায়।  অনলি মাংকি কে এলাও করতে পারি।  কিন্তু ওই লোকটাকে নয়।  কিন্তু কাউকেই ঢুকতে দিলো না মাসি।  ওরা ওখানে বসে বসে কত খেলা দেখালো।  দুটো মাংকি  কি সুন্দর।  আমি যদি ওদের সাথে চলে যেতে পারতাম খুব ভালো হতো।  বললামও, কিন্তু ওরা নিয়ে গেলো না।  

ফেরত আসার দু  দিন আগে  আমার ঠাম্মার স্কুলে একদিন যাওয়ার প্ল্যান ছিল।  ঠাম্মার নাকি আমার মতো ডে কেয়ার আছে।  সেখানে অনেক অনেক ছেলে আছে আমার মতোন।  আমি যখন আমার বাড়িতে ছিলাম।  তখন থেকে প্ল্যান করছিলো আমাকে ওখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য।  কিন্তু সময়ই হয়ে ওঠেনি।  তাই সেদিন বাবা আমাকে নিয়ে সোজা স্কুলে নিয়ে চলে গেলো।  বিশাল একটা দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখি ঠাম্মা বাইরে দাঁড়িয়ে।  আমাকে কোলে করে নিয়ে ঠাম্মার অফিসে নিয়ে গিয়ে বসলো।  আর সাথে সাথে এক গাদা টিচার এসে ঘরে ঢুকে পড়লো।  কি সাংঘাতিক ব্যাপার।  এতো লোক এইটুকু যায়গায়। সবাই আমার দিকে হাত বাড়াচ্ছে।  সবাই আমাকে কোলে নেবে।  জায়গা ছোট্ট।  হাঁফ ধরে যাচ্ছিলো। আর অতগুলো নতুন লোক। মনে হচ্ছিলো সবাই কামড়ে দেবে।  সবাই অথচ আদরই করছিলো।  আমি থতমত খেয়ে, ভয় পেয়ে, খাবি খেয়ে  কেঁদে ফেললাম।  এগেন আই অ্যাম সরি ঠাম্মা।  

বুঝতেই পারছিলাম ঠাম্মা সবার কাছে আমার সোশ্যালাইজিং স্কিল নিয়ে অনেক ভালো ভালো বলে এসেছে।  কিন্ত কি করবো , আমারও তো একটা লিমিটেশন আছে।  আমি একদম ঘাবড়ে গেছিলাম সেদিন।  খুব ঘাবড়ে গেছিলাম।  ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ঠাম্মা আমাকে কোলে করে নিয়ে ফাঁকা মাঠে ছেড়ে দিলো।  তখন আমায় পায় কে।  আমিও দৌড়ে বেড়াচ্ছি।  আর সবাই আমার সাথে সাথে দৌড়ে বেড়াচ্ছে।  এর মধ্যে একজন এগিয়ে এসে আমাকে চকোলেট দিলো।  কিন্তু আমার নজর তার বুকে আটকানো পেন টার দিকে।  পেন টা নিয়ে আমি সব দেয়ালে লিখে দিয়ে চলে এলাম।  ওটাই থাকুক ওদের স্মৃতি হয়ে। 

