Saturday, April 15, 2017

আধ্যানের ডায়েরি (প্রথম পাতা ) - আমার ঘর

আমার ঘর
আমি কিন্তু বেশ আছি। নীড় ছোট কিন্তু বেশ comfortable. সময়ে সময়ে আমার খাবার এসে যায়। সময়ে সময়ে। না পেলেই আমি একটু নরে চরে বসি। ব্যাস খাবার এসে যায়। আমার এ ঘরে কখন আলো কখনও অন্ধকার। বলতে গেলে আধো আলো আধো অন্ধকার। সারা ঘর জলে থইথই করে। কিন্তু স্যাতস্যাতে নয়। বেশ ওম হয়ে থাকে। যখন থেকে বুঝতে শিখলাম আমি জীবিত তখন থেকে বুঝলাম আমার একজন একজন caretaker আছে। সে বেশ ভালোবাসে আমায়। ভালবাসাটা যে ঠিক কি সেতা যদিও আমার কাছে খুব একটা পরিস্কার তা নয়। কিন্তু হ্যাঁ সময়ে সময়ে আমার প্রয়োজন সে মিটিয়ে দেয়। আমি আমার কাজ করি। কাজ! সেটাও কেন যে বললাম সেটাও বুঝলাম না। যা করলে আমার বেঁচে থাকা সম্ভব তাকেই হত কাজ বলে। তাই করি। নড়ি চড়ি।

আমার খেলার জিনিস বেশি নেই। একটা লম্বা মতো জিনিস আমার পেটের সাথে আটকানো আছে। বেশ লম্বা। যখন আর কিছু করার থাকে না। তখন আমি ওটাকে ধরেই ঝুলি। বেশ লাগে। দোল খাই। আগে ঘরে অনেক জায়গা ছিল। তখন আমি ডিগবাজি খেতাম। লাফাতাম ঝাপাতাম। তখন কোনও সমস্যা ছিল না। এখন আমি বেশ বড় হয়ে গেছি। আর বেশি নড়াচড়া করতে পারিনা। একেই কি বার্ধক্য বলে। যখন কেউ নড়তে চড়তে পারেনা, একই জায়গায় দিনের পর দিন বসে বসে খেতে হয়। হতে পারে। মাঝে মাঝে ঘরের দরজায় ধাক্কা মারি। ঘরটা কেঁপে ওঠে কিন্তু যে কে সেই। আমার আর বড় ঘর হয়না। এগুলো কিন্তু ঠিক নয়। আমিও মানুষ আমারও প্রয়োজন আছে। শখ আহ্লাদ আছে। আমারও বড় ঘরের অধিকার আছে। কিন্তু প্রয়োজন থাকলেই বা কে মেটায়।

আমার এই ঘরের কিছু সমস্যা আছে। ঠুকঠাক কত কিছু শব্দ হয় সারাদিন ধরে। সারাদিন আমার ঘরটা বেশ দোলে। আমাকেও দুলতে হয়। আমার বেশ ভয় লাগে। তাই আমি চুপ করে ঘরের এক কোণে ঘাপটি মেরে বসে থাকি। বসে থাকতে থাকতে ঘুমে চোখ ঢুলে আসে। ঘুম আমার প্রচুর। কথায় বলেনা বলির ঘাম আর দুর্বলের ঘুম। আমি কি দুর্বল। না মোটেই না। মাঝে মাঝে তাই শিলিং এ মারি এক লাথি। যদিও কিছু হয়না। আগে যখন ছোট ছিলাম তখন শিলিং এ হাত পেতাম না। জলে ভেসে ভেসে উঠে জেতাম ওপরে। কিন্তু পা তো জলে। হাত দিয়ে কত আর জর পাওয়া যায়। তাই শিলিং একটুও ভাঁজ হত না। ও হ্যাঁ ! আমার পুরো ঘরটাই কিন্তু বেশ নরম। গদি গদি। তাই খাট, বিছানা, সোফা , কুশন কিছুই লাগে না। যেখানে ইচ্ছা যখন ইচ্ছা আমি আয়েশ করে বসে থাকি, শুয়ে থাকি, আড়মোড়া ভাঙ্গি। আর মাঝে মাঝে নানা জায়গায় লাথি কশাই। এটাই আমার খেলা। কিন্তু এই ঘরটা যখন নড়ে তখন আমার কিছু করার থাকে না। হয়ত যখন ঘুমিয়ে পড়ি তখন মাঝে মাঝে এই কম্পন থেমে যায়। কিন্তু সর্বসন্তাপনাশিনী নিদ্রা। সবসময় কি বুঝতে পারি নাকি ছাই। চোখটা লেগে এসেছে বুঝতে পারলাম ঘরটা একটু অন্ধকার নেমে এসেছে ঘরে আর বেশ শান্ত হয়ে গেছে। তখন কি আর ইচ্ছা করে উঠে পরে নাচানাচি করতে। আয়েশ করে ঘুম মারি। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার খাবার রেডি।

