Thursday, November 30, 2017

পদ্মিনী ও বনলতা সেন



- এই, তোর নাম কি রে?
- বনলতা সেন।  আর তোর? 
- পদ্মিনী
- সারনেম ? 
- আমার নামই কাফি।
- কই, আমি তো এই প্রথম শুনলাম। 
- কেন জহর ব্রত শুনিসনি। 
- ও হ্যাঁ তাই তো , তুইই কি সেই? 
- হ্যাঁ আমিই সেই রানী। 
- বাব্বা তোর আত্মবলিদান তো বিশাল , তুই তো দেবী। 
- হ্যাঁ তা বটে। মাথা হেঁট করিনি মুসলমান শাসকের সামনে। 
- আত্মহত্যা করাটা কি খুব ভালো কাজ? 
- সম্মান খোয়ানোর থেকে তো ভালো। 
- মানে ভাঙবো তবু মচকাবো না তাই তো? 
- সে যা বলবি বল । আমরা রাজপুত । আমরা তোদের বাঙালীদের মতো মাথা ঝোঁকাইনা। 
- তুই রাজপুত কোথায় , শুনেছি তুই নাকি সিংহলের রাজকন্যা ? 
- নারীর কোনো জাত নেই। স্বামীর জাতই তার জাত। 
- ও আচ্ছা । তাহলে মুসলমান আক্রমণ না করলে সহমরণে যেতিস তাই তো, মানে সতী হতিস? 
- হতাম হয়তো। ইতিহাস তো আর পাল্টানো যায় না। 
- তুই কি ইতিহাস , না কল্পনা ?
- কল্পনা কেন হব ? 
- লোকে তো তাই বলছে।
- লোকে তো অনেক কিছুই বলে।
- তা বটে।
- আমি বাস্তব এবং এক ভিন্ন পথদ্রষ্টা।
- তোর পথে তোর পরে কেউ চলেছিল? 
- জানিনা। মর্যাদা তো সময়ের সাথে সাথে অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে ।
- সত্যি কি মর্যাদার হানি হতো, যদি সেদিন দিল্লির সুলতান তোকে রাণী করে নিয়ে যেত? 
- হতো না কি?  
- এই তো বললি নারীর কোনো জাত নেই। স্বামী তো একটা জীবিকা মাত্র।  পাল্টে গেলেই তো তোর জাত পাল্টে যেত।  এতোগুলো প্রাণ শেষ হয়ে যেত না।  প্রাণ আগে না মান আগে ? 
- অবশ্যই মান।  মান গেলে , প্রাণ থেকে কি হবে।  
- আর প্রাণ গেলে কে তোকে মান দেবে শুনি? 
- দেখছিস না , এতো বছর পর একটা সিনেমা বানিয়ে কেউ আমাকে মান দেওয়ার চেষ্টা করছে। সেই ভয়াবহ স্মৃতি আজকে কত নারীর অনুপ্রেরনা।  
- সিনেমা তো রিলিস করতেই দিচ্ছে না।  
- সেটা ভালো নয়।  তোর কি মনে হয় , আমাকে নিচু করে দেখিয়েছে সিনেমাতে।  
- প্রশ্নটা অবান্তর নয় কি ? রতন সিং এর কাছে নিচু দেখালে তুই রানী , আর খিলজির কাছে নিচু দেখলে তুই ছিনাল!   অথচ দুজনেই পুরুষ।  
- কিন্তু উনি তো আমার স্বামী , তার জন্যে কিছু করা মানে তো সম্মান।  
- তার জন্য কি করলি ? 
- নিজের জীবন দিয়েছি, এর থেকে বেশি আর কি করবো।  
- তার থেকে অস্ত্র নিয়ে লড়তে পারতিস।  যেরকম করে বাকি দুর্গের সব সৈন্য লড়েছিল , মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। যুদ্ধ কি নারীর কাজ? 
- তাহলে বলছিস পুরুষরা আমাদের জন্য প্রাণ দেবে, আর প্রাণ দেওয়ার পর শত্রুর প্রাণনাশ করতে না পারলে ধরা পড়ার ভয়ে আত্মহত্যা করবো, এই আমাদের কাজ।  
- তুই যে এতো কথা বলছিস। তুই আসলে কি ? 
- আমি এক কবির কল্পনা।  
- তার মানে তুই নেই ? 
- তুইও কি আছিস।  থাকলে এরকম তুই তোকারি কি করতে পারতাম?  তুই না রানী।  
- তা বটে। 
- আমি তো এখন তোর মতোই কল্পনা।  আমার গায়ে জায়েসী যা রং চড়িয়েছিলো , বানসালি তাতে চমক মেরেছে।   আমায় বানিয়েছে জলজ্যান্ত ইতিহাস।  
- ইতিহাস জলজ্যান্ত হয় না।  সে মলিন এবং মৃত।  
- তুইও তো মৃত।  
- আমার তো জন্মই হয়নি তো মৃত্যু কোথায় হবে। আমি জীবনানন্দের আত্মার থেকে বেরিয়ে কখনো শ্রাবনী , কখনো প্রিয়া , কখনো তনিমা , কখনো চৈতি।  
- এরা কারা? 
- যারা জন্মেছে।  যাদের পাওয়ার আগে পুরুষরা কল্পনা করেছে আমার মতো করে।  ঠিক যেমন করে খিলজি তোকে কল্পনা করেছিল। 
