Friday, August 25, 2017

আধ্যানের ডায়েরি - আমায় টেরোরিস্ট বলা??





কানাঘুঁষোয় শুনতে পাচ্ছি আমার নাকি মার্কেটে নাম খুব খারাপ। খু-ও-ও-ব খারাপ। লোকে নাকি আমার মিডিল নেম টেরোরিস্ট রেখেছে।  এটা আমি জানতাম না।  খুব দুঃখ পেয়েছি শুনে।  আরো দুঃখ পেয়েছি এই ভেবে, যে এই লোকগুলো বড়ই হয়েছে , বুঝমান হয়নি।  আর দেশের হাল নাকি এরাই ধরে আছে।  এই পৃথিবীকে নাকি এরাই শিশুদের বাসযোগ্য করে যাবে। একশো বছরেও করতে পারেনি , এখন এই মাথা নিয়ে কি আর করবে। 

আসলে কোনো একশানই খারাপ নয়।  ইন্টারপ্রিটেশন খারাপ।  যাদের কথা পৃথিবী শোনে তারা যদি কাউকে ভুল বোঝে , তাহলে সবাই তাকে ভুল বুঝবে।  আমি চেষ্টা করলেও আমার নাম ঠিক করতে পারবো না, কারণ আমার কন্সট্রাক্টিভ মুভমেন্ট এরা ডেস্ট্রাক্টিভ ধরে নিয়েছে।  টেরোরিস্ট শব্দের অর্থ হলো যারা লোকেদের মনে ভয়ের উদ্রেক করে।  আমি তো এন্টারটেনার।  যদি আমার ওয়ে অফ এন্টারটেনমেন্ট লোকদের মনে ভয়ের সঞ্চার করে তাহলে , "এমা ভীতু , কাপুরুষ বা কামহিলা বলে," ওদের জাজ্জা করে ছেড়ে দেওয়া উচিত। 

আমার এখন অবসারভেশান , অবসর্প্শন , ডিসেকশন , ইম্প্লিমেন্টেশন , রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং করার সময়।  ওই বড়দের মতো , "থাক, করে কি হবে ?" ভাবনা আমার মধ্যে না রাখাই ভালো।  ভবিষ্যৎ তো আমারই কাঁধে।  আর আমি যদি প্রতিটা জিনিস ঠিকঠাক না শিখি তাহলে আমি ফিউচার বিল্ড করবো কি ভাবে।  যারা আমার সমালোচনা করে , তারা নিজেরা অক্ষম। তাই কাঁকড়ার মতো পিছনে টানা তাদের  অভ্যাস। তাদের উচিত আমার প্রয়াসকে উৎসাহিত করা।  আমি যদি হালুমের লেজ ভাঙি তাহলে সেটা যদি তারা ভাঙা মনে করে, তাহলে তো হয়েই গেলো।  হালুম ইস জাস্ট এ  স্পেসিমেন ফর মাই এক্সপেরিমেন্ট।

আচ্ছা আমি একটু শর্টে বলছি আমি কি কি করি।  আমি জানিনা এর কোনটা লোকেদের মনে ভয়ের উদ্রেক ঘটিয়েছে।  আমি যেকোনো বাড়িকে   আমার ল্যাব বলে মনে করি।  নতুন কোনো ল্যাব পেলে আমার কিছু সেট অফ একশান আছে।  প্রথমে আমি বোঝার চেষ্টা করি জায়গাটা সেফ কি না।  তার জন্য মা বা বাবার কোলে সেঁধিয়ে একটু ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকি।  এতে কি হয় , ঘরের লোকজন আইস ব্রেক করতে এগিয়ে আসে।  এই আইস ব্রেকার থেকে তাদের হসপিটালিটি এনালাইজ করি।  আমি তাদের ওপেননেস আর একসেপ্টেন্স অফ চেঞ্জ বুঝে নিই , যাতে আমি বুঝতে পারি যে আমি কিছু করলে তারা ঠিক কতটা রিঅ্যাকশন দিতে পারে।  এটা ইম্পরট্যান্ট কারণ মানুষ তিন ধরণের , প্রোএক্টিভ, যারা আগেই আমায় আমার এক্সপেরিমেন্টের জিনিস এগিয়ে দেবে , রিএক্টিভ , যারা আমি কিছু করতে গেলেই হাঁ হাঁ করে তেড়ে আসবে আর রিসেপটিভ , যারা আমার সাথে চলবে , আমার কথা শুনবে ,আর আমার দরকারের জিনিস আমার ডিমান্ড অনুসারে এগিয়ে দেবে।  এই তিন ক্যাটাগরিতে প্রথমে মানুষগুলোকে বসিয়ে নিতে পারলেই আমার অর্ধেক কাজ শেষ।  কারণ ততক্ষনে আমি জানি , কাদের কাছে যেতে হবে , আর কাদের কাছে নয়। 

এরপর নিজের এলাকা মেপে নেওয়া। আমি এক দেওয়াল থেকে অন্য দেওয়ালে দু চারবার ডিফারেন্ট স্পিডে দৌড়ে নি।  আর এস্কেপ রুট মানে সমস্ত জানলা দরজাগুলো দেখেনি।  যদি জানলায় ব্লাইন্ডস থাকে তাহলে টেনে দেখে নি যে সময়কালে সেটা গুটোৱে কি না।  দু চারবার করার পর  কেউ না কেউ রিএক্টিভ মানুষ এসে আমাকে আটকে দেয়।  দরজার নব গুলোও ঘুরিয়ে দেখে নিতে হয়।  কোথাও নব থাকে , কোথাও ল্যাচ।  আগে থেকে জানা থাকলে সময়ে কাজে আসে।  তবে কোনো দরজাই আমি আপাতত খুলতে পারিনি।  তবু দেখে নি। 

এরপর হাইডিং প্লেস, হুইচ ইস অলোয়েস ইম্পরট্যান্ট ইন ক্যাটাস্ট্রফি।   আমি আমার দৈর্ঘ , প্রস্থ ও উচ্চতা মেপে একের পর এক ড্রয়ার , কাবার্ড , বা সেল্ফ খুলে খুলে দেখতে থাকি যে সেগুলো খালি কিনা।  যদি খালি না থাকে তাহলে আমিই  সেগুলো খালি করার চেষ্টা করি।  ভেতর থেকে জিনিস টেনে টেনে বার করি, আর নিচে ফেলি।  উদ্যেশ্য আর কিছু নয় , নীচে ফেললে বাড়ির লোকজন ওই জিনিসগুলো অন্য জায়গায় সরিয়ে রেখে আমার জন্য সেফ হাইডিং প্লেস বানিয়ে দেবে।  কিন্তু লোকে এটা ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা।  আর জিনিসগুলো আবার ভেতরে ঢুকিয়ে রাখে।  আমাকে তাই বার বার গিয়ে জিনিসগুলো বার করতে হয়।  রিপিটেটিভ অ্যাকশন ইস দা বেস্ট ওয়ে টু টিচ এন এনিম্যাল। 

এরপর খোঁজ পরে পাওয়ার সাপ্লাইয়ের।   যেকোনো এক্সপেরিমেন্ট এর মূল হচ্ছে পাওয়ার বা এনার্জি।  আমি ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকি কোথায় কোথায় প্লাগপয়েন্ট আছে। আমার দেশে এই চাইল্ড এক্সপেরিমেন্ট কে মাথায় রেখে সমস্ত প্লাগপয়েন্ট গুলো মাটি থেকে এক ফুট ওপরে রাখা হয়।  কিন্তু নানা ভাবে সেগুলোকে হাইড করে রাখার চেষ্টা করে বাড়ির লোকজন। ওরা প্লাগপয়েন্টগুলোকে দৃষ্টি দূষণ মনে করে।  তার ওপর আবার আমার বয়সী যদি কেউ থাকে, তাহলে প্লাগপয়েন্ট গুলো আবার বুজিয়ে রাখে।  তাই আমাকে ঘুরে ঘুরে আগে দেখে  নিতে হয় যে কোন কোন প্লাগপয়েন্ট গুলো অলরেডি অকুপাইড আছে।  মানে কোথাও স্পিকার লাগানো , কোথাও লাইট , কোথাও টিভি।  কিন্তু কর্ড গুলো লেগে থাকলে তো আর ব্যাপারটা টেস্ট করা যায়না।  তাই আমি প্রথমে গিয়ে সেই প্লাগগুলো খুলে দি।  আর সবাই হাঁ হাঁ করে তেড়ে আসে। আমিপ্রুফ পেয়ে যাই যে ওগুলো একটিভ এবং ইউসিবল। 

এরপর আমায় খুঁজতে হয় লুজলি বাউন্ড এলিমেন্ট।  কারণ আমি জানি ইন টাইম অফ এক্সিডেন্ট বাড়িতে যে জিনিসগুলো হালকা ভাবে পরে থাকে , বা সহজে মুভ করানো যায় , সেগুলো সবথেকে বেশি সমস্যা সৃষ্টি করে।  এদিক ওদিকে গড়িয়ে যায় , আর সবাই পালানোর সময় হোঁচট খেয়ে ক্যাওস সৃষ্টি করে।  ঘরের শোভা বৃদ্ধির জন্য এগুলো দরকার বটে , কিন্তু আমার কাছে এর একটা লিস্ট বানানো খুব ইম্পরট্যান্ট।  তাই আমি প্রত্যেকটা জিনিসের কাছে গিয়ে নাড়িয়ে দেখে নি সেগুলো টাইটলি কাপলড কিনা।  প্রোএক্টিভলি আমি কিছু লুজলি কাপলড দাঁড়িয়ে থাকা জিনিস মেঝেতে শুইয়ে দি , যেমন ডাস্টবিন , প্লাস্টিক চেয়ার , লম্বা কার্ডবোর্ড বক্স, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার  ইত্যাদি।  এই প্রসেসে মাঝে মধ্যেই  কিছু ফ্র্যাজাইল জিনিস পড়ে ভেঙে যায়।  সবাই এটা নেগেটিভলি নেয় ,  কিন্তু সবার এটা বোঝা উচিত, একমাত্র জীবন ছাড়া বাকি কোনো ফ্র্যাজাইল জিনিস ইউস করলে জীবনেরই সমস্যা হয়। 

টিভি,  কম্পিটার মনিটর আর ল্যাপটপ  আমার কাছে বেশ ইম্পরট্যান্ট।  কারণ এগুলো বড়দের এক্সপেরিমেন্টের জিনিস। হোক না , তবুও  আমি দায়িত্ব নিয়ে আগে ওগুলোর ফ্রাজিলিটি টেস্ট করি।  ডিউরাবিলিটি আরেকটা ইম্পরট্যান্ট ফ্যাক্টর ফর দিস লার্জ ইনভেস্টমেন্টস।  কিন্তু আমি ছাড়া কেউ সেটা চেক করেনা। ল্যাপটপ বিশেষ করে।  ওটা নাড়ালেই ঘাড় ফার গুঁজে সেধিয়ে যায় বটে।  কিন্তু কিবোর্ডে একটা থাপ্পড় কষালে , তবে বোঝা যায় যে সেটা আসলে টেকসই কিনা।  মায়ের ল্যাপটপ ওয়াটারপ্রুফ কিনা সেটা চেক করেছিলাম , কিন্তু ফেল করলো।  মোবাইল কোম্পানি গুলোতো  এখন জলের মধ্যেই  মোবাইল রেখে বেচে , কিন্তু আমার কোয়ালিটি কন্ট্রোলে সেটাও ফেল করেছে।  তাই আমি সবার বাড়িতেই চেষ্টা করি যে মোবাইল বা যেকোনো ইলেক্ট্রনিক জিনিসে জল ফেলে , বা জলে ওগুলো ফেলে চেক করার। আমার হাতের কাছে জলের সোর্স বলতে অনলি কমোটের জল।  আমি সেটাই ব্যবহার করার চেষ্টা করি।  সবাই ইশ ইশ বলে তেড়ে আসে।  আরে বাবা আমি কি গুয়ে  ফেলছি নাকী।  এইটুকু হাইজিন সেন্স আমারও আছে।  আমি আট দশবার ফ্লাশ করে তবেই বাকি সব কাজ করি, ফর্সা টুকটুকে ট্রান্সপারেন্ট জলে। 

       
এই সমস্ত সেফটি মেজার চেক করে আমি মুভ করি রান্নাঘরে।  আমার অ্যাকচুয়াল প্লেগ্রাউন্ড , এন্ড প্লেস অফ ইনোভেশন।  রান্নাঘর একটা নলেজের খনি।  আমি প্রথম দিনই অবাক হয়ে গেছি ট্রান্সফরমেশন অফ এনার্জি দেখে।  নব ঘোরালে আগুন জলে , বোতাম টিপলে শক্ত জিনিস গুঁড়িয়ে যায় , গুঁড়োতে জল ঢাললে গোল পাকিয়ে যায় , সেই গোল আবার একটা লম্বা কাঠের নিচে রাখলে পাতলা গোল হয়ে যায় , সেটা আবার আগুনে দিলে চ্যাপ্টা গোল হয়ে যায়।  এক একটার সাউন্ড এক এক ধরণের।  জল আগুনে দিলে গরম হয় , আবার কল টিপলেও গরম জল পরে।  আমি দেখতে থাকি আর শিখতে থাকি। আমি দেখেছি মা একটা গোল মতো বাক্সের ভেতর আমার দুধের বোতলটা ঢুকিয়ে দিয়ে একটা বোতাম টিপলেই গাঁ গাঁ  করে শব্দ হয়।  আমি চ্যাঁচালে কিছুক্ষনের মধ্যে থেমে  যায়।  আর হ্যা ওই বোতলটা আগে যেখানে ছিল সেটা আবার ঠান্ডা।  ঘরের থেকে ঠান্ডা।  একই ঘরে এক হাতের মধ্যে ঠান্ডা জায়গা আর গরম জায়গা।  আমি গ্যাসের নব ঘোরানোর চেষ্টা করে দেখেছি , ঘুরছে, ওই  বড় বাক্সের বোতাম টিপে দেখেছি চলছে।  আমি পারছি আমি শিখছি , আমি আগে এগোচ্ছি।  আর এই এগোনোর পথে আমায় সাহায্য করে, আমায় শক্তি যোগায়  সারা রান্নাঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা নানা ধরণের পুষ্টিকর খাবার।  তাই আই লাভ রান্নাঘর।

এইতো হলো আমার এক্টিভিটি লিস্ট।  কোন জিনিসটাকে আমি জাস্টিফাই করতে পারলাম না বলতে পারেন।  অল আর কন্সট্রাক্টিভ, এন্ড ফর দা সেক অফ হিউম্যানিটি।  সমস্যা কোথায় ? সমস্যা তাদের মনে যারা মনে করেন চেঞ্জ ইস দা অনলি কনস্ট্যান্ট।  আমি যা ভাঙি তা ভাঙার জন্যই অপেক্ষা করছিলো।  আমি শুধু সেই এনভায়রনমেন্টটা ক্রিয়েট করেছি। 

আমার বিহেভিওর নিয়েও লোকে প্রশ্ন তুলেছে।  আমি নাকি আননেসেসারি চ্যাঁচাই, আর সবাইকে বকি।  আই এগ্রিড অন চ্যাঁচানো।  কিন্তু আননেসেসারি কিনা সেটা আমি এখুনি এক্সপ্লেন করে দেব।   আমার চারপাশে যা চলছে আমার চিৎকার তার প্রতিবাদ মাত্র।  যখন কোনো ভালো গান মিন মিন করে গাওয়া হয় তখন তাকে মিনমিনে আর প্যানপ্যানে গান বলে ইগনোর মারা হয় ।  কিন্ত যদি কোনো ফালতু গান জগঝম্প শব্দযন্ত্র সহযোগে বাজানো হয় তখন মনে হয় হ্যা দম আছে গানটার মধ্যে।  আমি অনেক চেষ্টা করেছি , মিট্টি মিট্টি করে হামি খেয়ে ব্যাপারগুলো বোঝানোর জন্যে।  কেউ বোঝেনি।  আমার ডাইপার নিয়ে সমস্যা , বাবা মায়ের মধ্যে কান ফাটানো ঝগড়া , বাবার এতদিন পরে আসা ,  আমাকে জোর করে খাওয়ানো , শুধু কি খাওয়ানো?  সব কিছু নিয়ে জোর করা , জোর করে আমাকে ডে কেয়ারে দিয়ে আসা , সব কিছুর প্রতিবাদে আমি শুধু কেঁদেছি,  তখন সবাই আহা উহু করেছে।  কিন্তু কেউ তো কোনো কথা শোনেনি।  এখন আমি তাই চিৎকার করি।  চিৎকার করে বুঝিয়ে দি  ,যে আমি বড় হচ্ছি আর তোমরা বুড়ো।  আমার কথাও  তোমাদের  শুনতে হবে। 

