Wednesday, March 29, 2017

আধ্যানের ডায়েরি - ডে-কেয়ার কড়চা

ডেকেয়ার ব্যাপারটা ইম্পরট্যান্ট মানছি। তা বলে মোটে ছমাসে আমাকে দিয়ে এলো ডেকেয়ারে। কেরিয়ার নিয়ে একটু বেশি আদিখ্যেতা নয় কি? কিন্তু আমি মায়ের ফরে।  আমার এই টেম্পোরারি ঘরকুনো এক্সিস্টেন্স কি লাইফলং চলবে নাকি।  তখন মা কোথায় চাকরি পাবে।  দুম করে চাকরি ছেড়ে আমার বাছা , আমার বাছা করে ল্যাপ্টালেপ্টি করবে আমার সাথে , আই ডোন্ট থিঙ্ক ইটস এ কারেক্ট আইডিয়া।  আমি প্রথমে বেশ রেগে গেছিলাম যেদিন দিদা চলে গেলো আর আমাকে ডেকেয়ারে দেওয়া নিয়ে মা উঠে পরে লাগলো।  বাবা তো গুড ফর নাথিং , পরে আছে বিদেশে।  কিন্তু  পরে ব্যাপারটা একদিন রাতে মাথার ওপর হাত রেখে অন্ধকার সিলিং এ জ্বলে ওঠা ফ্লরোসেন্ট চাঁদ তারা দেখতে দেখতে ভাবলাম। আমার এই একটু সাক্রিফাইসে মায়ের কত বড় লাভ হবে বলতো।  বাবা ওখান থেকে আমায় বলে বীরপুরুষ।  ওই 'মনে করো মা বিদেশ ঘুরে , মা কে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে , ' ওই দাড়িওয়ালা দাদুর কবিতার ক্যারেক্টর আর কি।  হাজার হোক বাবার বল ভরসা তো আমিই।  ওনলি মেল পারসন ইন দা হাউস।  আমিই যদি পিছু হতে যাই তাহলে কি হবে।  বেচারি মা টা সারাদিন একবার আমায় খাওয়াবে আর আমি হাগবো আর মা মুছবে।  বাবা আবার ছড়া কাটে , 'অনিরুদ্ধ বাগচী , কাপড় পরে হাগছি , কাপড় গেলো ধোপার বাড়ি, আবার হেগেছি।' নাঃ , মা আমার হেব্বি স্ট্রং।  বেত শক্ত হয়ে লাভ কি , যদি না পেটানো যায় কাউকে। 

সো , এলটন জনের স্যাক্রিফাইস।  আমি রেডি হয়ে গেলাম।  খুব একটা কনসেপ্ট ক্লিয়ার ছিল না ডেকেয়ারটা  ঠিক কি ? কিন্তু এটুকু বুঝতে পেরেছিলাম যে  এটা একপ্রকার স্কুল। তাই একটা গর্বিত ভাব ছিল।  বংশের সবথেকে কম বয়সে স্কুলে যাওয়ার রেকর্ড টা আমারি থাকবে।  একটু confused ছিলাম বটে।  যে ওখানে গিয়ে করবো টা কি ফাইনালি।  কিন্তু পৌঁছে দেখলাম কোনো চাপ নেই।  হোম লাইক , আউট অফ হোম।  আমার বাড়ি যে বিশাল বাড়ির মধ্যে সেরকম নয়।  বেশ সুন্দর ছোট খাটো বাড়ি।  আর আমাদের পাঁচ জনের জন্য একটা ঘর।

আমরা পাঁচ জন। জো, লুকাস, হারপার , জেসমিন আর আমি। সেই প্রথমদিনেই  আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে মেয়েরা বেশি প্যানপ্যান করে।  ঘরে ঢুকতেই দেখি পরিত্রাহি করে চিৎকার  করছে জেসমিন।  আমি ভাবতাম আমিই সেরা।  না , মেয়েদের সাথে চ্যাচাতে আমি পারবো না। কেঁদে  ফেলেছিলাম, আমিও। কিন্তু নেহাত লুকাস ছিল তাই।  আমাকে চেঁচিয়ে বলে দিলো।  বিহেভ লাইক এ ম্যান , টু বি এ ম্যান।  সেই শুরু আর সেই শেষ।  আর কাঁদিনি।

কেঁদেছি, কিন্তু বুঝতে দিইনি।  মনে মনে, কারণ বয়েস ডোন্ট ক্রাই।  মা যখন আমায় ছেড়ে চলে যেত।  কেমন যেন বুক থেকে কান্না ডুকরে গলায় চলে আসতো। সাথে মায়ের কাঁচুমাঁচু মুখ দেখে আরো কান্না পেতো।  মুখটা এমন করতো যেন পৃথিবীর সবথেকে বড় অপরাধ করছে।  মা আমায় ছেড়ে দিয়ে গাড়িতে বেশ কিছুক্ষন বসে বসে দূর থেকে আমায় দেখতো।  আমি বুঝতে পারতাম। অতো সোজা নয় , আমার চোখকে ফাঁকি দেওয়া। মা ভাবে আমার ভিশন অতো দূর পর্যন্ত যাবে না। মা ঘর থেকে বেরোনোর পর আমি দরজার দিকে তাকিয়ে থাকতাম , যদি মা ফেরে।  একদিন ফিরেওছিলো। সেদিন আমাকে বাড়ি থেকে খাইয়ে আনতে পারেনি।  মিটিং ছিল।  খিদে পেয়েছিলো কিন্তু মায়ের হাতে খেতে ইচ্ছা করছিল।  মনে মনে খুব বললাম আর দেখি কিছুক্ষনের মধ্যে ওই দরজা দিয়েই মা আবার ঢুকলো।  আমায় খাইয়ে দাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে কখন চলে গেলো জানিনা।  তার পর থেকে আমি আর দরজার দিকে বা গাড়ির দিকে তাকিয়ে বসে থাকি না।  মা বেরোলেই , যত কষ্টই হোক না কেন আমি চোখ ঘুরিয়ে বন্ধুদের দিকে করে নিই।  মাও ধীরে ধীরে দেখলাম অভ্যস্ত হয়ে গেছে।  বাবা , দেখলে , দিস ইস কল্ড রেসপনসিবিলিটি। 