- সে বিধর্মী । তার কল্পনাতেও থাকা পাপ। তোর ঘেন্না হয়না হাজার পুরুষের কল্পনায় ঘুরতে। যে তোকে রূপ দিয়েছে তার থেকে ভালো কে বুঝেছে তোকে । 
- হয়তো হয় , হয়তো নয়। সে শান্তি খুঁজে পেয়েছিলো আমার মধ্যে । হয়তো বাকিরা শুধু কামনা করে।  
- আমি শুধু এই কামনাতেই বাঁচতে চাইনি।  তাই আত্মহত্যা।  
- আমার তো আত্মহত্যারও  উপায় নেই।  আমি অমর। 
- আচ্ছা তুই কি খুব সুন্দরী ছিলিস ? 
- লোকে তো তাই বলে।  সবাই তো সুন্দর।  কার চোখে সুন্দর হচ্ছিস সেটাই বড়।  তোর তো শরীরই নেই।  কিন্তু তুইও তো সুন্দর।  
- আমি সেই ধোয়াঁশা, যার পেছনে হাজার হাজার পুরুষ ছুটে চলেছে , একটু ছুঁয়ে দেখার জন্য।  আর তোর সম্মান রক্ষার্থে আজ হাজার হাজার পুরুষ পথে নেমেছে।  তাদের কি তোর পছন্দ হয়।  
- জানিনা তারা কি করছে।  আমার বলিদান তর্কের বিষয় নয়।  সেই সমাজব্যবস্থায় আমি যা করেছি তার পরিস্থিতি এখন নেই।  এগুলো শুধু ক্ষমতাপ্রদর্শনের এক মহাযজ্ঞ।  
- আজ যদি সিনেমা রিলিস হওয়ার পর দেখিস যে বানসালি তোর সত্যে এমন রং চড়িয়েছে যে তুই নিজেই নিজেকে চিনতে পারছিস না, তখন? 
- যে তার জীবন শুধু সম্মান রক্ষার্থে দিয়েছে , তোর কি মনে হয় , তার সম্মান এতটাই ঠুনকো।  আমি শতাব্দীর পর শতাব্দী পূজিত।  এক বানসালি আমার কি করবে।  আজ যদি এক রাস্তার পাশে পরে থাকা নোংরা পাগলির নাম হয় বনলতা সেন তাহলে কি তুই নোংরা হয়ে যাবি? 
- আমি তো কল্পনা , সেই পাগলিকেও যদি কেউ ভালোবেসে ফেলে অন্তঃসত্বা করে দেয় তাহলে আমি আবার সুন্দর হয়ে যাবো।  
- তোর কাছে বলা অনেক সহজ, তোর দিকে তাকিয়ে আছে হাজার হাজার পুরুষ, আমার দিকে হাজার হাজার নারী। তুই শান্তি দিয়েছিস , আমি শান্তির খোঁজ দিয়েছি। তুই জীবনের জয়গান গাস, আর আমি অমোঘ সত্যের সাথে পাঞ্জা লড়ি।  
- কিন্তু পদ্মিনী , আমরা দুজনেই পুরুষের আকুতি , তাদের সম্মান , তাদের স্বপ্ন। 
- তা বটে , কিন্ত আমরাও তো মানুষ।  যে পুরুষরা আমার সম্মান রক্ষার্থে আলোড়ন তুলছে তারাই নারী নির্যাতনে প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে।  আমার আগে , আমার পরে অনেক রাজপুত রমণীকে তুলে দিয়েছে সুলতানদের হাতে।  সেদিন আমি নিজে চাইনি , আমি চাইনি তাদের মধ্যে একজন হতে।  আমি পালাতেও চাইনি।  পালালে সেদিন খিলজি জিতে যেত।  সে হেরেছে আমার হাতে। আমার প্রেত , তার চোখে দেখেছে পরাজয়ের দুঃখ।  আমি হারিয়ে দিয়েছিলাম তার লাম্পট্যের ঔদ্ধত্য।  আর সে যদি মুসলিম না হতো।  জানিনা তখন কি করতাম। রাজার মৃত্যুতে রানীর হাতবদল খুবই সাধারন ছিল।  সম্মান তখনও খোয়া যেত।  বনলতা , তোর জীবন আমায় দিবি ? তোর তো ধর্ম নেই।  প্রেমই ধর্ম।  এই সম্মানের ওজন আর বইতে পারছি না রে ।  আমিও চাই আমায় তোর মতো শুধু ভালোবেসে লোকে মনে রাখবে।  আমার ভয়াবহ পরিণতির জন্য নয়। আমি তোর মতো এক মন থেকে আরেক মনে ঘুরে বেড়াবো , দুই পুরুষের লড়াইয়ের কারণ না হয়ে।  
- আমি কিন্তু তোর জীবন চাই পদ্মিনী।  যেখানে কাতারে কাতারে মানুষ এসে মাথা ঝুঁকিয়ে থাকবে। 
- তুই ভুল বনলতা, তারা শুধু চায় তাদের গৃহিনী তাদের জন্য প্রাণ ত্যাগ করুক। আর কিচ্ছু না।  প্রেম নেই , ভালোবাসা নেই , আছে  শুধু এক উগ্র কর্তব্যের শেকল। আমি চাই না , নারী ফিরে যাক সেই ওজন দাঁড়ির দিন গুলোতে।  আমি চাই তারা আবার নারী হোক, কোনো মেকি সম্মান, কোনো পরিচিতি ছাড়া। তারা আত্মরক্ষায় আত্মহত্যা না করে রুখে দাঁড়াক শক্তির সাথে শক্তি হয়ে।  কিন্তু হায় , সেও কি সম্ভব। ……..  


