Saturday, April 1, 2017

প্রবাস ও গিন্নি - ধম্ম তর্ক


সকাল  থেকে  উঠেই  মাছের  গন্ধ  আর  ভাল্লাগে  না  বাপু .”
                
শনিবারের  সুন্দর  ছুটির  সকালে  একটা  বড়সর  ইলিশ  মাছ  কেটে  পরিষ্কার  করছি , হঠাৎ  গিন্নি  ঘুম  থেকে  উঠে  আমার  সাধের  সকাল   বরবাদ  করে  দিলেন . আমার   পরিবার  এর  প্রথম  মহিলা  যিনি  মাছের  গন্ধ  পছন্দ  করেন  না .
--“মাছ  না  খেলে  বাঙালি  হবে  কি  করে ? ইলিশ  মাছ  কে  কি  আর  এরকম  বলতে  আছে ?”
--“
জেলের  বাড়িতে  তো  আর  বিয়ে  হয়নি . তোমার  এই  মাছের  বাতিক  আর  সহ্য হচ্ছেনা . তাও  আবার  এই  শনিবারে . একটু  তো  ধম্ম  মানতে  পারো .”
                এখন  বোঝা  গেল  হঠাৎ এই  আওয়াজ   কেন . আমার  গিন্নি  কযেকদিন   হলো  খুব  ধম্ম  কম্মে  মন  দিয়েছেন . কেন  কি  বৃত্তান্ত  অত  ঘাঁটতে  গেলে  অনেক  সমস্যা  তাই  যেমন  আছেন  তেমন  থাকুক  ভেবে  চুপ  থাকি . তারপর  office থেকে  ফিরে  গা  ধুয়ে  যখন  বসি  তখন  গিন্নি  সন্ধ্যা  দিতে  ব্যস্ত  থাকে . ধুপের  গন্ধে  ঘর      করে . তার  সাথে  এক  কর্নাভিরাম  দৃশ্য  দেখতে  পাই  , আমার  গিন্নির  বন্ধ  ওষ্ঠধার.
                তাই  বেশ  উপভোগ  করছিলাম  বেশ  কযেকদিন  ধরে . কিন্তু  আজ  যখন  মাছের  দিকে  সে  আঙ্গুল  তুলল  তখন  বাঙালির  রক্ত  জেগে  উঠলো , “কেন … মাছ  খেলে  কি প্রাণ  যায় . ধম্মে  কোথায়  বারণ  আছে  মাছ  খাব ?”
ধম্ম  টেনে  খোটা  দেবে  না বলে দিচ্ছি . বামুনের  ছেলে  হয়ে  মাছ  খাচ্ছ   তাতে  দোষ   হচ্ছে   না ?”
শোনো  মাছ  খেলে  ধম্ম  যায়  না . গোটা  বঙ্গে  সমস্ত  বামুন  মাছ  খেয়েই  পূজা  করে .”
সেই  জন্যই  তো  দেশটার  কিছু  হয়  না . দিন  দিন  পেছিয়ে  পরছে .”
                কথাটা  খাঁটি . মানে  পিছিয়ে  পরার  কথা  টা  খাঁটি . কিন্তু  কেন  পিছিয়ে  পরছে  সেটা  কি  মাছের  জন্য ? একটা  vegetable  এর  মত  জীব . যা  খেলে  না  মেদ  বাড়ে  না  উত্তেজনা . কাট  তেও  মায়া  লাগেনা  কারণ  চোখের  পাতা  পরে  না , চিত্কার করে না ,  আর  জলে  থাকে  বলে  কান্নাও  দেখা  যায়  না . সে  যে  কি  করে  বাঙালির  অগ্রগতির  পথে  অভিশাপ  হয়ে  দাড়ালো  এই  শনিবার  এর  সকালে  টা  আমার  বোধগম্য  হলো  না .
সে  তো  politics এর  জন্য . মাছ  খেলে  তো  বুদ্ধি  বাড়ে . আজকাল  কার  generation কাঁটা  ছাড়াতে হবে বলে  মাছ  খায়  না  বলেই  তো  এই  সমস্যা . No মাছ  , no বুদ্ধি . তোমার  যেমন .”
এহঃ  কে  আমার  বুদ্ধিমান  এল রে . কে  বলেছে  আমি  মাছ  খাইনা . কিন্তু  শনিবার  টা  তো   নিরামিষ  খেতে  পারো ?”
তোমার  জন্য  মঙ্গলবার , বৃহস্পতিবার  তো  already নিরামিষ  হয়ে  গেছে . শনিবার  টা  বাড়ির  প্রথা . আমার  নয়  .”