শুধু কি এই ,  যেকোনো পার্টিতে নিয়ে গিয়ে আমায় ছেড়ে দেওয়া হয়।  একটা মিনিমাম এটিকেট পর্যন্ত নেই যে আমায় লোকেদের সাথে ইন্ট্রোডিউস এটলিস্ট করিয়ে দেবে।  শুধু কোল থেকে বাচ্চাদের ভিড়ের মধ্যে নামিয়ে দিলেই  বাবা মার কাজ শেষ হয় না।  আমিও মানুষ।  আর আমি অন্যদের মতো হ্যালহেলে  নই।  মানছি আমার বয়সীদের সাথে আমার নিজে থেকে ভাব করলে সোশ্যাল স্কিল বাড়ে।  কিন্তু সবসময় স্কুল স্কুল এনভায়রনমেন্ট তৈরী করে রাখলে যেকোনো মানুষ বোর হয়ে যায়।  আমিও যাই।  তার ওপর সব পার্টি তে সবাই আমায় একসেপ্ট করবে কেন।  সবার নিজের গ্রূপ আগে থেকে তৈরী আছে।  আমি গিয়ে মাথা গলালে সমস্যা তৈরী হয়। ওরা যখন আমাকে একসাইডে করে দেয় আর নিজের বাবা মা যখন পাত্তা দেয়  না,  তখন আমায় চেঁচিয়ে এটেনশন নিতে হয়।  যাতে লোকে বুঝতে পারে আমি আছি।  এটা চিৎকার নয় , এটা আমার এক্সিস্টেন্স রোর। 

আবার যত বড়ো হচ্ছি তত লোকে আমাকে অন্যদের সাথে তুলনা করছে।  অন্যরা ভালো , আমি খারাপ।  বাবা আবার এক কাঠি বাড়া।  বাবার মতে আমি নাকি মেয়েদের পেছন পেছন ঘুরি, আর মেয়েরা পাত্তাও দেয়না।  আমি নলেজের পেছনে ঘুরি , সবাইকে নিজের মতো ভেবোনা।  দিন রাত তো মায়ের পেছনে পেছনে ঘোরো, জল দাও ,খেতে দাও, গামছা দাও , চাবি দাও , সাবান দাও।  কখনো দেখেছো আমাকে কারো পেছনে এরকম করে ঘুরতে।  আমার অনেক বান্ধবী আছে বটে, কিন্তু তোমার মতো মিন মাইন্ডডেড কমেন্ট আমার মাথায় আসে না। 

মা আবার কোথা থেকে শুনে এসেছে, আমি নাকি আবার সবাইকে এটাক করি।  সবার হাত থেকে জিনিস কেড়ে নি।  আবার বলছি , ভুল ইন্টারপ্রেটেশন ইস দা মোস্ট এক্সপেন্সিভ থিং ইন নলেজ গ্যাদারিং। আমার কিউরিওসিটি আছে সব জিনিসে।  যা আমি জানিনা সেটা আমি দেখে , চেখে আর হাতে রেখে তবে শিখি।  কেউ কোনো জিনিস হাতে ধরে থাকলে , যদি সেটা আমি নিজে নিয়ে থাকি আর শেখার চেষ্টা করি তাতে ভুল কোথায়।  আমার হাত থেকেও তো তোমরা নানা জিনিস কেড়ে নাও।  শুধু হাত থেকে ??? মাঝে মাঝেই তো আমার মুখ খুলে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেখো আর বলো , "দেখিতো কি খেলি। " এটা অসভ্যতা নয়? আমার মতে না , তোমাদের কিউরিওসিটি তোমাদের এই কাজ করতে বাধ্য করেছে। তবে কেন আমার একটিভিটি কে এই নোংরা অ্যাঙ্গেলে  এনালাইসিস করা হয়। 

রিসেন্টলি একটা কমেন্ট শুনে রাগে আমার গা রি রি করে জ্বলে গেছে।  আমার একটা বান্ধবী আছে আয়ুষী।  আমার থেকে বড়।  বেশ সুন্দর।  কিন্ত বড্ড বেশি ভালো।  মানে সব ভালো গুলো জুড়ে জুড়ে যেন আয়ুষী তৈরী হয়েছে।  বাবা মা যা বলে তাই করে।  উল্টোটাও সত্যি।  নিজে থেকে যা যা করে বাবা মার কাছে সেটা ভালো লাগে।  সময়ে হাঁটতে শিখেছে , সময়ে কথা বলেছে , সময়ে খাবার খেতে শিখেছে।  আমার মতো একেবারেই নয়।  খুব ডিসিপ্লিন আর খুব সুন্দর।  বার বার সুন্দর বলছি বলে বাবা ডোন্ট টেক ইট আদারওয়াইজ।  ইটস জাস্ট এ ম্যাটার অফ এক্সপ্রেশন।  তা সেই আয়ুষী এখন সবার চোখে প্যারামিটার।  আয়ুসী রিচ্ড দা টপ এন্ড আই এন্ড আপ ইন বটম।  এক আন্টি এই নিয়ে কন্ট্রোভার্সিয়াল কমেন্ট করেছে , "ওদের দুজনকে এক সাথে রেখে দিতে হবে , তাহলে হয়তো আধ্যান ভালো হয়ে যাবে। " আই অবজেক্ট ফ্রম বটম অফ মাই হার্ট।  ভালো হয়ে যাবে মানে কি ? ভালো খারাপ ইস জাস্ট এ পারস্পেকটিভ।  আমার কাছে প্যান্টে পটি করা ভালো , আংকেল কমোটে পটি করে আর হাসব্যান্ড হিসেবে ভালো নয় ।  তাহলে কি আংকেলকে আমার কাছে রেখে যাবে যাতে আংকেল প্যান্টে পটি করা শিখে ভালো হাসবেন্ড হতে পারে।  মুখ খুলিও না।  ট্রুথ ইস অলওয়েজ আগলি। 


আমি সত্যি বলি বলে , আমি ভালো কাজ করি বলে , আমি সবার কথা ভাবি বলে সবাই আমাকে টেকেন ফর গ্রান্টেড ভেবে যা ইচ্ছা তাই বলছে।  আর এই বাবা  আর মা জুটেছে।  যেখান সেখান থেকে আমার নামে কথা শুনে এসে ডিপ্রেশনে ভোগে, আর আমাকে জ্ঞান দেয়।  আগের ডে কেয়ার থেকে কমপ্লেন এসেছিলো বলে আমার ওপর চোটপাট করলো , কিন্তু একবারও ভাবলো না ওরা  কি করেছে আমার সাথে।  হেল্প ইয়োরসেল্ফ বিফোর হেল্পিং আদার।  তোমার ছেলেকে লোকে টেরোরিস্ট বলছে আর তুমি ঢোক গিলে হেঁ -হেঁ , হেঁ- হেঁ,  বটেই তো, বটেই তো, করে চলে আসছো, এটা কোন ধারা পেরেন্টিং।  আমি আমার লেখায় আমার সমস্ত একশান , সমস্ত মুভমেন্ট জাস্টিফাই করে দিলাম।  পারো তো ক্রস করো , না পারো তো অপেক্ষা করো যতদিনে আমি তোমাদের ক্রস করে দি।  

আধ্যানের ডায়েরির আগের পাতাগুলো 


Thursday, August 24, 2017

শব্দজব্দ


"তুই নরকে যাবি ছিনাল।" হাতে নাতে বৌকে ধরে ফেলে এই উক্তিটাই করেছিল ইদ্রিস। ইদ্রিসের বৌ হিন্দু। তাই জাহান্নামের অভিশাপ দিতে গিয়েমুখে আটকালো। শব্দ নিয়ে খেলা করা যার অভ্যাস, সে কি করে এই চরম মুহূর্তেও তার শব্দজ্ঞান বজায় রাখে তা নিতান্ত ঈর্ষণীয়। কিন্তু ইদ্রিসের "শড়া অন্ধা আছি" হয় না। প্রত্যেক শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থের পেছনে সে যে সময় ব্যয় করে তার বদলে যদি জীবিকা উপার্জনের জ্ঞান সে সংগ্রহ করতো হয়তো তাতে বেশি লাভ হতো। 

শব্দের প্রতি তার এই যে প্রীতি তার কারণ শব্দজব্দ। সে এক নাম করা ক্ষেতের জোত্চাষী। ক্ষেতটি নাম করেছিল যখন পাশের পাড়ার মৃন্ময় সাধুখাঁ ক্ষেতটি তার নিজের রক্ত দিয়ে আল দিয়েছিলো। অবাক লাগলো, না? ইদ্রিসেরও অবাক লেগেছিলো।  চার মেয়ের পর যখন শেষ মানতে মৃন্ময়ের ছেলে হয়, তখন তার ভীষ্ম প্রতিজ্ঞা রক্ষার্থে বুকের রক্ত দিয়ে গন্ডি কেটে দান করেছিল আবু হাসান মোল্লা কে।  মৃন্ময় গ্রামের মোড়ল এবং উচ্চশিক্ষিত ধনী।  কমুনিস্ট সরকার সবকিছু ছিনিয়ে নেওয়ার পরেও যা তার হাতে পরেছিল তা প্রায় অর্ধেক গ্রামের পেট চালায়। অর্থ বড় স্বার্থপর  এবং অভিমানী।  তাই পরবংশে বিলিয়ে না দিয়ে , নিজ বংশে রক্ষা করার জন্য সব ধর্মের সব দেবতাকে এক সাথে মানত করেছিল মৃন্ময়।  তার মানতের কথা শুনতে পেরেছিল এই হাসান মোল্লা নামের মুসলমান।  বলেছিলো , দশ শতাংশ জাকাত তো তোরা দিবিনা।  তাই অন্তত কিছু দান করিস।  ওদিকে রামু পন্ডিত শুনে বলেছিলো কিচ্ছু দান করিস না।  তার থেকে বুকের রক্ত মানত করিস।  কাজ দেবে।  তাই যখন যেকোনো একটা ভগবান তার কথা শুনলো তখন সে ষোলো একর জমি নির্ধারণ করলো দান করার জন্য।  আর দাগ দিলো তার বুকের রক্ত বেলকাঁটা ফুঁড়ে ফুঁড়ে। 

সেই থেকে ইদ্রিস সেই জমিতে নিজের পছন্দ মতো সবজি ফলায় আর জাকাতের বদলে যা ফসল হয় তার দশ শতাংশ গ্রামের স্কুলের মিড্ ডে মিলের সাথে জুড়ে দেয়। সেখানেই তার পরিচয় হয় হতভাগী রুপার সাথে। সে সেখানে মায়ের সাথে রান্না করতে আসতো। তারুণ্যে কুক্কুরীও সুন্দরী হয়। রঙ উজ্জ্বল, নাক টিকলো, পীনস্তনী, পরিমিত উচ্চতা , গুরু নিতম্ব। লিখতে গেলে সমস্তই উর্বশীর সঙ্গ সমতুল্য , কিন্তু আদপে মাঝারি রূপ। তবু গ্রামের পুরুষ মহলের সে স্বপনচারিণী। সেই সৌন্দর্য্যে চোখ ঝলসে গিয়ে ইদ্রিস তার হাত চেয়ে বসে। রূপা ঘাবড়ে গিয়ে পিছু হটলেও ইদ্রিশকে বলে, ‘ধর্মে মানলে তবেই করব বিয়ে’। ইদ্রিশের কথা জানাজানি হতে দেরি লাগে না ।  প্রায় দাঙ্গা লেগে যাওয়ার উপক্রম হয় গ্রামে।

গ্রামে আগেও দুই ধর্মে বিয়ে হয়েছে।  কিন্তু কেউ তারা গ্রামে ফেরেনি।  কিন্তু রুপা কিছুতেই চায় না তার মা কে ছাড়তে ।  আর ইদ্রিস তার ক্ষেত।  যখন কথাটা জানাজানি হয় তখন পোড়ামা কালির মন্দিরের পুরুত রজত ভট্টাচার্য , যাকে দুই ধর্মের সবাই মান্যি গন্যি করে, সে ডেকে পাঠায় ইদ্রিসকে।  গোপালের চায়ের দোকানে মসজিদের আখতার মোল্লার সাথে চা খেতে খেতে সামনে বসে থাকা ইদ্রিস কে প্রশ্ন করে , "বিয়ে করবি হিন্দুর মেয়েকে। জানিস তো জাহান্নাম নসিব হবে।" ইদ্রিস দুই হাঁটুর মধ্যে মুখে গুঁজে উত্তর দেয় , "আগে তো স্বজ্ঞানে জন্নত দেখি।" আখতার  মোল্লা বলে , "এক রুপার জন্য বাহাত্তর হুরী ছাড়বি?" ইদ্রিস বলে , "একই রুপার তো সহস্র রূপ। আগে তো সেইসব রূপ দেখি।" রজত বলে , "না না মোল্লা , এ ঠিক হবে না।  এ তো ছোঁবে।" ইদ্রিস বলে , "ধুয়েও রাখবো। ওই গ্লাসটার মতো।" হাতের গ্লাসটা নামিয়ে রেখে রজত বললো , "আর যে বাচ্চা দিবি সে কোন ধর্মে যাবে ?" ইদ্রিস ঈষৎ হাসি হেসে বলে , " কাফের বানাবো , যাকে আপনারা নাস্তিক বলেন। " হাসান ভ্রূ কুঁচকে বলে , "হারামজাদা , বলিস কি। " ইদ্রিস বলে , " এদেশে তো শরিয়া মানা হয়না , তাই আল্লাহ তাকেও মৃত্যুর পর জাহান্নমে পাঠাবে আর ভগবান ওরে কিছুই বলবে না কারণ আস্তিকও হিন্দু , নাস্তিকও। নাহয় নরকে যাবে। আমিও তো সেখানেই ওর জন্য অপেক্ষা করবো।" রজত অবাক হয়ে বলে , "হ্যা রে , নিজের বাচ্চার সম্বন্ধে এতো খারাপ তো কাউকে ভাবতে শুনিনি।  শুধু রুপার জন্য বাচ্চার ভবিষ্যৎ নষ্ট করবি?"    