আগের প্রবন্ধগুলো 

Tuesday, November 28, 2017

39) আধ্যানের ডায়েরী - শেষমেশ দেড়


নম্বরের কচকচানিতে আমার প্রাণ ওষ্ঠাগত।  আমার নামের বদলে একটা নাম্বার দিয়ে দিলে কাজে দিত।  আজকে একবার পটি করেছে , দুটো কাঁচের গ্লাস ভেঙেছে , তিনবার খাট থেকে পরে গেছে, চারবার ঠোকা খেয়েছে, পাঁচবার কমোটের জলে হাত চুবিয়েছে , ছবার ডাইপার চেঞ্জ করে দিয়েছে , সাতটা দাঁত বেরিয়েছে , আহ্লাদে আটখানা হয়েছে , ন চামচ খাবার খেয়েছে আর বাবা মার দশ হাল করে ছেড়ে দিয়েছে।  

এ আবার কি।  সব কিছু কি কোয়ান্টিটেটিভ নাকি। সব কিছু কি গুনে গুনে করা যায় নাকি।  কিন্তু করছে।  বাবা আর মা সেটাই করছে যা করা উচিত নয়।  এখন আমি মাঝে মাঝেই বাবা আর মা কে খাইয়ে দি।  এক বাটি সবুজ মটর নিয়ে বসেছে।  আমি গেলাম খাইযে দিতে।  থাবা মারতে বেশ কয়েকটা হাতে এসে উঠলো, কিন্তু যেই বাড়িয়ে দিয়েছি মুখের দিকে।  বাবা বললো , ‘একটা একটা করে দাও ’  একটা ড্রাম কিনে এনে দিয়েছে।  সেটাতে দুটো কাঠি ছিল বাজানোর জন্যে।  একটা কাঠি দিয়েছি হারিয়ে।  এখন একটা কাঠি আর একটি চামচ।  মা সারাক্ষন কানের কাছে বলে চলেছে , ‘দ্বিতীয় কাঠিটা কৈ ’ 