আগে যখন ছোট ছিলাম তখন ঘরটা জেই কাঁপত তখন কেন জানিনা এক দেওয়ালের দিকে আমার শরীরটা আপনা থেকেই চলে যেতো। মানে শুয়ে ছিলাম মেঝের ওপর ঘুম থেকে উঠে দেখি দেওয়ালে ঝুলছি। রাত না হওয়া পর্যন্ত সেইভাবে ঝুলে থাকতাম। আবার রাতে যখন সব কিছু শান্ত তখন আবার মেঝেতে চলে জেতাম। হাঁটতাম চলতাম। ভয়ে ভয়ে মাঝে মাঝে দেওয়ালে দু চারটে টোকা মেরে দেখতাম ভুমিকম্পে দেওয়ালের কোথাও পলেস্তারা খশে পরেনি তো। নাহ বেশ টেকসই দেওয়ালগুলো।

এখন বেশ বড় হয়ে গেছি। কি জানি বুড়ো হয়ে গেছি কিনা। আমার তো আর বন্ধু বলতে কেও নেই। এই ঘরে আমি একা। দরজাটা বন্ধই থাকে। বাইরে বুঝতে পারি অনেক আমার মতো মানুষ আছে। কিন্তু বেরতে পারিনা। এখনও ইচ্ছা নেই বেরনোর। সুখে থাকতে কি আর ভুতে কিলোয়। বেশ আছি। সময়ে সময়ে খাবার সময়ে সময়ে ঘুম। total  relaxation.  বেশ রাজা রাজা ভাব। যখন এসেছিলাম তখন শরীর ছোট ছিল, গায়ে শক্তি ছিলনা। এখন ধিরে ধিরে বল ফিরে পাচ্ছি। খাবার দাবার বেশ ভালই পাচ্ছি।

সবথেকে বড় কথা খাবার এখানে খেতেও হয়না। নিস্বাসে খাবার থাকে। কি দারুন এই ঘরের আবহাওয়া। মাঝে মাঝে পালটে পালটে যায়। কখন নোনতা কখনও মিষ্টি। কখনও আবার বেশ ঝাঁঝাল। আমার আবার বেশি ঝাল পছন্দ হয়না। যখন হঠাৎ করে ঝাল খেতে বাধ্য করা হয় আমাকে তখন রেগে মেগে দরজায় মারি এক লাথি। আমার caretaker যাকে ছোট করে আমি মা বলি সে তখন মিষ্টি বা জল দিয়ে আমায় শান্ত করে।

আমার ঘরের দেওয়ালের বাইরে প্রচুর ছোট বড় নল আছে। দেখতে পাইনা। কিন্তু শুনতে পাই। নানা কিছু জলের আওয়াজ হতে থাকে। সাথে একটা ধক ধক করে আওয়াজ তো ক্রমাগত হয়ে চলেছে। ঠিক আমার হৃৎপিণ্ডর মতো। কিন্তু অনেক আস্তে তার লয়। আমার আগে আরও জোরে হত। যত দিন যাচ্ছে তত দেখছি শান্ত হয়ে যাচ্ছে। থেমে যাবেনা তো। বুড়ো হলে তো একেবারে থেমে যায়। কি জানি। তবে এই চারপাশের নল দিয়ে যে হারে জলের আওয়াজ হতে থাকে তাতে কান পাতা দায়। যত দিন যাচ্ছে তত মনে হচ্ছে আরও জোরে , আরও জোরে আওয়াজ বেরেই চলেছে।     
  