কেন ?? তুমি  কি  দত্তক  নেওয়া  না  কুড়িয়ে  পাওয়া  .”
কোনটাই  নই . কিন্তু  তোমার  মাছের  প্রতি  এত  বিতৃষ্ণা   কেন ?”
                এই  ফাকে  বলে  রাখি  আমার  গিন্নি  কোনো দিন  কাঁচা  মাছ  বা   মাংশ  তে  হাত  দেন  না . আমেরিকায়  বিয়ে  হয়ে  আসার  পর  আমাকেই  মাছ  কেটে  ধুয়ে  হলুদ  নুন  লাগিয়ে  বাটিতে  রেখে   দিতে  হয় . গিন্নি  শুধু  চামচ  করে  তুলে  করাই  তে  ফেলেন . রান্নার  quality নিয়ে  প্রশ্ন  তোলা  যায়  না . কিন্তু  মাছ  খাবার  জন্য  এত  লড়াই  ভালো  লাগে  না .
তোমাকে  খেতে  হবে  না . আমার  জন্য  তো  করে  দিতে  পারো ?”
সেত  করেই  দেব . বিয়ে  করেইছ  তো  মাছ  ধরিয়ে .”
                কতকাল  এই  খোটা  খেতে  হবে  জানিনা . বিবাহের  আগেই  আমি  জানতাম  তার  কতটা  আপত্তি  এই  মাছ  ধরা  নিয়ে . Clause of marriage   already তিনি  বলে  দিয়েছিলেন  যে  তার  মাছ  ধরা  হবে  না . কিন্তু  বিধাতা  মুচকি  হেসেছিলেন . আমার  মা  আধুনিক  হলেও  আমার  ঠাকুমার  আদেশে  আমার  ভাই  গিয়ে  বাজার  থেকে  একটা   জ্যান্ত রুই  নিয়ে  এসেছিল . প্রথামতো  সেই  মাছ  হাতে  নিয়ে  তবেই  নতুন  বউ  কে  ঘরে  ঢুকতে  হবে .
                ব্যাপার  টা  নিতান্তই  চাপের  ছিল  আমার  কাছেও . কারণ  আমি  কোনদিন  জ্যান্ত  মাছ  মেরে  কাটিনি . সব  সময়  মরা  মাছ  fridge  থেকে  বার  করে  কেটেছি . এমন  কি  জ্যান্ত  কাকরা  মারার  সহজ  উপায়  ছিল  box    ভরে  deep fridge   কিছুক্ষণ  ঢুকিয়ে  দিলেই  ব্যাটারা   ধীরে  ধীরে  অক্কা  পেত . আমিও  তখন  দিব্বি  তাদের  বার  করে  বীর  বিক্রমে  হাত  পা  গুলো  ভেঙ্গে  গুড়িয়ে  দিতাম . কিন্তু  জ্যান্ত   মাছ  মানে  জীয়ল  মাছ  কখনো  ধরিনি . সেটা  বাবার  department  ছিল .
                তা  গিন্নি  অনেক  চেষ্টাই  , অর্ধেক  বমি  করে  যখন  মাছ  টিকে  ধরেছিল  তখন  নতুন  virgin এর  ছোয়া  পেয়ে  মাছ  টিও   তড়াক  করে  এক  হাথ  লাফিয়ে  উঠে  সোজা  আমার  নববধুর  বক্ষদেশে  আক্রমন  করেছিল . সেই  আঁশটানি    গন্ধ নিয়ে তাকে  আরো  তিন  চার  ঘন্টা  থাকতে  হয়েছিল . আজও  সেই   আঁশটানি  গন্ধ  তার  মুখ  থেকে  বেরয় .
ওই  পুরনো  কাসুন্দি  ঘেটে  লাভ  নেই . ওসব  tradition. করতেই  হয় .”
সেটাই  তো  বলছি  … যখন  tradition তখন  শনিবার    মাছ   কাটছ  কেন .”
                উফ  … আগেই  বলেছি  মেয়েমানুষ , রিক্সাওয়ালাহ     আর  হকারের    সাথে  কদাপি  ঝগড়ায়  নামতে  নেই . হার  অবধারিত . কিন্তু  কে  কার  কথা  শোনে  আমিও  একটু  ঘুরিয়ে  দিলাম , “আধুনিকতা  কাকে  বলে  বোঝো ?? বিদেশে  নিয়ে  চলে  এলাম . পৃথিবী  দেখছ  তবুও  তোমার  কিছুতেই  ভুলভাল  tradition ছাড়তে  ইচ্ছা   করে  না . আমার  চার  পুরুষ  আগে  এক  মহিলা  সতী   হয়েছিলেন . তুমি  হবে ?? Tradtion দেখিও  না .”