চু চু টিভিও কম যায়না।  লেট আস লার্ন দা নম্বর সারাদিন গেয়ে চলেছে।  বসে আছি , বাবা খপাৎ করে হাতটা ধরেই বলে ওঠে , ‘ড্যাডি ফিঙ্গার ড্যাডি ফিঙ্গার হোয়ার আর ইউ ’ তার পরেই একটা করে আঙ্গুল ধরে আর নম্বর বলতে থাকে।  আর হয়েছে আমার জামা কাপড় জুতো মোজার সাইজ।  রোজ তর্ক চলছে কোন সাইজ কতদিনে ঠিক হবে।  ২টি না ৩টি।  আমি অন্যদের থেকে আবার একটু সাইসে বড় কিনা , তাই গ্রোথ অনেক বেশি।  তাই আমি জামাকাপড়েও এঁচোড়ে পাকা।  এই নেগেটিভ টার্মটা কিন্ত বাবার বার করা , আমি নেই এসবে। 

সবথেকে বড় সমস্যা চোখ লাল লাল ডেভেলপমেন্টাল মাইলস্টোন নিয়ে।  আমি ঠিক বুঝতে পারিনা , আমি কুকুরছানা না মানুষ।  সবাই তো সবসময় বলতে থাকে , সব মানুষ আলাদা।  তাহলে মাইলস্টোন আবার কি।  আমি কবে কথা বলতে শিখবো সেটা নিয়ে রোজ সকালে বাবা মা চুল ছেঁড়াছেঁড়ি করে।  বলবো রে বাবা , এতো তাড়া কিসের।  আমি প্রিপেয়ার করছি।  তোমাদের মতো বিনা প্রিপারেশনে ভুল ভাল লিটারারি ননসেন্স ক্রিয়েট করছি না তো।  প্রথমত ল্যাঙ্গুয়েজে ব্যারিয়ার।  বাবা মা যে ভাষায় কথা বলে ডে কেয়ারে অন্য ভাষা।  বাবা মাও বাংলায় পুরো কথা বলে না। গিভ মি দা আলু।  এ আবার কি কথা।  তার ওপর আবার সেই , ওয়ান পটেটো টু পটেটো থ্রি পটেটো গান চলতেই থাকে।  আমিও এই বেংলিশের চক্করে গুবলেট পাকিয়ে যাই।  এই কনফিউশানের চক্করে আমার আর কথা বলা হয় না।  

যা করছি না তার দিকে বেশি নজর।  কিন্তু যা করছি সেটাকে লক্ষ্য করছেই না।   অন্যদের থেকে আগে আমি ঘরের লক খুলে বেরিয়ে গেছি।  কেউ পেরেছে। একদিকে ডিশওয়াসার খুলে আরেক দিকে ওভেন খুলে একটার থেকে আরেকটাতে ঝাঁপিয়েছি।  কেউ পেরেছে।  ছুটে ছুটে সবাইকে ক্লান্ত করে মেরেছি।  নিজেই সোপ বাবল বানানোর চেষ্টা করে চলেছি।  সেলোটেপ দিয়ে আটকে রাখা সুইচ গুলো সেলোটেপ খুলে জ্বালিয়েছি আর নিভিয়েছি।  এখন তো বোতলের ছিপি পর্যন্ত খুলতে শিখে ফেলেছি।  কি এগুলো তো কোনো ডেভেলপমেন্টাল মাইলস্টোন গণ্য হয় না।  আমি এতো কিছু পারি, তাহলে যা পারিনা , তাতে তো ডিসকাউন্ট পাওয়া উচিত।  শুধু নেগেটিভিটি।  

শুধু তাই নয় , যা করছি সেটাতেও শুধু বারণ।  ‘বাবা তোর বয়স হয়নি এখনো।’ এই একটা কথায় আমার হাড় পিত্তি জ্বলে যায়।  বয়স আবার কি।  এক্সপেরিয়েন্স ম্যাটার্স।  লোকেদের বলে আসছে , ছেলে আমার বয়সের তুলনায় লম্বা হয়ে যা সব কিত্তি দেখায় , অথচ কথা বলতে বা বুঝতে না পাড়ার জন্য আমরা ওকে আটকাতে বা শেখাতে পারিনা।  এটা পুরো ফাঁকিবাজি কথা।  নিজেরা বসে বসে সিনেমা দেখবে।  আর আমি যদি গিয়ে টিভিতে চুমু খাই তাতেই সবার সমস্যা।  নিজেরা ঘাড় ধরে বড় করার চেষ্টা করে চলেছে।  আমায় স্নান করানোর সময় ওপর থেকে ফোয়ারা ছেড়ে দেয়।  আমার তো হাপুচুপু অবস্থা।  অথচ আমি যখন গিয়ে কল বন্ধ করার চেষ্টা করি তখন বলে বয়স হয়নি।  