এই মা, মানে আমার caretaker টা অদ্ভুত। মাঝে মাঝে খুব caring. মাঝে মাঝে খুব উদাসীন। আমিও যেন ওর মতো হয়ে যাচ্ছি দিন দিন। ও একধরনের শব্দ শুনতে ভালবাসে যা আমার চারপাশে হওয়া শব্দর থেকে আলাদা। মা যেমন কথা বলে ঠিক তেমন নয়। আবার তেমনও। সাথে অনেক ধরনের জিনিসের শব্দ।ঠুং ঠ্যাং প্যাঁ পোঁ। আমার শুনে শুনে কেমন যেন দোল লাগে। কখনও কখনও নাচতে ইচ্ছা করে। বাইরে যখন প্রচুর জলের শব্দ প্রচণ্ড বাড়ে, নানা এই জলের শব্দ দেওয়ালের জলের নয়, অন্য ধরনের। ঝুউউস ঝুউউপ, এরকম। তখনিই ওই শব্দগুলো হয়। ঘরটা বেশ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। ঘরের ছাদে কিরকম একটা ঘশে দেওয়ার মতো শব্দ হয় মাঝে মাঝে।

এই ঘরটা মনে হয় মাঝে মাঝে কেউ ঘষে। মা মনে হয় মাঝে মাঝে বাইরের চাকচিক্য পরিষ্কার করে। মা যখন করে তখন বোঝা যায়। বেশ একটা নরম আদুরে ভাব নিয়ে করে। কিন্তু শুধু মা করে না। অন্যেও করে। সেগুলো কে জানিনা। মায়ের মতোই কিন্তু মা নয়। ছাদের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত বেশ ঘওওওষ আবার আরেক প্রান্ত থেকে থেকে আরেক প্রান্ত ঘওওওষ শব্দ হতে থাকে। কয়েকদিন হল মায়ের মতো আদর করে আরো কেউ একজন বাইরের দেওয়াল পরিস্কার করছে। কে জানে কে? কিন্তু খাবারের স্বাদ গেছে পালটে। মা আর কাঁদে না। আমার ছার পাশে কেমন যেন একটা খুশি খুশি বলয় তইরি হয়েছে।

এই খুশি যেদিন থেকে শুরু হয়েছে তার দু তিন দিন আগে কিন্তু আমার কেন জানিনা একটু বেশি আলিস্যি এসে গেছিল। রাতে যখন আমার ঘর কাঁপা বন্ধ হয় আমি মেঝের ওপর খেলা করি। সেদিন কেন জানিনা খেলতে ইচ্ছা করছিল না। সারাদিন শুয়ে বসে কাটিয়েছি। ভেবেছি অনেক কিছু কিন্তু করিনি কিছুই। আলো ঢুকেছে ঘরে। আলো বেরিয়ে গেছে। আমি শান্ত হয়ে নিজের সাথে নিজে বেশ কিছুখন সময় কাটিয়েছি। হঠাৎ করে কি হল মনে হল আমায় কেউ লক্ষ্য করছে। দারুন ভাবে লক্ষ্য করছে। আমার হৃৎপিণ্ডের ধক ধক শব্দ যেন কয়েক গুন জোরে বেরে গেছে আর আমার চারপাশে ঘোরাফেরা করছে। অনেকখন ধরে সেরকম হল। তার পর বুঝলাম মা আবার ঘরের চারপাশ পরিস্কার করতে শুরু করেছে। এবার যেন আরও আদরের সাথে। আস্তে আস্তে।

এর পর থেকে আমার ঘরের চারপাশে এক নতুন শব্দ শুনতে লাগলাম। মায়ের সাথে আরও কেউ একজন। আমি জতক্ষন জেগে থাকি ততখন সেও মায়ের সাথে থাকে। প্রচুর কথা বলে। অনেক আওয়াজ করে। মা ও কথা বলে। আমি শুনি, কেন জানিনা বেশ ভালো লাগে। মা বেশ হাসে। মা তো বেশি কথা বলে না। কিন্তু এ প্রচুর কথা বলে। মা হ্যাঁ হু করতে থাকে। মাঝে মাঝে যখন ঘরটা শান্ত হয় তখন দেখি একটানা আরেকজনের গলা চলতেই থাকে। অনেকক্ষন একটানা। চারপাশ কিরকম খুশি খুশি হয়ে যায়। নতুন গলাটা কিন্তু বেশ ভারি। মায়ের গলার মতো নয়। গুরু গম্ভির।