এই পেন নিয়ে আরেকদিন তুমুল কান্ড হয়েছিল।  বাবা মা আমাকে নিয়ে কোনো একটা অফিসে গেছিলো।  ছোট্ট জায়গা।  অনেক টেবিল।  অনেক লোক ঘোরাফেরা করছে।  মা দেখলাম এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে দৌড়াদৌড়ি করছে আর বাবা আমাকে চেপে ধরে এক জায়গায় বসে আছে।  আমার কি বিরক্ত লাগছিলো।  কিন্তু কিছুতেই ছাড়ছিল না।  প্রত্যেক টেবিলে যে যে লোকগুলো বসে ছিল সবার হাতে একটা করে পেন ছিল।  পেন দিয়ে ওরা অনেক কিছু লিখছিলো।  শুধু দেখছিলো না আমার দিকে।  আমি একের পর এক টেবিলের সামনে গিয়ে জুল জুল করে তাকাচ্ছিলাম পেনের দিকে।  হাত বাড়াচ্ছিলাম, কিন্তু কিছুতেই নাগাল পাচ্ছিলাম না।  আমি তো গুড বয় তাই বায়না করছিলাম না।  আমি করিনা বায়না।  আই ডোন্ট লাইক ন্যাগিং।  আই ট্রাই , ট্রাই হার্ডার, তারপর ক্ষমা করে দিই।  কিন্তু হঠাৎ করে দেখি একজন বাবার কাছে এসে একটা পেন এগিয়ে দিলো, আর একটা কাগজ।  লোকেদের ক্ষমা করতে পারি।  কিন্তু বাবাকে নয়।  হামলে পরে পেন টা নিয়ে অনেক কাগজের ওপর লিখতে যাচ্ছিলাম, লোকটা আঁতকে উঠে কাগজ টেনে নিয়ে কেটে পড়লো।  বাবা কোনো রকমে আমাকে টেনে এনে বসলো।  আমার ধৈর্যচ্যুতি ঘটে অপমানে মুখ চোখ লাল হয়ে কান্না বেরিয়ে এলো।  তখন একটা লোক এসে আমাকে একটা পেন দিয়ে শান্ত করলো।  

পেনের গল্প অনেক।  সব লিখলে সবাই বোর হয়ে যাবে।  কিন্ত সবথেকে বড় পেন হলো সবাইকে ছেড়ে চলে আসার পেন।  যেদিন চলে আসছি, সেদিন এয়ারপোর্ট এ সবাই কাঁদছিলো।  সব্বাই।  আমাকে ছাড়তে এসেছিলো দিদা , দাদু আর সিস্টার মানে মাসি। আমরা বাইরে বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলাম কারণ অনেক আগে আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম।  যখন আর বাইরে অপেক্ষা করা যাচ্ছে না।  তখন আবার কার্টের ওপর বসিয়ে ঠেলতে ঠেলতে আমরা যখন গেটের কাছে পৌছালাম তখন দেখি আমাকে আর মা কে কিছুতেই ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না।  এদিকে বাবা ঢুকে গেছে।  আমি পড়লাম ফাঁপরে।  তাহলে কি বাবা এবার আমাকে আর মা কে ছেড়ে আবার চলে যাবে।  জীবনের প্রথম এক বছর বাবাকে পাইনি।  সেই ভয়ঙ্কর সময়গুলো এখনো আমার মন থেকে যায়নি।  আর আমি চাইনা বাবাকে ছেড়ে থাকতে।  কিন্ত বাবার অঙ্গভঙ্গি দেখে মোটেই মনে হচ্ছিলো না যে বাবা আমাদের ছেড়ে চলে যাবে। 

বেশ কিছুক্ষন পর বাবা আবার বেরিয়ে এসে সবাইকে নিয়ে ভেতরে চলে এলো।  পিছন ফিরে দেখলাম দাদু দিদার চোখে জল।  আবার আমি, বাবা আর মা।  প্লেনের গল্প আর নতুন করে করলাম না।  সেই এক ভাবেই অনেক কষ্ট সহ্য করে আমরা যখন আবার ফিরে এলাম তখন এখানে ঠান্ডা।  বাবার দেশে কি সুন্দর ওয়েদার ছিল।  আমাকে জ্যাকেট পড়তে হতো না , সর্দি নিয়ে হাঁসফাঁস করতে হতো না, খালি গায়ে ঘুরে বেড়াতাম, গাছে পাতা ছিল , একটু ধুলো ছিল বটে , কিন্ত সব কিছু কি সুন্দর ছিল।  সবথেকে সুন্দর ছিল মানুষজন।  কত লোক ছিল আমার সাথে খেলার জন্য।  কত লোক ছিল দেখার জন্য।  যখন এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে বাড়ির জন্য গাড়িতে চাপলাম তখন রাস্তার দুপাশ ধরে শুধু গাড়ি আর গাড়ি।  নেই অটো , নেই টোটো , নেই সাইকেল , নেই ভ্যান , নেই বাইক আছে শুধু গাড়ি গাড়ি আর গাড়ি।  