যাইহোক এই রোজকার রোজকার কথা আর ভালো লাগছে না।  বুঝতে পারছি বড় না হলে কেউ আমাকে বিশেষ সিরিয়াসলি নেবে না।  শুধু যোগ বিয়োগ গুন্ ভাগ না করলে এদের কোনো শান্তি নেই।  ফাইনালি আমি আজকে প্রো টডলার।  আজকে আমার দেড় বছর কমপ্লিট হলো।  তোমরা সবাই আমার জন্মদিনের আশীর্বাদ নিয়ো।  এক থেকে দেড়ের মধ্যে অনেক খেলা দেখিয়েছি।  আরো খেলা বাকি আছে।  অপেক্ষায় থাকো আর চোখ রাখো।  ততদিন টাটা।  



আধ্যানের ডায়েরি

Friday, November 24, 2017

প্রথম চুম্বনের ঠিক আগে

ব্যাপারটা কি ঠিক হবে ? ও কি আমার ডেসপারেশন বুঝতে পেরে যাবে।  ডেসপারেট তো আমি বটেই।  আর এতে খারাপ কি আছে।  অনেক দিন তো হলো।  সিনেমার প্রেমে তো প্রেমের সূত্রপাতই চুম্বনে।  এখানে তো শুধুই প্রতীক্ষা।  কিন্ত ব্যাপারটার মধ্যে সিনেমাটিক সৌন্দর্য্য না সৃষ্টি করলে মনে রাখার মতো কিছু থাকবে না।  কত বড় বড় ঋষি মুনি লিখে গেছেন তাদের প্রথম চুম্বন নিয়ে।  ওর ওই ঠোঁট দুটো কি যে টানে না।  কিন্ত চুম্বন বড্ডো বেশি ওভারহাইপড না । এটা তো পরিণয়ের পরিণতি।  কিন্তু পরিণতি তো সেক্স।  তবে এর প্রয়োজনীয়তা কি ? এ তো সেক্সের আহ্বান।  আমি কি তাই চাই।  অবশ্যই।  কিন্তু এখনই কি চাই ? অবশ্যই না।  সারা জীবন পরে আছে।  তবে কি চাই।  শুধু একবার চুম্বন। অনেক কষ্টে পটিয়েছি।  যদি হাতছাড়া হয়ে যায়।  কিন্তু স্বপ্নকে বাস্তব করার দরকারও তো আছে।  কতদিন আর ভেবে ভেবে কাটাবো।  যদি আমি চটকে দি।  নাকে নাকে ধাক্কা লাগেনা সেটা অলরেডি প্রমাণিত।  কিন্তু বাকি গুলোও তো সমস্যা।  পেট পরিষ্কার না থাকলে মুখে গন্ধ হয়।  আমি না হয় ভেবে করছি।  কিন্তু ওকে ভাবার সময় দিলে ব্যাপারটা কি ভালো দেখাবে।  ওর সাথে কি আলোচনা করবো।  সব কিছু বলে করার মধ্যে আনন্দ কোথায়।  সারপ্রাইস বলেও তো একটা জিনিস আছে।  কিন্তু সারপ্রাইস যদি ওর ভালো না লাগে।  বিশেষ করে এটা তো দেওয়া নয়।  নেয়াও।  যদি ওর মুখে গন্ধ থাকে।  সকালে ব্রাশ করতে ভুলে যায়?  সব কিছুতে আমি এতো ভাবি কেন।  এতো খুঁতখুঁত করলে কিছুই পাওয়া যায় না।  পাশে বসলে কি সুন্দর গন্ধ বেরোয় ওর গা থেকে।  কিন্তু কখনো তো খারাপ গন্ধ নাকে আসেনি।  কোনো এক সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যা এর জন্য চটকে না যায়।  সিনেমায় তো কি সুন্দর ছেলেরা ঠোঁট এগোলে মেয়েদের চোখ বন্ধ হয়ে আসে।  কিন্তু সেসব তো টোটাল সাবমিশনে। যখন দুপক্ষই রেডি। লোকে বলে মেয়েরা তাদের শরীর তাকেই দেয় যাকে সে ভালোবাসে।  ও কি আমায় ভালোবাসে।  