কয়েকদিন ধরে বুঝতে পারছি সেও আমার ঘরের ছাদ পরিস্কার করছে। আমার দেখভাল করার জন্য তাহলে মা কি আরও নতুন লোক এনেছে। আমার মতো দেখতে হয়ত কেউ। ভালই হয়। মা এখন বেশ হাফায়। আমি যখন খেলি তখন আমার ধক ধক বেড়ে যায়। তখন মায়ের হাঁফানোর শব্দ শুনতে পাই। আর মনে হয় পারছে না। ঘরটা এখন অনেক বড় হয়ে গেছে। আমিও । আমার আবার খিদেও বেড়ে গেছে। অত খাবার কি মা একা যোগার করতে পারে। তাই মনে হয় নতুন লোক এনেছে মাকে সাহাজ্য করার জন্য। এ এসে কিন্তু নতুন নতুন খাবারের স্বাদ পাচ্ছি। কিছুটা আঁশটানো গন্ধ মাঝে মাঝে ঘর ভরিয়ে দেয়। কিন্তু অভ্যেস হয়ে গেছে কয়েকদিনেই। মনে হয় কতদিনের পুরনো ভুলে যাওয়া একটা খাওয়া খাচ্ছি। ভালই লাগে।

লোকটা তাহলে ভালই। আমি যখন খেলা করি আজকাল মায়ের সাথে সেও আমার ঘরের ছাদ দেওয়াল পরিস্কার করে। মায়ের মতো অত মিষ্টি করে করে না। একটু জোরে ঘষে। মাঝে মাঝে হয়ত সেটাও দরকার নাহলে জেদি ময়লা তো আর সাফ হয়না। আমার কিন্তু ভালই লাগে। কখনও কখনও দেখি ছাদের দেওয়ালের এক এক জায়গা তেবরে গেছে। অনেক খন তেবড়ে থাকে। আজকাল তো আমিও প্রায়ের ছাদের সমান হয়ে গেছি। তাই হাত দিয়ে আমিও ঠেলা দিই। বেশ কিছুক্ষন ঠেলা দেওয়ার পর দেখি ঠিক হয়ে গেছে। লোকটা মনে হয় বাইরে থেকেও ঠিক করছে। একটু আস্তেও তো করতে পারে। অন্য দেওয়াল গুলতেও মাঝে মাঝে তেবড়ে যায়। আমাকেই আবার ঘুরে ঘারে ঠিক করতে হয়। আমি কি সব একা পারি। আমার তো এখন আরামের সময়।

আরামও প্রান ভরে করা জায়না। নতুন আবার হেঁচকি শুরু হয়েছে। মাঝেই মাঝেই আট দশবার হেঁচকি তুলে তবে ক্ষান্ত হচ্ছি। আর জতবার হেঁচকি তুলছি ততবার এই নতুন লোকটা দেওয়াল ঘষছে। কি আপদ। আমার হেঁচকিতে বাইরের যে কি সমস্যা হচ্ছে জানিনা বাপু। সাথে আবার মা খিক খিক করে হাসছে। শুনতে ভালো লাগছে বটে কিন্তু হেঁচকি তুলে কাউকে আনন্দ আমি দিতে পারছি না আপাতত। বিশেশ করে এই নতুন লোকটাকে। 