উফ, সেনটু সেনটু।  মোস্ট আনরিলায়বল ইমোশন।  ব্যাথা খেয়ে বসে থাকার কোনো মানেই হয় না।  তাই আমি শুরু করলাম বাওয়ালি।  নিজের জায়গা নিজে বানানো দরকার। আমার আগে সিনিয়ররা আছে।  দল বাঁধলাম জো এর সাথে।  জো প্রথমে একটু ঘ্যাম নিয়েছিল বটে , ফর্সা চামড়া তো।  একটু নাকটা লম্বা।  আমার বিশেষ কিছু এসে যায় না। নানা ধরণের খেলনা আছে এখানে।  কোনোটা টানা , কোনোটা ঘোরানো, কোনোটা ছুঁড়ে ফেলা।  তবে সবথেকে মজাদার খেলা হলো , জেসমিন আর হার্পারকে ঘুম থেকে তোলা।  কি ঘুমোয় রে মেয়েগুলো।  জেসমিন আবার নাক  ডাকে।  যেই না নাক ডাকার আওয়াজ পাই আমি বা জো।  সোজা গিয়ে ওদের ক্রিব ধরে নাড়াতে থাকি।  আর চিৎকার করতে থাকি।  এই একটা সময় আমাদের।  পুরুষ জাতির হুঙ্কার।  কিন্তু কয়েকদিন পর কেসটা গন্ডগোল হয়ে গেলো।  রোজ চিৎকার করে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিই বটে , কিন্তু জেসমিন উঠে কাঁদে না।  আমার দিকে কেমন যেন তাকায়।  তাকিয়েই থাকে।  জল মাথার ওপর দিয়ে চলে গেলো যেদিন জেসমিন সোজা এসে আমার কাঁধ ধরে দাঁড়িয়ে পরে চুলে হাত বোলাতে লাগলো, আর লুকাস আমার দিকে রাগে কটমট করে তাকাতে লাগলো।  আমি কোনো রকমে জেসমিন কে ছাড়িয়ে লুকাসের দিকে হামা দিয়ে গেলাম বোঝাতে।  কিন্তু জেসমিন আমায় ছাড়লো না , পেছন পেছন এসে আবার চুলে হাত বোলাতে  লাগলো।  লুকাস আমার দিকে পেছন ফিরে বসে পড়লো। 

তিন দিন আমাদের মধ্যে কোনো কথা নেই।  আমি অনেক কিছু বলার চেষ্টা করলাম কিন্তু ও শুনলই না।  মেক্সিকান রক্ত তো।  ওদিকে জো এই পুরো ব্যাপারটার মজা নিচ্ছে আর আমায়  সাইড করে  দিব্বি হারপারের সাথে খেলছে।  আমি ক্যাবলা হয়ে শেষমেশ একদিন এসে ধপাস করে লুকাসের কোলে গিয়ে  বসলাম।  লুকাস অবাক।  সাথে আবার সেদিন ওর খুব সর্দি হয়েছে।  নাক দিয়ে পোঁটা ঝরছে।  আমি দেখলাম, না , ঘেন্না করলে হবে না।  একটা মেয়ের জন্য বন্ধুত্ব জলে দিতে পারিনা।  হাত বাড়িয়ে নাকটা মুছে দিলাম। জেসমিনা ওয়াক বলে পেছনে ফিরে খেলতে লাগলো।  আর লুকাস এসে জড়িয়ে ধরলো। একেই বলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা। 

আর না, আর মেয়েদের কাছে ঘেঁষিনি।  এরপর থেকে শুধু থ্রি মাস্কেটিয়ার্স।  আমরা সুখ দুঃখের গল্প করি।  মানে পরনিন্দা পরচর্চা।  কিন্তু ছেলেদের বেশি ইন্টারেস্ট অ্যাকশনে।  আর সেটা না করতে দিলে যে ফ্রাস্ট্রেশান তৈরী হয় তার ডিসকাশনই আমাদের মধ্যে বেশি হতো।  তিন জনের সম্বন্ধে কত কিছু জানলাম।  সে গল্প অন্যদিন।  তবে বাকি চারজনের সাথে আমার একটাই তফাৎ।  সবাই সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে ঢুকে পরে আর পাঁচটার পরে যায়।  আমার টাইম শর্ট।  আমি বাড়ি থেকে খেয়ে দেয়ে টিফিন প্যাক করে  আসি। টিফিনগুলো বেশ সুন্দর।  একটাতে ফল থাকে, একটাতে জল , একটাতে খিচুড়ি , একটাতে দুধ।  বাইরে ঠান্ডা তো তাই এক্সট্রা জ্যাকেট আর অনেক গুলো ডাইপার দিয়ে মা একটা বড়ো ঝোলা জেনেটের হাতে দিয়ে যায়।  ও হ্যা জেনেটের কথা তো বলাই হয়নি। 

জেনেট , ক্লারিসা আর এমি এই তিনটে আমার চাকর।  বেশি রুড হয়ে গেলো কি।  আচ্ছা ঠিক আছে ইনজিরি তে বলছি কেয়ারটেকার।  গু র থেকে পটি ভালো শোনায়।  যাহোক এই তিন বুড়ি আমাদের খেয়াল রাখে।  সময় সময় সব কিছু করে দেয়।  মা কে কপি করার চেষ্টা করে।  কিন্ত পারে না।  জেনেটের সাথে আমার বেশি জমে কারণ ওর এন্টারটেইনমেন্ট আমার হাসি , আমার টুথলেস ভুবনভোলানো হাসি।  আর আমার এন্টারটেইনমেন্ট জেনেটের বিচিত্র বানরসম অঙ্গভঙ্গি।  আমরা বেশ উইন উইন সিচুয়েশনে ছিলাম। বাঁধ সাধলো আমার শরীর। 