"নষ্ট কেন বলছো কত্তা।  আপনারা  মরার পর কথা বলছো আমি মরার আগের কথা বলছি। ঐতো সেদিন তো  শুনলাম আপনি রুপার মা রে বলেছেন,  কলিযুগে নাকি ভক্তিই সার। ভক্তি থাকলেই নাকি স্বর্গপ্রাপ্তি।  তা কত্তা আমিও তদবির করি।  পাঁচক্তো নামাজ পড়ি , রোজা রাখি আর রুপাও তো শিবের মাথায় জল না ঢেলে খায় না।  দুয়ের ভক্তি সার কি পোলা পাবে না।" রজত আখতারের দিকে তাকিয়ে বলে , "মোল্লা সাহেব , কি বলে তোমার ধর্মে।  পিতার পুন্য কি পুত্র পেতে পারে।" মোল্লা বললো , "রজত , সব শিশুই ফিতরাহ নিয়ে জন্মায়। ইসলাম তো প্রাকটিস।" রজত বলে , "সে তো আমরাও বলি , হিন্দু বলে কি কোনো ধর্ম আছে।  সব শিশুই তো হিন্দু। যাকগে বাজে তর্ক। একটা কথা বল ইদ্রিস। রুপারে ইসলামে পালাটাইবি না তো।" ইদ্রিস বলে , " সে তার ইচ্ছা।" রজত এই মোল্লাদের কারচুপি বোঝে , " এইটাই শুনতে চাইছিলাম। তবু, না বলবি না।  তার ইচ্ছা , তার ইচ্ছা , তার মানে সেই ইচ্ছায় জোর করে বুরখা পড়াবি তাই তো।" ইদ্রিস এতো প্যাঁচ জানে না।  প্রথমে থতমত খেয়ে একটু সামলে নিয়ে বললো , "কি বলেন কত্তা।  ইসলামে বলে বটে জোর করে ধর্মান্তরিত কর, কি মোল্লা সাহেব, আপনেই তো বলেন।  কিন্তু হিন্দুতেও তো বলে যে ধর্মই পালন করো না কেন হিন্দুই থাকবে।" রজত মাথা নাড়লো , "তা ঠিক। তাই হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরণের কোনো নিয়মি নেই।  কিন্তু গোত্র তো পরিবর্তন হয়ে যাবে। তোর গোত্র কি?" ইদ্রিস পরাজিত।  কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো , "কি করে জানবো।  এটাই জানিনা কোন পুরুষে হিন্দু থেকে মুসলিম হয়েছি আর তার আগে কি গোত্র ছিল।" এবার আখতার মোল্লার গায়ে লাগলো কথাটা , "তুই মুসলমান হারামজাদা , এই তোর পরিচয়।  গোত্র কেন হতে যাবে।" রজত বললো , "রাগ কোরো না আখতার।  কথাটা ভেবে দেখো।  গোত্র তো ইসলামের পাঁচ হাজার বছর আগে থেকে ছিল। পরে তো ইসলাম হয়েছে।  সবারই গোত্র আছে।  কিন্তু কালক্রমে ভুলে গেছে। সে শুধু তোমার মুসলমানরা নয় , বৌদ্ধ বা জৈনরাও তো গোত্র বলতে পারে না।" আখতার বলে , "থাক সে কথা। আমার এই বিয়েতে আপত্তি নেই। কারণ হিসেবে মতে ইসলাম ধর্মেরই প্রসার হচ্ছে।" রজত বলে , "আমার একটু ওই গোত্রে খুঁতখুঁত করছে কিন্তু গান্ধর্বমতে বিয়ে করলে তো আমার কিছু বলারই নেই।  শাস্ত্র তো উঠিয়ে নিয়ে বা মদ খাইয়ে বিয়েকেও মেনে নেয়।  ওই রাক্ষস আর পিশাচ বিয়ে আর কি।  মাঝে মাঝে ভাবি এতো ফ্লেক্সিবিলিটি দিয়েছে তাও লোকে কেন যে অন্য ধর্মের পেছনে ছোটে। " এই ছোট্ট টিপ্পনি রজত আখতারকে শুনিয়ে বলে।  আখতার উত্তর দিতে গিয়ে থেমে যায়।  পুরুষটা তার ধর্মে।  তাই জোর তার বেশি।  তাই বেশি না ঘাঁটিয়ে দুজনেই মত দিয়ে  দেয়। 

ঘটা করে দুই ধর্মের নিয়মেই বিয়ে হয়। ইদ্রিসের দেনমোহর ফিরে আসে যৌতুক হয়ে। এতদিন রুপা একবারের জন্যও প্রশ্ন করেনি ভবিষ্যৎ নিয়ে। তাদের বিয়ে ধর্মসম্মত, তাই সর্বসম্মত। কিন্তু যখন বছর ঘুরতে না ঘুরতে একটা কন্যা সন্তানের জন্ম দিলো তখন তার মনে প্রশ্ন এলো , "আমি তো হিন্দু , মুসলমান কে বিয়ে করেছি।  আমি তো সর্বংসহা হিন্দু তাই ধর্ম খোয়াইনি।  কিন্তু এ তাহলে কি? এ যদি হিন্দু হয় তাহলে সমস্যা নেই।  কিন্তু হিন্দুত্বেও তো বলে পিতার ধর্ম সন্তানের ধর্ম।  তাহলে। " ইদ্রিস চুপ করে থাকে।  রুপা ধর্মকর্মে বিশ্বাসী মেয়ে। তার সামনে মেয়েকে নাস্তিক বানানো সম্ভব নয়।  এক দু বার বলার চেষ্টা করে , "এ তোমার গীতা অনুসারে বিধর্মী। মানে বিশেষ ধর্মী।" রুপা গীতা পড়েনি।  ইদ্রিসও না।  শুধু রজত পন্ডিতের মুখে একবার শুনেছিলো ভাগবতে বি শব্দের ব্যবহার বিশেষ হিসেবে।  সেটাই ঝেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল মদ্ভগবৎগীতার সাথে জুড়ে।  ব্যাপারটা রুপা খাইনি।  প্রতিনিয়ত এই তর্কবিতর্ক চলতে থাকে।  শেষে একদিন রুপা বলে ওঠে এবার যদি ছেলে হয় তাহলে সে হবে মুসলমান।  আর আমার মেয়ে হিন্দু।  ইদ্রিস খবরটা শুনে বিশাল খুশি।  মীমাংসায় নয়।  তারও এক পুত্রসন্তানের কামনা আছে।  কিন্তু প্রয়োজন নেই। 

মাস ছয়েকের মধ্যে মায়ের সমস্ত রূপ নিংড়ে নিয়ে আবার এক পরমাসুন্দরী কন্যার জন্ম দেয় রুপা। মেয়ের রূপে ইদ্রিস মুগ্ধ হয়ে যখন বাচ্চাটিকে নিয়ে সদ্যচেতন রুপার পাশে এসে বসে, তখন রুপা মুখে ফিরিয়ে নেয়। ইদ্রিস বলে , "স্নিগ্ধা তোমার হিন্দু মেয়ে আর এই নাজনীন আমার মুসলিম মেয়ে। শোধবোধ।" দু মাস বুকের দুধ থেকে বিরত থাকে নাজনীন।  রুপা কথা বলে না।  মেয়েকে কোলেও নেয় না।  ইদ্রিস অনেক চেষ্টা করেও কিছুতেই বুঝতে পারেনা রুপার এই ব্যবহারের কারণ। মা কি এই ভাবে নিজের বাচ্চার থেকে মুখ সরিয়ে নিয়ে থাকতে পারে। ইদ্রিশের অনেক বলা কয়ায় কোনও লাভ হয়না । শেষে রজত পণ্ডিতের কথায় তিন মাসের নাজনিন প্রথম মায়ের দুধ পায় । ততদিনে দুধও শুকাতে শুরু হয়ে গেছে ।  কিন্তু রুপার মনের কোনও পরিবর্তন নেই । ইদ্রিশ সকাল বিকাল নানা ভাবে চেষ্টা করে তার ভেতর থেকে কথা বার করার জন্য । ইদ্রিশ জানে কালশিটের রক্ত বার করে দিলে জন্ত্রনা কম হয়। কিন্তু রূপা জেন প্রায় মরে গেছে। এ কেমন ধারা সমস্যা। মেয়ে হলে বাবারা দুধে চুবিয়ে মেরে দেয় শুনেছি। কিন্তু এখানে তো ইদ্রিশ খুব খুশি । স্নিগ্ধা অনেকটা বাবার মত , কিন্ত নাজনিন তো একদম মায়ের রূপ পেয়েছে। কচি কচি হাতগুলো বারিয়ে যখন ইদ্রিশের দাড়িতে হাত বুলয় তখন ইদ্রিশের ইচ্ছা করে দাড়ি কেটে ফেলে নগ্ন গালে ওই নরম হাতের স্পর্শ নিতে । শেষে একদিন রুপাকে নিয়ে  পূর্ণিমার রাতে  গ্রামের নদীতে নৌকাবিহারে বেরোয়। 

রুপা অনিচ্ছা সত্বেও যায় । বিয়ের আগেও সে কয়েকবার গেছে । তার খুব প্রিয় এই নৌকাবিহার। ছল ছল করে জলের শব্দ ছাড়া আর অন্য কোনও শব্দ নেই। শুধু মাঝি আর সে । সে আর তার মাঝি বর । নদীর মাঝখানে গিয়ে হাল ছেড়ে দিলেও নৌকা এগতে থাকে জোয়ারের টানে।  কেউ ঝামেলা করতে আসে না । অন্য মাঝিরা পাড়ের দিকে মাছ  ধরে । কথার মাঝখানে গায়ের ওপর দিয়ে পিঁপড়ে চলে যায় না , ককিল ডেকে উঠে মন পালটে দেয়না, কুকুরের ঘেউ ঘেউ নেই , কেউ এসে মাঝখানে কাজের কথা বলেনা । শুধু দুইজন নিজেদের মধ্যে, নিজেদের মনে , নিজেদের কথা বলতে থাকে। 
দাঁর টানতে টানতে নৌকা নদীর মাঝখানে নিয়ে আসে ইদ্রিস। হাল ছারতেই দেখে নৌকা তীরের দিকে দউরাচ্ছে । সে শক্ত করে হাল ধরে বলে , "এবার বলো।  কি সমস্যা। নাজনীনের তো কোনো দোষ নেই।  এই ধর্মের চক্করে কেন ফেলছো তাকে। " এতদিন চুপ করে থাকা রুপা এবার বলে , "আমি ধর্মের জন্য নয়।  স্নিগ্ধার ভবিষ্যতের জন্য চিন্তিত।" ইদ্রিস অবাক হয়ে বলে , " কেন? " "সবাই তোমার আমার মতো হয় না ইদ্রিস।  আজ আমরা প্রেমের জন্যে ধর্মের জলাঞ্জলি দিয়ে সুখে সংসার করছি। আমাদের মেয়েদের যে তোমার মতো স্বামী মিলবে , কে তা বলতে পারে।" ইদ্রিস আরো অবাক , "কি বলতে কি চাও তুমি?" রুপার চোখ ছল ছল করে।  ইদ্রিস বুঝতে পারেনা কি এই দুঃখের কারণ।  কিছুক্ষন চুপ থাকার পর রুপা বলে , "আমি একটা ছেলে চেয়েছিলাম কেন জানো? যদি আমার স্নিগ্ধাকে কেউ বিয়ে না করে তাহলে যেন আমার ছেলে তাকে বিয়ে করে।" হাল ছেড়ে সোজা উঠে দাঁড়ায় ইদ্রিস , "তৌবা তৌবা।  কি বলছো রুপা।  এ তো হারাম।  পাগল হয়ে গেছো নাকি।" রুপা আরো অবাক হয়ে যায়।  এক অদ্ভুত বিস্ময় নিয়ে বলে ওঠে , "কেন ? তোমার ধর্মে তো এসব চলে।" এবার ইদ্রিস রেগে যায় , "রুপা , আমি কখনো ধর্মকে আমাদের মধ্যে আসতে দিইনি।  তোমায় তাই কোনোদিন পবিত্র কোরান শরীফ পড়তে বলিনি।  তার মানে এই নয় যে তুমি যা ইচ্ছা তাই বলবে।" " কিন্তু মা তো তাই বলেছিলো" , "তোমার মা অজ্ঞান, শুনেছে হাতি, বুঝেছে ব্যাঙ, বলেছে টিকটিকি। আর তুমি কেন এই ধন্দে আছো যে আমাদের মেয়েদের কেউ বিয়ে করবে না?"

রুপা এবার কান্নায় ভেঙে পরে, "যখন তোমার সাথে বিয়ে হয়েছিল তখন কি আর জানতাম যে ওই রজত পন্ডিত আমায় শিবের মাথায় জল ঢালতে বারণ করবে। " "কৈ আগে তো বলোনি এই কথা।" "বলিনি কারণ তুমি দুঃখ পাবে বলে।  বিয়ের পরেই যখন গেলাম জল ঢালতে তখন সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে - শিব তো পেয়ে গেছিস আর জল ঢেলে কি হবে। যা কাটা শিবলিঙ্গে সেবা কর।" ইদ্রিসের গেলো মাথা গরম হয়ে , "তুমি উত্তর দিলে না? আমি তো তার অমতে বিয়ে করিনি।" "কাকে কাকে উত্তর করবো। তোমার খালা যখন আসে তখন আমার হাতে খাবার খায় না। বলে আমার জন্য নাকি তোমার ঈদ নষ্ট হয়। বৌদি আমায় ঠাকুর ঘরে ঢোকানোর আগে গায়ে গোবর গঙ্গাজল মাখায়। তোমার আব্বু হজের টাকা কেন বিলিয়ে দিয়েছে জানো? আমার জন্য। কাফের কে ঘরে স্থান দিলে , মক্কায় যাওয়া যায় না।  তুমি আমাকে তিন তালাকেরও যোগ্য রাখোনি।  কারণ আমি ইসলাম অবলম্বন করিনি। তুমি যখন ক্ষেতে বীজ বোনো।  আমি দিন গুণি প্রাশ্চিত্যের।" "কিসের প্রায়শ্চিত্তের কথা বলছো?" "রজত পন্ডিত বলেছে, আমার পাপের প্রায়শ্চিত্য আমার বাচ্চার হিন্দু ধর্মের প্রচারের মধ্যে দিয়ে হবে।" "কি যা তা বলছো। এসব কে শেখাচ্ছে। এসব কোথা থেকে আসছে। আমি তো কিছুই মাথা মুন্ডু বুঝতে পারছি না। আমরা তো সর্বসম্মতিক্রমে বিয়ে করেছি। তাহলে? রুপা ধর্ম মিথ্যা নয়, ব্যাখ্যা মিথ্যা। যারা বলছে সব স্বারথসিদ্ধির জন্য বলছে।  তোমার এগুলো আমাকে আগে বলা উচিত ছিল।" "বললে কি করতে ? তর্ক। পুরুষের পাপ লাগে না।  নারীকে সব পাপ সহ্য করতে হয়।" "আবার ভুল করছো রুপা।  তোমার নরেন মাস্টার অনেক বেদ  পড়েছে।  বলেছিলো তোমার ধর্মেই মেয়েছেলেদের  কোনো পাপ নেই। যা পাপ সব পুরুষের। কারে মানবো।" "ওর কথা মেনে কি হবে।  ও বলেছিলো , ধর্ম আফিমের মতো। ও নরকে যাবে।"

ইদ্রিস দেখলো ব্যাপারটা তার  হাতের বাইরে চলে গেছে।  ক্ষুদ্র জ্ঞানের স্বল্প নীতিবাক্যে  পরাস্ত করে যাদের  হাত দিয়ে ধর্মের নোংরামো সরিয়ে মানব ধর্মের আনন্দ উপভোগ করার চেষ্টা করেছিল, সেই ধর্ম তার বিরুদ্ধে না গিয়ে সমাজ কে লেলিয়ে দিয়েছে তার পেছনে।  রুপা তখনও বলে চলেছে, "আমার একটা ছেলে হলে আমার কোনো ভয় থাকতো না।  কিন্তু তোমার বীর্যে দম নেই।  তাই তো নরম মাটি খাবলে তুলে গায়ে লাগিয়েছো।  ডাক্তার সায়েব বলেছে আমার কোনো দোষ নেই।  ছেলে হবে না মেয়ে হবে স্বামীর বীর্যের জোরেই হবে। " ইদ্রিস বুঝতে পারলো , আবেগের জোয়ার এসেছে।  মেয়েছেলের আবেগ বড় অদ্ভুত।  যখন বেরিয়ে আসে , তখন বইতে থাকে।  বাঁধলে ভাঙবে , তবু বইবে।  সে শান্ত হয়ে দাঁড় বইতে থাকে।   ঘাটে যখন ফেরে , কাঁদতে কাঁদতে রুপা তখন অচেতন।  কোনোরকমে কাঁধে তুলে ঘরে নিয়ে এসে শুইয়ে দেয় রুপাকে।  পাশে শুয়ে নিয়তির কথা চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পরে। 

