Monday, April 24, 2017

এমন দিন সবার আসে। ...




 ভোর তখন পাঁচটা কিছু একটা বিচ্ছিরি স্বপ্ন দেখে  ঘুম ভেঙে গেলো।  দেখলাম সারা গা ঘামে ভিজে জবজব করছে।  ঘাড়ের কাছটা ব্যাথা। এক কাতে  শুয়েছিলাম  বলেই হয়তো।  দেখলাম বালিশের এক জায়গায় গোল করে ভেজা।  মানে  বেশ কিছুটা নালও ফেলেছি।  এতো ঘামার কারণ খুঁজতে গিয়ে বুঝলাম রাতে যে ডাউনলোড লাগিয়ে শুয়েছিলাম সেটা মাঝখানে  বন্ধ হয়ে গেছে।  এর দুটো কারণ হতে পারে , হয় মাঝখানে কারেন্ট চলে গেছিলো।  নয় ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেছে।  উঁকি মেরে রাউটারের  দিকে তাকাতে দেখি তিনটে সবুজের একটা লাল।  মানে ইন্টারনেট নেই।   অনেক সময় এমন হয় যে কারেন্ট চলে গেলে রাউটার  রিকানেক্ট করতে পারেনা।  উঠে রিস্টার্ট করতেও দেখি সেই কেস।  কম্পিউটারে চেক করতে গিয়ে চোখ পড়লো তারিখের দিকে।  চব্বিশে এপ্রিল।  প্রত্যেক মাসের ২৩ তারিখে আমার ইন্টারনেট প্যাকেজ রিনিউ করতে হয়।  এমনি খাজা ইন্টারনেট কোম্পানি , না মনে করিয়ে দিলে রিচার্জ করে না। কাল ভুলে গেছিলাম।  আজ ইন্টারনেট বন্ধ। 

সকাল তখন সাড়ে ছটা।  মুম্বাই আটটার আগে জাগে না।  আর থানে মুম্বাইএর আরো পরে জাগে।  আর আমার ইন্টারনেটের লোকেরা জাগেই না।  ঘুমিয়েই থাকে।  ফোন করে লাভ নেই।  তাই হোয়াটস্যাপ করে রেখে দিলাম। এদিকে পেটে চাপ পড়ছে।  দৌড়ে গিয়ে হাল্কা হয়ে কলটা চালাতে দেখি নল থেকে একটা টুপুস করে ফোঁটা পরে থেমে গেলো। খেয়ালই ছিল না কাল থেকে জল নেই।  মুম্বাইতে জলের সমস্যা না থাকলে বোঝানো যাবে না।  ব্যবস্থা যদিও করা থাকে।  কিন্তু আমার ল্যাটট্রিন আর বাথরুম আলাদা।  কোনোরকমে আধ মগ জলে বাকি কাজ শেষ করে পাশের বাথরুম থেকে জল নিয়ে বাকিটা সারলাম।

চা করার জন্য জল চাপালাম। ফ্রিজ থেকে কালকের আনা দুধের প্যাকেট থেকে কাঁচা দুধ খানিকটা সসপ্যানে ঢেলে বাকিটা দুধের পাত্রে ঢেলে দুটো গ্যাস জ্বালিয়ে দিলাম।  আমার সিটিসি চা করার ধরণ একটু অন্য।  দুধ , চা , জল , চিনি আর এলাচ এক সাথে ঢেলে দিয়ে কম আঁচে ফোটাতে থাকি।  ধীরে ধীরে চা যখন ঘন হয়ে যায় তখন নামিয়ে নিয়ে ছেঁকে নি।  বেশ কিছুটা সময় যায় বটে, কিন্তু চা তোফা হয়।  এই  সময়টার মধ্যে আমি ব্রাশ টা সেরে নিই।  আজ ব্রাশ সেরে রান্নাঘরে ঢুকে দেখি দুই পাত্রে ছানা।  সাদা ছানা আর বাদামি ছানা।  একে জল নেই।  ধরা জল আছে , কিন্তু রানিং ওয়াটার নেই।  তাই বাসন ধোয়ার বেশ চাপ। বেসিনে নামিয়ে রাখলাম।  রাত আটটায় জল আসবে তখন ধোবো।  আরেকটা ছোট বাসনে জল চাপিয়ে , র - চা বানিয়ে নিলাম।

ইন্টারনেট নেই।  কিন্তু আজ রিচার্জ না করলে কাল থেকে ফোনেও ফোর জি নেই।  তাই চা খেতে খেতে পেটিএম খুলে ফোর জি  রিচার্জ করলাম। টুং করে মেসেজ এসে গেলো যে একাউন্ট থেকে টাকা কেটে গেলো।  কিন্তু রিচার্জ ফেলিওর। যাহ শালা। একটা ছোটো টপ আপ করলাম।  সেটাও ফেলিওর , কিন্তু টাকা রিটার্ন এসে গেলো নিমিষের মধ্যে। ফোর জি তে ৪০০ টাকার রিচার্জ মেরেছি।  সে তো আর ফিরছে না।  কিছুক্ষন খোঁজাখুঁজি করতে করতে মেসেজ এসে গেলো যে ভোডাফোনে সমস্যা।  যদি দু ঘন্টার মধ্যে রিচার্জ সাকসেসফুল না হয় , তাহলে পয়সা রিটার্ন আসবে। 

যেহেতু জল আর ইন্টারনেট নেই।  তাই জীবনে কাজ কিছুই নেই।  ধরা জলে স্নান সেরে আহ্নিক করে একটা অফিসের কাজ নিয়ে বসলাম।  তখন সাড়ে আটটা।  সাড়ে নটার আগে বাইরের ধোসা ইদলির দোকান খুলবে না, আর ঘরে ব্রেকফাস্ট করার বলতে ছিল দুধ আর কর্নফ্লেক্স যেটা কেটে গেছে।  তাই অফিসের ল্যাপটপটা চালাতে দেখলাম চলছে না।  কি ব্যাপার? কালকে ব্যাগে ঢোকানোর আগে , সুইচড অফ করিনি। ঢাকাটা বন্ধ করে দিলে স্লীপ মোডে চলে যায় বটে কিন্তু বন্ধ হয় না।  ব্যাটারী পুড়তে পুড়তে সব খেয়ে গেছে।  ব্যাগ থেকে চার্জার খুঁজতে গিয়ে দেখি চার্জার নেই , অফিসে ফেলে এসেছি।  খোলাই হয়নি ডেস্ক এর প্লাগপইন্ট থেকে।  আমি আবার ল্যাপটপ গুছিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে অফিসের সাজগোজ করে আরাম করে বসে একটা বই খুললাম। 
                 
বই এর দিকে যতটা মন যাচ্ছিলো তার থেকে বেশি যাচ্ছিলো স্তূপাকার করা আমার চটি জুতোর দিকে।  আমার খুব তাড়াতাড়ি চটি জুতো ছিঁড়ে যায়।  সেটা আমার অবহেলার কারণে না কমদামি জুতো চটির কারণে ঠিক বলতে পারছি না।  তবে এক এই ওয়ান রুম  কিচেনে আমার সাথে দশ জোড়া চটি জুতো থাকে।  যার মধ্যে তিন জোড়া কাজের , বাকি গুলো পরার মতো অবস্থায় নেই।  এক বিজ্ঞ জ্ঞানী বন্ধু হুম শব্দে বলেছিলো তোর জীবনে এতো সমস্যা শুধু এই চটি-জুতো না ফেলার কারণে।  যখন নতুন জুতো কিনবি তখন পুরানোটা দোকানেই ফেলে আসবি।  তাহলে পুরানো ঝামেলা গুলোও পেছনে ফেলে আসবি। এই সব ফালতু কুসংস্কার তখন চেপে ধরে যখন মানুষ ঝামেলায় পরে।  চোখ  বার বার চলে যাচ্ছিলো , আর ইচ্ছা হচ্ছিলো ফেলে দেওয়ার জন্য।  কিন্তু স্নান করে অফিসের ড্রেস পরে আর ধুলো ঘাঁটতে ইচ্ছা করছিলো না। 

কাজের লোক এসে গেলো।  আমার কাজের লোক শুধু ঘর ঝাঁট দে আর কাপড় কাচে।  জলের এরকম সমস্যা বলে আমি বলে দিলাম আজ আর কাপড় কাচতে হবে না।  ও ঘর ঝাঁট দিচ্ছিলো আর আমি এক বিদেশে থাকা বন্ধুর সাথে কথা বলছিলাম।  হঠাৎ চিরপরিচিত ঘষ  ঘষ শব্দ শুনে বুঝতে পারলাম যে কাপড় কাচা চলছে।  আমি ফোন রেখে বলতে গেলাম , বারণ করলাম তবুও কাচছো।  মুখটা কাঁচুমাঁচু করে উত্তর দিলো , "কাল নেহি আয়েগী সাব। আপ তো অফিস চলে যাওগে।  আপকা সব কাম তো হো গয়া।" মোক্ষম যুক্তি, চূড়ান্ত কর্মপরায়ণতা , দায়িত্বশীলতার সামনে   আমি চুপ করে গেলাম। যতক্ষণে বেরোলো ততক্ষনে আমার ধরা জলের নব্বই শতাংশ শেষ। 

সাড়ে নটা বাজতে সোজা গিয়ে হাজির  হলাম আমার ব্রেকফাস্ট এর দোকানে।  লোকটি বাড়ি থেকে বানিয়ে নিয়ে আসে আর এক ঘন্টার মধ্যে সব শেষ হয়ে যায়।  ইডলি , মেদু বড়া আর  ডাল বড়া সাথে সাদা চাটনি , ঝাল লাল চাটনি আর সাম্বার।  পদ্ধতি অসাধারণ। সাম্বারটা শুধু গরম।  কাগজের প্লেটে ইডলি বড়া দেয় আর সাথে আরেক প্লেটে চাটনি সাম্বার
মিক্স করে দেয়।  তামিলিয়ান , তাই লোকের দেখা দেখি আমিও চটকে খাওয়া শিখে গেছি , আর ভালোও লাগে।  কিন্তু আজ দেখি ভিড় কম।  কি ব্যাপার ? "সাব বড়া থোড়া জল গয়া, সাম্বার জাদা তিখা হো গয়া, চাটনি মে নমক জাদা হ্যায়।" ঝাল হয়েছে তো কি হয়েছে, আমার ঝাল বেশ ভালোই লাগেবললাম শুধু ইডলি আর সাম্বার দিতে। মুখে দিতেই ব্রম্ভান্ড জ্বলে গেলো। ভদ্রলোকের ঠিক আছে, ঠিক আছে মাথা নাড়িয়ে খেয়ে নিলাম বটে কিন্তু জানি পরের দিন সকালে কি হতে চলেছে।                     

