Wednesday, October 12, 2016

শুভ বিজয়া


সব্বাই কে জানাই শুভ বিজয়ার প্রণাম। আপাতত কেউ আশীর্বাদ নেওয়ার মতো নেই।  তাই শুধু প্রণাম। পুজোটা কেটে গেলো। আগের বছর পেটের ভেতর থেকে দেখেছিলাম এবার বাইরে থেকে। বাইরে থেকে ব্যাপারটা বেশ মজাদার। সবাই দাঁড়িয়ে আছে আর আমি মায়ের কোলে। আচ্ছা একটু বিস্তারিত বলি।  আমি এবার পুজোর আগেই পুজো দেখতে গেছিলাম। হে হে বুঝলে না তো।  আরে আমার এখানে এক সপ্তাহ আগেই পূজা হয়ে গেছে।  টোটাল অকাল বোধন। আমি আগের বার পুজো দেখিনি শুনেছিলাম। বিশাল চিৎকার চ্যাঁচামেচি ছিল বাইরে।  তাই এবার একটু ভয়ে ভয়ে গিয়ে হাজির হয়েছিলাম।  গিয়ে দেখি অনেক বাবা মা।  নানা রকম দেখতে।  দরজা খুলে একটা অন্ধকার বিশাল বড় ঘরে মা আমাকে কোলে নিয়ে ঢুকে গেলো। প্রথমে চোখে অন্ধকার দেখলাম।  কিন্তু দূরে দেখলাম যে এক জায়গায় অনেক আলো।  সেখানে দাঁড়িয়ে আছে পাঁচটা বড় বড় বাবা মা।  আর তার সামনে ছোটো ছোটো বাবা মা হামাগুড়ি দিচ্ছে।  কেউ কেউ আবার দাঁড়াচ্ছে আবার হামাগুড়ি দিচ্ছে।  কিন্তু বড়রা না নড়ছে না চড়ছে।  আরো কাছে গিয়ে আরো ঘাবড়ে গেলাম।  একি রে বাবা।  সবার থেকে যে বড়ো মা আছে তার আবার অনেক হাত। আমি একবার মায়ের দিকে দেখছি আর একবার বড় মায়ের দিকে।  পাশে ওটা কি এতো আমার আপ্পুর মতো।  এতো বড় আপ্পু। সবাই নানা কিছু হাতে নিয়ে আছে।  কিন্তু বড় মায়ের অত গুলো হাত নিয়ে কি করছে।  ওমা মাও দেখি ধপাস করে উল্টে পড়ে হামা দিতে আরম্ভ করলো।  আমার আর ভালো লাগছিলো না।  ঘুরতে এসেছি তো।  এখানেও আমাকে শেখাতে হবে কি করে হামা দিতে হয়।  না হয় আমি একটু লেট্ হামা দেওয়ার জন্য।  কিন্তু এরকম ইন্সাল্ট। মুখ ঘুরিয়ে অন্যদেড় দেখতে লাগলাম।  আরেকজন দেখি আমায় ভেঙ্গিয়ে আমি যেরকম নাক ঘষি দু হাত দিয়ে ঠিক আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে দু হাত জোর করে নাক ঘষছে।  তারপর তো আর পারা গেলো না।  সবাই দেখি নাক ঘষে সাথে মাও।  কিছুক্ষন দেখে টেখে বুঝতে পারলাম ওই বড় মা হলো ঠাকুর, দুগ্গাঠাকুর। কিন্তু প্রশ্ন হলো।  আমার মা দাঁড়িয়ে থাকে কিন্তু আমি মায়ের কোলে। তাহলে বাকিরা তো কোলে উঠছে না।  ওরাও তো ছেলে মেয়ে।  আমার মায়ের মতো ভালো নয় মনে হয়।  হঠাৎ কানের কাছে কে প্যাঁ করে উঠলে।  ভেবড়ে গিয়ে দেখি একটা সাদা কিছু জিনিসে মুখ লাগিয়ে কিছু একটা করছে।  আবার সেই প্যাঁ।  আমার বেশ ভয়  লাগলো।  আমি জড়ো সড়ো হয়ে মায়ের কোলের ভেতর ঢুকে পড়লাম।  তারপর শুরু হলো একটা কি অদ্ভুত শব্দ সবাই মিলে গলা ফাটিয়ে ভূতের মতো শব্দ করতে লাগলো। মা যখন আরম্ভ করল আরো ভয় পেয়ে কেঁদে দিলাম।  এতদিন আমার কান্নায় সারা পৃথিবী কেঁপে উঠতো।  এবার দেখলাম সবাই তার প্রতিশোধ নিলো।    করে কি বিকট চিৎকার।  আমি এতো কাঁদতে লাগলাম শেষে মা আমাকে নিয়ে বেরিয়ে এলো।  থাক বাবা আর যাচ্ছি না।  বাইরে দাঁড়িয়ে কেঁদে কেটে যখন একসার হচ্ছি তখন ভেতর থেকে আগুন নিয়ে বেরিয়ে এলো একজন।  মা এখানেই রান্না করতে আরম্ভ করবে নাকি।  আমি এখন খাবো না।  নাকি পোড়াতে আসছে।  আমার মুখ পুড়িয়ে দেবে। মা আবার সেই আগুন লক্ষ্য করে ছুটে গেলো।  দেখি আগুন ধরবে বলে হাত বাড়াচ্ছে। কত করে চেঁচিয়ে মা কে বোঝানোর চেষ্টা করলাম হাত পুড়ে যাবে।  কিন্তু কে কার কথা শোনে।  তবে শেষ রক্ষা হলো।  মায়ের মতি ফিরলো।  আগুনের ওপর দিয়ে হাত বুলিয়ে সেই হাত আমার মাথায় রাখলো।  আআঃ কি আরাম।  বেশ নরম নরম গরম গরম।  বেশ ভালো।  কিন্তু ততক্ষনে আমার চিৎকারে মায়ের প্রাণ ওষ্ঠাগত।  তাই শেষ মেশ আবার আমাকে ভেঙ্গিয়ে দুই হাত জোর করে মা আমাকে নিয়ে চলে এলো।  গাড়িতে এসে যখন হাঁফ ছাড়লাম তখন বুঝতে পারলাম এই পুরো ঘটনাকে পুজো বলে।  আর পুজো শেষে সবাই কে হাত জোর করে শুভ বিজয়া বলতে হয়।  বড়দের সামনে হামাগুড়ি দিতে হয়।  সে না হয় পরের বছর দেব।  এবারের মতো হাত জোর করে প্রণাম। 