সকালে উঠে কিছু না খেয়েই ক্ষেতে চলে যায়।  এবার সে পিয়াজ লাগিয়েছে।  বেশ বড় হয়েছে।  আর তার বিশেষ কাজ নেই পাহারা দেওয়া ছাড়া। এই সময়টা সে তার শব্দজব্দের ছেঁড়া পাতাগুলো খোলে।  গ্রামের লাইব্রেরিতে খবরের কাগজের সাথে আসে এই শব্দজব্দ। লাইব্রেরিয়ান গত দশ বছর ধরে তার জন্যে প্রত্যেকদিনের শব্দজব্দ কেটে কেটে জমিয়ে রাখে।  কত শব্দ , কত প্রশ্ন জাগায় মনে।  অর্ধেক পারে অর্ধেক খালি থাকে।  সেই নিয়ে বুধ আর শনিবার সে ছোটে মৃন্ময় সাধুখাঁর বাড়ি।  মৃন্ময় তখন আরাম কেদারায় বসে এক এক করে সব সমাধান করে আর এক এক করে শব্দের মানে বোঝাতে থাকে।  নয় ক্লাসের পর ইদ্রিস আর স্কুল মুখ হয়নি।  কিন্তু শব্দজব্দের এই মজায় আর মৃন্ময়ের তত্বাবধানে সে জানতে পেরেছে শব্দের পূর্ণসত্য না জানলে শব্দ কখনো জব্দ হয় না, ঘরগুলো ফাঁকা থাকে। মৃণ্ময় বলে এই শব্দই ব্রম্ভ।  আর তাকেই পূজা করা উচিত , যাতে এক সাথে জীবনের সত্য ও জীবন চালনের কূটনৈতিক অস্ত্র সংগ্রহ ও সংরক্ষণ হয়। মৃন্ময় এই জমি হাসান মোল্লাকে দান করার পরের দিন হাসান ইদ্রিশকে নিয়ে আসে মৃন্ময়ের কাছে। মৃন্ময় তখন দালানে বসে শব্দজব্দ করছে। হাসান পরিচয় করিয়ে দিলে মৃন্ময় বলে , “হাসান, তুই যখন বলছিস তখন এ ছেলে ভাল। পরাশুনা কদ্দুর।” “আজ্ঞে নয় ক্লাস। তারপর নানা খেতে চাষ করি আর দুপুরে বই পড়ি” । মৃন্ময় খুব কম চাষি দেখেছে যারা পরতে লিখতে ভালোবাসে। “কি বই পরিস।” “যা পাই। নরেন মাস্টার মাঝে মাঝে একটা দুইটা বই বলেন পড়তে। অদ্ধেক মাথামুণ্ডু বুঝতে পারিনা। শুধু শব্দগুলো বলতে দারুন লাগে।” “তা একটা বইয়ের নাম বল দেখি।” “দুর্গেশনন্দিনী।” নামটা শুনে , মৃন্ময় দমফাটা হাসি হাসতে থাকে। এক চাষির কাছে বঙ্কিমের দুর্গেশনন্দিনী, হাসির‍ই উদ্রেক করে । “তার মানে শব্দে তোর বেশ মজা লাগে।” “শুধু শব্দে নয় কত্তা, শিখতে খুব ভালো লাগে। যে শব্দগুলো বুঝিনা সেই শব্দগুলো নিয়ে জাই নরেন মাস্তারের কাছে। উনি এক এক করে সব বুঝিয়ে দেন, আর প্রত্যেক শব্দের ওপর গল্প বলেন। আমার গ্যান অতদুরই। বাকি কত্তা , আকাশ দেখ বলতে পারি কবে বৃষ্টি, মাটি দেখে বলতে পারি ক ফুট নিচে জল, বীজ ছুঁয়ে বলতে পারি কত ফসল তুলব।” মৃন্ময় বেশ খুশি হয়। আরও কিছুক্ষন কথা বলে সে বুঝতে পারে , যুবকটি বেশ কিছু জানে । কিন্তু সে জ্ঞানের কোনও মানে নেই । মৃন্ময় তাকে তার খেতজমির দায়িত্ত্ব দেয়। যেহেতু দান করেছে তাই ফসল তার নয় , হাসান মোল্লার । মৃন্ময় বলে, “বুধ আর শনিবার আমি বিকালে বাড়িতে থাকি। তুই রোজ গিয়ে লাইব্রেরি থেকে আগের দিনের খবরের কাগজের শব্দজব্দ কেটে আনবি । আমি বলে দেব দিপেশ কে। ওগুলো চেষ্টা করবি শেষ করতে, যা পারবি না , নিয়ে আসবি । সাথে করব । আর তোর নরেন মাস্তারের থেকে আমি বেশি ভালো গল্প বলতে পারি। বুঝলি।” সেইস্তক শব্দের মানের পিছনে ধাওয়া করতে করতে ইদ্রিশ সমস্ত কিছু সম্বন্ধে জ্ঞান নিতে থাকে মৃন্ময়ের কাছ থেকে। এক শব্দের পেছনে থাকে ব্যাখ্যা, ব্যখার পেছনে থাকে গল্প , গল্পের মিমাংশায় আসে প্রশ্ন আর প্রশ্নের উত্তরে থাকে শব্দ । গুরু শিশ্যের সেই সংলাপ থেকেই আজকেও সে চেষ্টা করতে থাকে আজকের শব্দজব্দের সমাধান করতে।   

বেশ কিছু সমাধান করতে করতে হঠাৎ করে খিদে পেয়ে যায় । দুপুরের পুঁটলিও তার সাথে নেই।  রাগ করে বের হয়ে আসলেও, ক্ষিদে আর ঘুম কোনো আবেগের দ্বারা চালিত হয় না।  জোর করে গাছের ছায়ায় ঘুমোনোর চেষ্টা করতে গিয়ে খিদের তাড়নায় সে উঠে পরে।  এতো বছরেও কখনো দুপুরে সে বাড়ি ফেরেনি, কারণ এখানের ক্ষেতচোররা রাতে চুরি করে না।  দিনে করে।  দুপুরে চাষির ঘুমোনোর সুযোগে আল বদলে যায় , শস্য নুয়ে পরে , সেচ জল বন্ধ হয়ে যায় , আগুন লেগে যায়।  তাই দিনের বেলায় সে সর্বদা সজাগ।  কিন্তু আজ সে আর পারলো না।  দ্রুত পায়ে এসে রোজকারের মতো দালানে বসে হাঁক দেওয়ার বদলে আজ সোজা ঘরে ঢুকতে যেতে দেখে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ।  সন্দেহ ও সংশয় নিয়ে দরজায় সজোরে কড়া নাড়লো।  কালকের ঘটনার পর রুপার আত্মহননের প্রবল সম্ভাবনা।  তার ভয়দ্বিহল উত্তেজনা নস্যাৎ করে শান্ত ভাবে দরজা খুলে দিলো রুপা।  ভেতরে ঢুকেই খাটের ওপর রজত পন্ডিতকে  বসে থাকতে দেখে আজকের শব্দজব্দের না মেলা চার অক্ষরের শব্দের ফাঁকা জায়গায় সে মননে বসিয়ে দিলো "বেদব্যাস" আর মুখ থেকে ঘৃণাসূচক বাক্য বেরিয়ে এলো , "তুই নরকে যাবি ছিনাল।" 


Friday, August 18, 2017

আধ্যানের ডায়েরী - আবার সমুদ্রে


অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি আমার বাবা মা পাগল হয়ে গেছে।  শুনতে খারাপ লাগলেও আমার কিছু করার নেই।  একই দিনে তারা যে দু দুটো কাজ করে বসেছে, তার জন্য আমার সাইকোলজিক্যাল এনালাইসিস এটাই বলে যে, তাদের মাথায় যে  পোকাগুলো আগে থেকে নড়ছিলো সেগুলোর এখন ডানা গজিয়েছে।  ব্যাপারটা খুলেই বলেই তাহলে।

আগেই আমার চুল কাটার কথা বলেছি।  যে নারকীয় তান্ডব চলেছিল কয়েক সেকেন্ডের জন্যে তার বিবরণ আমি আগেই দিয়েছি।  মানুষকে ভ্রান্ত করে কবরে ঠেলে দিয়ে মাটি চাপা দিয়ে টুকি টুকি খেলাকে মোটেও সুস্থ মানুষের বিহেভিয়ার বলে না।  কিন্তু তারা করেছিল।  যদিও পরে বুঝেছিলাম যে তারা আমাকে সত্যি সত্যি ঘোরাতে নিয়ে যাচ্ছে।  কিন্ত তখন আমার মন আর মুড দুটোই খারাপ।  আর সাথে সারা গায়ে চুল।  সেই সাধের চুল , কোঁকড়ানো সেলিব্রেটেড এন্ড হাইলি এপ্রিসিয়েটেড চুলের দেহাবশেষ তখন আমার সারা গায়ে।  মনে অস্বস্তি , শরীরে অস্বস্তি নিয়ে আমি গিয়ে আমার কার সিটে বসলাম। 

ঘন্টাখানেকের রাস্তা।  তখন আমার মধ্যে বিন্দুমাত্র কিউরিওসিটি নেই  যে আমাকে নিয়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছে।  তখন আমার মাথা ফাঁকা।  যেহেতু এদেশের হাজার নিয়মের জন্য ক্ষুর দিয়ে চেঁচে পুরো চকচকে করে দেয়নি তাই তখনও  দেখে বোঝা যাচ্ছিলো যে ওই উজাড় মরুক্ষেত্রে এক সময় হরিয়ালি ছিল।  তার ওপর বিন্দুমাত্র সৌজন্যবোধ নেই।  মা এসে পাশে বসে আমার মুখে দুধ ঢোকাচ্ছে।  কি জ্বালাতন।  কেন, কেন খাবো আমি? আমার তখন মাঝে মাঝেই বুক থেকে কান্না এসে গলার মধ্যে চেপে বসছে।  সেটাই গিলে নিচ্ছে ভবিতব্যের নামে গালাগালি দিয়ে।  কপাল , কপাল আমার ,যে এরকম বাবা মা পেয়েছি।  তার মধ্যে আবার দুধ। 

বাবা গাড়ি চালাতে আরম্ভ করেছে।  আর রিয়ার ভিউ মিররটা হেলিয়ে দিয়েছে।  যাতে পেছনের রাস্তার জায়গায় আমার টাক দেখতে পারে।  কি কিউট , কি কিউট লাগছে , মুখে তোতাপাখির মতো বুলি বলেই চলেছে।  আর মা মাঝে মাঝেই চটকে দিচ্ছে পাশে বসে।  সেটা অলরাইট।  মায়ের চটকানো অলওয়েজ ওয়েলকাম।  কিন্তু বাবার ওই দাঁত , প্লিস বন্ধ করো।  কিন্তু কে কার কথা শোনে।  এদিকে যদিও মায়ের ওপর প্রচন্ড রাগ হলেও মা ইস মা।  তাই দুধ খেয়ে খুশি করা ছাড়া আমার কাছে তখন অন্য কিছু পন্থা ছিল না।  সেটাই খেতে লাগলাম। 

মনটা একটু অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাস্তাঘাট দেখছিলাম।  আমার এখন নতুন কার সিট্।  ফ্রন্ট ফেসিং। সামনের রাস্তা দেখতে পাই।  আর কার সিটটা  বেশ বড়। বেশ হাত পা খেলিয়ে বসে যায়।  বড় বড় হাই তুলে সারা শরীর স্ট্রেচ করা যায়।  যাকে বলে লং ড্রাইভের জন্য একদম পারফেক্ট। এবার মনে হচ্ছে যেন সত্যি সত্যি লং ড্রাইভে যাচ্ছি।  কারণ লং  ড্রাইভে মা পায়ের চটি খুলে ফেলে পা ছড়িয়ে দেয় সামনের সিটে। আজকেও তাই, সুতরাং আমরাও কোনো সমস্যা নেই। 

সমস্যা নেই বললেই কি নেই।  এই যে বাবা গাড়ি চালাতে চালাতে বার বার পেছনের দিকে আমার দিকে তাকাচ্ছে  তার একটা সেফটি ইস্যু তো আছে।  মানুষ বুড়ো হলে সত্যি যে কি ভীমরতি ধরে না।  কি ভয় করছিলো যখন মাঝে মাঝে বাবা আবার পেছনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে আমার পায়ে সুড়সুড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছিলো।  মানে যেন তেন প্রকারেন আমার হাসিটা দেখতে হবে।  কি ভাগ্যিস আমার এই হাসি কেটে ফেলার কোনো উপায় নেই , নাহলে কবে সেটাও কেটে পকেটে পুরে নিয়ে চলে যেতো। ; আজকে তো আমি হাসবো না প্ল্যান করে রেখেছিলাম, লোকে বলে আঘাত করা খারাপ , কিন্তু ফোঁস না করলে পদদলিত হতে হয়।  যাকে বলে স্ট্যাম্পেড।  প্রথম দিকটায় সেটাই চেষ্টা করেছিলাম , কিন্তু বাবা যেরকম রেকলেস ড্রাইভ করে আমার হাসি দেখার চেষ্টা করছিলো সেটা না রুখে আর পারলাম না।  প্রথমে অনেককখন চিৎকার করে বোঝানোর চেষ্টা করলাম , বাবা টেক কেয়ার অফ ইওর ড্রাইভিং, বাট কে কার কথা শোনে।  বুঝলে তো শুনবে।  তাই শেষমেশ হেসে দিতে বাবা রাস্তার দিকে নজর দিলো। 

আমি নরমালি লং ড্রাইভের অধিকাংস সময় ঘুমিয়ে কাটাই, কিন্ত আজ ইচ্ছা ছিল না।  আজ ভেবেছিলাম পুরো রাস্তাটা দেখতে দেখতে যাবো।  কিন্তু সে আর কি হলো। দু চোখ টেনে আসলো।  আসলে তখন অলরেডি অনেক যুদ্ধ করে ক্লান্ত।  সাথে গায়ের চুলগুলো কুট কুট করছে।  বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি।  বিরক্ত আর রাগ হলে দেখেছি  শরীর আগে ক্লান্ত হয়ে আসে।  তাই ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ হয়ে গেলো।

ঘুম ভাঙলো বিশাল একটা ধাক্কায়।  আমি তো ভাবলাম গেলাম।  বাবা নিশ্চয় এক্সিডেন্ট করে বসে আছে।  কিন্তু না , দেখি সামনে একটা বিশাল গাড়ির লাইন।  বাবা নাকি পার্কিং পাচ্ছে না।  কোথায় যে এলাম , কেন যে এলাম আর পার্কিং পাওয়াটা যে কি, আমার কাছে সব কিছু তখন গুবলেট। চারপাশে কত লোক জন।  কত মানুষ। কিন্ত সবাই ন্যাপি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।  মাঝে মাঝে বাবা দাঁড়াচ্ছে আর সামনে দিয়ে এক গাদা দিদি কাকিমা ন্যাপি পরে রাস্তা ক্রস করছে।  কাকু বা দাদারা সবাই খালি গা আর সর্টস এ আছে। এরা বেশ বুদ্ধিমান।  আমাকে ডাইপার পরানোর পর যেন কেন একটা প্যান্ট পড়াতে চায় আমি বুঝিনা।  কি দরকার।  এদের দেখো , দিব্যি নীল লাল  সাদা ডাইপার আর ন্যাপি পরে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে রাস্তায়।  এই বাবা আর মাটা যে কবে বুদ্ধিমান হবে জানিনা। 

গাড়ি শেষমেশ পার্ক হলো।  আর আমি তড়াক করে নিচে নেমে গেলাম।  অতগুলো লোক দেখে একটু ভেবড়ে গেছিলাম।  ঠিক বুঝতে পারছিলাম  না ,এই এতগুলো লোকের উদ্যেশ্যটা কি। বাবার ম্যান হ্যান্ডলিং এ কোনো সৌন্দর্য্য নেই।  আমার হাত ধরে হির হির করে টানতে লাগলো।  আমি ব্যালান্স করতে না পেরে সামনে পরে যাচ্ছিলাম , কিন্তু যেহেতু হাত ধরা ছিল তাই ঝুলতে লাগলাম।  বাবা আবার তুলে ঠিক করে দাঁড় করিয়ে দিলো। 