কি জানি কি হতো , প্রত্যেক শুক্রবার বিকেলে বাড়ি ফিরে , কি যে ঠান্ডা লাগতো।  মা বলতো চি চি করছে।  মুখ শুকিয়ে গেছে।  তারপর জ্বর আসতো।  শুক্র রাত্রি , শনি রাত্রি সারা রাত জ্বরে চি চি করে রবিবার চাঙ্গা।  ততদিনে মার বারোটা বেজে যেত রাত  জেগে জেগে।  ডাক্তার ওজন টোজোন করে বললো আন্ডারওয়েট। শুনেই প্রথমে বাবার মাংস কেটে আমাকে খাওয়ানো হলো।  তারপর মা এনালাইসিস করে বার করলো ব্যাপারটা অন্য।  আমি নাকি ডেকেয়ারে পর্যাপ্ত খাই না।  সে তো  সত্যি খাইনা।  ভালোই লাগে না।  মা যেভাবে খাওয়ায় টিভির সামনে বসে , ডিসনি ষ্টার ডার্লিং দেখতে দেখতে।  সেটা এখানে খুব অভাব ছিল।  আমি আমার মর্জির মালিক।  এই পৃথিবী ধন্য হয়ে গেছে আমি জন্মেছি বলে।  আমি কেন অন্যের  মতো চলবো। আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দুধ খাই, আনপ্রোডাক্টিভ কাজ ঘুমিয়েই করি । আমার নিজের টেবিল চেয়ার আছে। সাথে আবার মাঝে মাঝে বাবা বসে থাকে ফোনের ওপার থেকে।  মানে আমার খাওয়াটা হলো একটা আর্টিস্টিক কাল্টিভেশন উইথ অল টাইপ অফ কেয়স এন্ড কসমস।  খাবো ,বমি করবো , আবার খাবো।  আই ডু ইট অন মাই টার্মস। 

কিন্তু এইখানে ব্যাপারটা অন্য।  নিয়মানুবর্তিতা , যাকে বলে ডিসিপ্লিন। বাঁ হাতের কব্জি ঘুরিয়ে কি একটা দেখলো আর আমায় ধরে বসিয়ে মুখে ফল গুঁজে দিলো।  আবার দেখলো , জলের বোতল গুঁজে দিলো।  আবার দেখলো দুধ গুঁজে দিলো।  আমিও সেয়ানা।  খেলামি না। সারাদিন কত কাজ।  তার মধ্যে ওইরকম জোর করে খাওয়ানো কি পোষায়।  একাধারে ফোর্সিং আর ইন্সাল্ট।  আমি টোটাল রিভোল্ট মোডে চলে গেলাম। সারভাইভালের জন্য তো মা আছে।  বিকালে মা যেই আসতো, গাড়িতেই আমি বাকি এক সাথে সারাদিনের খাবার খেয়ে নিতাম।  কিন্তু হিতে বিপরীত হলো।  জেনেট ব্যাপারটা ঠিক ভাবে নিলো না।  শেষে মায়ের কাছে কমপ্লেন আসতে লাগলো।  একদিন তো ইন্ডিরেক্টলি বলেই দিলো নিয়ে চলে যেতে।  আমি পড়লাম মহা ফাঁপরে।  একে প্রত্যেক উইকেন্ডে অসুস্থ , সাথে চোখের সামনে বাবাকে চূড়ান্ত অপদস্ত করছে মা , সাথে মায়ের শরীর খারাপ হয়ে গেলো।  আমি রোজ জেনেট কে বোঝানোর চেষ্টা করতাম , আমাকে থাকতে দাও। অন্তত যে কাজ করতে এসেছি সেটা তো সমাধা করি।  কিন্তু দেখলাম সবাই একে একে বেঁকে বসলো। নিজের ক্যালাস ষ্টেপের জন্য আমি নিজেই নিজেকে ডিফেম করলাম।  ফার্স্ট স্টিং অফ রিয়ালিটি। 

হঠাৎ একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি মা হুটোপাটা করে আমায় তুলে ড্রেস পরিয়ে কার একটা বাড়িতে দিয়ে এলো , আমি ঘুমের ঘোরে বেশি পাত্তা দিলাম না।  কিন্তু সেখানেও দেখি কিছুক্ষন পরে আমাকে গাড়ি করে আমার ডেকেয়ারে দিয়ে এলো।  বাড়িতে যখন ফিরলাম তখন দেখি দাদু বসে আছে।  আমি বুঝতে পারলাম আমার ভবিতব্য।  এখন না আছে জেসমিন , না আছে জেনেট , না আছে জো লুকাস হারপার।  এখন আমি আর দাদু , দাদু আর আমি।  আর আছে একটা বাক্সের ওপর আমার মতো আরেকজনের ছবি।  রোজ কথা বলি এই ভেবে , যদি কোনোদিন হঠাৎ করে পাল্টা জবাব দেয় , আর আমরা সুখ দুঃখের গল্প করতে পারি।  .....         
  