এই লোকটার একটা নাম দিলে কেমন হয়। অনেক কিছু পালটে গেছে লোকটা আসার পর। যেমন ভাবে মা উচ্চারণ করি অন্য ভাবে করলে “বা” অথবা “পা” বেরয়। “বা” টাই সহজ। খাটবে কে। তবে মা ছিল একজন এখন দুজন হয়েছে তাহলে একে বরঞ্চ , “বাবা” বলি। ভালো শোনাচ্ছে। এই বাবাটা বেশ মজাদার। মা জেগুলো এতদিন ধরে শুনত, সাথে প্যাঁ পোঁ করে শব্দ হত। বাবা এসে শুধু নিজের গলায় বলে। আমার কিন্তু তাতেও দোল লাগে। ঝিমুনি আসে। মাঝে মাঝে মাও কিন্তু বাবার সাথে ঠিক তেমনি ভাবে বলতে থাকে। আমার তখন খুব মজা লাগে। আমি একটু নেচে নিই। তখন দেখি দুজনে একসাথে বলেই চলে। ওটারও তো একটা নাম দেওয়া যায়। গান। কথার পর কথা সাজিয়ে গান। আমিও গান বলব। কিন্তু এখানে তো গান বলা যাবে না। ওখানে আগে অন্য কেউ বলত মা শুনত। তার পর বাবা বলত মা শুনত আমি শুনতাম। এখন তো দেখছি মাও বলে। তাহলে গান তখনই বলা যায় যখন কেউ শোনার থাকে। আমার তো এখানে শোনার কেউ নেই। আমি তখনিই বলব যখন এখান থেকে বেরব।

সত্যি অনেক দিন হয়ে গেল আমি এখানে আছি। আগে জায়গাটা বেশ ভালো ছিল। এখন ধিরে ধিরে অনেক ছোট হয়ে গেছে। আর আমি ঠিক ঠাক আঁটছি না। আমার খেলা করার , ঘোরা ফেরার জায়গা কমে গেছে। তার ওপর আগে দেওয়ালে এতো শব্দ হত না। এখন কান পাততে পারিনা। এই ভাবলাম একটু শুয়ে আরাম করব। এক পাশ ফিরে এক দেওয়ালে মাথা রেখে জেই শুয়েছি কান ফাটিয়ে পাশ দিয়ে একটা ঢক ঢক করে শব্দ। মাথা ঘুরিয়ে আরেক দেওয়ালে কান দিতেই শাই শাই শব্দ। নাহ এরকম চলতে পারেনা। মা বাবা এই সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। বা করতে চাইছে না। কত আর পরের জন্য করা যায়। আমিও তো আমার নিজের মজার জন্যই এখানে পরে আছি। খাচ্ছি দাচ্ছি আর মোটা হচ্ছি। আগে কানে কম শুনতাম। এখন দারুন শুনতে পারছি। আগে পুঁচকে ছিলাম এখন বেশ বড়। দেওয়ালে ঘুশি মারলে দেওয়াল তেবড়ে যায়। একটা ঘরের সমান বড় হয়ে গেছি। সেই এক লম্বা একটা খেলনা নিয়ে আর খেলতে ইচ্ছা করে না।

নাহ এবার বেরতে হবে। মা , বাবার সাথে দেখা করে অদের এবার ছুটি দিয়ে দিতে হবে। আমার জন্য অনেক কিছু করেছে ওরা। পরে আবার কথা শোনাবে তার থেকে অন্য মা অন্য বাবার খোঁজ করতে হবে বেরিয়ে। আচ্ছা ওরা কি আমার মতো দেখতে? না অন্য রকম। আমার মতই কি হাত পা আছে। খেলা করে? ওদের কি আমার মতো গায়ে লাগানো খেলনা আছে। এই হাত পা দিয়ে খেলা ছাড়া আর কিছু করার যায়? মনে তো হয়না। খাবার তো এমনি এমনি পাওয়া যায়। আর কি , আর কি , হ্যাঁ ঘুশি মারা যায়। মা বাবা দুজনেই মনে হয় ওদের বারির দেওয়ালে সারাদিন ঘুশি মারে। আমি কিন্তু গিয়ে মা বাবা দুজনকেই ঘুশি মারব। বেশ মজা হবে। কিন্তু বেরব কি করে। বেরনোর জায়গা বলতে তো একটা দরজা। সেটাও এখন এতো ছোট হয়ে গেছে বেরতে পারব কিনা জানিনা। এই দরজার পরে কি আবার আরও দরজা আছে? মা বাবা কি আমার জন্য দরজা খুলে দেবে না আমাকেই খুলতে হবে।