কিছুটা এগোতে একটা দমকা হাওয়া এসে মুখে লাগলো।  আর সামনে দেখলাম কি বিশাল এক নীল জায়গা।  সবাই ওই নীলে ঢুকে লাফালাফি করছে।  জায়গাটা কেমন যেন চেনা চেনা লাগলো।  মনে হলো কখনো তো এসেছি এখানে। কিছুক্ষনের মধ্যে বাবাই ক্লিয়ার করে দিলো ব্যাপারটা।  এখানেই তো বাবা প্রথম নিয়ে এসেছিলো যখন আমার এক মাস বয়স ছিল।  তখন দুঃসাহসিকতার জন্য বাবাকে মেডেল টেডেল দেওয়া হয়েছিল।  কিন্তু আবার কেন।  আই নরমালি ডোন্ট প্রেফার টু গো টু দা সেম প্লেস এগেন এন্ড এগেন এন্ড এগেন, কারণ ওপর থেকে নিচে আসার সময় ভগবান আমার রিচার্জ লিমিট করে দিয়েছিলো।  আর বলে ছিল , ইউ নিড টু কাম ব্যাক ইন সেভেন্টি ইয়ার।  আমি বলেছিলাম , পৃথিবীতে টপ আপের ব্যবস্থা নেই ? তখন বলেছিলো , উই আর ওয়ার্কিং ও দিস ইস্যু।  যাইহোক , তাই এই কম সময়ে এতো বড় পৃথিবী দেখতে বার বার একই জিনিস রিপিট করার মতো সময় নেই ।  সাথে আবার বাবা বলেছে , "আমি আমার বাবা মা কে প্লেনে চাপিয়েছি , তুই আমাকে কিন্তু রকেটে চাপাস।" এই এক্সপেক্টেশনের চাপ সব সময় মানুষের মাথায়। 

কিন্তু জায়গাটার ক্যালকুলেশন ঠিক বুঝতে পারছিলাম না।  দুটো লম্বা জায়গা , একটা হলুদ, আর একটা নীল।  হলুদে সবাই বসে আছে, আর নীলে মাঝে মাঝে লোকজন ঝাঁপাচ্ছে আর ফিরে আসছে।  ঝাঁপালেই নীলটা নড়ে উঠে সাদা হয়ে যাচ্ছে।  এনালাইসিস করে এটুকু রিলেট করলাম , যে হলুদটা আমার কারসিটের মতো আর নীলটা আমার ডে কেয়ার।  হলুদে ওয়েট করে , নীলে একশান। 

আই হ্যাভ নো প্রব্লেম উইথ দ্যাট।  কিন্তু প্রব্লেম হলো হলুদে তো বসার জায়গাই নেই।  সবাই চাপাচাপি করে বসে আছে।  আই নিড মোর স্পেস।  কে কার কথা শোনে।  একটা বড় পাথরের ওপর সব জিনিস পত্র রেখে হঠাৎ কি হলো,  মা ক্ষেপে উঠলো।  হা ক্ষেপেই উঠলো বটে।  হঠাৎ করে কথা নেই , বার্তা নেই , বাবার কোল থেকে নিজের কোলে নিয়ে সোজা নীলের মধ্যে।  আমি তখন চারপাশ পর্যবেক্ষণ করছিলাম।  আমি একটু স্লো লার্নার , কিন্তু ডিপ লার্নার।  আমি এইটুকু বুঝেছি, আমার এইটুকু জীবনে , যে হঠকারিতা সমস্ত সমস্যার মূল।  এই এনলাইটমেন্ট আমার তখন হয়েছে যখন একদিন জলের গ্লাস দেখে ঢেলে নিয়েছি আমার মুখে।  সে এক সিন্ , কেশে কেঁদে আমার তখন যা তা অবস্থা। 

যাইহোক, যখন মা আমায় কোলে করে নীলে এনে ফেললো, তখন আমি এইটুকু বুঝতে পারলাম , যে ওই নীলটা আসলে জল।  অনেক জল।  অনেক অনেক অনেক জল।  আর ওই সাদা সাদা গুলো আর কিছু না, জলে চাপড় দিলে জল সরে গেলে যেরকম হয় সেরকম একটা জিনিস। কিন্তু এতো জলে তো ডুবে যাবো।  ডুবে গেলে আমার সত্তর বছরের রিচার্জের কি হবে।  আমি সব সময় অপ্টিমাইস্ড ইউসে বিশ্বাস করি।  জীবনটা এই ভাবে শেষ করতে পারবো না।  তারপর নিজের জন্য নয় , মা এর জন্য শেষ করতে তো আরোই রাজি নই।  কিন্তু মা এখন আমার থেকে শক্তিশালী, কোলে করে ঢুকে যেতে লাগলো জলের মধ্যে।  আরো গভীরে , আরো গভীরে আর বলে যেতে লাগলো, "ঢেউ খা , ঢেউ খা। " কিছু বোঝার আগেই বিশাল একটা জলের ঝাপ্টা আমাদের গায়ে। 

এটাকেই কি ঢেউ বলে।  আর এ কি নোনতা জল রে বাবা।  এ তো আমার নাকে দেওয়া হয়।  সর্দি বার করার জন্য।  আমি কবে থেকে ওপর মহলে আপিল করেছি এই ইনহিউম্যান প্রসেস অফ এক্সট্রাকটিং মিউকাস কে পরিবর্তন করতে।  কিন্তু যতই লোকে বলুক না কেন , নেসেসিটি  ইস নট মাদার অফ ইনভেনশন বরঞ্চ রিফ্রেস করে বলা উচিত ইনোভেটরস নেসেসিটি ইস দা মাদার অফ ইনভেনশন। বড়রা যারা ইনভেন্ট করে তারা যখন নাকে নুনজল  দিয়ে কষ্ট পেতো , তখন তারা এক্সপেকটোরেন্ট বার করেছিল নিজেদের জন্যে।  কিন্ত আমার বয়সে কেউ ইনভেন্ট করেনি।  তাই এখনও আমরা , মানে আমাদের এই খেটে খেটে খুঁটে  খাওয়া সম্প্রদায় এখনো চোখের জল নাকে ঢুকিয়ে সর্দি বার করে।  কেউ ভাবো আমাদের জন্যে , প্লিস।  আর এই মা, যে এতদিন আমার চুলের পেছনে পড়েছিল , আর যুক্তিও দিয়েছিলো যে নাকি চুলের জন্য আমার সর্দি লাগছে , সে আজকে আরো ওয়ান স্টেপ এহেড এগিয়ে আমাকে সেই নুন জলের বিশাল বাথটবে নিয়ে চলে এলো। 

আমি অবাক।  এতদিনে বুঝতে পারলাম , ওই ছোটো ছোটো সিসিগুলো কেন শেষ হয় না।  যখনি শেষ হয় , তখনি মা এসে চুপি চুপি এখান থেকে ভরে নিয়ে যায়।  এমনি করে তো আমার কষ্টের লাঘব হবে না।  আর এখন ঠিক মা কি চাইছে।  আমার নাকে মুখে চোখে এই জল ঢুকিয়ে দিয়ে পেটের  মধ্যে থেকে মিউকাস বার করবে।  আর আমি কাসতে কাসতে কষ্ট পেতে পেতে সব মিউকাস বার করে দেব।  কিন্তু যদি জল আমার লাংস এ ঢুকে যায় তখন তো খুব সমস্যা। দুদিন আগে মা খুব ভয় পেয়ে গেছিলো যখন আমি একবার সাংঘাতিক বমি করেছিলাম।  বাবার কাছে বলেছিলো ড্ৰাই ড্রাওনিং হয়েছে নাকি ছেলের।  বাবা নাকি আমাকে যখন বাথটাবে স্নান করায় তখন আমার লাংস এ জল চলে গেছে।  এই মা গুলোর জন্য একটা ডে কেয়ার খোলা উচিত , উপযুক্ত শিক্ষা দেয়ার জন্য।  তখন বাবার ওপর চ্যাঁচালো , কিন্তু আজ যে সিচুয়েশন তৈরী করতে চলেছে সেটা সম্পূর্ণ  ড্ৰাই ড্রাওনিং এর পটভূমিকা তৈরী করে। 

আমি পরিত্রাহি করে চিৎকার করা শুরু করলাম।  আমার কানে তখন জলের শব্দ , প্রচন্ড শব্দ।  আমি চিৎকার করছি , কিন্তু ততক্ষনে অনেকেই চিৎকার করতে আরম্ভ করেছে।  আমি অবাক।  বড়রাও এরমকম করে চিৎকার করে।  এর মধ্যে বাবা আবার ক্যাপচারিং দা মুমেন্ট।  ওরে আহাম্মক , একটাই তো প্রোডাক্ট জীবনে ভালো করে বার করেছিস।  সেটা যদি বিগড়ে যায় তখন হোয়াটস নেক্সট। কিন্তু কে আর কথা শোনে।  আমি দেখলাম বেগতিক , একলা চলো রে।  আমি উইদাউট পস পরিত্রাহি চিৎকার করতে লাগলাম।  কিছুক্ষন পর মায়ের কানে ঢুকলো।  এবার বাবাও যখন মায়ের ফুটপ্রিন্ট ফলো করতে লাগলো তখন আমি চিৎকার ডবল করে দিলাম।  কিছুক্ষন পর দুজনেই রণে ভঙ্গ দিয়ে।  আমায় ওই হলুদে নিয়ে এসে ফেললো। 

ওই হলুদটাও নোনতা। আর অদ্ভুত।  আমি অনেক ধরণের মাটি খেয়ে  দেখছি, কিন্তু এ কেমন ধারা মাটি।  বিস্কুটের গুঁড়োর মতো।  অথচ নোনতা।  আর গায়ে যেখানেই লাগছে সরছে না।  উফফ কি জ্বালাতন।  মাথায় গুঁড়ো গুঁড়ো  চুল আর হাতে গুঁড়ো গুঁড়ো মাটি।  বাবা বললো ওর নাম নাকি বালি আর বালি দিয়ে বানানো এই লম্বা জায়গাটাকে বলে বিচ।  এর ওপরেই বেশ কিছু আমার মতো লোকজন খেলছিল এই বালি গুলো নিয়ে।  হাত দিয়ে টানছে আর ঢিপি বানাচ্ছে।  আর খিলখিলিয়ে হাসছে।  আমি চেষ্টাও করলাম না , ব্যাপারটা বেশ ডেঞ্জারাস।  মাঝে মাঝে ওই নুনজল নীল থেকে এসে ওই বালিগুলোকে নোনতা করে চলে যাচ্ছে।  আমি নট গোয়িং টু সাপোর্ট এনিথিং হুইচ ইস এগেনস্ট মাই কমিউনিটি।  আমি টোটাল অবসার্ভেশন দিয়ে বুঝে নিলাম , এই মুভমেন্ট টু দা সো কলড বিচ ইস বেনিফিসিয়াল ফর দা বিগ পিপল, নট ফর আস।  আমি গোঁজ হয়ে বেশ কিছুক্ষন বসে থাকার পর দেখলাম বাবা মা রণে ভঙ্গ দিয়ে বাড়ি ফেরার তোড়জোড় করছে। 


বাড়ি ফিরে আসার পুরো রাস্তায় বাবা মা আমার ন্যাচারালাইজেশন নিয়ে কথা বলতে বলতে গেলো। মা বললো ওকে ওরকম ডাইরেক্ট সমুদ্রে নিয়ে যাওয়া ঠিক হয়নি।  ওহ , তো এটাই সমুদ্র।  বাবা বললো , ওকে প্রথমে বিচে অনেকক্ষন বসিয়ে রাখলে ও নিজেই সমুদ্রে যেত।  হে হে , আমি মুচকি হাঁসলাম ওই কথোপকথনে।  তবে এটুকু সত্যি , আমি বুঝে গেলাম আমার বাবা মার মানসিক ভারসাম্য অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে।  তারা প্রকৃতির সাথে যে আমার অভিশ্রাবণ প্রক্রিয়া আরম্ভ করেছে , সেটা টু আর্লি আর ফোর্সিং নেভার ওয়ার্কস। সাথে আমি জানতে পারলাম বিচটার নাম কি , মিস-কুই-মিকাট।  এই নামটা যে রাখতে পারে তার মস্তিস্ক যে আমার বাবা , মার থেকে বিশেষ ডেভেলপেড নয় সেটা বুঝতে পারলাম।  কি আর করা যাবে ,ফাইনালি আই ম্যানিপুলেটেড  দা ফ্রেস - জেন্টেলমেন থিঙ্ক এলাইক টু পাগলস থিঙ্ক এলাইক।   

আধ্যানের ডায়েরির আগের পাতাগুলো 

Tuesday, August 15, 2017

আধ্যানের ডায়েরী - নেরুদা




দিলো রে দিলো।  সব চুলগুলো কেটে দিলো।  ব্যাপারটা আমি প্রথমে ঠিক বুঝতে পারিনি।  অনেক দিন ধরেই মন কষাকষি, মারামারি , আজ নয় কাল চলছিল।  কিন্তু তোমরা এরকম করে আমায় টাকলু করে দেবে সেটা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। 

বেশ কয়েকদিন ধরেই আমার  খুব ঠান্ডা লাগছিল ।  মানে যাকে বলে, রানিং নোস।  মানে একেবারে ভরভরে।  নাক আমার বেশ কিছুদিন থেকেই  বন্ধ। কোথা থেকে যে এই ট্রান্সপারেন্ট সেমি সলিড আমার নাকের মধ্যে এসে জমা হয় বলতে পারিনা বাবু।  মাঝে মাঝেই দুধ খাওয়ার সময় আউট অফ ব্রিদ হয়ে যাই।  তখন দুধের বোতল ঠেলে সরিয়ে, প্রাণ ভরে, মুখ হাঁ করে নিঃস্বাস নিতে হয়।  সেই নিস্বাসে যে কি শান্তি সে আর বলতে। একটু গ্রামাটিকালি গন্ডগোল হয়ে গেলো বটে।   ওটা প্রস্বাস।  নিশ্বাস মানে যেটা ছাড়া হয়।  সমস্যা যদিও সেটাতেও।  তখন আবার দম ছাড়তে গেলে প্রচন্ড এক চাপ দিতে হয়।  যদিও ইনভিসিবল নিস্বাসের সাথে ভিসিবল পোঁটা থ্যাক করে বেরিয়ে আসে।   দৃশ্যদূষণ হতে পারে বটে কিন্তু আমার কিছু করার নেই , আগে হেলথ তারপর এটিকেট। 

নাক থেকে এগুলো বেরিয়ে এসে আমায় মুক্তি দেয়না।  মা বা বাবা যদি কাছে না থাকে তাহলে সেগুলো আবার আটকে যায় গালে।  হাত দিয়ে ঘষে দিলে মাঝে মঝে আবার চুলেও আটকে যায়।  সেগুলো শুকিয়ে আবার সাদা হয়ে যায়।  আমার এই সাদা চামড়ায় আরো সাদা হয়ে নুনের ড্যালার মতো দেখতে লেগে।  আমি চেটেও দেখেছি , বেশ নোনতা নোনতা।  যাইহোক।  দ্যাটস নট দা পয়েন্ট।  মুদ্দাটা হলো এই সর্দি হওয়া নিয়ে মা আর বাবার মধ্যে ঝগড়া। 

মায়ের মতে, আমার চুল বড় হয়ে গেছে তাই  স্নানের জল শুকোতে সময় লাগে।  সেই ঠান্ডা জমে নাকি আমার সর্দি হয়।  আমি ভাবলাম ইট মে বি এ কস।  যখন এই সর্দি বেরোয় তার কিছুদিন আগে থেকে বেশ ঠান্ডা লাগতে আরম্ভ করে বটে ।  কিন্তু বাবা তো ইন্টারনেট , সব কিছুর একটা পাল্টা উত্তর রেডি।  বাবার মতে এই শুকনো ওয়েদারে সর্দি গর্মি হয় না। বাবার নাকি এখানে কখনো ঠান্ডা লাগেনি।  ভারী আমার ভীমসেন।  নিজেকে জাহির করার একটা সুযোগও ছাড়ে না।  কিন্তু এই ব্যাপারে আমার মন যেন বাবাকে সায় দিলো। আসলে এই সুন্দর কার্তিকের মতো চুলের বদনাম ঠিক ভালো লাগে না। 