বাড়ি ফিরে প্রথমে কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগলো।  সব চুপ চাপ।  শান্ত।  কোথাও কোনো আওয়াজ নেই।  নেই হর্নের প্যাঁ পোঁ।  কোথাও যেন কিচ্ছু নেই।  আমার পুরানো খেলনা গুলো ভুলে গেছিলাম।  আবার এক এক করে খেলনা গুলো মনে করতে লাগলাম।  আমার ঘর আমার বিছানা , আমার টিভি , আমার ব্যালকনি , আমার গাড়িগুলো সব আমার।  এটা আমার জায়গা।  আমার কাজের জায়গা।  আমার বড় হওয়ার জায়গা।  এখানেই আমায় থাকতে হবে।  আমি থাকবো। আর থাকবে বাবা আর মা।  আচ্ছা বাবা মা ও তো দাদু দিদা দাদু ঠাম্মাকে ছেড়ে চলে এসেছে।  আমার যেরকম কষ্ট হচ্ছিলো ওদেরও কি হচ্ছেনা।  আমি জানি বাবাকে ছেড়ে থাকার কষ্ট।  আমি মা কে ছেড়ে এক রাত থেকে দেখেছি।  খুব কষ্ট লাগে।  আর এখন খুব কষ্ট লাগছে ।  খুব ফাঁকা লাগছে।  কিন্তু দ্যাট ওয়াস মাই ভ্যাকেশন।  পরের ভ্যাকেশন বাবা বলেছে আবার পরের পরের দূর্গা পুজোর সময়।  এবার যে সব ভুলত্রুটি করেছি।  পরের বারের আগে সব ঠিক করে নিতে হবে।  এর পরের বার গিয়ে আরো মজা করতে হবে।  অনেক অনেক মজা। আর  পরের বার সবাই কে গিয়ে বাংলায় বলতে হবে , “আমি আধ্যান - আমি আবার এসেছি। ”   


আধ্যানের ডায়েরির আগের পাতাগুলো 



Wednesday, April 25, 2018

৪৯) আধ্যানের ডায়েরী - দেশে বিদেশে ( পর্ব - ৪)

এই পায়ে জল দেওয়ার কোথায় মনে পরে গেলো , আই ডোন্ট লাইক বাথরুম হিয়ার। আরে বাথরুম মানেই সবসময় জলে জলাকার।  কেন বাবা?  জলের জন্য জলের জায়গা আছে।  আমাকে ক্লিন করানোর জন্য বেসিন আছে, স্নান করানোর জন্য বাথটব আছে, রান্নার সিংক আছে, সবই তো এখানেও সেম।  তাহলে বাথরুমে এতো জল থৈ থৈ করছে কেন।  মানছি এখানে বাথটাব নেই।  কিন্তু তা বলে বাথরুমের পুরোটাতেই জল থাকবে সে আবার কি ধরণের কথা। সবসময় মনে হয় পরে যাবো। ধুপ করে পরে যাবো।  আর বাথরুমের ভেতর এতো বালতি কেন ? আর সব বালতি সব সময় ভরা থাকে কেন ? এতো জল দরকার কেন? আর জল শুকোয় না কেন ? আমি তো কতবার আমার বাথরুমে জল ফেলে দি। মা এসে কাগজ দিয়ে পুঁছে দেয়।  এখানে দিচ্ছে না কেন? ভিজে জায়গায় আবার জল ফেলে ভিজিয়ে দেয়। এই একটা জিনিসে আমার সত্যি আপত্তি।  ভালো লাগে না।  তাই স্নান করার সময় সেই খেলা করাও আর হয় না।  কোনো রকমে স্নান করে তাড়াতাড়ি উঠে পড়তে পারলে বাঁচি।  তার ওপর এখানে বলছে পায়ে জল দাও।  