Sunday, March 26, 2017

আধ্যানের ডায়েরি -- আমার অন্নপ্রাশন

অনেক দিন পরে প্রতীক্ষিত অন্নপ্রাশন সমাধা হলো।  বয়সটা একটু required এজ থেকে বেশি হয়ে গেছে কিন্তু একেবারে প্রায়শ্চিত্ত টাইপ হয়নি।  সবই একসেপটেবল রেঞ্জ এ আছে।  অনেক দিন ধরেই খুশুর পুশুর চলছে।  কবে হবে , কোথায় হবে , কি করে হবে।  ইত্যাদি ইত্যাদি।  আমি অপেক্ষা করে যাচ্ছিলাম।  কি যে ছাতার নিয়ম কানুন , আমার বিশেষ দেখে কাজ নেই।  আমার শুধু একটাই উদ্যেশ্য এন্টারটেইনমেন্ট ,   এন্টারটেইনমেন্ট এন্ড এন্টারটেইনমেন্ট।  সবাই মিলে বেশ আলাদা করে পাত্তা দেবে। গিফট টিফট পাবো।  নতুন জায়গা ঘোরা হবে।  আর কি চাই। 

আগের দিন রাতে গিয়ে মা একটা ঝোলা ভরে বেশ কিছু জিনিস কিনে নিয়ে এসেছিলো।  আমি অনেকক্ষন ধরে টার্গেট করেছিলাম।  উঁকি টুকি দিয়ে আঁচড়ে কামড়ে অনেক বার চেষ্টা করেছিলাম প্যান্ডোরার বাক্স খুলতে।  কিন্তু মা একেবারে seasoned সেন্ট্রি হয়ে গেছে।  আমি তো কোন ছাড়, মশা পর্যন্ত ঢুকতে দেয়নি ওই প্লাস্টিকটার মধ্যে।  সকাল বেলা যখন খুললো, আমার মুখ তেতো হয়ে গেলো।   এই জন্য আমি এতো পরিশ্রম করলাম? একটা থালা , পাঁচটা ফল , একটা ধূপকাঠি আর দুটো কাপড় সাদা আর লাল।  মুখ শুকিয়ে গেলো আমার।  শেষে লাল রঙের ন্যাপি পড়াবে নাকি।  প্রেস্টিজে পুরো গ্যামাক্সিন। 

কিন্তু না , থ্যাংক গড কোনোটাই আমার জন্য নয়।  আমার জন্য একটা সুন্দর প্যাক করা বাক্স দাদুর সুটকেস থেকে বেরোলো। ডালাটা খুলতে একটা ধুতি পাঞ্জাবি বেরিয়ে এলো।  কি সুন্দর।  কিছুদিন আগেই বলতে শুনেছি যে অন্নপ্রাশন, পৈতে আর বিয়ে নিয়মকানুন উনিশ বিশ।  তার মানে সাড়ে উনিশ অ্যাভারেজ করে বাবার বিয়ের সাজ আমাকে এবার পড়ানো হবে।  ঠিই -ক আছে , প্র্যাকটিস করে নিতে কি অসুবিধা। ধুতি পাঞ্জাবি।  ধুতিতে আবার নাকি হাওয়া খেলে।  সব ছেলেই ধুতি লুঙ্গিতে খুশি , কিন্তু আমাকে তো সেই ডাইপার বন্দি করে নিয়ে যাবে।  হা হতোস্মি।  কোথায় হাওয়া কোথায় কি।  যাই হোক লুকটা বেটার হবে।  হতভাগ্যের প্লেটে কদমাও রসগোল্লা।

ও ব্বাবা এতো সেই জড়ানো ধুতি না।  এতো প্যান্ট ধুতি, ইলাস্টিক দেওয়া ।  এই প্রত্যেক দিন
আন্ডারএস্টিমেট আর ভালো লাগে না।  পাঞ্জাবি টা বেশ সুন্দর।  আমি দাদুকে দেখেছি পাঞ্জাবির নিচে স্যান্ডো গেঞ্জি পরে।  সেমী ট্রান্সপারেন্ট পাঞ্জাবির ভেতর থেকে সাদা গেঞ্জি ভালোই লাগে।  আর আমার মাসল ও আছে।  তাই বেশ মাচো স্যান্ডো ইত্যাদি লাগবে।  কিন্তু সে ইচ্ছাতেও জল।  আমার একটা ওয়ানসি আছে সাদা রঙের।  সেটার ওপরেই দেখি ধপাস করে পরিয়ে দিলো।  নরমালি অতিরিক্ত পরিচ্ছদ আমার বিশেষ ভালো লাগে না। তাই উগ্র প্রতিবাদ জানাই।  কিন্তু "আজ কুছ হাটকে করতে হ্যায়" ভেবে শান্ত ভাবেই পরে নিলাম। ধুতিটা না পরালে আয়নার সামনে নিয়ে যাবে না।  তাই বুঝতে পারবো না কতটা হ্যানডু লাগছে।  চুপ করে পা টা ছড়িয়ে বসে থাকলাম। প্রসেসটা এক্সপেডাইট করানোর জন্য।  কিন্তু একি।  ধুতি তো হাঁটুর ওপর উঠে গেলো।  উফফ এইটুকু সেন্স নেই।  গ্রোথ ইস নট অলওয়েস গুড।  এসো সব এম বিয়ের দল।  দেখে যাও  আমার অবস্থা।  এইটা হলো তোমাদের ইউস কেস। আমার স্পেশাল দিনের ইউনিক এটায়ারের টোটাল ডিভাস্টেশন। কি হচ্ছে টা কি ? আমি বিরক্ত মা আর দাদুর ওপর।  মা বিরক্ত দাদুর ওপর।  দাদু কাঁচুমাচু।  কারণ নিজের ওপর বিরক্ত।  শেষে , ' কি করে বুঝবো এতোটা লম্বা ছেলে হবে ? '  হাও ফানি।  তাকধিরিঙে মেয়ে আর দশাসই জামাই মিলে কি মনোহর আইচ বানাবে ? দাদুর কেমিস্ট্রি অনার্সের কোয়েশ্চেন পেপারটা নিয়ে বেশ প্রশ্ন আছে। আয়নার সামনে দাঁড় করতে সেই প্রশ্ন পুরো সন্দেহে দাঁড়িয়ে গেলো।   