চুল কিন্তু আমার একদম জব্বর।  এক কালে প্রশ্ন উঠেছিল চুলটা ঠিক কার বাড়ির মতো হবে।  মায়ের বাড়ির মতো না বাবার বাড়ির মতো খোঁচা খোঁচা।  কিন্তু আমি তো আমার মতো।  তাই শেষমেশ আমার নিজের মতোই লম্বা লম্বা কোঁকড়ানো সুন্দর চুল হয়েছিল আমার।  এই একটা জিনিসে বাবা মার্ দুজনার ঝগড়া কয়েকদিন রোকা গেছে।  কারো দিকে হেললেই সমস্যা।  সবাই আমাকে তাদের বাবার সম্পত্তি মনে করবে।  কিন্তু টেকনিক্যালি আমি যখন নিজের বাবারিই সম্পত্তি নই তখন কারোকে স্বত্ব দিতে আমার বিশেষ মন বা মানসিকতা নেই। 

যাইহোক কাম ব্যাক টু চুল।  পাশ দিয়ে চলে যাওয়া সমস্ত মানুষের মতে , এই চুল আমার কিউটনেস বা বিউটি কে একটা আলাদা মাত্রা দিয়েছিলো ।  হবে না কেন।  আমার দেশে তো সবাই টাকলা।  ইভেন মা, যার নাকি পাছা ছাড়ানো চুল ছিল, সেও তো রিঠা, শিকাকাই, দেশি বিদেশী , একটিভ ভিটামিন প্রো ভি সব কিছু চেষ্টা করেও প্রতি সপ্তাহে বাথটব থেকে মুঠো মুঠো চুল বার করতো। সেই আকালের দেশে আমার সুরক্ষিত কালে মেরে  বাল , নানা এটা ভ্যাসমলের কেরামতি না, অন্দরুনি তাকত। এই সেই চুল যেটা আমি পেটের ভেতর থেকে নিয়ে এসেছি ।  টেকনিক্যালি এটা শুধু আমার আর মায়ের ক্রেডিট।  মা বলে এই দুটো চুল নাকি প্রায় চার পাঁচ ঘন্টা আগে থেকে দেখা যাচ্ছিলো যখন আমি বেরোয়নি।  সে থাক।  চুল আমার মসৃণ এবং এট্রাক্টিভ।  যখন আস্তে আস্তে বড় হয়ে গেলো।  তখন এক এক সময় আমাকে এক একজন সেলিব্রেটির মতো দেখতে লাগলো।  যখন স্নান করতাম তখন বাবা বলতো মোগলির মতো লাগছে।  যখন মা চুল শুকোতো তখন মায়ের ব্লোয়ারের সামনে বসে থাকলে বলতো  টম ক্রুসের মতো চুল।  কিন্তু আঁচড়ে দিলে বলতো "একেবারে চুমকু সোনা লাগছে। " কি বিচ্ছিরি নাম।  চুমকু ? চুমকু মানে কি।  তীব্র আপত্তি পাত্তা পায়নি।  কিন্তু আমার মোটেও ভালো লাগতো না উপমাটা। 

তবে আমাকে প্রশ্ন করলে আমি বলতাম আমার চুল মেঘের মতো।  দেখো ছোট চুলে স্টাইল হয় না।  স্টাইল করতে গেলে চুল বড় করতেই হয়।  ছোট চুলের একটাই স্টাইল - বাধ্যতা। উকুন , ড্যানড্রাফ আর গরমের জ্বালায় এই স্টাইলের উৎপত্তি।  আর আমি মনে করি ওটা চোরেদের  স্টাইল।  ধরতে যাতে না পারা যায় তার জন্য এই স্টাইল। আমি চোর নই, তবু মাঝে মাঝেই যখন আমি কিছু ভেঙে ফেলি তখন মা বলে চোর চোর তাকাচ্ছি।  চোর কি করে তাকায় সেটা তুমি কি করে জানলে বাপু।  একবার যদি চোর চোর কোথাও সাউন্ড পাও , তাহলে তো আমার থেকেও সিলি মুখ করে ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলো।  জবরদস্তি আমাকে চোর বানিয়ে চোর স্টাইল চুল কেটে দেওয়া, আনবিলিভেবল ঔদ্ধত্য।

আমাদের  বেডরুমে বেশ কয়েকটা ছবি আছে।  তার মধ্যে একজনের সঙ্গে আমার চুলের হেবি ম্যাচ।  আমি অনেকবার তাকে ছুঁতে গেছি। কিন্তু মা বাবা শকুনেরও অধম।  সব সময় ছোঁ মেরে আমাকে তুলে নিয়ে বলে "নো এটাক"।  ওটা আমাদের ইষ্টদেবতা।  হোয়াট ইস ইষ্ট ? ওটা তো কেষ্ট বা কিন্ন।  আমার সেই কিন্নর মতো চুল।  এই তো সেদিন নিউ ইয়র্ক গেছিলাম।  সে গল্প পরে শোনাবো।  সেখানে গিয়ে আমার চুলের আসল মহিমা বুঝতে পারলাম।  যখন খুব হাওয়া দেয় তখন চুল কি সুন্দর ওড়ে।  আর কানের কাছে আর মাথার ওপর কিরকম সুড়সুড়ি লাগে।  বাবা আবার সুড়সুড়ি চ্যাম্পিয়ন।  ঠিক বোঝে কোন জায়গায় আঙ্গুল বোলালে সুড়সুড়ি ভালো লাগে। সবাই যখন সুড়সুড়ি দেয় তখন সারা মাথায় হাত ঘষতে থাকে।  সেটা রাইট এপ্রোচ নয়।  জার্নি শুড স্টার্ট ফ্রম প্লেন ল্যান্ড, এন্ড হোয়েন ল্যান্ড মিটস দা মাউন্টেন ,দেন অনলি হ্যাপিনেস কামস।  আঙ্গুল ঘষতে ঘষতে কাঁধ থেকে চুল পর্যন্ত তুলে নিয়ে যেতে হবে।  তখনি আসবে ঘুমের আমেজ।  এই ব্যাপারে বাবাকে থ্যাঙ্কস।  হি অলোয়েস ডাস ইট রাইট।    

বাবার তীব্র লজিকাল আপত্তিও যখন পাত্তা পেলো না।  তখন বাবা আরো লজিক ইমপ্লিমেন্ট করে বললো যে আঠারো মাস না হলে চুল কাটতে নেই।  মা সেই একরোখা বাঘিনী।  বাবাও নাছোড়বান্দা।  তোমারও নয় আমারও নয় , বেজোড় মাসে কাটতে হয়।  বাবা ওয়াস ট্রাইং টু বায় সাম টাইম।  এটা বাবার চিরাচরিত টেকনিক।  বাবার মতে একটু সময় কিনে নিতে পারলে, পরে টপ আপ করতে বেশি খাটতে হয় না।  কিন্তু মা সুগার হিম বোন টু বোন।  মা বললো তাহলে কোনটা ক্যালকুলেট করতে হবে - কমপ্লিটেড না অনগোয়িং।  মানে আমি চোদ্দ মাস কমপ্লিট করেছি আর পনেরো মাস চলছে।  বাবা এই যুক্তিতে চুপ।  আর কোনো ট্যাঁ ফোঁ নেই। 

দিনটা এসে গেলো। আমার কোনো আইডিয়া ছিল না।  গত সপ্তাহ থেকে কোথাও একটা যাওয়ার প্ল্যান হচ্ছিলো।  কোনো একটা জায়গা, যেখানে নাকি আমি আগে গেছি কিন্তু আবার যাওয়া যাবে।  আমার আর কি আমার ঘুরতে যেতেই ভালো লাগে।  বেশ লাগে।  তাই সবাই জামাকাপড় পড়লেই আমার হৃদয় নেচে ওঠে।  আমি তো ম্যান, আমার মধ্যে অতো জটিলতা নেই।  আমি ভাবলাম সবাই যখন বেশ সুন্দর জামা কাপড় পরে নিয়েছে তাহলে আমরা শেষমেশ ঘুরতে যাচ্ছি। বিশাল উত্তেজনা নিয়ে গাড়িতে উঠলাম।  গাড়ি চলতে লাগলো আর নিমেষের মধ্যে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। 

বেশিক্ষন হয়নি হঠাৎ কোমরের কাছে টানাটানি হতে বুঝলাম ডেস্টিনেশন রিচড। আমি নরমালি ঘুম থেকে উঠে একটু আড়মুড়ি ভাঙি কিন্তু যেহেতু এন্টারটেইনমেন্ট ইস দা প্রায়োরিটি তাই আমিও সজাগ এবং উত্তেজিত হয়ে গাড়ি থেকে নেমে দেখি ভোঁ ভাঁ।  একটা ফাঁকা পার্কিংলটে দাঁড়িয়ে আছি।  ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বাবা মা কে ফলো করতে লাগলাম।  মা একটা দোকানে গিয়ে ঢুকলো।  আমার ব্যাপারটা ঠিক ভালো ঠেকলো না।  সিক্সথ সেন্স বলে তো একটা জিনিস আছে।  সেটা আবার আমার একটু বেশি স্ট্রং।  কিন্তু পিছু তো ফেরা যাবে না।  তাই বাবার হাত ধরে ঢুকে পড়লাম দোকানটাতে। 

বেশ মজাদার দোকানটা। নানা রঙ দিয়ে সাজানো একটা জঙ্গল টাইপের।  মজাদার সব গান বাজচ্ছে।  কোথাও বাঁদরের ছবি, কোথাও জিরাফের।  উঁচু নিচু সব খেলার জায়গা।  তার মাঝে এক দুজন আবার বসে আছে।  আর চুল কাটছে।  ও হরি।  তারমানে এবার আমারও ঘ্যাচাং ফু।  ডুকরে কেঁদে উঠতে  আমার থেকে এক হাত লম্বা একটা ছেলে এসে কিরকম লম্ফো ঝম্প করতে লাগলো।  আর আমার সাথে টুকি টুকি খেলতে লাগলো।  আমার বেশ মজা লেগে গেলো।  এই টুকি টুকি খেলাটা হেব্বি মজাদার।  এখানে আবার বলে পিক এ বু।  নতুন শিখেছি তাই সবার সাথে খেলতে বেশ মজা লাগে।  কিন্তু মাঝখানে আমায় থামিয়ে বাবা কোলে তুলে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিলো চেয়ারে। 

বসানোর সাথে সাথে একটা মহিলা এসে হাজির হলো।  আমার সাথে বেশ কিছুক্ষন হাসি হাসি মুখ করে অনেক কিছু খেলার চেষ্টা করলো, হুইচ ইস সিম্পলি বোরিং। তারপর একটা মেশিন বার করতেই আমি ব্যাপারটা বুঝে গেলাম।  তারপর শুরু হলো স্ট্রাগল আর ডিফেন্স।  কিন্তু বিভীষণের জন্যে রাবণকেও হার মানতে হয়েছিল।  মা ধরলো দুটো হাত , বাবা ধরলো থুতনি।  আমি নট নড়ন ,নট চরণ।  আর কি বলি।  আমার সুন্দর চুল , নিমেষে ভূমিতে মিশে গেলো।  কিছুক্ষনের মধ্যেই মাথা হালকা।  এর মধ্যে আবার ঢং করে ছবি তুলে সেটা আবার প্রিন্ট করা হলো।   ফার্স্ট হেয়ারকাট।  তারপর সেটাকে আবার একটা কার্ডের মধ্যে রেখে বাবাকে দিয়ে দিলো। 

বাবা , সেই বাবা ,যে আমার চুলের জন্য শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছিলো , সেইই বিস্বাসঘাতকতা করলো।  মানছি পুরুষ মানুষদের অনেক কিছু মেনে নিতে হয়।  কিন্তু তারপর ন্যাকামো করতে তো কেউ বলেনি।  চুল কাটার সাথে সাথে শুরু হয়ে গেলো , "কি সুন্দর লাগছে।  আমার নেরুদা।  আমার ছোট্ট টিবেটান মংক, আমার ওল্ড মংক। " আমি জাস্ট নিতে পারছিলাম না, ওই ন্যাকামোগুলো। নেরু , টাকলা , গাঞ্জা এসব এবার আমায় শুনতে হবে।  আদো আদো গলায় বললেই সবকিছু কিউট আর একসেপ্টেড হয় না। দোস সাউন্ডস এস ইরিটেটিং এস ইট ফিলস।  কিন্তু কিছু করার নেই।  দুর্ঘটনা ঘটার পর যদি সেটা মেনে না নেওয়া যায় তাহলে বুকের রক্ত গলায় উঠে যায়।  সেটা আর নামতে চায় না।  আমার তখন রাগে, ক্ষোভে মাথা ঝাঁ ঝাঁ  করছে।  কিন্তু গাড়ির ওপর আমার রিফ্লেকশন দেখে আমার বেশ মজা লাগলো। 


নাহ , খুব একটা কুৎসিত লাগছে না।  বরং বেশ সুন্দরই লাগছে।  বাবা ঠিকই বলেছে।  ছোট্ট মঙ্কের মতো লাগছে।  কিন্তু বাবা , স্পেশালি মা শোনো ভালো করে , নাম রেখেছো আধ্যান,  চুল কেটে মংক এর মতো বানিয়ে দিলে।  এবার যদি সেই মঙ্কের মতো যে নিজের ফেরারি বেচে চলে গেছিলো তিব্বতে তার মতো গৃহত্যাগ করি তখন কি করবে? দিস টাইম ফার্স্ট মিস্টেক পার্ডনড , কিন্ত কনসিডার ইট এস এ সিরিয়াস থ্রেট। পরের বার যদি হয়েছে এরকম, তাহলে কিন্তু টাটা বাই বাই।  হাজার কাঁদলেও উপায় নাই।  এই বলে রাখলাম।    

আধ্যানের ডায়েরির আগের পাতাগুলো 

Monday, August 14, 2017

শঙ্খচিলের ক্ষুধা

এ আগুন , নিঃস্ব সাজায় শঙ্খচিলের বেড়া,
জানিনে কালকে আমার গতি , হয়তো পড়বে ধরা।
স্বার্থক খাদ্য হয়ে তৃষার আগুন করিব স্নিগ্ধ ,
অর্ধ পচন সারে জ্বলিব অর্ধ দগ্ধ।
আজ হবে কাল , বিষাদ রবে , সাঙ্গ হবে শান্তি।
কালকে আমি শঙ্খচিলের , সফেদ ভুলভ্রান্তি।
আকাশ থেকে পড়বে খসে শঙ্খচিলের ক্ষুধা ,
রক্তমুখে ফিরবে আকাশে অন্তঃ নির্দ্বিধা।
কেউ রবে না আমার পাশে , কেউ রবে না চিৎকারে।
একই আমি পড়ব খসে মৃত্যূকূলের সংসারে। 

Friday, August 11, 2017

আমার জীবনে রবীন্দ্রনাথ




হেঁ হেঁ , হেঁ হেঁ  রবি ঠাকুর।  তাইতো তাইতো।  লিখতে তো হবে রবি ঠাকুর নিয়ে।  তাও আবার আমার জীবনে রবীন্দ্রনাথ।  আমি আবার রবীন্দ্রবিরোধী।  পার্লামেন্ট এ বামপক্ষ না থাকলে খেলা  জমবে কি করে।  সবাই হাতে কাদা , পচা টমেটো , নিজের না হলেও অন্যের বিষ্ঠা নিয়ে পড়তে আরম্ভ করো। 

আমার জীবনে রবীন্দ্রনাথ বাংলার আর দশটা লোকের থেকে খুব একটা বেশি বা কম জড়িয়ে নেই।  কুমোর পাড়ার গরুর গাড়িতে কে না চড়েছে।  জোর করে নাকে মুখে ঠুসে রবীন্দ্রনাথ নামক আলুভাতে সবার পাতেই কম বেশি পড়েছে।  যখন থেকে বোঝার ক্ষমতা হলো তবে থেকে দেখছি বাড়ির শোকেসে বিশাল রবীন্দ্র রচনাবলী।  কেউ পড়েনা।  পড়লেও পুরোটা পড়া কারো পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি , কিন্তু কথায় কথায় , "ভালো মন্দ যাহাই আসুক সত্যেরে লও সহজে " ঝাড়তে কেউ ছাড়ে না।  বিশেষত রেজাল্ট বেরোনোর আগে। 