আমি শেয়ার অটো করে অফিস যাই।  পেছনে তিনজন , সামনে ইল্লিগালি একজন।  এখানে বাংলার মফস্বলের মতো একটা অটোয় দশজন যেতে পারেনা।  আমি অটো স্ট্যান্ডে গিয়ে দাঁড়াতে দেখি ফাঁকা।  মানে অটো প্রচুর কিন্তু লোকজন নেই।  কারণটা বুঝতে পারলাম না। আমায় লাইনের একটা অটো দেখিয়ে দিলো।  গিয়ে দেখি না আরেকজন বসে আছে।  সাঁইত্রিশের গরমে যদি দাঁড়িয়ে থাকা অটোরিক্সার মাঝখানের সিটে বসতে হয় তার যে কি কষ্ট সে আর বলতে।  সমস্যা আরো বাড়লো যখন আমার পরের খদ্দের  আরো দশ মিনিট পর এলো।  ততক্ষনে আমি জুসি হরভরা কাবাব।  দুই  মহিলা।  অটোয়ালা বললো সামনে বসতে।  এখানে আবার মেয়েরা সামনে বসে না।  এই সম্মানটা মেয়েরা পেয়ে থাকে।  অটো ছাড়তে গরম হাওয়ার ঝাপটায় রাস্তার ধুলো আমার চপচপে ঘামে কাদা লেপ্টে দিলো।  দু মিনিটও যায়নি , কোথা থেকে এক পুলিশ আরেক পুলিশের বাইকে চড়ে এসে রাস্তা আটকালো।  পুরোটাই ইল্লিগাল , কিন্তু পুলিশ কিছু সাধারণত বলে না।  আজ কি হলো কে জানে , আমাদের নামিয়ে বেচারাকে মারতে মারতে থানায় নিয়ে গেলো।  লে দে কে সেটল হলো না।  আমি আবার রোদ্দুরে ফিরে  এলাম। 

শেষমেশ যখন অফিসে পৌছালাম তখন আমি ফিনকিরি দিয়ে ঘামছি।  বিশাল ঠান্ডা অফিস।  তখনও লোকজন বেশি আসেনি।  আমার ডেস্কটা এক কোণে আর জানলার কাছে তাই এসি থাকলেও আমার জন্য একটা টেবিল ফ্যানও দিয়েছে।  আমি অন্যদের তুলনায় একটু বেশি ঘামি বলে এই ব্যবস্থার জন্য আমি পৈতে তুলে আশীর্বাদ করি অ্যাডমিনকে।  কিন্তু একি ? ফ্যান হাওয়া।  যে দমকা হাওয়ায় জল শুকানোর প্ল্যান করেছিলাম তা আর হলো না।  ফোন তুলে কমপ্লেন করে ঘাড়ে মাথায় জল দিতে বাথরুমের দিকে এগিয়ে যেতে দেখলাম বাথরুমের সামনে লেখা আছে ক্লোস্ড ফর রেনোভেশন।  নিচের তলাতেও তাই।  ব্যাপার কি ? সিকিউরিটি কে জিজ্ঞাসা করতে বললো , "স্যার , জলের শর্টেজ পড়েছে তাই দশটা বাথরুমের শুধু একটা খোলা।" বাহ্ , মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতেও এরকম হয়।  একেই বলে টার্গেট ওরিয়েন্টেড কস্ট কাটিং। 

যাইহোক সেই একটি বাথরুমে গিয়ে দেখি নলের সামনে কোলাহল।  পুরো হাওড়া স্টেশন। আমি ওঁ বিষ্ণু , ওঁ বিষ্ণু , ওঁ বিষ্ণু করে দু চার ফোঁটা ছিটিয়ে ন্যাপকিনের দিকে হাত বাড়াতে দেখি শেষ।  ডিমান্ড প্রচুর সাপ্লাই লেস।  পকেট থেকে ঘামে ভেজা রুমাল দিয়ে আবার সেই ভেজা মুখ শুকিয়ে কিছুক্ষন অন্য একটা খালি ডেস্কে বসে ঠান্ডা হলাম।  তারপর কাজ শুরু। মানে মস্তিষ্কের মুষ্ঠিযুদ্ধ।  সারাদিন ক্রমাগত পরাজয়ের শেষে সন্ধ্যেবেলা বেরোতে যাবো , বস দেখলাম গেটে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে।  আমায় দেখেই বলে উঠলো , "এতো তাড়াতাড়ি?" প্রত্যেক দিন একই সময়ে বেরোই।  রোজ দেখে।  মাঝে মাঝে গুডনাইটও বলে যাই , তাও আজকে এই প্রশ্ন।  আমি সলজ্জে বললাম , "স্যার জল ভরতে হবে। আটটা থেকে সাড়ে আটটা জল থাকে। " মাথা নাড়িয়ে "ও হ্যাঁ ও হ্যাঁ " তো বললো কিন্তু সাথে আরো নানা কাজের স্টাটাস জানতে চেয়ে পনেরো মিনিট দেরি করিয়ে দিলো।

আমি যদিও এই পনেরো মিনিট হাতে রাখি।  কারণ অফিস ফেরত অটোর লাইনও অনেক বড়ো।  অটোয় বসতেই সেই সকালের মতো , "সামনে আজাইয়ে সাব , লেডিস হ্যায়।" পেছনের সিট্ থেকে সামনের সিটে বসার মধ্যে ঘুমন্ত পাখির হঠাৎ জেগে উঠে আমায় মনে পরে গিয়ে সবুজ - সাদা সেলাম দিয়ে দিলো।  বেশি না ভেবে রুমাল দিয়ে পুঁছতে কাঁচে দেখি পিছনের সিটের দুই মহিলা নাক সিঁটকোচ্ছে।                     

রাস্তায় পেলাম অভাবনীয় জ্যাম আর সাথে জেলির মতো ঘাম।  সামনের সিটে অটোয়ালার বোঁটকা গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে যখন পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে তখন মানিব্যাগ খুলে খেয়াল হলো একটাও নোট নেই।  আজকে অফিস এটিএম থেকে টাকা তোলার কথা ছিল। বস আটকে নিয়ে সব গুবলেট পাকিয়ে দিয়েছে।  ভাগ্যিস আমার খুচরোর কৌটো আমার ব্যাগে থাকে।  যখন একটা একটা করে দশটা দু টাকার কয়েন বার করে দিলাম আর অটোয়ালা প্রত্যেকটা কয়েন উল্টে উল্টে দেখে নিলো যে কোনটি এক টাকার কয়েন কিনা তখন পেছনের সিটে বিরক্তির মুষলধারে বর্ষণ হচ্ছে। 

আটটা তখন বেজে গেছে।  কিন্তু টাকা তুলতেই হবে।  এটিএমের সামনে চার জন দাঁড়িয়ে আছে দেখে স্বস্তির নিঃস্বাস ফেললাম। কিন্তু আমার সময় যখন এলো তখন ট্রানসাকশান ডিক্লাইনেড।  টাকা শেষ।  দৌড়ে গিয়ে পরের এটিএমে দাঁড়িয়ে কোনোরকমে হাজার টাকা তুলে ছুটলাম বাড়ির দিকে।  কিন্তু না , মাঝখানে একটা ব্রেক।  বাড়িতে সিগারেট , আর তেল শেষ।  স্নান করে আবার নিচে নেমে কিনতে যেতে হবে।  সেই আলিস্যি একটু বেশিই গায়ে লাগলো।  কিন্তু সিগারেটের দোকানে আমার ব্র্যান্ডের সিগারেটের স্টক শেষ।  ব্র্যান্ড পাল্টে ফেললাম।  এরপর তেল।  সময় আটটা কুড়ি।  তেলে কোনো সমস্যা হলো না। আটটা পঁচিশে গিয়ে ঢুকালাম ঘরে। 

আধঘন্টা জল আসে বটে , কিন্তু তোড়ে আসে।  নিমিষে সব ভরে যায়। আজ দেখলাম সাড়ে আটটার পরেও জল পড়ছে।  আমিও অতি উল্লাসে বাসনগুলো মেজে ফেললাম।  সমস্ত ঘড়া যখন ভোরে গেলো।  বুঝলাম আজ আর জল যাবে না।  কারণ আটটা চল্লিশ।  তখনও জল পুরোদমে। বেশকিছুক্ষন ধরে শাওয়ারের তলায় দাঁড়িয়ে থাকলাম।  শরীরটা ঠান্ডা হয়ে গেলো।  তারপর আচ্ছা সে সাবান শ্যাম্পু মেখে যখন আবার শাওয়ার চালালাম তখন ফোওওওওশ করে একটা শব্দ হয়ে জল চলে গেলো।  আমি তখন ইয়েতির মতো ফেনাময় সফেন সফেদ। সেই ধরা জলেই আবার স্নান করে এই লেখা লিখতে বসলাম। 

আর কারেন্ট চলে গেলো। .......  