আমি ভেবেছিলাম , প্ল্যান বি ইউস হবে।  কিন্তু হলো না।  মা সেই বিরক্ত অবস্থাতেই বাবা কে ফোন করলো সেকেন্ড ওপিনিয়ন নিতে।  আর বাবা , যার কোনো দিন কোনো কাজ থাকে না সে ফোনই তুললো না কাজের ফিকির দেখিয়ে।  ব্যাস দো - দো - মা , একবার ওপরে ফাটল, একবার নিচে।  মানে দাদুর ওপর চেঁচিয়ে, আমায় কোলে তুলে নিলো।  আমার তখন কাঁচুমাচু অবস্থা।  ফার্স্ট কোনো একটা নেমড সেলিব্রেশন।  ইম্পরট্যান্ট রিচুয়াল।  সারাজীবন যার ছবি থাকবে। সেটাকে এই ভাবে নষ্ট করতে চলছে।  পেট থেকে কষ্ট প্রথমে বুকে মুচড়ে উঠলো।  ' মা তুমি আমার সাথে এমনি করতে পারলে ?' মুখ নিয়ে তাকাতে , পাত্তাই দিলো না।  ততক্ষনে বুক ছেড়ে দুঃখ আইগ্লান্ড এ ধাক্কা মেরে জল টল বার করে 'ভ্যা' বেরিয়ে এলো।  আর মা , ' যেমন বাপ্ তার তেমন ছেলে' বলে দাদুর হাতে ট্রান্সফার।  আমি থেমে গেলাম।  মায়ের দেওয়া ছোট কাপড় মাথায় তুলে না রে ভাই , ইমপোর্টেড ড্রেস যে আমার এক্সচেঞ্জ করার সাধ্য নাই। 

ইটস ওকে।  সব কিছু অপমান গিলে নিলাম যখন সুন্দর মন্দিরে গিয়ে হাজির হলাম। কি সুন্দর ঝকঝকে তকতকে মন্দির।  এ দেশের মন্দির অল ইন ওয়ান।  তাই বিশেষ সমস্যা নেহি।  সব কিছু এক জায়গায় হয়।  সত্যনারায়ণ ইন সেন্টারপ্লেস।  কারণ সব কিছুই তার মাধ্যমে শুরু হয়।  কিন্তু ও মা! একি!  এ তো কালো সত্যনারায়ণ।  সত্যনারায়ণ  তো জানতাম সাদা হয়।  কালী ছাড়া কাউকে তো কালো দেখিনি ? তবে এ কে? বাই দা ওয়ে , আমার অন্নপ্রাশন কিন্তু বাকিদের মতো এক গাদা লোক ডেকে প্যান্ডেল খাটিয়ে হচ্ছে না।  বাড়ির সবাই বিদেশে।  ইভেন বাবাও।  তাই আমার ভাগ্যে মন্দিরের অন্নপ্রাশন।  মা সমস্ত কিছু বাঙালি মতেই নিয়ে এসেছে।  কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যে বুঝতে পারলাম নর্থ ইন্ডিয়ান পুরোহিতের দ্বারা সাউথ ইন্ডিয়ান সত্যনারায়ণের সামনে আমার অন্নপ্রাশন সমাধা হবে।  হু কেয়ার , আনটিল এন্ড আনলেস ব্যাপারটা হিন্দু আর ইন্ডিয়ান।  ওই বর্মার হিন্দুদের মালয়েশিয়ান বীভৎস হিন্দুইজম ঠিক ডাইজেস্টেবলে হয় না আমার কাছে। 

আমাদের বাড়ি টা বেশ বড়।  অনেকটা জায়গা।  আমি সারা বাড়ি হামা দিয়ে বেড়াই, কিন্তু এই মন্দিরটা যেন বিশাল। মা আমাকে যেখানে যেখানে নিয়ে গেছে , মানে বড়ো বড় জায়গায়।  যেখানে অনেক কিছু পাওয়া যায় ব্র্যাকেটে মা কিছুই কিনে দেয় না।  সেখানে আমাকে একটা গাড়িতে চড়িয়ে  ঘুরিয়ে নিয়ে আসে।  তাও আবার কি , সেই গাড়িতেই সব জিনিস চাপিয়ে আমার মুভমেন্ট ন্যারো করে দেয়।  কিন্তু এটা গড়ের মাঠ , সাথে গাড়িও নেই , সাথে পরিষ্কার , সাথে চটিও পড়তে পারে না লোকে।  তাই টোটাল ফ্রিডম।  কত মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে আর কত  ভগবান বসে আছে।  আমায় কোল থেকে নামিয়ে দিতে আমি একে একে সবার সাথে কথা বলে আসলাম।  প্রথমে কাপল দের  রাধাকৃষ্ণ , শিব দূর্গা , রাম সীতা।  তারপর আয়াপ্পা , হনুমান , লক্ষণ , পেরুমন , মুরগ্গা সবাই কে হাই বলে আমি সবার সাথে কিছুক্ষন করে সময় কাটাছিলাম। শেষে নবগ্রহর সামনে এসে কনফিউসড হয়ে বসেছিলাম।  তখন সবাই হাও কিউট , হাউ কিউট বলে যা এম্বাররাসিং সিচুয়েশন তৈরী করলো আমি আবার মায়ের কাছে ব্যাক করলাম। 