কিন্ত আমি কি ওর শরীর চাইছি নাকি।  মানে ঠোঁট অবশ্যই শরীরের পার্ট কিন্তু তাও শরীর ব্যাপারটা পাঁচফুট সাত ইঞ্চি পুরোটা।  আমি তো হাফ ইঞ্চি বাই দেড় ইঞ্চির ডিমান্ড করছি।  উফফ প্রচন্ড ক্যালকুলেশন করছি।  ইঞ্চিগুলো গোলমাল না হয়ে যায়।  হলেই বা কি।  আমি যা চাইছি আমি জানি। ও রেডি হয়ে গেলেই ব্যাপারটা ঘটে যাবে।  কিন্তু তাহলে তো বলতে হবে। কতবার তো একেবারে কাছে চলে এসেছিলাম।  কিন্তু কি যেন আটকে নিয়েছিল।  টেনে নিয়ে করে নিলেই তো হয়।  হাতে তো চুমু খেয়েছি কতবার।  ইলেকট্রিক শক তো লেগেছিলো।  ওতেই তো শান্তি পেতে পারতাম।  এই ফ্রেঞ্চরা সব কিছুতেই বাড়াবাড়ি।  থুতু থুতুতে না মিশলে যেন আর কিছু থাকে না।  যদি সর্দি থাকে ? একটু আগেই যদি ওয়াক থু করে একটা বড় কফওয়ালা থুতু ফেলে আসে।  ইসসস।  সব রোগ তো থুতুতেই থাকে।  যদি আমরাও হয়ে যায়।  আর রোগ হওয়ার পর ব্রেকাপ হয়ে গেলে তো সব খোয়াবো।  কি দরকার।  আগে রিলেসন পাকা করতে হবে।  কিন্তু রিলেশান কি আম নাকি, যে রং পাল্টালে বুঝতে হবে পেকে গেছে।  কিছুটা হিমসাগরের মতো।  কিন্তু পাকা চোখ না থাকলে ভুল হিমসাগর খাওয়া হয়ে যায়।  কিন্তু পাকা চোখ হতে গেলে অনেকের সাথে প্রেম করতে হবে।  কিন্তু এ তো আমার এক এবং একমেবাদ্বিতীয়ম।  এখন কি করি।  পাত্রীই যদি না রেডি হয় তাহলে স্থান আর কাল ভেবে কি লাভ।  বলে না , রোমান্টিক প্লেসে নিয়ে গেলে সব রোমান্স বেরিয়ে আসে।  ফুলের বনে মানে নার্সারিতে নিয়ে যাবো?  ধুর ধুর ওখানে কি করে চুমু খাবো।  তার থেকে সর্ষে খেতে।  দিলওয়ালে দুলহানিয়া টাইপ। নাহঃ বড্ডো পোকা ওড়ে।   সিনেমাতেই দেখতে ভালো লাগে।  কাশবনে।  সবে তো গ্রীষ্মকাল ।  সারা বছর অপেক্ষা করার মতো পেশেন্স আমার নেই।  একমাত্র নদীর ধার আমার জায়গা, বা পার্কে।  সেখানেও তো পেছন থেকে কেউ না কেউ এসে খুঁচিয়ে যায়।  তাহলে কোথায় ? সেসব পার্কে নিয়ে যাই যেখানে সবই চুম্বনে রত থাকে। অন্তত দেখে যদি অনুপ্রাণিত হয়ে যায়।   ধুর গা ঘুলিয়ে ওঠে ওসব জায়গায়।  আমার না , ওর।  তাহলে বাড়িতে ডাকি ? মা চল্লিশ বার করে এসে খবর নিয়ে যায়।  ওর ঘর তো ছাদে।  বেশ নিরিবিলি।  কিন্তু বিপদ যেকোনো সময় আসতে পারে।  তার ওপর ওর দাদা আছে।  কি জ্বালা।  আকাশে এক ফালি চাঁদ উঠবে।  ফুরফুরে হাওয়া দেবে।  চুল উড়বে।  এইসব হচ্ছে আইডিয়াল সময়।  কিন্ত এই পোড়া দেশে সেসব ভেবেই লাভ নেই।  একটা চুমু খাওয়া ক্রিমিনাল এক্টিভিটির মতো।  ভাঙা বাড়ি , রিজেক্টেড কারখানা , আন্ডার ডেভলপমেন্ট শপিং মল, এইসবে কি আর রোমান্স আসে।  