এখানে পায়ে জল দিলে কিন্তু পা ধোয়া হয় না।  কারণ ধুলো লেগেই থাকে।  আমার পা ধুয়ে দিয়ে যখন গিয়ে মায়ের শাড়িতে পা পুঁছলাম , দেখি মায়ের শাড়ি কালো। ও হ্যাঁ , মা এখানে সারি পড়েছে। কি সুন্দর লাগে মা কে শাড়ি পরে।  যতটা না সুন্দর মা কে দেখায় , তার থেকে ভালো লাগে শাড়ি নিয়ে খেলতে।  এখানে সবাই শাড়ি পরে থাকে।  সব্বাই।  কেউ প্যান্ট শার্ট পরে না।  আমিও বড় হয়ে শাড়ি পড়ব।

যাইহোক ওরা পুতুলটা নিয়ে খেলছিল , আর আমি বোর হচ্ছিলাম।  কিছুক্ষন পর ঘুম পেয়ে গেলো।  ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি আবার আগের বাড়িতে ফিরে এসেছি।  খুব খিদে পেয়ে গেছিলো।  কিন্তু মা কে খুঁজেই পাচ্ছিলাম না। বাবার কাছেই ঘ্যান ঘ্যান করতে আরম্ভ করলাম।  কিছুক্ষন পর দেখি মা আবার খিচুড়ি নিয়ে চলে এসেছে।  তখন খিদের মাথায় , ওই খিচুড়িই আমার কাছে অমৃত লাগার কথা।  কিন্তু মুখে দিতেই আমার ব্রম্ভান্ড জলে গেলো।  পাশ থেকে কে যেন বললো , ‘ভোগের খিচুড়ি ভালোই লাগবে।’ সে আবার কি জিনিস।  ভোগের খিচুড়ি।  কি ভয়ঙ্কর খেতে।  সাংঘাতিক ঝাঁঝালো।  মুখে নিতেই পারছিলাম না।  একদম ভালো লাগছিলো না।  মা কয়েকবার মিষ্টি করে চেষ্টা করে বাবাকে ধরিয়ে দিলো।  বাবাও চেষ্টা করে বুঝতে পারলো যে ওটা আমার ভালো লাগছে না।  ভালো খারাপের ব্যাপার নেই।  আমি খেতেই পারছিলাম না।  কোথায় মা সুন্দর করে আমার জন্য স্পেশাল খিচুড়ি বানিয়ে দেয় , আর কোথায় এই ভোগের খিচুড়ি।  খুব বাজে , খুব বাজে।  যাইহোক মা শেষমেশ ওট মেখে এনে আমার প্রাণ বাঁচালো।  একে খিদেতে পেট জ্বলছে , তারওপর ওই ভয়ঙ্কর পেট জ্বলা খিচুড়ি।  এক পেট খেয়ে তখন দেখি এনার্জি তুঙ্গে।  


আর তখন বাড়িতে প্রচুর লোক আসছে।  সবাই আসছে আর আমাদের বাগানে রাখা টেবিলে বসে পড়ছে।  টেবিল গুলো বেশ মজাদার।  আমি ধাক্কা দিলেই পড়ে যাচ্ছে।  কিন্তু তাতেই বসে লোকেরা খাচ্ছে।  যত লোক আসছে , তত লোক আমাকে চটকাচ্ছে।  আর আমাকে কোলে নেওয়ার চেষ্টা করছে।  প্রথম প্রথম আমি জেন্টেলম্যানের মতো সবার কোলে যাচ্ছিলাম।  কিন্তু কিছুক্ষন পরে আর পেরে উঠলাম না।  তারপর আমি দৌড়াতে শুরু করলাম যতক্ষণ না  হাঁফিয়ে উঠি। 