এবার আসল পুজো শুরু।  ওই কালো সত্যনারায়নের সামনে বেশ কিছুটা জায়গা জুড়ে সব কিছু সাজিয়ে বসেছিল ওই নর্থ ইন্ডিয়ান পুরুতটা।  প্রচুর কিছু দুর্বোধ্য ভাষায় বলে চলেছে।  কিছুই বুঝতে পারছি না।  মাঝে মাঝে এটা দাও, ওটা করো,  মা আর দাদুকে কিছু না কিছু বলে চলেছে আর ওরাও অদ্ভত অদ্ভত অঙ্গভঙ্গি করে চলেছে। আমি একবার বোঝানোর চেষ্টা করলাম হাততালি দিতে হলে হাত দুটো দু দিকে ছড়িয়ে সোজা কন্টাক্ট করতে হয়।  আর কন্টাক্ট এর সাথে সাথে সরিয়ে নিলে তবে আওয়াজ হয়।  তা না করে।  দুটো হাত জুড়ে বসে আছে তো বসেই আছে।  আই ওয়াস ফিলিং পিটি ফর দেম।  মিস্টার সত্যনারায়ণ প্লিজ গিভ দেম সাম বুদ্ধি।  তা সেই পুরুতটা বকে চলেছে আর আমিও টার্গেট করেছি একটা মূর্তি কে।  বেশ কিউট,  আমার একটা শুঁড়ওয়ালা আপপু আছে।  ঠিক তার মতো মাথা আর আমার মতো ভুঁড়ি। আর আমার থেকে বেশ ছোটো।  আমার যে কি ইচ্ছা করছিলো না ওর সাথে খেলতে।  কিন্তু মা একেবারে সাপের মতো জড়িয়ে ধরে বসে আছে।  কিচ্ছু করার জো নেই। 

বেশ কিছুক্ষন পরে সব কিছু শেষ হলে পুরুতটা কিছু একটা ইশারা করলে মা দাদুকে বললো পায়েসটা খাওয়াতে।  পায়েস ঠিক কি জিনিস জানিনা।  তবে সব কিছুর শুরুই নাকি পায়েস দিয়ে।  দাদু আমায় কোলে নিয়ে বাটির ঢাকা খুলতে একটু স্বস্তি পেলাম।  দুধভাত টাইপ কিছু একটা।  কিন্তু কিরকম যেন একটা গন্ধ।  মন যদিও আমার তখনও ওই আপপুর দিকে।  দাদুর কাছেই আপপু।  একটা ঝাঁপালেই পাবো।  কিন্ত দাদু কি আর আমার মনোস্কামনা পূর্ণ করবে।  বাতি থেকে ততক্ষনে এক চামচ মুখের কাছে চলে এসেছে।  আমি মুখ খুলতেই চালান হয়ে গেলো।  এ মা , কি মিষ্টি রে বাবা।  আমি এখনো উত্তেজক খাওয়া পছন্দ করিনা।  এতো খুব মিষ্টি , সাথে আবার কি সব গন্ধ।  গা ঘুলিয়ে উঠে গা ঝাড়া দিতে গিয়ে দেখি দাদু বাঁধন আলগা করেছে।  আমি দিলাম এক লাফ।  ব্যাস , আমি আর আপপু।  দুজনে বেশ কিছুক্ষন কোলাকুলি করে তারপর মা আর দাদু মাইল দুজনকে ছাড়িয়ে নিলো। 

তার পর আর বেশিক্ষন থাকিনি।  সবাইকে বাই বলে আমরা ব্যাক করলাম।  আর আমি এখন লিখতে বসেছি আমার অভিজ্ঞতা।  যাইহোক, আজকের লেখার সাথে আমার অন্নপ্রাশনের ছবিও দিলাম।  তোমরা হাসতে পারো আমার খাটো ধুতি নিয়ে।  কিন্তু হ্যা ইনসাল্টিং ব্যাঁকা হাসি হাসলে আমি ছবি ডিলিট করে দেব।  জাস্ট একটু কসাস করে দিলাম।    














Monday, March 20, 2017

আধ্যানের ডায়েরি - আমি আমার মতো


আমি শুধু শুনে যাচ্ছি।  কোনো এক্সপ্রেশন না দিয়ে , Poker ফেস করে শুনে যাচ্ছি। যত দিন যাচ্ছে , বড় যত হচ্ছি তত ব্যাপারটা বেড়ে যাচ্ছে।  যে পারছে, যা পারছে, যেমন ভাবে পারছে আমাকে তাদের মতো বানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।  চেষ্টা কিছু করছে না।  শুধু মুখেন মারিতং জগৎ।  আমি নাকি তাদের মতো।  কানাকে কানা বলতে নেই খোঁড়াকে খোঁড়া বলতে নেই, তবু বলছি এই সমস্ত ম্যানুফ্যাকচারিং ডিফেক্টওয়ালা হ্যাংলা মূর্খ গুলো আমাকে যখন তাদের মতো বলে তখন মনে হয় এক দিই কানের গোড়ায়।  নেহাত এখন দিলে ওদের সুড়সুড়ি লাগবে , আর আহা বলে "সুড়সুড়িও যেন দিদির মতো দেয়। " বলে আমার মাথা গরম করবে তাই দিচ্ছি না। 

সবথেকে এগিয়ে আছে বাবা আর মা। যবে থেকে পৃথিবী ভেজাচ্ছি তবে থেকে একবার ' আধ্যান ঠিক আমার মতো ' বলে বলে আমার এফোর্ট গুলো সব মাঠে মেরে দিচ্ছে।  বাবা তো সেই দু মাস পর থেকে বেপাত্তা।  ফোনে ডায়লগ , 'খাঁচাটা কিন্তু আমার মতো পুরো।' হাইলি পলিটিকাল কমেন্ট।  মানে যে জন্তুই ভেতরে থাকুক না কেন, সার্কাস কিন্তু 'ফেমাস' . মাও রায়বাঘিনী , 'উঃ রংটা দেখেছো। তোমার ওই কালো সোনা , এ সোনায় খাদ মেশেনা ডায়লগ ছাড়ো। আমার ছেলে আমার মতো।' রঙে কি এসে যায়।  চূড়ান্ত রেসিস্ট কমেন্ট।  বাবা আবার সেক্সিস্ট উত্তর , ' ছেলেদের রং আবার কি?' অথচ মাঝে মাঝেই বলে ওঠে , 'রোদে দিয়ে দিয়ে কালো করে ফেলেছ।' দুজনেই হিপোক্রিট।  বাবা তো আইফোনের ওপর থেকে দেখে তাই সব কিছুই আননেসেসারি কিউট লাগে।  কোথা থেকে আবার মাঝে মাঝে নিজের ছোটবেলাকার ছবি তুলে এনে কম্পেয়ার করে।  পাশাপাশি রেখে আবার বিচার। বাবা মা দুজনারই হাতির মতো গড়ন আর হাতির মতো চোখ।  ভুরু ওঠেনি যবে থেকে তবে থেকে শুরু করেছে 'চোখ দুটো আমাদের মতো'। কয়েকদিন আগে শুনলাম বিশাল চিন্তিত , ' আমাদের থেকে চোখ গুলো এটলিস্ট বড়ো হবে' . আরে গাধা গুলো গরুর মতো চোখ বড় করে কি হবে। গড়ন ও মোটেও তোমাদের মতো আমি করতে দেবো না।