  




           

Saturday, April 22, 2017

আমার প্রিয় চরিত্র



#আমার_প্রিয়_চরিত্র নিয়ে লেখা খুব কঠিন। কারণ প্রিয় তখনি হয়,  যখন তার প্রতিফলন নিজের জীবনে দেখা যায়।  আমার জীবনের মহাভারতে কোনো এক জনের প্রতিচ্ছবি নেই। ছায়াছবি বা গল্প আমার জীবনের  ডিসিশনকে বহুভাবে প্রভাবিত করেছে বহুবার।  কিন্তু সবথেকে বেশি যা করেছে তা অনুপ্রেরণা  দিয়েছে।  আমি সিরিজ অফ আনফর্চুনেট ইভেন্ট এর ভায়োলেট , ক্লাউস আর সানির মতো বার বার কাউন্ট ওলাফের থেকে পালাতে চেয়েছি কিন্তু সব সময় আমি কোনো না কোনো সমস্যায় ফেঁসে গেছি।  বার বার ভেঙে পড়েছি , হেরে গেছি , হারতে হারতে এমন হয়েছে যে কোনো কিছু এখন যখন করতে যাই, প্রথমবার আমি হেরেই যাবো এই জেনেই লড়তে যাই।  এই হার সহ্য করা যে কঠিন তা হয়তো সবাই জানে। কিন্তু এই হার সহ্য করে পরের লড়াইয়ে নামতে আমাকে তিন চরিত্র সবসময় সাহায্য করে এসেছে।  সৌরভ গাঙ্গুলি , স্টিভ জবস আর গুরুকান্ত দেশাই। আমার ব্রম্ভা , বিষ্ণু , মহেশ্বর।  তাদের নিয়েই আজ আমার এই লেখা। 

সারা জীবন যাকে শুধু পরিত্যাজ্য হতে হয়েছে সেই স্টিভ জবস আমার প্রথম  চরিত্র। অবিবাহিত মা তাকে মিশনে ছেড়ে গেছিলো।  মেকানিকের ঘরে পালিত স্টিভ একসময় বুঝতে পারে যে তথাগত শিক্ষা তার দ্বারা হবে না।  কলেজ ছেড়ে  যখন সে আরেক স্টিভের সাথে জুড়ে machintosh বার করে । তখনও সে আমার মনে প্রাণে জুড়ে জায়নি । কিন্তু যখন সেই  Apple কম্পানি তাকে বার করে দেয় আর সাথে সাথে এক এক করে সবাই তাকে ছেড়ে দেয়, আর তখন তার প্রচেষ্টা শুরু হয় তার বিশ্বাস , তার চিন্তাশীলতার প্রয়োজনীয়তার  প্রমান সংগ্রহের,  তখন আমি ধীরে মুগ্ধ হতে থাকি ।  প্যাশন যার জীবনীশক্তি , সাহস যার তরবারি , আর সৌন্দর্য্যের জন্য যার যুদ্ধ তাকে কে আটকাতে পারে। পিক্সার যখন ডিজনির রাতের ঘুম তাড়িয়ে দিলো , আপেল যখন ধসে পড়লো, নেক্সট যখন আগামীর বার্তা নিয়ে এলো তখন সবাই বুঝতে পারলো , "সৃজনশীলতাই একমাত্র সংগ্রহের বিষয়" . যে সৃষ্টি করতে পারে তাকে ধ্বংস করা যায় না।  সে ফিনিক্সের মতো তার নিজের ছাই থেকে জীবিত হয় আবার।  স্টিভ ফিরে আসে আপেলে।  নিয়ে আসে সেই সৃজনশীলতা। ফিরিয়ে আনে তার দৃঢ় বিশ্বাস , "A  পিপল ক্যান অনলি ওয়ার্ক উইথ A  পিপল "  সৃষ্টির উত্তাল প্রবাহে  টাচ স্ক্রিনের প্রসার হয়, মোবিলিটির চূড়ান্ত গতি আসে , মিউসিক এক নতুন রঙে শ্রোতার কানে বাজতে থাকে।  এক সৃষ্টি আরেক সৃষ্টিকে প্রভাবিত করে।  সেই সৃষ্টির প্রবাহে দশ আঙুলের বৈচিত্র মিশিয়ে এগিয়ে আসে হাজার নতুনত্ব। হিংসায় পরে যায় ভগবানও , শেষ অস্ত্র ক্যান্সার। শুকিয়ে যেতে থাকা সেই লোকটা তখনও বলে , "স্টে হাঙরি , স্টে ফুলিশ।" জীবনের শেষ বছরে জীবনীকারকে ডেকে পাঠায় আর নির্লজ্জ ভাবে সমস্ত সত্যি উগরে দিয়ে "নো রিগ্রেট" বাণী বিতরণ করে আমার ব্রম্ভা বিদায় নেয় এই পৃথিবীর বুক থেকে। 


"মুঝে  ভুলে তো নেহি?" কেউ ভুলে যাননি তো ? সেই কেহ কে লেঙ্গের শুরু এই বিজ্ঞাপন থেকে।  সব কিছু যখন শেষ।  সারা দেশ যখন সৌরভ গাঙ্গুলির নামে ছি ছিক্কার করছে। যাদের হাতে করে ধরে খেলা শিখিয়েছিলো সেই তারাই যখন তার বিরুদ্ধে , সেই সময় এই বিজ্ঞাপনটি আসে।  আমি দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।  লজ্জা লেগেছিলো , যে এরকম ন্যাকা ন্যাকা ভিডিও কেউ করতে পারে।  বছর ঘুরতে না ঘুরতে বুঝতে পেরেছিলাম সেটা পাঞ্চজন্যের যুদ্ধনাদ ছিল।  কোনো হার যে হার নয়।  সেটা আসলে হার , জয়মাল্য সেটা বোঝানোর ক্ষমতা সৌরভ গাঙ্গুলী দিয়ে গেছে।  জিতের আনন্দ ক্ষণস্থায়ী , পরাজয়ের গ্লানি দীর্ঘস্থায়ী।  কিন্ত সেই গ্লানি আসলে  প্রস্তুতির রসদ।  সৌরভের টিশার্ট ওড়ানোর ছবি তখন খিল্লির পর্যায়ে চলে গেছিলো , 'ক্রিকেট ফুটবল এক না'. যা নিন্দুকেরা পরে মেনে নিয়েছিল যে খেলা আসলে খেলা।  আর সৌরভ সেই খেলার  মহারাজা। নাঃ আমি তার খেলার বিশ্লেষণ করতে বসিনি।  আমি শুধু সেই ক্রীড়াচরিত্র , যা খেলায় আপোষহীন  কৃষ্টির অভিনব প্রদর্শন ছিল তার কথা বলছি।  যে গোল মাঠের কৃষ্ণ হয়ে অর্জুনরুপী ভারতীয় দলকে বলেছিলো , "সর্বধর্ম্যাং পরিত্যাজ্য মামেকং শরনং ব্রজ , অহম ত্বম  সর্ব পাপেভ্যঃ মোক্ষয়িষ্যমি মা শুচঃ". সেই সেরা দল , যখন তার অস্তিত্ব কে দলের সংকট বলে মনে  করলো, এবং দল থেকে  বাদ দিলো , কতজন ভেবেছিলো যে ভুলে যাওয়া সেই আনফিট সৌরভ আবার ফিরে এসে সর্বসম্মতিক্রমে সেই বি সি সি আই এর চেয়ারম্যান হবে।  সৃষ্টি নয় , যা আছে তার উৎকৃষ্টতার প্রবর্তন যার প্রধান মাপকাঠি সেই সৌরভ গাঙ্গুলি আজ আমার বিষ্ণু। 


"যাহা লাথ মার সকতে থে ওহা লাথ মারি , জাহা আপনে বোলা সালাম দো , ওহা ম্যায়নে বলা সালাম লো " .. মনে আছে গুরু ভাই যখন শেষ হিয়ারিং এ বলল "পাবলিক সে কেয়া ডরনা, হাম খুদ পাবলিক হ্যায় " আর শেষ মেশ "তিশ সেকন্ড প্রফিট" . মানিরত্নমের অভাবনীয় ধীরুভাই আম্বানির
বায়োপিক আমার প্রতি লড়াইয়ের অঙ্গ।  বীররসে মজে গিয়ে সুইসাইডাল এটাক নয় , কাপুরুষের মতো পিছনে হটে , প্রস্তুতির সঙ্গে পুনঃআক্রমণ এবং বিজয় এই ছিল গুরুভাই এর  চরিত্র। অন্ধকারে ঝাঁপ , কিন্তু হাতে টর্চ নিয়ে।  উদ্যেশ্যে স্থির , ইনভেস্টর এর দরকার, তাই বিয়ে করতেও রাজি।  মানুষকে ঠকানো নয় , মানুষকে পাইয়ে দিতে সংগঠনের বিরুদ্ধে সমস্ত কিছু করতে প্রস্তুত এই চরিত্র।  কোনো কিছুতেই আপত্তি নেই যতক্ষণ পর্যন্ত "মুনাফা" আছে।  অন্তত দশবার এই সিনেমা আমি দেখেছি।  আর প্রতিবার একটাই কথা ভেবেছি , ছলে বলে কৌশলে যেমন করে হোক আগে এগোতে হবে।  "এক" বাড়লে "দশ" বাড়বে সাথে।  শক্তির সাথে মৈত্রী কর , দুর্বল কে সঙ্গে নিয়ে চলো আর সময়ের অপেক্ষা করো।  "ম্যায় ভাগ রাহা হু , অর তুঝে ভি গোদি মে লেকে ভাগ রাহা হু , কষকে পাকারনা নেহিতো গির জায়েগা" । সময় এলে প্রতিপক্ষ যদি তোমার গুরুও হয় তাহলেও ছেড়ে কথা বোলো না।  দ্রোণাচার্যের মৃত্যুও অর্জুনের হাতে, উদ্যেশ্য, "সমষ্টির মুনাফা"। নটরাজের মতো প্রীতিবহুল , বীরভদ্রের মতো প্রচন্ড , শিবের মতো তাণ্ডববহুল আর শঙ্করের মতো মনুষত্ব সম্পন্ন এই চরিত্র আমার মহাদেব। 

এই ব্রম্ভা, বিষ্ণু মহেশ্বর ছাড়াও দুই চরিত্র আমার জীবনসঙ্গী।  এক নেসক্যাফির ঋষি রাওয়াত আর আইরন লেডির মার্গারেট থ্যাচার।  কিছুদিন আগে নেসক্যাফির এই অ্যাড বেরিয়েছিল এক সকালের রেডিও জকিকে  নিয়ে।  কেউ তাকে কল করে না।  একদিন সে বার করলো যে যেহেতু কেউ তাকে কল করে না , কারণ কেউ তাকে শোনে না এই ভোরবেলা।  যখন কেউ তাকে শোনে না, তাহলে কলার দের কথাও কেউ শুনবে না।  তাই "হো যাও শুরু , দিল হালকা করলো গুরু। কিঁউকি কোয়ি হমে শুনে নেহি রাহা হায়।" তখনি ফোন বেজে ওঠে আর সবাই নিজের সমস্ত ফ্রাস্ট্রেশন  ঝেড়ে দেয়  ফোনে।  সত্যি তো।  আমরা সবাই সেই "ঢিট RJ র " মতো কেন হতে পারিনা। যে হাতে পাওয়া ছুঁচ নিয়েও লড়াই করে যায় হাতির সাথে।  আর চোখে বিঁধিয়ে জিতে যায়।  একেই তো বলে আসল attitude.