প্রতি বছর বাংলা পরীক্ষা এক জীবনযন্ত্রণার সূত্রপাত ঘটাতো।  বাংলা বলতে ভালো লাগে , শুনতে ভালো লাগে কিন্তু লিখতে , ইশশশ । লোকে বড় হওয়ার অপেক্ষা করে স্বাধীনতা, পয়সা আর প্রেয়সীর জন্য । আমি অপেক্ষা করতাম , কবে বড় হব আর বাংলা পরীক্ষা দিতে হবে না । ওই সমচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দযুগলের অর্থপার্থক্য নির্ণয় আমার রাতে ঘুমের মধ্যে এসে চিমটি কাটত। আর ছিল রচনা বউদির ডিমান্ড । ওয়ার্ড লিমিট আরেক হুল ।  জ্ঞানীরা চাইতো আরো বেশি বেশি শব্দ।  আর আমি চাইতাম যত কম হোক।  আমার দ্বারা ভাব সম্প্রসারণ হতো না, হতো সংকোচন।  তাই সাহিত্য বলতে রহস্য রোমাঞ্চ সেই বয়সে অতিরিক্ত প্রিয় ছিল।  হঠাৎ করে পরীক্ষার আগে এক হাওয়া এলো যে, রচনায় যদি কোটেশন দেওয়া যায় তাতে নাকি নম্বর বেশি পাওয়া যায়।  আমার আবার মুখস্থ করতেও গায়ে জ্বর আসতো।  কোনো ভাবে মুখস্থ করে নিলেও সেটা ভাবের প্যান্ট পরিয়ে ঠিক জায়গায় চেন বসিয়ে টানা আমার কাছে ভবিষ্যতের মতো - অন্ধকার।  কিন্তু এই সময় শরীরে কিছু ঢেউ খেলার কারণে মাঝে মাঝে ছন্দ মিলিয়ে দু চারটে কবিতাও লিখে ফেলেছিলাম।  মাথায় এলো ফন্দি।  পরীক্ষার খাতায় ফটাফট দুটো লাইন ঝেড়ে দিয়ে নিচে লিখে দিতাম রবীন্দ্রনাথ বলেছেন।  এটুকু কনফিডেন্স ছিল যে কেউ রবীন্দ্রনাথের সমস্ত কবিতা পড়েনি, আর পড়ে থাকলেও মুখস্ত রাখা ইম্পসিবল। রেজাল্ট বেরোনোর পর খাতা দেখার দিন রবীন্দ্রনাথকে যে কি ভাবে থ্যাংকু বলেছি সে আর এখানে লিখছি না। 

এরপর ধীরে ধীরে শরীরে ও মনে হাজার হাজার পরিবর্তন এলো।  যে কোনো মেয়েকে দেখে ভালো লাগতে শুরু করলো।  সব কিছুই ছন্দময়। প্রচুর কবিতা লিখতে আরম্ভ করলাম।  কিন্তু কবিগুরুর কবিতা যেই পড়তে আরম্ভ করলাম আমার বমি পেতে আরম্ভ করলো।  এই গুলো কবিতা বলে ? কি স্লো , কি বেকার। এর থেকে রগরগে নজরুল আর বাংলা ব্যান্ড তো অনেক ভালো।  সেই বয়সটা এমন থাকে , যে লোকের ন্যাকামো সহ্য হয় না।  আর আমারও তখন রবীন্দ্রনাথের ওই ন্যাকা ন্যাকা কবিতা গুলো ভালো লাগতো না।  বীররস বা  স্বাধীনতা সম্বন্ধীয় কবিতাগুলো মন কাড়তো বটে , কিন্তু সে আর কটা। 

বন্ধুরা তখন প্রেমে চুপচুপে।  সবাই শেষের কবিতা শেষ করছে।  আমি পড়ে তো থ।  উপনাস্যেও নেকিয়েছে ?  অমিত আর লাবন্যর মতো বেকার নাম আমি কিছুতেই ক্যারেক্টার হিসেবে মেনে নিতে পারিনি।  তার ওপর যে ডায়লগের গভীরতা।  এতো গভীরে ঢুকতে হতো যে আমি বললাম "থাক" . কবিগুরুর কবিতা ও উপন্যাস দুটো থেকেই আমি চোখ তুলে নিলাম।  বাবা তখন আমার ঠুলি ঠিক করতে ব্যস্ত।  ছেলে রবীন্দ্রনাথ না শিখলে আর কি শিখবে।  তার থেকে গলায় দড়ি দিক। বাড়িতে তখন নতুন টেপরেকর্ডার এলো।  বাবাই নিয়ে এলো।  সাথে দুটো ক্যাসেট নচিকেতা আর কি একটা আলবাল রবীন্দ্র সংগীতের ক্যাসেট।

এরপর শুরু হলো অত্যাচার।  বাবা রোজ অফিস থেকে ফিরে রবীন্দ্র সংগীত চালিয়ে দিতো। লক্ষ করলাম বাবা আর আমাকে রবীন্দ্রনাথ নিয়ে কিছু বলছে না।  বাড়িতে ধীরে ধীরে ক্যাসেটের সংখ্যা বাড়তে লাগলো।  যেহেতু বাবার পয়সা বেশি , তাই রবীন্দ্রসংগীতের ক্যাসেট বেশি আসতে  লাগলো।  আমার এই রবীন্দ্র সংগীতে এতো এলার্জি ছিল সে আর কি বলবো।  ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি আর শুনে আসছি সমস্ত জলসাতেই কেউ না কেউ মাইক ধরে কুকুরের কান্না গাইবে।  আর সেটাই লোকে বলবে দারুন।  আমি নাম নিতে চাইনা , লোকেদের মনে দুঃখ লাগবে, কিন্তু নামকরা সব রবীন্দ্রসংগীত গাইয়েরা সত্যি সত্যি রবীন্দ্রনাথের গানের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। 

আমার কিছুতেই ভালো লাগতো না।  কিন্তু বাবার ওপর চ্যাঁচানো যেত না।  কারণ আমি যখন ঢিনচ্যাক গান চালাতাম তখন বাবা কিছু বলতো না।  এ আমাদের মধ্যে চুপচাপ চিৎকার ছিল।  একদিন রাতে আমি এক বান্ধবীর প্রেমে পরে গেলাম, ধড়াম করে।  পরেরদিন সকালে বাবা নতুন একটা ক্যাসেট এনে চালালো আর তাতে বেজে উঠলো শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়ের "ভালোবাসি ভালোবাসি" . কি সাংঘাতিক টান ছিলো গানটাতে।  মনের কথা উগলে উঠছিলো।  আমি মাথার পেছনে হাত রেখে সেই যে রবীন্দ্রসংগীত শুরু করলাম।  আজও থামেনি।  প্রতিটা সময়ে প্রতিটি সমস্যায় কোনো না কোনো গান আমার কানের কাছে বেজেই গেছে।  রবীন্দ্রনাথ নাকি স্বয়ং বলে গেছিলেন যে সবাই তাঁর সব সৃষ্টি ভুলে গেলেও গান অমর হয়ে থাকবে । আর এই অমরত্বে বাঁধ সেধেছিল স্বয়ং বিশ্বভারতী । কপিররাইট ওঠার সাথে সাথে রবীন্দ্রসঙ্গীতের যে বিকৃতি শুরু হয় ধীরে ধীরে তা কিছুদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় । উৎকৃষ্ট বস্তু যখন সহজলভ্য হয় তখন প্রথমে জথেচ্ছ ব্যাবহার হয় । তারপর প্রকৃতির নিয়মে সে আবার তার হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করে ।  তখন একের পর এক যুগোপযোগী বাদ্যযন্ত্রের সাথে আধুনিকতা মিশিয়ে চিরনবীন রবীন্দ্রনাথের প্রকাশ ব্যাপৃত হয় শিশু থেকে তারুণ্যে।  সেই বন্যার সময় আমি দেশত্যাগ করি। 

বিদেশের মাটিতে শুধু একটু বাংলা শোনার , পড়ার জন্য মন হু হু করতো।  কিন্তু তখনও ইন্টারনেটে বাংলার প্রচলন নিতান্ত কম।  অথচ জীবনে তখন পরিবর্তনের  তোলপাড়।  নতুন বধূর গৃহপ্রবেশে "তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ, একটুকু ছোয়া লাগে সব কি মধুময় লাগতে থাকে সন্ধ্যার মেঘমালার সাথে ।  শুধু ভাবি , এমনি করে যায় যদি দিন যাকনা।  আমার তখন ফাগুন লেগেছে বনে বনে।  ক্যালিফোর্নিয়ার রাস্তায় তখন পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে , আমি বলছি ধীরে বউ উতল হাওয়া।  সেকি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ প্রাণেশ হে , আনন্দ বসন্ত সমাগমে। 

কিন্তু সুন্দর চিরস্থায়ী হয় না।  খরবায়ু বেগে বইতে থাকে , আমরা দুজনে দুদিকে ছিটকে পড়ি।  তবু কষে হাল ধরে দীর্ঘদিন এই তরণী বয়ে চলি।  মাঝে মাঝে যখন হাঁফ ছেড়ে সব ছেড়ে দিতে ইচ্ছা করে , তখন একলা চলার গান এসে পেছনে এক লাথি মেরে বলে টুকরো করে কাছি পালে হাওয়া লাগা।  মন তখন মেঘের সঙ্গী, উড়ে চলে দিক দিগন্তের পারে।  ঝগড়ার মাঝে অসহায় পুরুষ কেঁদে উঠে বলে ভালোবাসা সেকি শুধুই যাতনাময়।  একাকিত্বের দোলায় দুলতে দুলতে সেদিন দুজনের দোলার কথা মনে আসে। 

লিখতে লিখতে রাত ভোর হয়ে যাবে , তবু শেষ হবে না একের পর এক রবীন্দ্রসংগীতের প্রভাব আমার জীবনে। কি বিচিত্র সেই সৃষ্টি , কি বিচিত্র শব্দের খেলা, কি বিচিত্র সুরের সমাগম।  না , ঢং করে সেই প্রাণের কবি , মনের কবি বলতে পারবো না।  কিন্তু জীবনের প্রত্যেক পদে পদে তার ছোঁয়া যে আমার গায়ে লেগে আছে , সেটার অবমাননা করি কি করে। 

যবে থেকে লেখা শুধু করলাম তবে থেকে মনে একটা ভয় থাকতো।  এই কেউ এসে না বলে যে রবীন্দ্রনাথ টুকেছি।  বাঙালির আঁতেল সম্প্রদায়ের এই এক অদ্ভুত চুলকানি। আর এতেই আমি রবীন্দ্রবিরোধী হয়ে পড়ি।  রবীন্দ্রনাথ তার আশপাশের চরিত্র নিয়ে লিখেছে , আমিও তো তাই।  তিনি বিখ্যাত আমি অখ্যাত।  যেমন পৃথিবীতে সাত জন এক রকম হতে পারে।  তাহলে তাদের চরিত্র কেন এক হতে পারে না।  আমার মতো হাজার হাজার লেখক কে গলাটিপে মেরেছে এই রবীন্দ্রপ্রেমী মানুষগুলো।  যে রবীন্দ্রনাথ মুক্তচিন্তা প্রচার করে গেছেন , তারই পাঠকরা বদ্ধ হয়ে কুক্ষিগত করে রেখেছে তাদের চিন্তাগুলোকে।  কল্লোল  যুগের এই বিদ্রোহ আজও বর্তমান।

না , আমার ভালো লাগেনি চোখের বালি , না ভালো লেগেছে শেষের কবিতা।  অনেক চেষ্টা করেছি , আর এখনোও করে চলেছি।  চব্বিশ খন্ডের রবীন্দ্র রচনাবলী এখনোও আমার কাছে আছে। পরে চলেছি।  কিছু ভালো লেগেছে , কিছু না।  কিন্তু তাদের মতো আমি বলতে পারবো না কার থেকে রবীন্দ্রনাথ ভালো।  রবীন্দ্রনাথ তার নিজের থেকে ভালো - প্রতি পরের পৃষ্টায়। 

শেষ করি তার ছোটগল্প নিয়ে।  আমি দেশে বিদেশের অনেক ছোটগল্প পরেছি , আর পড়েছি সম্পূর্ণ গল্পগুচ্ছ।  নাঃ , এখানেও রবীন্দ্রনাথ এক নম্বরে নয়।  কিন্তু তার সেই বিশ্লেষনি পংক্তি , "নাহি বর্ণনার ছটা , ঘটনার ঘনঘটা , নাহি তত্ব নাহি উপদেশ , অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে শেষ হয়েও হইলো না আর শেষ।" এর কোনো জুড়ি নেই।  প্রতিটি নভিস লেখক একটা কাঠামো খোঁজে শুরু করার।  তিনি সেই কাঠামো দিয়েছেন ছোটগল্পের।  ছোটোগল্পের ব্যাপ্তি তিনি যে বাঁধনে বেঁধে  দিয়ে গেছেন তার জন্য সত্যি তিনি আমার গুরু।  না কবিগুরু নন, গল্পের গুরু।    

এই হলেন আমার নাইটি পরা ইন্ডিয়ান সান্টা ক্লস যিনি আত্মসমালোচনায় প্রখর আর জগদ্দলের তীব্র নিন্দুক।  তোমরা যে যা বল ভাই , আমার পরান যাহা চাই , ইনি  তাই।  









Wednesday, August 9, 2017

আধ্যানের ডায়েরি - খেলবো না খাবো ?