কয়েকদিন আগে আবার বিশাল ঝগড়া চলছিল।  উত্তাল।  এ ওকে শব্দের বোমা ছুঁড়ছে , তো ওদিক থেকে পেটো।  মাঝে একটা কথা কানে এলো , 'সেই জন্যই আধ্যান কে মাঝে মাঝে সম্বিতের মতো লাগে।' সম্বিৎ আমার পাড়ার কাকু।  মায়ের সাথে কাজ করে , বেঁটে , মোটা কালো।  একদম পারফেক্ট কদাকার। মায়ের ওপর রাগ ঝাড়তে শেষে এই কমেন্ট।  জাস্ট ডিসগাস্টিং।

শুধু ইন্ডিভিজুয়াল আইডেন্টিটি নয়, বসে বসে দুজনে প্যাটার্ন ম্যাচিং করে।  সাথে আবার আমার সো কল্ড গ্রেটার ফ্যামিলি 'এতে গন্ধে পুষ্পে ' করে।  'আমাদের বাড়ির মতো ' . বাবার দিক থেকে , 'মাথা ভরা ঘন চুল , ঠিক আমাদের বাড়ির মতো। ' আমার বাবার দিকে সব পেটমোটা আর মায়ের দিকে সব খ্যাংরাকাঠি।  কিন্তু সবার মাথায় তারকাঠির মতো কালো চুল।  শুধু দাদুর মাথায় বিশাল টাক,  সাথে সিল্কি চুল।  ব্যাস আমি মায়ের বাড়ির মতো।  আমার মাথা ভরা সিল্কি কালো চুল।  দাদুর দাদার ঘন কালো চুল।  পুরো টাগ অফ ওয়ার।  কয়েকদিন চলার পর দু বাড়ি ছেড়ে দিলো। মা আবার কয়েকদিন পর খুঁচিয়ে শুরু করলো।  না না না না না।  এতো আমার বাড়ির মতো।  আঙ্গুল গুলো লম্বা লম্বা।  বাবাও বললো না না না না এতো আমার বাড়ির মতো মাথাটা কত বড় দেখেছো , অর্ডার দিয়ে হেলমেট বানাতে হবে। 

শুধু ফিজিক্যাল এপেয়ারেন্স নয় আমার প্রতি অঙ্গসঞ্চালন কারোর নামে লাগিয়ে দেয়।  বসে বসে বিশ্লেষণ করছি সিংহের ল্যাজটা ভাঙবো না সিংহটা টিভির দিকে ছুঁড়ে মেরে টিভি ভাঙবো।  কমেন্টস এল , ' দেখেছো দাদুর মতো গম্ভীর ' . ঘুম থেকে উঠে আমার এলাকা দেখে নিচ্ছি ঘুরে ঘুরে আর মা সমানে চেষ্টা করে যাচ্ছে এক জায়গায় বসে খাওয়ানোর , বলে উঠলো , ' মাসির মতো ছটফটে' . মাও চেষ্টা করছে গান গেয়ে ঘুম পাড়ানোর আমিও সুর সাধছি , বাবা বলে উঠলো , ' কাকা জ্যাঠার মতো গলা ' . পরে গিয়ে চিৎকার করছি বাবার আওয়াজ  , ' চ্যাঁচায় পুরো মায়ের মতো ' কোনো কমপ্লেক্স কাজে ভুল করছি , মানে ধরো বন্ধ দরজা খোলার চেষ্টা, মার সুযোগ , 'পুরো বাবার মতো গাধা।'  ডিম কলা মিক্সিতে পেস্ট করে অখ্যাদ্য গোবর বানিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা চলছে , প্রচন্ড প্রতিবাদ করছি , ' কাকার মতো খাওয়াতে এলার্জি ' বাবা ওদিক থেকে হাততালি দিচ্ছে , কয়েকদিন কপি করে আমি বোর হয়ে গেলাম বাবা হলো না।  বলে বসলো , ' পিসির মতো মুডি ' . আর পারছি না। কোনদিন হয়তো  বলে বসবে , ' কাকুর মতো হাগছি আর জেঠুর মতো মুতছি।'  কোনো ভরসা নেই এই আহাম্মকদের। কারণ কয়েকদিন আগেই বলেছে , 'মামার মতো বমি করি ' উফফ. আর পারিনা এদের নিয়ে। 


আসলে কিছু না।  বিরিয়ানি ভালো হলে সবাই বলে আমি তেল এনেছি , আমি জায়ফল দিয়েছি , আমি ভাত সেদ্ধ করেছি , আমি মাংস মেরিনেট করেছি , কেউ কেউ গ্যাস জ্বালানোর বাহবাও নেয়।  আমি এখন টল , ফেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম , উইথ ভুবনভোলানো হাসি।  যে চায় তাকে প্রসাদ দিয়ে দি।  তাই লাইন দিতে হবে। দখল নিলে চলবে না।  আমি মুক্ত এক মুক্তো।  গলায় পরে সুন্দর হতে পারো , বানাতে পারবে না।  এই রে , এই কমেন্টে আবার বাবা মা বার খেয়ে বসো না।  মানছি তোমরা প্রচুর এফোর্ট দিয়েছো।  কিন্তু সরি।  আমি আমার মতো।  একটু প্রাক্টিক্যালি চিন্তা করো।  অনেক তো বড়ো হয়েছো।  একটু বুঝমানও হও।  চিনি তোমাদের , জল তোমাদের , লেবু তোমাদের , গ্লাস তোমাদের , এমন কি চামচটা পর্যন্ত তোমাদের কিন্তু যা পরিবেশন হচ্ছে সেটার নাম শরবৎ।  তাই বেশি বার খেয়ো না।  ভালো বানিয়েছো বলে নাম কিনতে পারো।  কিন্তু শরবত চিনির মতো হয় না , বা জলের মতো হয় না। আমি আমার মতো।  সেরা এবং বেস্ট।          

Thursday, March 2, 2017

....প্রেম পাবে। ...