আর এই চরিত্রের সাবলীলতা আসে তার চিন্তা থেকে , চিন্তাশক্তি বা চিন্তাশীলতা থেকে। সেই নিয়েই আইরন লেডী সিনেমায় মার্গারেট থ্যাচারকে ডাক্তার জিজ্ঞেস করেছিল , "হাউ ইউ আর ফিলিং" উত্তরে তিনি বলেছিলেন " “What? What am I ‘bound to be feeling?’ People don’t think anymore. They feel. ‘How are you feeling? No, I don’t feel comfortable. I’m sorry, we as a
group we’re feeling….’ One of the great problems of our age is that we are governed by people who care more about feelings than they do about thoughts and ideas. Thoughts and ideas. That interests me. Ask me what I’m thinking.” ডাক্তার বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করেছিল , "হোয়াট ইউ আর থিংকিং?" উত্তরে তিনি বলেছিলেন , ""Watch your thoughts, for they become words. Watch your words, for they become actions. Watch your actions, for they become...habits. Watch your habits, for they become your character. And watch your character, for it becomes your destiny! What we think we become. My father always said that, and I think I am fine."

এই সমস্ত চরিত্রের জন্য শেষ লাইন ইকবাল সিনেমা থেকে , "কুছ এয়সা করকে দিখা , খুদ খুশ হো জায়ে খুদা" .......


Links for the article
Iron lady Speech
https://www.youtube.com/watch?v=GSXYHqs0KPo
Gurukant Desai speech
https://www.youtube.com/watch?v=RvVcF9FHauo
Rishi Rawat ad
https://www.youtube.com/watch?v=0tBqrioLag4
Sourabh ganguly ad
https://www.youtube.com/watch?v=xFkJNlvtqYs
Steve Jobs biography
http://www.amazon.in/Steve-Jobs-Walter-Isaacson/dp/034914043X


Monday, April 17, 2017

আধ্যানের ডায়েরি - এ শুধু আমাদের মধ্যে

এটা কি ঠিক করলে মা ? আমার মতে একদম না।  এক্ষুনি কথা ফিরিয়ে নাও, নাহলে কিন্তু -- নাহলে  কিন্তু - নাহলে কিন্তু।  কি আর করবো।  দুঃখ পাবো।  আই ডোন্ট কেয়ার ????? ইন্টারনেট থেকে একটা ছবি তুলে আনবে আর আমার টোটাল এফোর্ট এ থুতু দিয়ে পোস্ট করে দেবে।  এসব কি ভালো।  আমি কি বুঝতে পারিনা তুমি কতটা টায়ার্ড।  সারাদিন আমার পেছনে দৌড়ে , তারপর বাজার করে , তারপর অফিস করে তোমার যে কি হাল হয় আমি তো দেখি। তুমি কি ভাব আমি বুঝিনা।  আমি সব বুঝি।  তুমি চ্যাঁচালে বুঝি , তুমি দুঃখ পেলে বুঝি , তুমি আনন্দে থাকলে বুঝি , স ও ও ও ও ব বুঝি।  আমি তখনও তোমার সাথে ছিলাম মা যখন তুমি এটা পর্যন্ত জানতে না যে আমি ছেলে না মেয়ে।  আমি জানতাম তুমি স্নান করতে কত ভালোবাস। এক এক ঘন্টা বাথরুমে যখন তুমি গান শুনতে শুনতে , আর গান গাইতে গাইতে স্নান করতে তখন আমিও তাল দিতাম কিনা , তুমিই বলো।  এখন তুমি পারোনা বুঝি।  আমি না ঘুমালে তুমি কিছুই করতে পারোনা।  কিন্তু আমি কি করি বল , তুমিই কিছুদিন পরে বলবে আমার গ্রোথ ঠিক নেই।  গ্রোথের জন্য আমাকে কত কসরত করতে হয় তুমি কি জানো ? শুয়ে ঘুমালে আমি কি সময়ের কাজ সময়ে করতে পারবো ?

বাবা বলে না, আমি আর্মিন ব্রটের এক্সপেক্টেন্ট ফাদার ফলো করে জন্মেছি।  আমি তো তার মানে ভালো ছেলে।  বইতে যেমন যেমন লেখা আছে ঠিক তেমন তেমন হয়েছে।  তুমি আর বাবার কাছে সারপ্রাইস কিছুই ছিল না।  সব বেস্ট কেস দিয়ে গেছে।  বেরিয়ে এসে আমার একটু ল্যাজ গজিয়েছে বটে।  কিন্তু তাহলেও অন্যদের তুলনায় আমি গুড বেবি।  লম্বা বলে ওজন বাড়েনি।  সময়ে হেসেছি, সময়ে হামা দিয়েছি , এবার প্রায় হাঁটতেও শিখে গেছি , সময় হলেই দৌড়ে গিয়ে তোমার কোলে উঠে পড়বো।  সরি বাবার।  বাবা মাঝে মাঝেই বলে না , ওকে আসতে বড় হতে বলো।  আমি প্রথম তো সেই দিন হাঁটবো যেদিন বাবা আসবে। তাহলে কেন আমায় এমন বলা। 

আমি জানি আমি যখন ঘুমোই, তখন তুমি সমস্ত কাজ সেরে রাখো।  তারপর অপেক্ষা করো আমার ওঠার।  আমিও ঘাপটি মেরে পরে থাকি যতক্ষণ তুমি না কাজ শেষ করে আমার পাশে এসে বস।  তারপর আমি  ভনিতা করে , আড়মুড়ি খেয়ে , হাত পা ভেঙে ঘুম থেকে উঠে তোমায় আমার সেই স্পেশাল স্মাইলটা দিই।  আর তুমি খুশি হয়ে যাও।  আমি কি তবে ভুল ভাবি? তুমি কি আমার হাসির থেকে বেশি রেস্ট চাও ? আমি কিন্তু চাইনা।  যখন ডে কেয়ারে তুমি নিতে আসতে তখন আমি সারাদিন খেলে , না ঘুমিয়ে ভয়ঙ্কর টায়ার্ড হয়ে  থাকতাম।  কিন্তু তুমি যখন এক মুখ হাসি নিয়ে আমার সামনে এসে হাত বাড়াতে , তখন সব ক্লান্তি এক নিমেষে শেষ হয়ে যেত।  মনে হতো আবার নতুন করে দিন শুরু করেছি।  এখন তুমি যদি সেটা ইন্টারপ্রেট করো যে আমি "খাবার এসে গেছে " "খাবার এসে গেছে " বলে ঝাঁপাতাম।  তাহলে আমার কিছু করার নেই।  ওটা মিসইন্টারপ্রেটেশন। ঠিক তোমাদের রিলিজিওনের মতো , সব ঠিক লেখা আছে অথচ ভুল ইন্টারপ্রেটেশনের জন্য এতো সমস্যা। আমায় ভুল ইন্টারপ্রেট কোরো না মা। 

তোমার কাজ কমানোর জন্য আমি কত চেষ্টা করি।  তুমি যখন রান্না ঘরে থাকো তখন কি আমি তোমায় ডিসটার্ব করি? হ্যা হামা দিতে দিতে তোমার আশেপাশে ঘুরি বটে , একটু জিনিসপত্র টানাটানি করি বটে , আজকাল আই পি এল এর মরশুম বলে জিনিসপত্র ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলি বটে, কিন্তু ডিসটার্ব কখনো করিনা।  কক্ষনো না।  আই স্বেয়ার , আই শপথ , বাবার আই ফোনের শপথ।  তোমার কাজ কমাতে , হাগুমুতু এক সাথে সেরে ফেলি।  আগে মনে আছে , কতবার তোমাকে ডায়পার পাল্টাতে হতো।  এখন কি আর তা করতে হয়। আমি আমার রেচনপদ্ধতিতে যোগবলে একটা ডিসিপ্লিন এনে ফেলেছি।  তুমি আমাকে কোলে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ( নেচে নেচে ) খাওয়ানোর বদলে টিভির সামনে বসিয়ে দাও।  আমি তো মুখ বুঝে সেই অভ্যাস করে নিয়েছি নাকি।  শুধু তো তোমার একটু টায়ার্ডনেস কমানোর জন্য।  অন্য বাচ্চাদের মতো আমি সারা ঘর জিনিস ছড়াই না।  হ্যা একটু এক্সপ্লোর করতে গিয়ে গন্ডগোল পাকিয়ে ফেলি বটে , কিন্তু তুমি কি চাও তোমার ছেলে ডাম্ব তৈরী হোক।  আগুন ছুঁয়ে দেখলে তবেই  তো বুঝবো যে এক শিখার মধ্যে তিন  টেম্পারেচারের তিন রঙের তিনটা আগুন আছে।  একবার কাঠে , একবার কংক্রিটে , একবার কার্পেটে ধড়াম করে না পড়লে কি করে বুঝবো যে কোনটা কি? তাতে একটু লাগে বটে , একটু কাঁদি বটে , একটু জল বেরোয় বটে কিন্তু তুমি থাকলেই তো দু মিনিটে কান্না থামিয়ে হাসি দিয়ে দি।    

ও হ্যা একটা জিনিস তো বেমালুম ভুলেই গেছি।  আমার এই দৌড়ে বেড়ানোর জন্যে তোমার কতটা ওজন কমেছে বলতো।  যদি আমার হওয়ার সময় তুমি যেমন হিপোপটেমাস হয়ে গেছিলে , এখন তো তুমি স্লিম ট্রিম  ফিট , সেটা কার জন্য।  শোনো মা , আরাম হারাম হ্যায়।  আমি আছি বলে তুমি  ফ্রিতে জিম করছো।  আর তুমি সেই জিম ট্রেনারকেই গালাগালি করছো। 