মন স্থির করে বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করলাম। কিন্তু নাহ। না বাবার না মার। কোনও হেলদোল নেই। তাহলে আমাকেই কিছু ব্যাবস্থা করতে হবে। এইভাবে এইরকম জায়গায় আর বসে থাকা জায়না। জায়গাটা বেশ নোংরাও হয়ে গেছে। দরজাটাতে লাথি মারা শুরু করি দেখি ভাঙ্গে কিনা। এক্তার পর একটা লাথি মারতে আরম্ভ করলাম। প্রথমে আস্তে আস্তে। তারপর জোরে জোরে। কিছুই হচ্ছে না। ধুর। এবার শেষ চেষ্টা। মাথা দিয়ে গুঁতো মারি তাহলে হয়ত ঠিক হবে। কিন্তু এইটুকু জায়গায় ঘোরাটাই তো সমস্যা। ঝাড়া চারদিন লাগল মাথাটা দরজার কাছে নিয়ে জেতে। শেষমেশ মাথা তুলে নিশানা সাধলাম দরজার ওপর। প্রথমে কিছু হল না। মায়ের গলা পেলাম। মনে হল টের পেয়েছে আমি দরজায় ধাক্কা মারছি। এবার অপরদিকের দেওয়ালে পা দিয়ে শরীরটাকে যতটা পারি কুঁচকে সমস্ত পেশীতে শক্তি সঞ্চয় করে মারলাম সজোরে এক ধাক্কা। ভশ করে দরজা ভেঙ্গে মাথা বেরিয়ে গেল দরজার ওপারে। সাথে সাথে দেখি আমার পাশ দিয়ে আমার ঘরের জল সব বেরিয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু একী দরজা ভাঙ্গার পর সামনে তো প্যাঁচালো সুরঙ্গ। কি ভয়ানক অন্ধকার। আর কি ছোট জায়গা। সাথে চারপাশে ভুমিকম্প শুরু হয়ে গেল। মা এতো চ্যাঁচাঁছে কেন। বাবাও সাথে। আমি একটু একটু করে এগোতে লাগলাম। একটু এগোতেই দম বেরিয়ে যাচ্ছে। থেমে থেমে, দম নিয়ে নিয়ে হেঁচড়ে হেঁচড়ে এগোচ্ছই। কি আপদ। কি মরতে যে মাথা গলালাম। এখন হাত পা আর সামনে আনতে পারছি না। হাত দুটো সামনে আসলে না হয়ে কিছু একটা ধরে সারা শরীরটাকে টেনে নিয়ে জেতে পারতাম। কিন্তু সে যখন হল না। তখন এইরকম কোঁত পেরে পেরেই এগোতে হবে। কি ভাগ্যিস ঘরের জলগুলো বেরোচ্ছে একই রাস্তা পিচ্ছিল করে। নাহলে মনে হয় এক বিন্দু এগোতে পারতাম না।

এইটুকু রাস্তা পেরতে আমার দম প্রায় শেষ হয়ে গেল। আর পারছি না। সাথে ক্রমাগত মায়ের চীৎকার। বাবা কিন্তু আস্তে আস্তে কথা বলছে। মায়ের যে কি হল কে জানে। এতো কেন চ্যাঁচায়। আগে তো কখনও এতো চীৎকার শুনিনি। মনে হয় টের পেয়ে গেছে আমি বেরিয়ে অন্য মা খোঁজ করব। কিন্তু তাহলে তো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদত আগের মতো। এ তো তারস্বরে চীৎকার। কান ঝালাপালা করে দিল। আমি মনে মনে কান বন্ধ করে দিলাম। সামনে আলো দেখা যাচ্ছে। আর কিছুটা দূর। এখন মায়ের কথা চিন্তা করলে হবে না। আপনি বাঁচলে মায়ের নাম। শরীর শিথিল হয়ে আসছে। আর পারছি না। এই ঘাট মানছি। এবার শেষ। এবার যে ঘরে ঢুকব আর বেরোবার কথা বলব না। কি হত অইখানে থাকলে। বেশ তো ছিলাম। কি প্রয়োজন ছিল এই কষ্ট নেওয়ার। একটা জিনিস বুঝতে পেরেছি আর আমার ফিরে তাকানোর জায়গা নেই। শুধু এগিয়ে জেতে হবে। থামলেই মৃত্যু। সামনের আলোটা একেবারে সামনে চলে এসেছে ... আর একটু। আর একটু। আর একটু।        


আধ্যানের ডায়েরির আগের পাতা গুলো 


No comments:

Post a Comment