কিন্তু পাশে এসে বসলেই তো আমার হয়ে যায়।  ও আর আমি , আমার তো কি বাকি কিছু আর চোখে বা মনে পরে না।  এই ডিস্পিরিন টাইপ ঘুলে গিয়েই আমার সমস্যা।  আসল জিনিসেই কন্সান্ট্রেট করতে পারিনা।  লোকে হাসবে শুনলে। বন্ধুরা তো ভাবে এতদিন হয়ে গেলো  এখন তো বাচ্চা টাচ্চা নিয়েও ভাবছি।  কিন্তু এখানে তো সন্নাটা।  কালকে অমাবস্যা।  কালকে সুযোগ।  ওসব তাজমহলের ওপর পূর্ণিমা টুর্নিমা প্রো দের জন্য।  আমি নভিস।  প্রথমে ভুল করবোই।  প্র্যাক্টিস মেকস পারফেক্ট।  শুরু করেই দি।  আমি জানি ও আমাকে ভালোবাসে।  খুব একটা সমস্যা হবে না।  সরি বলতে কি দোষ।  কারো কাছে শুনিনি যে ভুল চুমুতে ব্রেকাপ হয়েছে।  হলে হবে।  মেয়ের কমি নাকি।  এই একটা এক্টিভিটি তে তো আর কেউ নেই।  বাবা মার্ কাছ থেকে তো শিখে আসবো না।  যেসব ইন্টারনেটে ভিডিও টিউটোরিয়াল আছে , সেগুলো দেখলে হাত অন্য জায়গায় চলে যায়। ওকেই আমাকে শেখাতে হবে , আর আমাকে ওকে।  তাহলে সমস্যা কি ? শুধু কনফিডেন্স এর অভাব।  ডর কে আগে জিৎ হ্যায়।  আজ না হলে কাল।  কিন্তু শুরু তো করতে হবে।  কত কনফিউশন।  আগে আপার লিপ , না লোয়ার।  হাত কি পিঠে , না কোমরে।  বুকে বুক , না পাশাপাশি।  আলতো করে , না খামচে ধরে।  লম্বা চলবে , না পরশপাথর টাইপ। চোখ খুলে , না বুঁজে।  আমাকেই এগোতে হবে সেটা জানি।  কিন্তু মোটামুটি একটা ছক থাকলে বেশ হয়।  ব্যাপারটা ইনস্ট্যান্ট। কিন্তু দুধ, জল , চিনি  জোগাড় করে না রাখলে সব গড়বড়।  ওকে, বি কনফিডেন্ট।  মিষ্টি করে বলবো , আগে এগিয়ে ধরবো , ছোট্ট করে করবো , ছিটকে গেলে সরি বলবো।  আর কি ? এই ব্লুপ্রিন্ট স্টার্টিং এর জন্য এনাফ।  এর সাথে ক্যাজুয়াল ড্রেস , মিষ্টি পারফিউম , দশ মিনিট আগে ক্লোরোমিন্ট ,  খালি জায়গা আর হ্যাঁ - একটা গিফট।  গিফট দিলে অনেক গন্ডগোল মিটে যায়।  কনফিডেন্স ইস দা কি।  বাকি সব অদরকারি।  কিন্তু চিন্তা যেন মেটে না।  বিশ্লেষণে মাথায় আরেক সমস্যা এসে দাঁড়াল।  পেট খালি করে গেলে মুখে গন্ধ হয় , আর পেট ভর্তি থাকলে ঢেকুর উঠতে পারে।  চুমু খাওয়ার সময় ঢেকুর উঠতে চাইলে কি করবো।  ধুর ধুর ধুর ধুর।  আর ভেবে লাভ নেই।  সবাই পাদে , সবাই ঢেকুর তোলে আর সবাই শেষমেশ চুমু খেয়েই ফ্যালে।  এতো ভাবে না।  প্রিপারেশন ইস ইম্পরট্যান্ট যখন কোনোকিছুকে পারফেক্ট করতে হয়।  কিন্ত মিস্টেক কোনো জিনিসকে মেমোরেবল করে তোলে।  জ্ঞান প্রচুর , কিন্তু ফাটছেও প্রচুর।  নো ফিয়ার , যা হবে দেখা যাবে, মাভৈ।   

ঠিক আগে সিরিজ