শেষমেশ একটা কথা বলে রাখি মা।  এতোদিন বাবা নেই।  কে তোমাকে প্রটেক্ট করেছে শুনি।  সেই তো আমি। হতে পারি আমি ছোট কিন্তু বামন অবতারও কত কিছু করেছিল মনে আছে তো।  আমার তোমাদের মতো শক্তি না থাকলেও আমি ধারে কাটি।  বাবাকে তো আমরা কবে থেকে সাইড করে দিয়েছি।  নিজেই তাল বুঝে কেটে পড়েছে , তাই আমাদেরও বিশেষ কোনো মাথাব্যাথা নেই।  আসলে ভালো, না আসলে কি আর করবো। পরে জাস্ট বাবা বলে মানব না।  চুপিচুপি বলি , যদিও এখনো বিশেষ মানিনা।  কিন্তু মা , আমি শুধু তোমার।  শুধু তুমি আর আমি , চাঁচা পোছা , মা আর  বাছা। বাদ দাও বাবাকে।  ও বিশেষ কাজের নয়।  আসলে পরে থাকবে এক কোণে।  শুধু তুমি আর আমি। মা আর ব্যাটা।  তাই কক্ষনো বোলো না যে আই ডোন্ট কেয়ার।  তোমার অতিরিক্ত টায়ার্ড চোখে যখন ঘুম আসেনা আমি তখন তোমার গায়ে ঢুকে আসি, যখন কোমরে ব্যাথা করে তখন তোমার গায়ে উঠে খেলা করার ভান করে মেসেজ করি , তুমি যখন বাবা আসছে না বলে হতাশায় ভেঙে পর তখন আমি নানা কীর্তিকলাপ দেখিয়ে হাসানোর চেষ্টা করি , তুমি যখন চিৎকার করো তখন আমি কেঁদে ফেলে তোমায় অসহায় করে তোমায় থামায় যাতে গলা না চিরে যায় , তুমি যখন অফিসের গম্ভীর কাজ করতে করতে বোরিং মিটিঙে বিরক্ত হয়ে যাও তখন আমি মাঝখানে দেয়ালা করে একটা দমকা হাসি এনে খুশি করে দি।  যখন যেটুকু পারি , আমি আমার সামর্থ্যের মধ্যে করার চেষ্টা করি মা, বিকস ইউ নো ইটস ওনলি বিটুইন ইউ এন্ড মি মা , ওনলি ইউ এন্ড মি।  

আধ্যানের ডায়েরির আগের পাতাগুলো 

Saturday, April 15, 2017

আধ্যানের ডায়েরি (প্রথম পাতা ) - আমার ঘর

আমার ঘর
আমি কিন্তু বেশ আছি। নীড় ছোট কিন্তু বেশ comfortable. সময়ে সময়ে আমার খাবার এসে যায়। সময়ে সময়ে। না পেলেই আমি একটু নরে চরে বসি। ব্যাস খাবার এসে যায়। আমার এ ঘরে কখন আলো কখনও অন্ধকার। বলতে গেলে আধো আলো আধো অন্ধকার। সারা ঘর জলে থইথই করে। কিন্তু স্যাতস্যাতে নয়। বেশ ওম হয়ে থাকে। যখন থেকে বুঝতে শিখলাম আমি জীবিত তখন থেকে বুঝলাম আমার একজন একজন caretaker আছে। সে বেশ ভালোবাসে আমায়। ভালবাসাটা যে ঠিক কি সেতা যদিও আমার কাছে খুব একটা পরিস্কার তা নয়। কিন্তু হ্যাঁ সময়ে সময়ে আমার প্রয়োজন সে মিটিয়ে দেয়। আমি আমার কাজ করি। কাজ! সেটাও কেন যে বললাম সেটাও বুঝলাম না। যা করলে আমার বেঁচে থাকা সম্ভব তাকেই হত কাজ বলে। তাই করি। নড়ি চড়ি।

আমার খেলার জিনিস বেশি নেই। একটা লম্বা মতো জিনিস আমার পেটের সাথে আটকানো আছে। বেশ লম্বা। যখন আর কিছু করার থাকে না। তখন আমি ওটাকে ধরেই ঝুলি। বেশ লাগে। দোল খাই। আগে ঘরে অনেক জায়গা ছিল। তখন আমি ডিগবাজি খেতাম। লাফাতাম ঝাপাতাম। তখন কোনও সমস্যা ছিল না। এখন আমি বেশ বড় হয়ে গেছি। আর বেশি নড়াচড়া করতে পারিনা। একেই কি বার্ধক্য বলে। যখন কেউ নড়তে চড়তে পারেনা, একই জায়গায় দিনের পর দিন বসে বসে খেতে হয়। হতে পারে। মাঝে মাঝে ঘরের দরজায় ধাক্কা মারি। ঘরটা কেঁপে ওঠে কিন্তু যে কে সেই। আমার আর বড় ঘর হয়না। এগুলো কিন্তু ঠিক নয়। আমিও মানুষ আমারও প্রয়োজন আছে। শখ আহ্লাদ আছে। আমারও বড় ঘরের অধিকার আছে। কিন্তু প্রয়োজন থাকলেই বা কে মেটায়।

আমার এই ঘরের কিছু সমস্যা আছে। ঠুকঠাক কত কিছু শব্দ হয় সারাদিন ধরে। সারাদিন আমার ঘরটা বেশ দোলে। আমাকেও দুলতে হয়। আমার বেশ ভয় লাগে। তাই আমি চুপ করে ঘরের এক কোণে ঘাপটি মেরে বসে থাকি। বসে থাকতে থাকতে ঘুমে চোখ ঢুলে আসে। ঘুম আমার প্রচুর। কথায় বলেনা বলির ঘাম আর দুর্বলের ঘুম। আমি কি দুর্বল। না মোটেই না। মাঝে মাঝে তাই শিলিং এ মারি এক লাথি। যদিও কিছু হয়না। আগে যখন ছোট ছিলাম তখন শিলিং এ হাত পেতাম না। জলে ভেসে ভেসে উঠে জেতাম ওপরে। কিন্তু পা তো জলে। হাত দিয়ে কত আর জর পাওয়া যায়। তাই শিলিং একটুও ভাঁজ হত না। ও হ্যাঁ ! আমার পুরো ঘরটাই কিন্তু বেশ নরম। গদি গদি। তাই খাট, বিছানা, সোফা , কুশন কিছুই লাগে না। যেখানে ইচ্ছা যখন ইচ্ছা আমি আয়েশ করে বসে থাকি, শুয়ে থাকি, আড়মোড়া ভাঙ্গি। আর মাঝে মাঝে নানা জায়গায় লাথি কশাই। এটাই আমার খেলা। কিন্তু এই ঘরটা যখন নড়ে তখন আমার কিছু করার থাকে না। হয়ত যখন ঘুমিয়ে পড়ি তখন মাঝে মাঝে এই কম্পন থেমে যায়। কিন্তু সর্বসন্তাপনাশিনী নিদ্রা। সবসময় কি বুঝতে পারি নাকি ছাই। চোখটা লেগে এসেছে বুঝতে পারলাম ঘরটা একটু অন্ধকার নেমে এসেছে ঘরে আর বেশ শান্ত হয়ে গেছে। তখন কি আর ইচ্ছা করে উঠে পরে নাচানাচি করতে। আয়েশ করে ঘুম মারি। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার খাবার রেডি।

আগে যখন ছোট ছিলাম তখন ঘরটা জেই কাঁপত তখন কেন জানিনা এক দেওয়ালের দিকে আমার শরীরটা আপনা থেকেই চলে যেতো। মানে শুয়ে ছিলাম মেঝের ওপর ঘুম থেকে উঠে দেখি দেওয়ালে ঝুলছি। রাত না হওয়া পর্যন্ত সেইভাবে ঝুলে থাকতাম। আবার রাতে যখন সব কিছু শান্ত তখন আবার মেঝেতে চলে জেতাম। হাঁটতাম চলতাম। ভয়ে ভয়ে মাঝে মাঝে দেওয়ালে দু চারটে টোকা মেরে দেখতাম ভুমিকম্পে দেওয়ালের কোথাও পলেস্তারা খশে পরেনি তো। নাহ বেশ টেকসই দেওয়ালগুলো।

এখন বেশ বড় হয়ে গেছি। কি জানি বুড়ো হয়ে গেছি কিনা। আমার তো আর বন্ধু বলতে কেও নেই। এই ঘরে আমি একা। দরজাটা বন্ধই থাকে। বাইরে বুঝতে পারি অনেক আমার মতো মানুষ আছে। কিন্তু বেরতে পারিনা। এখনও ইচ্ছা নেই বেরনোর। সুখে থাকতে কি আর ভুতে কিলোয়। বেশ আছি। সময়ে সময়ে খাবার সময়ে সময়ে ঘুম। total  relaxation.  বেশ রাজা রাজা ভাব। যখন এসেছিলাম তখন শরীর ছোট ছিল, গায়ে শক্তি ছিলনা। এখন ধিরে ধিরে বল ফিরে পাচ্ছি। খাবার দাবার বেশ ভালই পাচ্ছি।

সবথেকে বড় কথা খাবার এখানে খেতেও হয়না। নিস্বাসে খাবার থাকে। কি দারুন এই ঘরের আবহাওয়া। মাঝে মাঝে পালটে পালটে যায়। কখন নোনতা কখনও মিষ্টি। কখনও আবার বেশ ঝাঁঝাল। আমার আবার বেশি ঝাল পছন্দ হয়না। যখন হঠাৎ করে ঝাল খেতে বাধ্য করা হয় আমাকে তখন রেগে মেগে দরজায় মারি এক লাথি। আমার caretaker যাকে ছোট করে আমি মা বলি সে তখন মিষ্টি বা জল দিয়ে আমায় শান্ত করে।