কে  মরবে  আগে  দেখো . এই  শুকনো  হাড়    আর  তোমার  অত্যাচার  আর  সহ্য  হচ্ছে   না .”
শুকনোই  বটে … গাদা  গাদা  calcium tablet  খাবার  থেকে  একটু  ছোট  মাছ  চিবিয়ে  খেলে  আজ  আমার  ভারও  সইতে  পরতে . কেউ  কখনো  বাতাসী  মাছের  কাঁটা  বাছে ??”
সবাই  তোমার  মত  রাক্ষুসে  হয়  না . তুমি  তো  শিশুপাল . বামুনের  ঘরে  রাক্ষসের  জন্ম . কৃষ্ণের  মত  শুধু  ক্ষমা  করে  চলেছি . শুধু  ভুলে  গেছি  গুনতে .”
                শুনুন  উদাহরণ  খানা . ধম্ম  কতটা  গিঁট  পাকিয়েছে  বুঝলেন  তো . আমি  বুঝলাম  আর  same  line   থাকলে  চলবে  না . গিন্নি  কে  confuse করে  দিতে  হবে  তবে  গিয়ে  সে  চুপ  করবে .
হতে  পারি  শিশুপাল  কিন্তু  তুমি  যে  দিব্বি  ঘাস  পাতা  ছিড়ে  ছিড়ে  খাচ্ছ  . আমি  তো  শুধু  প্রাণগুলোর  একেক  ভাগ  খাই . তুমি  তো  সমূলে  উত্খাত  করে  সব  গিলে  চলেছ .”
সে  আবার  কি ?”
দিন  রাত  শাক  আর  শাক … ওগুলোর  কি  বাঁচার  অধিকার  নেই . তাও  আবার  শিশু  বোধ . কি  না , কচি  দেখে  আনবে . একটু  মূল  পর্যন্তউ  তো  চার্চ  না . মুলো  , আলু , আদা  …. আর  কত  বলব … তার  থেকে  তো  মাছ  খাব  ভালো . প্রকৃতির  ভারসাম্য  বজায়  থাকবে . ”
বাব্বা  … কোথা  থেকে  আমার  কাক  এলো  রে . প্রকৃতির  ভারসাম্য  রক্ষা  করছে . যাও  না  তাহলে  শুধুই  মাছ  খাও.   দু  দিন  বাদে  ঘ্যান   ঘ্যান  কোরো   না  সবজির  জন্য .”
আমি  কি  বলেছি ? কথা  ঘুরিও  না. ” কথা  ঘোরাতে   গিয়ে  নিজে  ঘুরে  গেলাম . তাও  প্রচেষ্টা  অব্যাহত , “এত  যে  ধর্ম  ধর্ম  করছ  তা  ঠাকুর  কে  তো  শুধু  ফুল  আর  ধুপ  দেখাও,  গেলাও  তো  না  কিছু .”
আমি  কে ? যে  ঠাকুর  কে  কিছু  খেতে  দেব . তিনি  তো  সব  কিছুর  অধিকারী . আমার  কি  সাহস  তাকে  খেতে  দেওয়ার . আমি  তো  শুধু  তাকে  ফুল  চন্দন  দিয়ে  পুজো  করি  আর  শুদ্ধ  ভাবে  পুজো  করি  যাতে  তিনি  বোঝেন  যে  তার  সৃষ্টি  কে  অবজ্ঞা করছিনা .”
কথাতে  জোর  ছিল  কিন্তু  পিছিয়ে  গেলে  হবে  না , “তাহলে  দেখেছ  তো  tradition টা  তুমিও  মানছ  না . আমার  বাড়িতে  ঠাকুর   কে  জল  না  দিয়ে  কেউ  জলগ্রহন  করে  না .”
ঠিক  আছে  …. ঠিক  আছে  … তোমার  সাথে  কথায়  পারব  না . কিন্তু  আমি  এখন   স্নান  করে  পুজো  করব  তার  পর  তোমার  মাছ  রান্না  করব . ”
সেই  এলে  না  পথে …. আমার  মত  ধার্মিক  স্বামী  পেয়েছ  বলে  বত্তে  গেছ … ওই  রকম  ধ্র্যাস্টামো   ধর্ম  নিয়ে  আমি  থাকি  না . হিন্দু  ধর্মে  বিশ্বাস  কোরো  তো  বেদান্ত  শেখো  …. বিবেকানন্দ  শেখো . এইসব  ধাপের  আচার  আচরণ  সব  ভুল  ভাল  যুগে  তৈরী  হয়েছে .”