প্রেমের লেখা লেখো না আর ? না।  কেন ? আসে না।  কেন আঘাত পেয়েছো।  প্রেমে তো আঘাত থাকেই।  তাহলে ? জানিনা।  সুন্দর দেখলে সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে ইচ্ছা করে না।  করে।  কিন্তু ছুঁতে ইচ্ছা করে না।  কেন ? ছুঁলেই তো লালন করতে হয়।  যা সুন্দর তাকে সঙ্গে নিয়ে চললে ভালো তো লাগবেই।  তাকে লালন করতে বাধা কিসের। শিশুকে লালন করতে করতে একদিন তো সে প্রশ্ন করে।  তোমার কাছে কি কোনো উত্তর নেই ? আছে তো।  কিন্তু সে উত্তর তো গ্রাহ্য হয় না।  গ্রাহ্য না হলে কি সেটা উত্তর নয়? উত্তর বটে , কিন্তু গ্রাহ্য নয়।  অগ্রাহ্য উত্তর তো অসংলগ্ন দেয়ালের মতো উদ্বায়ী।  তাহলে তুমি চাও তোমার প্রেম তোমাকে গ্রাহ্য করুক।  অবশ্যই , অগ্রাহ্যে উপেক্ষা আসে।  আর উপেক্ষায় দূরত্ব। তাই প্রেম নিতান্তই ভঙ্গুর।  কাঁচ ও তো ভঙ্গুর তবু বেলোয়ারী।  তাইতো সৌন্দর্য্য আছে চিরন্তনতা নেই।  তাই প্রেম পায় না আজকাল।  আগে তার মানে পেতো ? অবশ্যই।  তাহলে চিরন্তনতার অভিলাষ বয়সের সাথে কি বৃদ্ধি পেয়েছে? বলতে পারো।  সামনে সামনে তখন অনেক কিছু ছিল , তাই ক্ষণভঙ্গুর আশা উচ্চাশার সাথে পরিবর্তন প্রত্যাশিত এবং অভিনন্দিত ছিল।  আর এখন ? এখন সামনে যেমন আছে , পেছনে ঠিক তেমনি ফেলে এসেছি।  তাই গায়ের দগদগে ঘা নিয়ে আর ইচ্ছা করে না প্রেমের ধুপ জ্বালাতে। ভয় হয় ? নতুন প্রেমের  গন্ধ ছড়াতে নিজেই জ্বলতে হবে বলে ? হয় তো।  সাথে পুরোনো প্রেমের নস্টালজিয়ার ধোঁয়া আজ কালো।  তারমানে তুমি এসকেপিস্ট।  বলতে পারো।  জ্বলে দগ্ধ  হয়ে শেষ হয়ে যাওয়ার থেকে , পালিয়ে বাঁচলে ক্ষতি কি ? এতো নিজেকে অবজ্ঞা করা।  প্রতিদিন মৃত্যু।  এই কি তুমি চাও? না চাইনা।  কিন্তু  প্রয়োজনে করতে হয়।  আর মনের যে প্রয়োজন? মন সর্বদা পারিপার্শ্বিকের দখলে।  তার মানে তুমি চাও পুরোনো প্রেম নতুন করে তোমার কাছে প্রেম চাইতে আসুক। প্রেম পুরোনো বা নতুন হয় না।  পরিবর্তিত হয়।  যে প্রেম লেখা হয় , তাতে উদ্দামতার মদ থাকে।  ধীরে ধীরে সেই এলকোহল উবে যায়।  পরে থাকে ক্বাথ , প্রয়োজনীয় ক্বাথ।  আমি চাই সেই ক্বাথে আবার সেই নেশা জেগে উঠুক।  আর জাগাবে কে ? তুমি তো চাও সেই ক্বাথ নিজেই নিজেকে আবিষ্কার করুক।  ঠিক তাই।  তাহলে তো  ভাগ্যের হাতে নিজেকে ছেড়ে  দিয়েছো।  হয়তো দিয়েছি।  সেতো পুরুষোচিত নয়।  পুরুষও হার মানে।  না , হারলে শেষ হয়ে যায়।  আমি তাহলে নপুংসক।  ঠিক ধরেছো।  আমি নিজেতেই খুশি।  আমার কাছে সব আছে।  আমি আমায় প্রেম করি।  তাই প্রেম আসে না।  আসে আত্মকেন্দ্রিক উদ্দাম আনন্দ।  নিজেকে ভালোবাসার আনন্দ।  সেই প্রেম তো লিখি।  তাহলে প্রেম মরেনি ? মরেছে প্রেমিকা।  যেদিন নতুন বা নতুন মোড়কে পুরানো এসে তোমার আত্মকে সিংহাসনচ্যুত করবে সেদিন তুমি আবার প্রেমিক হবে।  না , আমি এখনো প্রেমিক শুধু তথাকথিত নই।  সে আসবে নুতন বা পুরাতন হয়ে, শুধু আমার সৃষ্টির সফলতার উচ্চপ্রশংসা নিয়ে।  আমি আমার থেকে তার আমি হবো। তখনিই আবার লেখনীতে ফুটে উঠবে ছন্দ , গন্ধ , গীতি।