আমার ঘরের দেওয়ালের বাইরে প্রচুর ছোট বড় নল আছে। দেখতে পাইনা। কিন্তু শুনতে পাই। নানা কিছু জলের আওয়াজ হতে থাকে। সাথে একটা ধক ধক করে আওয়াজ তো ক্রমাগত হয়ে চলেছে। ঠিক আমার হৃৎপিণ্ডর মতো। কিন্তু অনেক আস্তে তার লয়। আমার আগে আরও জোরে হত। যত দিন যাচ্ছে তত দেখছি শান্ত হয়ে যাচ্ছে। থেমে যাবেনা তো। বুড়ো হলে তো একেবারে থেমে যায়। কি জানি। তবে এই চারপাশের নল দিয়ে যে হারে জলের আওয়াজ হতে থাকে তাতে কান পাতা দায়। যত দিন যাচ্ছে তত মনে হচ্ছে আরও জোরে , আরও জোরে আওয়াজ বেরেই চলেছে।     
  
এই মা, মানে আমার caretaker টা অদ্ভুত। মাঝে মাঝে খুব caring. মাঝে মাঝে খুব উদাসীন। আমিও যেন ওর মতো হয়ে যাচ্ছি দিন দিন। ও একধরনের শব্দ শুনতে ভালবাসে যা আমার চারপাশে হওয়া শব্দর থেকে আলাদা। মা যেমন কথা বলে ঠিক তেমন নয়। আবার তেমনও। সাথে অনেক ধরনের জিনিসের শব্দ।ঠুং ঠ্যাং প্যাঁ পোঁ। আমার শুনে শুনে কেমন যেন দোল লাগে। কখনও কখনও নাচতে ইচ্ছা করে। বাইরে যখন প্রচুর জলের শব্দ প্রচণ্ড বাড়ে, নানা এই জলের শব্দ দেওয়ালের জলের নয়, অন্য ধরনের। ঝুউউস ঝুউউপ, এরকম। তখনিই ওই শব্দগুলো হয়। ঘরটা বেশ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। ঘরের ছাদে কিরকম একটা ঘশে দেওয়ার মতো শব্দ হয় মাঝে মাঝে।

এই ঘরটা মনে হয় মাঝে মাঝে কেউ ঘষে। মা মনে হয় মাঝে মাঝে বাইরের চাকচিক্য পরিষ্কার করে। মা যখন করে তখন বোঝা যায়। বেশ একটা নরম আদুরে ভাব নিয়ে করে। কিন্তু শুধু মা করে না। অন্যেও করে। সেগুলো কে জানিনা। মায়ের মতোই কিন্তু মা নয়। ছাদের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত বেশ ঘওওওষ আবার আরেক প্রান্ত থেকে থেকে আরেক প্রান্ত ঘওওওষ শব্দ হতে থাকে। কয়েকদিন হল মায়ের মতো আদর করে আরো কেউ একজন বাইরের দেওয়াল পরিস্কার করছে। কে জানে কে? কিন্তু খাবারের স্বাদ গেছে পালটে। মা আর কাঁদে না। আমার ছার পাশে কেমন যেন একটা খুশি খুশি বলয় তইরি হয়েছে।

এই খুশি যেদিন থেকে শুরু হয়েছে তার দু তিন দিন আগে কিন্তু আমার কেন জানিনা একটু বেশি আলিস্যি এসে গেছিল। রাতে যখন আমার ঘর কাঁপা বন্ধ হয় আমি মেঝের ওপর খেলা করি। সেদিন কেন জানিনা খেলতে ইচ্ছা করছিল না। সারাদিন শুয়ে বসে কাটিয়েছি। ভেবেছি অনেক কিছু কিন্তু করিনি কিছুই। আলো ঢুকেছে ঘরে। আলো বেরিয়ে গেছে। আমি শান্ত হয়ে নিজের সাথে নিজে বেশ কিছুখন সময় কাটিয়েছি। হঠাৎ করে কি হল মনে হল আমায় কেউ লক্ষ্য করছে। দারুন ভাবে লক্ষ্য করছে। আমার হৃৎপিণ্ডের ধক ধক শব্দ যেন কয়েক গুন জোরে বেরে গেছে আর আমার চারপাশে ঘোরাফেরা করছে। অনেকখন ধরে সেরকম হল। তার পর বুঝলাম মা আবার ঘরের চারপাশ পরিস্কার করতে শুরু করেছে। এবার যেন আরও আদরের সাথে। আস্তে আস্তে।

এর পর থেকে আমার ঘরের চারপাশে এক নতুন শব্দ শুনতে লাগলাম। মায়ের সাথে আরও কেউ একজন। আমি জতক্ষন জেগে থাকি ততখন সেও মায়ের সাথে থাকে। প্রচুর কথা বলে। অনেক আওয়াজ করে। মা ও কথা বলে। আমি শুনি, কেন জানিনা বেশ ভালো লাগে। মা বেশ হাসে। মা তো বেশি কথা বলে না। কিন্তু এ প্রচুর কথা বলে। মা হ্যাঁ হু করতে থাকে। মাঝে মাঝে যখন ঘরটা শান্ত হয় তখন দেখি একটানা আরেকজনের গলা চলতেই থাকে। অনেকক্ষন একটানা। চারপাশ কিরকম খুশি খুশি হয়ে যায়। নতুন গলাটা কিন্তু বেশ ভারি। মায়ের গলার মতো নয়। গুরু গম্ভির।

কয়েকদিন ধরে বুঝতে পারছি সেও আমার ঘরের ছাদ পরিস্কার করছে। আমার দেখভাল করার জন্য তাহলে মা কি আরও নতুন লোক এনেছে। আমার মতো দেখতে হয়ত কেউ। ভালই হয়। মা এখন বেশ হাফায়। আমি যখন খেলি তখন আমার ধক ধক বেড়ে যায়। তখন মায়ের হাঁফানোর শব্দ শুনতে পাই। আর মনে হয় পারছে না। ঘরটা এখন অনেক বড় হয়ে গেছে। আমিও । আমার আবার খিদেও বেড়ে গেছে। অত খাবার কি মা একা যোগার করতে পারে। তাই মনে হয় নতুন লোক এনেছে মাকে সাহাজ্য করার জন্য। এ এসে কিন্তু নতুন নতুন খাবারের স্বাদ পাচ্ছি। কিছুটা আঁশটানো গন্ধ মাঝে মাঝে ঘর ভরিয়ে দেয়। কিন্তু অভ্যেস হয়ে গেছে কয়েকদিনেই। মনে হয় কতদিনের পুরনো ভুলে যাওয়া একটা খাওয়া খাচ্ছি। ভালই লাগে।

লোকটা তাহলে ভালই। আমি যখন খেলা করি আজকাল মায়ের সাথে সেও আমার ঘরের ছাদ দেওয়াল পরিস্কার করে। মায়ের মতো অত মিষ্টি করে করে না। একটু জোরে ঘষে। মাঝে মাঝে হয়ত সেটাও দরকার নাহলে জেদি ময়লা তো আর সাফ হয়না। আমার কিন্তু ভালই লাগে। কখনও কখনও দেখি ছাদের দেওয়ালের এক এক জায়গা তেবরে গেছে। অনেক খন তেবড়ে থাকে। আজকাল তো আমিও প্রায়ের ছাদের সমান হয়ে গেছি। তাই হাত দিয়ে আমিও ঠেলা দিই। বেশ কিছুক্ষন ঠেলা দেওয়ার পর দেখি ঠিক হয়ে গেছে। লোকটা মনে হয় বাইরে থেকেও ঠিক করছে। একটু আস্তেও তো করতে পারে। অন্য দেওয়াল গুলতেও মাঝে মাঝে তেবড়ে যায়। আমাকেই আবার ঘুরে ঘারে ঠিক করতে হয়। আমি কি সব একা পারি। আমার তো এখন আরামের সময়।

আরামও প্রান ভরে করা জায়না। নতুন আবার হেঁচকি শুরু হয়েছে। মাঝেই মাঝেই আট দশবার হেঁচকি তুলে তবে ক্ষান্ত হচ্ছি। আর জতবার হেঁচকি তুলছি ততবার এই নতুন লোকটা দেওয়াল ঘষছে। কি আপদ। আমার হেঁচকিতে বাইরের যে কি সমস্যা হচ্ছে জানিনা বাপু। সাথে আবার মা খিক খিক করে হাসছে। শুনতে ভালো লাগছে বটে কিন্তু হেঁচকি তুলে কাউকে আনন্দ আমি দিতে পারছি না আপাতত। বিশেশ করে এই নতুন লোকটাকে। 

এই লোকটার একটা নাম দিলে কেমন হয়। অনেক কিছু পালটে গেছে লোকটা আসার পর। যেমন ভাবে মা উচ্চারণ করি অন্য ভাবে করলে “বা” অথবা “পা” বেরয়। “বা” টাই সহজ। খাটবে কে। তবে মা ছিল একজন এখন দুজন হয়েছে তাহলে একে বরঞ্চ , “বাবা” বলি। ভালো শোনাচ্ছে। এই বাবাটা বেশ মজাদার। মা জেগুলো এতদিন ধরে শুনত, সাথে প্যাঁ পোঁ করে শব্দ হত। বাবা এসে শুধু নিজের গলায় বলে। আমার কিন্তু তাতেও দোল লাগে। ঝিমুনি আসে। মাঝে মাঝে মাও কিন্তু বাবার সাথে ঠিক তেমনি ভাবে বলতে থাকে। আমার তখন খুব মজা লাগে। আমি একটু নেচে নিই। তখন দেখি দুজনে একসাথে বলেই চলে। ওটারও তো একটা নাম দেওয়া যায়। গান। কথার পর কথা সাজিয়ে গান। আমিও গান বলব। কিন্তু এখানে তো গান বলা যাবে না। ওখানে আগে অন্য কেউ বলত মা শুনত। তার পর বাবা বলত মা শুনত আমি শুনতাম। এখন তো দেখছি মাও বলে। তাহলে গান তখনই বলা যায় যখন কেউ শোনার থাকে। আমার তো এখানে শোনার কেউ নেই। আমি তখনিই বলব যখন এখান থেকে বেরব।