বিকেলে যখন বাড়ি ফাঁকা।  তখনও আমি ক্লান্ত হইনি।  কিন্তু সবাই ক্লান্ত হয়ে বসে পড়েছে।  আমি দেখলাম আমি তো না খেললে বোর হয়ে যাবো।  সবাই এদিক ওদিক বসে আছে। কেউ খাটে কেউ চেয়ারে , আবার কেউ কেউ দাঁড়িয়ে আছে । আমার কাউন্টিং খেলা শুরু করলাম।  ঠাম্মা নিচে বসে ছিল, আমি হাত ধরে তুলে নিয়ে গিয়ে খাটে বসলাম আর বললাম , “ওয়ান” . নেক্সট হলো আমার জেম্মা ঠাম্মা মানে আমার বাবার বম্মা।  তাকেও চেয়ার থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ঠাম্মার পাশে বসলাম আর বললাম , “তু” , এরপর ছিল জেঠু।  বসেই ছিল তাই নাম দিলাম , “থি” এরপর মা কে বসাতে গেলাম কিন্তু মা বসলো না।  আর বাবা আমার দিকে ফোন তাক করে ছিল।  তাই বেশি পাত্তা দিলাম না। মা যেহেতু বসলো না।  তাহলে সবাইকে আবার দাঁড় করিয়ে দি।  সবাই কে আবার এক এক করে হাত ধরে ধরে দাঁড় করিয়ে দিলাম।  এবার পালা আমার সাথে “ইয়া ইয়া ইয়া ইয়া ” খেলা।  ওই যেরকম ফাইভ লিটিল ডাক্স গুলো করে , ওরকম ভাবে হাত দুটোকে ঝাপটাতে হবে , আর মুখ দিয়ে দিয়ে বলতে হবে , ‘ ইয়া ইয়া ইয়া ইয়া ‘ । এটা দেখেছি অনেকেই বেশ ভালো খেলে।  কিন্তু সবাই একসাথে যে করবে সেটা ভাবিনি।  আমি যেই বললাম ‘ ইয়া ইয়া ইয়া ইয়া ‘ সবাই দেখি উত্তরে করলো ‘ ইয়া ইয়া ইয়া ইয়া ‘।এই তো।  ফোর বিগ ডাক্স আর আমি  ফাইভ।  বেশ কিছুক্ষন করার পর সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়লো।  তখন আর আমি ওদের ছেড়ে দাদার সাথে খেলতে লাগলাম।  

পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি দাদা চারটে বালতি নিয়েছে।  আর তাতে জল ভরে কি একটা জিনিস গুলছে।  কি সুন্দর সব রং হয়ে যাচ্ছে বালতি গুলোতে।  আর একটা থালাতে , নানা ধরণের রঙের গুঁড়ো রাখা রয়েছে। কিন্ত মা কিছুতেই আমায় এগোতে দেবে না।  বাবা মাঝে মাঝে এগিয়ে আসছে ছো মেরে তুলে নিয়ে যাবার জন্য।  কিন্ত মা একেবারে অগ্নিমূর্তি ধরেছে।  তারপর সবাই আমাকে আমার মতো ছেড়ে দিয়ে দেখলাম থালা থেকে ওই গুঁড়ো গুলো তুলছে আর একে অপরের মাথায় মাখাচ্ছে।  এ কি রকমের খেলা।  আমিও খেলবো।  কিন্ত কিছুক্ষনের মধ্যে সবাই কিরকম ভয়ানক দেখতে হয়ে গেলো।  ওই গুঁড়োগুলো তো সুন্দর সুন্দর রঙের ছিল।  কি করে সবাই কালো হয়ে গেলো? কাউকে চেনা যাচ্ছে না।  বাবা আবার দাদারা পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে।  আর দাদা কেঁদে কেঁদে ফিরছে।  আমি রীতিমতো কনফিউসড হয়ে গেলাম এবার কি করবো ভেবে। মাও উশখুশ উশখুশ করছিলো , এবার জেম্মা গিয়ে মা কে ধরে ওই গুঁড়ো মাখিয়ে দিতে আমার গায়েও কিছুটা লেগে গেলো।  একটু টেস্ট করে দেখলাম সেটা মোটেও খাবার জিনিস না।  ততক্ষনে সবাই আমাকে এক এক আঙ্গুল করে লাগিয়ে দিয়েছে।  কেউ আমাকে বিশেষ মাখাইনি।  আর আমিও ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম না এতে খুশির কি আছে।  তাই সবাই যখন ছবি তুলছিলো আমি বেশ গোমড়া গোমড়া মুখ করেই ছিলাম।  