আবার  জ্ঞান  এর  ঝুরি  খুলে  বসলে . সব  বিষয়ে  বকতে  হবে  তোমাকে . বিবেকানন্দও তো  মরেছিল সব  ছাইপাঁশ   গিলে . তুমিও  তো  সেই  red meat এর  ফ্যান শুধু  আমিইই  এই  বাড়ির  ধর্ম   রক্ষা  করছি . তোমার  কথা  শুনলে  কবে  তুমি  গরু  শুওর  মেরে  ঢুকিয়ে  দিতে  ঘরে .”
গরু  শুওর খাব  খারাপ  কিসের?  দেখো,  বিশ্বের  যত  বড়  বড়  ধনী  দেশ  সবাই  গরু  শুওর  খায়  … আমি  তো  গরু  খাইনা … শুওর  টা  খাই …”
ওই  হলো … গরু  শুওর  এক  জিনিস … ”
তুমি  কৃষ্ণের  বাহন  কে  নিকৃষ্ট  জীব  এর  সাথে  তুলনা  করলে . এই  জন্যই  আমাদের  পরিবার    শান্তি  নেই .”
আহা  রে … ওই  শুওর   খেয়েও  তো  ধনী  হতে  দেখলাম  না … নাকি  ধনী  লোকেরা  খায়  বলে  উনিও  খাবেন .. ধর্মে  সইবে  না … দেখছ  না  এই  দেশে  কত  অশান্তি … সব  ভগবান  এর  শাপ .”
তাই  নাকি …. তুমি  কত  জানো …. শুওর  খেতে  আমাদের  ধর্মে  মোটেই  বারণ  করেনি .”
তুমি  সব  জানো …”
জানি  বই   কি … কৃষ্ণের  বাহন  বলে  গরু  খাওয়া  যাবে  না  বুঝলাম,  কিন্তু  শুওর  কার  বাহন ?? আমরা  কি  মুসলমান,  যে  শুওর  খাওয়া   খারাপ ? তাদের  তো  কারণ  আছে  যেটা  বেশ  scientific… শুওর  হালাল  করা  যায়  না … তাই  খায়  না ..”
এতই  যদি  জানো  তো  তাহলে  এও  তো  জানা  উচিত  যে  মাছ    খাওয়া  উচিত  নয়   গঙ্গার  বাহন  বলে ..” গিন্নি  আবার  back to pavilion. আমিও  পৈতেধারী  ব্রাহ্মন  তর্কে  হেরে  গেলে  পৈতে  খুলতে  হবে .
গঙ্গার  বাহন  তো  কুমির . সে  আবার  কবে  থেকে  মাছ  হলো .”
কুমির  মাছ  নয়  ?…. মগর মাছ  হিন্দী  তে  বলে  জানো  না .”
তুমি  তো  সব  কিছুকেই  তাহলে  মাছ  বলবে …. ”
তুমি  যদি  চিংড়ি  কে  মাছ  বলতে  পারো  তাহলে  কুমির  কে  মাছ  বললে  ক্ষতি  কি … জাপানে   তো  খায় .”
  যুক্তি  বোকা  বোকা … আমি  তো  খাইনা  … আমি  সেই  মাছই  খাই  যেটা  কারো  বাহন  নয় … ”
“বাহন  না হোক  … অন্য  কিছু  তো  বটেই …”
অন্য  কিছু  মানে ?”
গরু  তো  নারায়ণ  এর  অবতার  এর  বাহন  …. আর  তুমি  তো  স্বয়ং  নারায়ণ  এর  অবতার  কেই  গিলছ . মত্স্য  আর  বরাহ  দুটি  তো  অবতার … গিলছ  না  বল ???”


                যুক্তির  বিষম  আঘাতে  অক্কা  পেয়ে  গেলাম . এক হাতে পৈতে  ধরে  আরেক  হাতে  কাটা  ইলিশের  পিস  ধরে  কিছুক্ষণ  ভেবে  দেখলাম  যে  কতটা  খাঁটি . তারপর  বললাম  , “ছাড়ো   তো  ওসব . হিন্দু  ধর্মে  কালাপানি  পেরলেই  জাত  যায় .. খোদ  ধর্মে  লেখা  আছে … যখন  পেরিয়েই  গেছি  তখন  আর  জাত  নিয়ে  ভয়  পেয়ে  লাভ  নেই … তার  চেয়ে  বরং  একটু  ভাপা  ইলিশ  কোরো ….”

No comments:

Post a Comment