সত্যি অনেক দিন হয়ে গেল আমি এখানে আছি। আগে জায়গাটা বেশ ভালো ছিল। এখন ধিরে ধিরে অনেক ছোট হয়ে গেছে। আর আমি ঠিক ঠাক আঁটছি না। আমার খেলা করার , ঘোরা ফেরার জায়গা কমে গেছে। তার ওপর আগে দেওয়ালে এতো শব্দ হত না। এখন কান পাততে পারিনা। এই ভাবলাম একটু শুয়ে আরাম করব। এক পাশ ফিরে এক দেওয়ালে মাথা রেখে জেই শুয়েছি কান ফাটিয়ে পাশ দিয়ে একটা ঢক ঢক করে শব্দ। মাথা ঘুরিয়ে আরেক দেওয়ালে কান দিতেই শাই শাই শব্দ। নাহ এরকম চলতে পারেনা। মা বাবা এই সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। বা করতে চাইছে না। কত আর পরের জন্য করা যায়। আমিও তো আমার নিজের মজার জন্যই এখানে পরে আছি। খাচ্ছি দাচ্ছি আর মোটা হচ্ছি। আগে কানে কম শুনতাম। এখন দারুন শুনতে পারছি। আগে পুঁচকে ছিলাম এখন বেশ বড়। দেওয়ালে ঘুশি মারলে দেওয়াল তেবড়ে যায়। একটা ঘরের সমান বড় হয়ে গেছি। সেই এক লম্বা একটা খেলনা নিয়ে আর খেলতে ইচ্ছা করে না।

নাহ এবার বেরতে হবে। মা , বাবার সাথে দেখা করে অদের এবার ছুটি দিয়ে দিতে হবে। আমার জন্য অনেক কিছু করেছে ওরা। পরে আবার কথা শোনাবে তার থেকে অন্য মা অন্য বাবার খোঁজ করতে হবে বেরিয়ে। আচ্ছা ওরা কি আমার মতো দেখতে? না অন্য রকম। আমার মতই কি হাত পা আছে। খেলা করে? ওদের কি আমার মতো গায়ে লাগানো খেলনা আছে। এই হাত পা দিয়ে খেলা ছাড়া আর কিছু করার যায়? মনে তো হয়না। খাবার তো এমনি এমনি পাওয়া যায়। আর কি , আর কি , হ্যাঁ ঘুশি মারা যায়। মা বাবা দুজনেই মনে হয় ওদের বারির দেওয়ালে সারাদিন ঘুশি মারে। আমি কিন্তু গিয়ে মা বাবা দুজনকেই ঘুশি মারব। বেশ মজা হবে। কিন্তু বেরব কি করে। বেরনোর জায়গা বলতে তো একটা দরজা। সেটাও এখন এতো ছোট হয়ে গেছে বেরতে পারব কিনা জানিনা। এই দরজার পরে কি আবার আরও দরজা আছে? মা বাবা কি আমার জন্য দরজা খুলে দেবে না আমাকেই খুলতে হবে।

মন স্থির করে বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করলাম। কিন্তু নাহ। না বাবার না মার। কোনও হেলদোল নেই। তাহলে আমাকেই কিছু ব্যাবস্থা করতে হবে। এইভাবে এইরকম জায়গায় আর বসে থাকা জায়না। জায়গাটা বেশ নোংরাও হয়ে গেছে। দরজাটাতে লাথি মারা শুরু করি দেখি ভাঙ্গে কিনা। এক্তার পর একটা লাথি মারতে আরম্ভ করলাম। প্রথমে আস্তে আস্তে। তারপর জোরে জোরে। কিছুই হচ্ছে না। ধুর। এবার শেষ চেষ্টা। মাথা দিয়ে গুঁতো মারি তাহলে হয়ত ঠিক হবে। কিন্তু এইটুকু জায়গায় ঘোরাটাই তো সমস্যা। ঝাড়া চারদিন লাগল মাথাটা দরজার কাছে নিয়ে জেতে। শেষমেশ মাথা তুলে নিশানা সাধলাম দরজার ওপর। প্রথমে কিছু হল না। মায়ের গলা পেলাম। মনে হল টের পেয়েছে আমি দরজায় ধাক্কা মারছি। এবার অপরদিকের দেওয়ালে পা দিয়ে শরীরটাকে যতটা পারি কুঁচকে সমস্ত পেশীতে শক্তি সঞ্চয় করে মারলাম সজোরে এক ধাক্কা। ভশ করে দরজা ভেঙ্গে মাথা বেরিয়ে গেল দরজার ওপারে। সাথে সাথে দেখি আমার পাশ দিয়ে আমার ঘরের জল সব বেরিয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু একী দরজা ভাঙ্গার পর সামনে তো প্যাঁচালো সুরঙ্গ। কি ভয়ানক অন্ধকার। আর কি ছোট জায়গা। সাথে চারপাশে ভুমিকম্প শুরু হয়ে গেল। মা এতো চ্যাঁচাঁছে কেন। বাবাও সাথে। আমি একটু একটু করে এগোতে লাগলাম। একটু এগোতেই দম বেরিয়ে যাচ্ছে। থেমে থেমে, দম নিয়ে নিয়ে হেঁচড়ে হেঁচড়ে এগোচ্ছই। কি আপদ। কি মরতে যে মাথা গলালাম। এখন হাত পা আর সামনে আনতে পারছি না। হাত দুটো সামনে আসলে না হয়ে কিছু একটা ধরে সারা শরীরটাকে টেনে নিয়ে জেতে পারতাম। কিন্তু সে যখন হল না। তখন এইরকম কোঁত পেরে পেরেই এগোতে হবে। কি ভাগ্যিস ঘরের জলগুলো বেরোচ্ছে একই রাস্তা পিচ্ছিল করে। নাহলে মনে হয় এক বিন্দু এগোতে পারতাম না।

এইটুকু রাস্তা পেরতে আমার দম প্রায় শেষ হয়ে গেল। আর পারছি না। সাথে ক্রমাগত মায়ের চীৎকার। বাবা কিন্তু আস্তে আস্তে কথা বলছে। মায়ের যে কি হল কে জানে। এতো কেন চ্যাঁচায়। আগে তো কখনও এতো চীৎকার শুনিনি। মনে হয় টের পেয়ে গেছে আমি বেরিয়ে অন্য মা খোঁজ করব। কিন্তু তাহলে তো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদত আগের মতো। এ তো তারস্বরে চীৎকার। কান ঝালাপালা করে দিল। আমি মনে মনে কান বন্ধ করে দিলাম। সামনে আলো দেখা যাচ্ছে। আর কিছুটা দূর। এখন মায়ের কথা চিন্তা করলে হবে না। আপনি বাঁচলে মায়ের নাম। শরীর শিথিল হয়ে আসছে। আর পারছি না। এই ঘাট মানছি। এবার শেষ। এবার যে ঘরে ঢুকব আর বেরোবার কথা বলব না। কি হত অইখানে থাকলে। বেশ তো ছিলাম। কি প্রয়োজন ছিল এই কষ্ট নেওয়ার। একটা জিনিস বুঝতে পেরেছি আর আমার ফিরে তাকানোর জায়গা নেই। শুধু এগিয়ে জেতে হবে। থামলেই মৃত্যু। সামনের আলোটা একেবারে সামনে চলে এসেছে ... আর একটু। আর একটু। আর একটু।        