রাতে আমরা আবার বাড়ি ফিরে এলাম সেই গাড়িটা করে।  রাস্তায় একটা জায়গায় গাড়ি দাঁড়িয়ে বাবা কি একটা কিনে এনে সবার হাতে ঠোঙা করে করে ধরিয়ে দিলো।  চপ মুড়ি।  এটা নাকি পরম চরম উপাদেয় খাদ্য।  মানছি মুড়ি একটা সত্যি উপাদেয় খাদ্য।  আমি খুব ভালোবাসি, কিন্তু চপের গন্ধ আমার বিশেষ সুবিধার মনে হলো না। যাই হোক আমরা যখন গিয়ে পৌছালাম তখন রাত হয়ে গেছে।  

এবার বাবার পার্টি।  বাবা হেব্বি এক্সাইটেড ছিল বাবার বন্ধুদের কাছে আমাকে দেখানোর জন্য।  আমার নাকি ওখানে অনেকগুলো দাদা আছে।  আমার থেকে সবাই বড়।  অনেক বড় কিন্ত আমার গলু দাদার মতো বড় নয়।  আমিও এক্সাইটেড ছিলাম সবার সাথে দেখা করার জন্য।  বিকেলে আমরা সাজুগুজু করে প্রথমে বাবার এক বন্ধুর বাড়ি যাবো।  সেখানে আমার দুজন ফ্রেন্ড আছে।  তাদের সঙ্গে খেলা করে আমরা যাবো আরেকটা বাড়িতে। সেখানে সবাই আসবে।  আমরা আবার টোটো চেপে প্রাণ হাতে করে অন্ধকার রাস্তা ধরে যখন গিয়ে হাজির হলাম তখন আমার শরীর হঠাৎ করে খারাপ লাগতে লাগলো।  কি জানি কি হলো , পেট ঘুলিয়ে পটি হয়ে গেলো।  আর পটি হতেই কি যন্তন্না। এতো কনফিডেন্স নিয়ে এতদিন ছিলাম।  কোনো কিচ্ছু হয়নি।  যেদিন হওয়ার কথা ছিল না সেদিনই শুরু হলো সেই ভয়ঙ্কর ডাইপার র্যাশ।  কি লজ্জা, কি লজ্জা। বাবার মুখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না।  সরি বাবা।  কিন্তু কাকুটা বললো , কোনো অসুবিধা নেই।  সবার সাথে দেখা করে তার পর ছেলেকে নিয়ে বাড়ি চলে যাস।  সেদিন আবার আমার ওই ফ্রেন্ড দুজনেরও শরীর খারাপ।  তাই ওরাও নাকি যাচ্চে না।  আমি একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।  