পুরো প্রেস্টিজে গ্যামাক্সিন। এলো , এসে ধরিয়ে দিলো ।  তারপর কি ? খাবো না খেলবো এটা নিয়ে।  সেটা তো আগে বল।  প্রেক্ষাপট, আমার নতুন ডে কেয়ার।  জনতা আমার মতো বেশ কিছু পাবলিক।  আর ওয়ান অ্যান্ড অনলি ভিকটিম , আমি।  এই ডে কেয়ার নিয়ে অনেক কথা বলার আছে।  কিন্তু আরো কিছুদিন থাকি, অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করি তারপরে গুছিয়ে লেখা যাবে।  আপাতত যেটা এখন সবথেকে বড় প্রব্লেম, সেটা হলো আমার খাওয়া।  সে ডে কেয়ারেই হোক, বা পার্টিতেই হোক বা নিজের - একেবারে নিজের ঘরেতেই হোক।  সব জায়গায় আমি হেনস্থা হচ্ছি। 

কোন যে মহাপন্ডিত এসে মায়ের আর বিশেষত বাবার কানে এসে বলে দিয়ে গেছে যে ফিঙ্গার ফুড খাওয়াতে হবে , আর তাতেই দুজনে তুর্কি নাচন নাচছে, সাথে জুটেছে আমার ডেকেয়ারের দুই ডাকিনি আর যোগিনী।  মা ব্যাপারটা বেশ ভালোই সামলাচ্ছিলো।  যেহেতু আমি বাড়ন্ত বাচ্চা। হ্যাঁ,  এখানে আমি কনসিডার করছি,  আমি বাচ্চা।  শরীরের দিক থেকে তো আমি শিশু।  এনালিটিকাল এবিলিটি, কনফিডেন্স আর কমন সেন্স আমার বাকিদের থেকে বেশি হতে পারে বটে, কিন্তু আমার হাড় মাংস সবে বারো চোদ্দ কিলো।  এই পৃথিবীর বুকে টিকে থাকতে হলে, শুধু বুদ্ধি দিয়ে টোকা দিলে হবে না।  এম আর ভি বাড়িয়ে ধাক্কা মারতে হবে।  এইসব নিরেট পাথর কেটে বানানোর মানুষের মাথাগুলোকে টোকা দিয়ে নলেজ ঢোকানো যায় বটে, বাট টু মুভ দেয়ার বাট , আই নিড টু গিভ দেম ধাক্কাস। 

এনিওয়ে , মা আমাকে ভালোই নানা ফ্লেভারের খিচুড়ি করে খাইয়ে দিচ্ছিলো।  আমিও মন দিয়ে টিভি দেখতে দেখতে, কখনো আমার টেবিলে বসে , কখনো মায়ের কোলে শুয়ে খেয়ে নিচ্ছিলাম। আগেও বলেছি , আমার কাছে খাওয়া হলো মোস্ট আনপ্রোডাক্টিভ কাজ।  তাই খাওয়া বাদ  দিয়ে বাকি সব করতে করতে খেতে হবে , এইটা হচ্ছে ব্রিলিয়ান্ট এপ্রোচ।  মা যখন মুখের কাছে ধরে, তখন মায়ের মনে হতে পারে যে আমি মাথা ঝাঁকিয়ে খাচ্ছি না।  আসলে মা কে ব্যাপারটা বুঝতে হবে যে টিভিতে তখন ভার্সাটাইল ইমোশনের এক্সপ্লোশন হচ্ছে।  যদি আমি দু চারটে ছিটেও গায়ে লাগাতে পারি তাহলে মায়েরই লাভ।  শোকেস করে ঘ্যাম খেতে কার না ভালো লাগে।  কিন্তু না , বাবার জ্ঞান আর ডে কেয়ারের ধাক্কায় মাও গম্ভীর হয়ে মাথা নাড়লো। হুম, এবার ফিঙ্গার ফুড দিতেই হবে। 

এই ফিঙ্গারফুড জিনিসটা প্রথমেই লিঙ্গুইস্টিকালি চটকানো।  ফিঙ্গার চিপস লম্বা লম্বা আঙুলের মতো , ফিশ ফিঙ্গারও আঙুলের মতো , ইভেন লেডিস ফিঙ্গার সবুজ আঙুলের মতো।  কিন্তু ফিঙ্গার ফুড মোটেও কোনো শেপ বা সাইজ মানে না।  ট্যারা ব্যাঁকা করে ফল পাকড় কেটে , বা চন্দ্রপুলির মতো আলু ভাজা , গোল চৌকো কুকি , এমনকি ভাতকেও এরা ফিঙ্গার ফুড বলে চালিয়ে দিচ্ছে।  ইংরেজরা সারা পৃথিবীর ঘড়িতে বারোটা বাজার সাথে সাথে কেটে পড়েছে।  যাইহোক, এই পি ইউ টি পুট আর বি ইউ টি বাট আমাকে মেনে নিতেই হলো।  কিন্তু সমস্যা বাঁধে ভ্যারাইটিতে আর ওয়ে অফ টেকিং এ। 

এ থেকে জেড , অ থেকে চন্দ্রবিন্দু পর্যন্ত খাবার, সব যেন এখন ধীরে ধীরে ফিঙ্গারফুডে পরিণত হতে থাকলো।  আর কিরকম যেন একটা কুকুর মনিব ভাব এসে গেলো বাবা মার মধ্যে।  নিজেরা খাচ্ছে।  আমি গিয়ে দাঁড়ালাম, আর দুচারটে ভাত তুলে, ‘নে টমি খা’। আমারও কি জানি কি হয় , আমিও থেবড়ে বসে ওগুলো তুলে মুখের মধ্যে ঢালার চেষ্টা করি।  ব্যাপারটা আর কিছুই না,  আমার এখন চোখের দৃষ্টি যাকে  বলে আই সাইট দিনে দিনে শার্প হয়ে যাচ্ছে।  সারা কার্পেটে পরে থাকা ছোট ছোট দানা গুলো আমার ছাড়া কার পেটে যাবে? আমি না খেলে ওগুলো হয় পচবে , নয় শুকোবে, দুটোই ওয়েস্টেজ।  তাই আমি রেস্পন্সিবল মেম্বার অফ হাউস হয়ে একটা একটা করে খুঁটে খেতে থাকি। 

কিন্তু এই ভ্যারাইটির চক্করে কোনটা এডিবল, কোনটা টক্সিক আর কোনটা পয়সন সেটা বুঝতে পারিনা।  লম্বা লম্বা বাসমতি চালের ভাত আর বাবার দাঁত দিয়ে নখ কেটে ফেলে রাখা নখ দেখতে প্রায় এক, কিন্তু ডাইজেশনে দুটো স্কেলের দুদিকে।  সর্ষে ইস গুড , কিন্তু মায়ের কানের দুল থেকে ঝড়ে পড়া কালো বিডস খতরনাক। চুল মাথায় থাকলে কোনো সমস্যা নেই কিন্তু পেটে গেলে আর রক্ষে নেই।  সবজি সবই ভালো, কিন্তু নিচে পরে থাকা খোসা নাকি ডেঞ্জারাস। আমি কি আর অতো ছাই বুঝি নাকি। হাজার তার নাম, হাজার তার রূপ।  এখন সব মিলিয়ে ভোকাবুলারি দুশো শব্দ ( বোকা বোকা সাইকোলজিস্টরা গুল দেয় , আর আমি এটাই ইউস করে নেপোয় দই মারি ) . আমার এখন শেপ , সাইজ এন্ড টেস্ট  ইম্পরট্যান্ট , হাইজিন আর এতিকেট নয়।   

কিন্তু সমস্যা আরো।  হয়তো হাইজিনিক পরিস্থিতিতে খাওয়া দেওয়া হলো, কিন্তু এটা বলে দেওয়া হলো না খাবো কি ভাবে , তখন ? আচ্ছা কয়েকটা এক্সাম্পল দিচ্ছি।  দুধ খাই চুষে , চুষলেই গলায় ঢুকে যায়, ওষুধ খাই চেটে , জল খাই মাথা উঁচু করে , মায়ের আঙ্গুল খাই কামড়ে , কিন্তু এই ফিঙ্গার ফুড খায় কি করে। আমার যতদূর জানা ছিল বড়রা এসব খায়না। ওদের খাবারগুলোকে পাম ফুড বলা চলে।  প্রথমে ঢেলে, তারপর চটকে মেখে তারপর গোল গোল করে মুখে ঢালে। আঙ্গুলগুলো পামের সাথে লেগে আছে তাই পামফুড। আচ্ছা,  তাহলে বড় হলে আমি বাবার মতো করে খাবো।  কিন্তু আমি কি বড় নই।  আমি তো মেহেরের থেকে বড় , ঐশীর থেকে বড়।  তাহলে লেটস ফলো দা বড়স, এন্ড মেক ইট বেটার। 

এই ভেবে পরের দিন ডে কেয়ারে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম লাঞ্চের। কেউ জানেনা আমি কি করতে চলেছি।  যদিও আমার বন্ধুদের বিশেষ যায় আসে না, কারণ তারা আমার থেকে একটু বেশি পাকা। এরা সব কিছু আগে থেকে শিখে এসেছে।  মনে হয় ওরা এখানে আসার আগে অন্য কোনো স্কুলে দু তিন ঘন্টা থেকে আসে।  ওরাও খায়, কিন্তু আমি ঠিক ওদের খাওয়া বুঝতে পারিনা।  চামচ দিয়ে খায়।  ফিঙ্গার ফুড খেতে দেয় , সবার হাতে দশ দশটা আঙ্গুল অথচ সবাই একটা চামচ নিয়ে খোঁচা মেরে মেরে খায়, জাস্ট ভোগাস।  এরা নাকি দেশের ভবিষ্যৎ।  অপ্টিমাইসড ইউস অফ ন্যাচারাল রিসোর্সেস না হলে কি আর দেশোদ্ধার হয়।  যাইহোক দেশের প্রেসিডেন্ট একটাই হয়। 

শেষমেশ খাওয়া এলো।  লাল, সাদা, সবুজ , গোল চৌকো , ত্যাবড়া আর থ্যাবড়া।  একবার চোখ বুঝে মা বাবার খাওয়া স্মরণ করলাম।  তারপর প্রথম কাজ হলো বাটি  উল্টে দেওয়া।  ডিসিশনে একটু লেট্ হয়ে গেলো কারণ বাটি নেই।  একটা থালার  ওপর গোল গোল খাঁজ কাটা।  ব্যাপারটা তো বাবার প্লেটে নোটিস করিনি।  যাহোক মেন্ মুদ্দা হলো , প্রথমে উল্টোতে হবে।  তাই পুরো থালাটা উল্টে দিলাম।  সমস্ত কিছু গিয়ে পড়লো টেবিলে।  কোনো প্রব্লেম নেই।  এবার কাজ হচ্ছে চটকানো।  বাবাকে আলুভাতে মাখতে দেখেছি।  প্রথমে যেটাই একটু বসে থাকবে তার ওপর তালু দিয়ে জোরে চাপ দিলে শুয়ে যাবে, এই হোলো লজিক।  আমি একটু আলাদা ভাবে তালু দিয়ে মারলাম এক থাপ্পড়।  একদম সাকসেসফুল সবুজ সেদ্ধ বিনস একনিমিশে থেঁতো হয়ে গেলো।  এরপর বাকি সব গুলো একে একে থেঁতলে তারপর চটকাতে থাকলাম।  বেশ সব কিছু মিলে মিশে এক রামধনুর সৃষ্টি হলো।  ব্রেভো আধ্যান ব্রেভো।  এরপর মাখা।  মাখা আর কিছুই নয় এদিকের জিনিস ওদিকে ঘষে ঘষে নিয়ে যাওয়া, আর তারপর সবগুলোকে মিশিয়ে দেওয়া।  আমার আর ক্লারার টেবিল জোড়া।  আমি ভাবলাম লেটস হেল্প দা পুওর লেডি।  ওর টেবিল থেকেও টেনে টেনে ঘষে ঘষে আমার টেবিলের জিনিসের সাথে মাখিয়ে দিলাম।  এবার খাওয়া। 

কিন্তু ওটা কি।  একটা গোল মতো জিনিস।  সবাই সসেজ সসেজ বলছে।  কোনো রকমে জিনিসটা হাতে তুললাম।  আমার গাড়ির চাকার মতো।  দেখতেও ওরকম কিন্তু গন্ধটা বেশ "আয় খা , আয় খা " মতো।  এটা নিয়ে কি খেলবো না খাবো।  সবাই দেখছি সেই চামচ দিয়ে খোঁচানো শুরু করেছে।  তাহলে আমাকেও খেতে হবে।  আমার কিন্তু সেই মেথডিকাল এপ্রোচ। ঢালা, থ্যাঁতলানো , চটকানো , মাখা  দেন খাওয়া। 

টেবিলে ফেললাম , মারলাম এক থাপ্পড় কিন্তু ব্যাটা শুয়ে পড়ল না, উল্টে আমার হাতটাই কিরকম নোনতা আর চকচকে হয়ে গেলো।  একটু চেটে নিয়ে দেখলাম।  বেশ খেতে, নোনতা নোনতা।  কিন্তু এটা তো থ্যাঁতলানো গেলো না , মাখব কি করে। ঠিক আছে , অনেক ভেবে বার করলাম যে এক্সেপশন বা ব্যতিক্রম তো থাকতেই পারে।  যেমন সবকটা মূর্খদের মাঝে আমি পন্ডিত। তাই আমি এবার ওটা হাতে তুলে নিলাম। এবার সোজা মুখে ঢুকিয়ে দেব।  ওয়ান - টু - থ্রি।  একি, সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে কেন?  আর আমি স্বাদ পাচ্ছি না কেন।  মা যখন খাওয়ায় বা একটু আগেই তো খেলাম, নোনতা নোনতা। কিন্তু এখন স্বাদ পাচ্ছি না কেন?  আর কানেও যেন কম শুনছি।  বাঁ হাত দিয়ে তুলেছিলাম , কিন্তু সেটা মুখে পৌঁছয়নি।  কানে গেছে।  কি লজ্জা,  কি লজ্জা। আসলে মাথাটার খেয়াল আছে , কিন্তু মাথার কোথায় মুখটা সেটা সব সময় ঠিক ঠাওর করতে পারিনা।  বাবা যখন খিচুড়ি খাওয়ায় আসলে মুখ, নাক , কান সব কিছুই ইউস করতে হয়।  তাই মাঝে মাঝে একটু আধটু গন্ডগোল হয়ে যায়।  কুচ পরোয়া নেই আধ্যান, কান টানলেই মাথা আসে।  আর মাথাতেই কান আছে।  আর কানে শুনলেই মুখে বলা যায়।  তার মানে কানের কাছাকাছি মুখ আছে।  শুধু খাবারটা টানলেই হলো। 

টানতে টানতে নিয়ে এলাম সসেজটাকে এক জায়গায়, দেখলাম সবাই থমকে দাঁড়িয়েছে।  সবার চোখ আমার দিকে।  তার মানে ওটাই মুখ।  এবার ফিঙ্গারে প্রেসার দিলেই ব্যাপারটা আলতো করে মুভ করে যাবে জিভের মধ্যে।  একটু চাপ দিলাম , কিন্তু কৈ এখনো তো কোনো স্বাদ নেই।  আরেকটু চাপ দিলাম , তাতেও কিছু হলো না।  কিন্তু এবার আবার সবাই হেসে ফাটিয়ে দিলো।  আমি লাল হয়ে গেলাম চেষ্টা করতে করতে।  বেশ কিছুক্ষন ধস্তাধস্তি করেও যখন ঢুকলো না ভেতরে , তখন জোয়ান্নার দিকে তাকাতে বুঝলাম আমি কান আর মুখের মাঝখানে যে গালটা আছে সেটাতেই ঢোকানোর চেষ্টা করছি।  লজ্জায় মাথা আরো নিচু হয়ে গেলো।  কিন্তু শুরু করা কাজ, আমায় শেষ করতেই হবে।  আবার পথ চলা শুরু।  কিন্তু মুখের কাছে আসতেই থপাস।  হাত থেকে গেলো পরে।  এবার সোজা মুখে পুরবো।  একটু হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখে নিলাম নোংরা হয়ে যায়নি তো।  দেখলাম,  না , বেশ ঠিকই আছে।  কিন্তু সোজা মুখে পুরতে যেতেই আমার হাত চেপে ধরলো ডাকিনি যোগিনীর একজন।  লাঞ্চ টাইম শেষ।  এবার উঠে পড়তে হবে।  আমার তখন তীরে এসে তরী ডোবার মতো অবস্থা।  এতো কষ্ট করে স্টেজ তৈরী করে পা ভেঙে ফেললাম নাচার আগেই।  গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছা করলো , কিন্তু আবার সেই প্রেস্টিজ আমার সামনে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকলো।  আর ওই শশী , শিবা , ক্লারা , জনি সবাই আমার দিকে তাকিয়ে খ্যা খ্যা করে হাঁসতে লাগলো।             

এই নন প্রোডাকটিভ কাজে আমাকে জোর করে ঠেলে দেওয়ার কারণ ফাঁকিবাজি।  কাজ করবো না, তাই এই মহান বাণী বেরোয় মা দের মুখ থেকে , "নিজে খেতে শেখো।" এইটুকু কাজ করতে এতো অনীহা। আর এই অনীহার জন্য আমাদের মতো ইন্টেলিজেনট শিশুদের এরকম বার বার ইন্সাল্ট হতে হয় সোসাইটির কাছে।  ওরে গাছকেও ঠেকনা দিতে হয় দাঁড়ানোর জন্য।  একটু না হয় বড় বয়স পর্যন্ত খাইয়ে দিলি।  তাতে কি গায়ে জ্বর আসে।  আর এই বাবা , এখনো তো মাঝে মাঝে আমার মা তোমাকে খাইয়ে দেয় তখন কি মা বলে "নিজে খেতে শেখো। " আমার সর্বসমক্ষে যা ইনসাল্ট হয়েছে সেটার জন্য তোমরা দায়ী।  যাইহোক ল্যাজ তো আর সোজা হবে না তাই আপাতত রাখি, আমি আর জাস্ট নিতে পারছি না।  শুধু একটাই রিকোয়েস্ট , কোনটা খাবো আর কোনটা নিয়ে খেলবো সেটা এটলিস্ট বলে দিয়ো।

আধ্যানের ডায়েরি আগের পাতাগুলো