আধ্যানের ডায়েরির আগের পাতা গুলো 


Friday, April 7, 2017

আধ্যানের ডায়েরি - কি জ্বালাতন



ব্যাপারটা কি ? বলি হচ্ছে টা কি ? তোমরা ঝগড়া করছো করো , আমাকে বলি দেওয়া কেন ? এই মা আর বাবা দিন রাত কুকুর কেত্তন করবে আর মাঝখান থেকে আমায় নিয়ে টানাটানি। আমি সেই বুড়ো গরুটার মতো আর মা - বাবা হিন্দু মুসলমান।  কি যাতা অবস্থা।  এটা আজকের ব্যাপার না।  সেই কবে থেকে যখন থেকে আমি বেরিয়েছি তখন থেকে ব্যাপারটা ঘটে চলেছে।  মা বাবা তো দুই দেশে।  সাথে থাকলে এ ওকে কেটে ফেলতো, ও ওকে খেয়ে ফেলতো। কিন্তু এখন যেই ঝগড়া সেই ফোন বন্ধ।  হঠাৎ করে ঘেউ ঘেউ ঘেউ ঘেউ তারপর ব্যাস শ্মশানের নীরবতা।  একদিন যায় , দু দিন যায় , ফোন আর বাজে না।  আর বাজলেও মা ওই লাল বোতামটা টিপতে থাকে। এইতো সেদিন।  কি একটা জিনিস নিয়ে বাবা কিছু বললো , আর মা প্রথমে একটু মুখ হাড়ি করলো।  তারপর আমি ওখানে বসে বসে খাচ্ছি আর ডিজনির ষ্টার ডার্লিং দেখছি।  মা সেদিন গোবিন্দভোগ চালের খিচুড়ি করে দিয়েছিলো , সাথে মায়ের হাতে বানানো ঘি, আরো কিছু একটা সবজি দিয়ে একেবারে উত্তাল খিচুড়ি ছিল।  দাদু বসে বসে খাওয়াচ্ছিল আর আমি আয়েস করে খাচ্ছিলাম।  মা ওদিকে টেবিলে বসে খেতে খেতে বাবার সাথে কথা বলছিলো।  হঠাৎ করে কি হলে।  দেখলাম ড্রাম করে আওয়াজ।  ফোনটা টেবিলেই শুয়ে পড়েছে।  আর মা মুখ লাল করে বসে আছে।  আমার খাওয়া হয়ে যাওয়ার পর আমার হজমি হলো বাবার সাথে একটু ফেসটাইম। বাবা ফেসটাইমে ঘোতলা  ঘোতলা  করবে আর আমি ঝাঁপিয়ে পরে ফোনটা কেড়ে লাল বোতামটা টিপে দিয়ে মায়ের হাতে দিয়ে দেব।  এটা মোটামুটি দু চার বার হলেই আমার খাবার মোটামুটি হজম হয়ে যায় আর আমার ঘুমের টাইম আরম্ভ হয়ে যায়।  কিন্তু সেদিন দেখলাম ব্যাপারটা অন্য।  আমারও খাওয়া হয়ে গেলো।  দাদুরও খাওয়া হয়ে গেলো।  মা আমাকে নিয়ে বেশ কিছুক্ষন হাট্টিমা টিম টিম আর ওল্ড ম্যাকডোনাল্ড গাইলো , বেশ শুড়শুড়ি কাতুকুত চুল টানাটানি ইত্যাদি চললো তার পর ধপাস করে আলো বন্ধ করে আমাকে নিয়ে শুয়ে পড়লো।  কতবার , ডাকলাম , বললাম , বোঝালাম , হাজার হোক বাঙালি তো।  বদহজম , গলা বুক জ্বলা , অ্যাসিড , গ্যাস এসব তো রক্তে।  এখানে তো আর অম্লজীন চূর্ণ পাওয়া যায় না এটলিস্ট বাবা হজমি তো পাওয়া উচিত।  কিন্তু না।  মা তখন গম্ভীর।  দুচারবার ঘ্যান ঘ্যান করতে ভ্যা করে কেঁদে দিয়ে আমাকে আদর করতে থাকলো।  বুঝলাম বেশ সেনসিটিভ ইসু।  তাই চুপ করে গেলাম বটে।  কিন্তু খিচুড়ি খেয়ে কি কেউ ঘুমায় , এসিডিটি বাধ্যতামূলক।  সকালে উঠে দুধ খেতে গিয়ে সব তুলে দিলাম।  ব্যাস মা ফায়ার।  বাহ্ , বেশ।  চোরের মায়ের বড় গলা।  নিজে ঝগড়া করে হজমি খেতে দিলে না , আর এখন তড়পাচ্ছ।  কিন্তু কি আর বলবো , যেদিন বলবো সেদিন বলব ভালো করে।  তা ব্যাপারটা কিন্তু থামলো না।  দিনের পর দিন চলতে লাগলো মা আর ফোন তোলে না।  বাবার মোটামুটি দুটো সময় বলয় আছে।  সকাল আর রাট ৯ টা সাড়ে নটা।  আমি এখনো ঘড়ি দেখতে শিখি নি।  দরকার বেশি পরে না।  আমার এখন অফিস যাওয়ার তাড়া নেই।  ঘরে বসে এন্টারটেইনমেন্ট সেল করি।  তাতেই মোটামুটি ভাতকাপড় জুটে যায়। তা , বাবা কিন্তু ঠিক ওই সময় দুটোতেই ঠিক পাঁচটা করে কল করে, আর মা একের পর এক পাঁচটা কল কেটে দেয়।  ক্রিং ক্রিং করে বাজার পর , তারপর একটা টুং করে শব্দ আসে।  মানে কিছু একটা মেসেজ আসে , মা দেখে ইগনোর মেরে মোবাইল টা পাশে শান্ত ভাবে রেখে আমার সাথে খেলতে থাকে।  কি ইনহিউম্যান রে বাবা।  এই ছোটোলোকমিটা আমার সাথে না করলেই নয়।  দে না , একটু দেখতে দে না।  সারাদিন তো মা তোর সাথেই থাকি।  বাবা কি আর আমাকে ছুঁতে পারে, বা আমি কি আর বাবা কে ছুঁতে পারি।  এই তো একটা মাধ্যম। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাই।  কিন্তু মেটে তো।  মাঝখান থেকে আমি কেন লসে রান করি বলতো। 

মাঝে মাঝে বাবাও দেখি ফোন করে না।  একদম চুপ।  তখন আবার অন্য রূপ মায়ের।  বার বার ফোন তুলে দেখতে থাকে সময় হলে।  কিন্তু না , বাবা ফোন করে না।  মনে হয় বাবারও আঁত আছে।  মাঝে মাঝে ঘা লেগে যায়।  তখন ব্যাকফায়ার করে।  কিন্তু সে যৎসামান্য।  কল বন্ধ হয় বটে কিন্তু টুং টাং মেসেজ চলতে থাকে।  তার মানে দুজনে বেশ কথা বলছে। ঝগড়াই নাহয় করছে , কিন্তু কম্যুনিকেট তো করছে।  আমার তো ব্ল্যাকবক্স সিচুয়েশন।  নিজেরা দিব্যি আছো আর আমাকে সাইড।  একি  ঠিক। আমি যখন বড় হবো , এখনো বড় , তবে যখন অনেক বড় হবো তখন শিশুস্বার্থরক্ষা  কমিটি বানাবো। এই মাইনর দের ভোট না দিতে দিয়ে আমাদের সত্যি ডিপ্রাইভড করে রেখেছে সবাই।

 শুধু ফোন বন্ধ করে রাখলে এক কথা।  একবার ঝগড়া হলেই হলো।  সব কিছু গন্ডোগোল করে ফেলে মা।  এতো রাগ।  কি মরতে পড়াশুনা করেছে কে জানে।  মায়ের মতো এম বিয়ে তো করছি না এটুকু শিওর।  ওখানে মনে হয় শুধু রাগ করতে শেখায়।  তাই তো ম্যানেজার হলেই রাজি হয়ে যায় সবাই।  আমি বাবার মতো কুল।  মাথায় দশ কেজির বরফ চাপানো।  যেই বাবার সাথে ঝগড়া হলো কিনা , মায়ের মানসিক প্রভাব পরে আমার খিচুড়ির ওপর।  খিচুড়ির স্বাদ থেকেই বোঝা যায় মা আজ খুশি না বোমা।  সেদিন খিচুড়িতে পুরো পাদের মতো গন্ধ বেরোচ্ছিল।  পরে জানলাম নুনের জায়গায় বিটনুন দিয়ে দিয়েছে।  এই রকম বিটকেল এক্সপেরিমেন্ট না করলেই নয়। তারপর খাবারে জলের এমাউন্ট ভুল ভাল করে ফেলে। ভুলেই যায় খিচুড়ি আর দুধ এক নয়।  মন তো তখন খ্যাঁক খ্যাঁক করার জন্য উঠে পরে লেগেছে।  শুধু বাবার ওপর নয়।  গুষ্টি শুদ্ধ পাড়া প্রতিবেশী , যাকে পায় তার ওপর রাগ ঝেড়ে দেয়।  আবার আজকাল মা দেখছি বেশ লেখালেখি করছে।  অনেক বড় বড় , আবার ইঞ্জিরি তে।  কিন্তু আমার মতো প্রপার পসিটিভ লেখা লিখতে পারে না।  রাগ হলেই খিস্তিগুলো লিখে পোস্ট করে দে ফেসবুকে।  আসলে পসিটিভ লেখা কঠিন।  গালি তো যে কেউ দিতে পারে।  তবে হ্যা রাগটা কাগজ কলম বা কিবোর্ডের ওপরই ঝড়ুক বাবা , আমায় খ্যান্ত দাও। 

তা কি আর হয়।  আমিও মায়ের কুড়াল দৃষ্টি থেকে ছাড়া পাইনা। যখন রেগে থাকে , তখন এক চুল এদিক থেকে ওদিক করেছি মায়ের দুটো  ক্যানাইন যেন ড্রাকুলার মতো বেরিয়ে আসে। একদিন লাইট ফেলে দিয়েছিলাম গায়ের ওপর। আমার লেগেছিলো বটে।  কিন্তু আমি কাঁদিনি, নিজের দোষ ঢাকার জন্য।  কিন্তু না , মা এতে খুশি হলো না।  চলে আসলো আমায় জ্ঞান দিতে।  আমিও তেড়ে ঝগড়া করলাম।  কিন্তু আমার ঝগড়াটা রেকর্ড হয়ে গেলো আর বাবার কাছে চলে গেলো।  আর মা হেঁসে ফেললো।  তবে কি আমায় এবার থেকে বাবা মার্ ঝগড়ার মাঝখানে ঢুকতে হবে ? আমি বিশেষ মা বাবার মাঝে বিশেষ ঢুকতে পছন্দ করিনা। টেক কন্ট্রোল অফ ইওর ওন লাইফ।  আমি তোমাদের বাবা মা করে দিয়েছি , দ্যাট ডসন্ট মিন কি আমি তোমাদের ঝগড়া থামিয়ে , মানুষ করে দেব। নাঃ , আমি এসবের মধ্যে নেই। 



বাবা আবার ঝগড়ার খুব ফরে।  বলে মা বাবার মধ্যে ঝগড়া না হলে নাকি আমি মানুষ হবো না ভালো করে।  কোন যে আহাম্মক এই কথাটা বাবাকে শিখিয়েছে কে জানে।  ও হ্যা , মনে পড়েছে।  দাদুই তো বলতো, বৌ প্রকৃতির মতো , যেমন আমরা প্রকৃতির মধ্যে বাঁচি , ঠিক তেমনি প্রকৃতির সাথে লড়াই করে বাঁচি।  প্লিস, আমি কোনো ক্যাটাগরিতে পড়িনা , ফার্স্ট আমার বৌ নেই , তাও আমি বাঁচছি।  আর আমি মোটেও লড়াই করে বাঁচবো না।  তাহলে পড়াশুনা করে কি হবে , যদি না ট্যাক্টিকালি হ্যান্ডেল করতে পারি। নো ফাইট , জাস্ট নেগোশিয়েশন।  আমি যেমন তোমাদের জ্বালায় ডাইপারে সাথে আপোষ করে নিয়েছি।  থাক, তোমাদের মাথায় ঢুকবে না।  কিন্তু ফারদার। বলছি  কন্ট্রোল ইওরসেল্ফ।  তোমাদের ঝগড়া তোমাদের মধ্যে রাখো , আর ফোকাস অন মি।  আমি কিন্তু ছাড়বো না , যদি আমার কিছু সমস্যা হয়ে।  এখন আমার পাইওনিয়ারের খাতার প্রথম কয়েক পাতাই লেখা হয়েছে।  ওখানে যদি এই ঝগড়া পার্মানেন্ট হয়ে যায় তখন কিন্তু তোমাদের কপালে দুঃখ আছে।  যা করো কর , আমায় ইনভল্ভ কোরো না।  এই বলে দিলাম।  


ডায়েরির আগের পাতা গুলো -----