কিন্ত ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে কাকুটা বললো সবাইকে ওর বাইকে চেপে পড়তে। এই বাইক জিনিসটা এখানে প্রচুর।  বাবার একটা সাইকেল আছে।  যখন বড় ঠাম্মার বাড়ি গেছিলাম তখন বাবার সাইকেলে চেপেছিলাম।  কি সাংঘাতিক।  আমার জন্য একটা ছোট্ট সিট ছিল সামনে। জেঠু বলেছিলো ওটা নাকি বাবা যখন ছোট ছিল তখন বাবার জন্য বানানো হয়েছিল।  আমি বেশ খুশি হয়ে ওর ওপর উঠতে গিয়ে দেখি এ তো টোটোর থেকেও খারাপ অবস্থা।  ভাগ্যিস চালিয়ে নিয়ে যায়নি।  নাহলে যেকোনো সময় আমি ধরাম করে পরে যেতাম। যদিও সাইকেল অনেক আস্তে চলে।  তবু পরে গেলে খুব লাগতো।  আর এই বাইক তো পুরো সাইকেল এর মতো , কিন্তু অনেক জোরে চলে।  আর তার মধ্যে চারজন ঢুকবো কি করে। 
  

প্রথমে ওই কাকু।  তারপর আমি তারপর মা , তারপর বাবা চেপে বসলাম।  আমার তো দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি।  কাকুটাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বসে থাকলাম।  এক হাতে কাকুকে ধরেছি, আর মা কে সমানে ঠেসে যাচ্ছি।  জানিনা বাবা কি ভাবে বসে ছিল। আর তিনজনেই মোটা মোটা।  কিছুতেই ফিট হচ্ছিলো না। আর তারপর যখন বাইক ছেড়ে দিলো তখন তো টলমল টলমল করছে পৃথিবী।  আমার প্রাণ যায় যায়।  কিন্তু বেশিক্ষন ওতে বসতে হলো না।  কিছুক্ষনের মধ্যেই একটা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম।  আমার খুব ঘুম পেয়েগেছিলো।  ঘরে ঢুকে মায়ের কোলে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।  ঘুম ভাঙলো , দেখি আমি আবার বাড়িতে চলে এসেছি।  ব্যাপারটা কি ? বাবা নেই।  বাবা নাকি এসে আমাদের রেখে চলে গেছে। আমার ফ্রেন্ড দের নাকি কেউ আসেনি শুধু এক জন ছাড়া।  কি আর করবো।  তার সাথেও দেখা হলো না।  কিন্তু ওই ডাইপার র্যাশটা বড্ডো জ্বালাচ্ছিলো।  সারা শরীর ছেড়ে দিয়েছিলো ক্লান্তিতে।  আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।  

ঘুম ভাঙলো প্রচন্ড পেটের যন্ত্রনায়।  সাংঘাতিক যন্ত্রনা।  সে যন্ত্রনা আর বলে বোঝাতে পারবো না।  দেখি মা , ঠাম্মা , দাদু আমাকে কোলে নিয়ে বসে আছে।  হঠাৎ বাবা একটা কাকুকে নিয়ে ঘরে ঢুকলো।  আমি নাকি ঘুমের মধ্যে ঘন্টাখানেক ধরে কাঁদছি।  সাংঘাতিক কাঁদছি।  জেগে যখন এতো কষ্ট হচ্ছে তখন নিশ্চই ঘুমের মধ্যে আরো কষ্ট হচ্ছিলো।  আমি তো আর বড়দের মতো বলে বোঝাতে পারবো না কোথায় কষ্ট হচ্ছে।  এই কাকুটা আমার জন্য একটা ওষুধ এনেছিল।  ওটা খাইয়ে দিতে ক্লান্ত শরীর আরো এলিয়ে পড়লো।  দেখলাম বাবা কাঁচুমাঁচু হয়ে একবার আমার দিকে , একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।  সরি বাবা।  এরকম করে তোমার পার্টি পন্ড করে দেওয়ার জন্য।  খাওয়াটা যদি আমার হাতে থাকতো তাহলে হয়তো ব্যাপারটা এরকম হতো না।  তোমরাই একরকম জোর করে গেলানোর চেষ্টা করো আর তাতেই আমার শরীর খারাপ হয়।  আমার কোনো দোষ নেই।  

আধ্যানের ডায়েরির আগের পাতাগুলো