Friday, October 7, 2016

ভ্যাঙাচ্ছে।

ভ্যাঙাচ্ছে।
ভ্যাঙাচ্ছে। আমায়  ভ্যাঙাচ্ছে। কি সাহস। একে তো আমার ভাষা বুঝতে পারছেনা। তাই বলতেও পারছে না।  কিন্ত তা বলে আমার শব্দ গুলো আরো বিকৃত করে বলবে। কেমন ধারা আদর।  চরম ইন্সাল্ট। আমি চিৎকার করে বলে উঠলাম, "চোপরাও তুমি ইল্লিয়েট" বেশি মজা পেয়ে গেলো। আমার থেকেও তারস্বরে চিৎকার করে কি যে বললো , সে ওর বাবাই জানে। শেমলেস ইল্লিটারেট পিগ। 

কিছু কিছু লোক দেখছি আমার সাথে দেখা করতে এলেই এই ধরণের ভুল ভাল ব্যবহার করতে থাকে। জানি তোমাদের ইনকম্পেটেন্সি আছে আমার মতো অনর্গল আমার ভাষায় কথা বলার। কিন্তু তাহলে চুপ থাকো না।  যখন তোমরা বিদেশ যাও।  আগে কি কর চুপই তো থাকো। তারপর না হয় কুতিয়ে পাতিয়ে ভেঙে চুরে দুমড়ে মুচড়ে কিছু কথা বার কর যার পরিবর্তে ওরাই বলে , "নমস্তে" আমিও দুদিন বাদে শিখে নেবো বাবা , মা, কাকু, ধনেপাতা, চচ্চড়ি , কুজঝটিকা ইত্যাদি।  ততদিন বাবা চুপি থাকো। আমি সব সহ্য করতে পারি , ভ্যাঙানো নয়.

আরে ভাষা ছাড়ো।  ইদানিং তো দেখছি আবার আমার অঙ্গভঙ্গি নকল করছে। এই কয়েকদিন আগে পর্যন্ত হাতের তালুর কনসেপ্ট ঠিক ক্লিয়ার হয়নি।  তাই হাতের পেছন দিয়েই নাক ঘসতাম আড়মোড়া ভাঙার সময়।  এখন তো দেখছি দুনিয়ার সব লোক হাতের পেছন দিয়ে নাক ঘষে আমায় দেখাচ্ছে। কি জ্বালা।  আমি ঠিক শিখে শিখে এগোচ্ছি সামনের দিকে।  আর পেছনের সব ভুলে জাচ্ছি , আর এই হতচ্ছাড়াগুলো পেছনের জিনিস দেখিয়ে আমায় নস্টালজিক করে তুলছে।

সে থাক কিন্তু আমার অসহায়তাকেও ভ্যাঙাবে ? কিরকম শিক্ষা।  এতে আবার আমার নিজের বাপ্ সবথেকে এগিয়ে।  আমি যেমন মায়ের কোলে সটান উঠে দাঁড়িয়ে টলমল করতে থাকি। বাবা ওই হোঁৎকা চেহারা নিয়ে তাই করতে থাকে। শুধু ঠাম্মার কোলটা পায়না।  ভাগ্যিস পায়না। এবার বলতেই হবে , "ড্যাডি বিহেভ।"

মা এসবে ছিলনা এতদিন।  হঠাৎ কি জানি কি হলো।  সেদিন খুব ফুর্তিতে ছিল।  আমি যা বলছি তার উত্তরে আমায় ভ্যাঙাচ্ছে। বললাম , পটি করেছি। বললো , "উউউ আয়া।" বললাম , "সাফ করে দাও।" বললো , "য়ক বক যাক।" বললাম , "মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার, এবার তো ঠিক করে কথা বলো , একমাত্র তুমিই তো আমার কথা বোঝো। তুমি যদি না ঠিক করে কথা বলো তাহলে আমি যাই কোথা।" এতগুলো কথা বলার পর মা যা সাংঘাতিক সব শব্দ করলো ভয়ঙ্কর মুখভঙ্গি করে আমি রীতিমতো ঘাবড়ে গিয়ে হাল ছেড়ে গুটিয়ে কেন্নো হয়ে গেলাম। 

হে ভগবান।  কবে এই সব সো কল্ড শিক্ষিতদের এই শিক্ষা হবে , যে খোঁড়া কে খোঁড়া বলতে নেই কালকে কালা বলতে নেই , আর আমার মতো ফুটফুটে দেবশিশুদের  (ইয়েস আই আম। .. কলার উঁচিয়ে) ভ্যাঙাতে নেই।  প্লিস হেল্প।