আমি না, চুপ করে
থাকতে পারিনা। কিরকম
যেন দম আটকে আসে। কিন্ত
লোকে আমায় বলে চুপচাপ। আমার
নাকি শব্দ শোনা যায়
না।
আমি নাকি সাত চড়েও
'রা' কাড়িনা। কবে
যে কে আমায় সাত
খানা চড় মেরে দেখেছে
জানিনা। মারলে
আমিও দেখিয়ে দিতাম , তখন
'রা' কাড়তাম না, 'রামদা'
বসিয়ে দিতাম। অনেকে
আমাকে লক্ষী ছেলে বলে।
লক্ষী যে কবে থেকে
ছেলে হলো জানিনা।
আর ছেলেরা চুপ থাকলে
লক্ষী হয় কেন। তার
মানে কি ছেলেরা চুপ
থাকলে মেয়ে হয় যায়?
আচ্ছা লক্ষীর আওয়াজ কে
শুনেছে? লক্ষীকে তো সারাজীবন বসে
থাকতে দেখলাম হাতে কি
একটা নিয়ে, আশির্বাদ করতে। হ্যা
এ কথা ঠিক যে
লক্ষী কোনো কথা বলে
না।
ছবি হয়ে ছবির মাঝে
বসে থাকে। তাই
হয়ত আমাকে সবাই বলে
লক্ষী ছেলে। কি
ভাবছেন। ভনিতা
করে আমার মুক হওয়ার
দুখের কাহিনী শোনাচ্ছি। না
না।
আমি বিন্দাস বকতে পারি।
আমার জিভ যেমন পোলাও
মাংসর স্বাদ নিতে পারে
, তেমন্ই আখ্যানমঞ্জরীর স্বাদ দিতে পারে। শুদ্ধ
বাংলায় যাকে বলে মাই
বোবা নই।
আমি বোবা নই, আমি
চুপচাপ নই, আমি শান্ত
নই , আমি লক্ষী নই
, অথচ লোকে আমায় এইসব
বলে।
লোক কি পাগল।
হমমম , কথাটা কি খুব
মন্দ শোনালো। না,
কথাটা সত্য এবং খাঁটি। লোক
মাত্রই পাগল। রাম,
শ্যাম , যদু , মধু কিন্ত
পাগল নয়। তারা সুস্থমস্তিস্কের; কিন্ত
যারা লোক , তারা পাগল। তারা
সবাই পাগল। তারা
শুনতে চায় না। তারা
শুধু বলতে চায়। অনর্গল,
অবিরত - ঠিক যেমন বৃষ্টির
ধারা।
এই লোকগুলোর মধ্যে যাদের শুধু
নাম না , পরিচয়ও জানি,
তাদের কথা শুনতে ভালো
লাগে। ভাবতে
ভালো লাগে। কিছু পাগল আছে
না।
যারা অনেক কিছু সৃষ্টি
করতে পারে, যে সৃষ্টি
, সৃষ্টির সময় জন গ্রাহ্য
হয় না। বাকি পাগলগুলো এদের
পাগল বলে। সেই পাগলের পাগলামির
ফসল নিয়ে পরে বাকি
পাগল গুলো পাগলামি করে।
সেই লোক আমার ভালো
লাগে। এই
লোকের কথা আমি শুনি
, বুঝি আর তাদের সাথে
কথা বলার চেষ্টা করি।
এই
লোকগুলো খুব বিরল।
তাই আমি চুপচাপ।
আমি মা জাতীয় , মাসিমা
, কাকিমা দের সাথে ঘন্টার
পর ঘন্টা পরনিন্দা আর
অনধিকার চর্চা করতে পারিনা। আমি
সেই কথাগুলো বলতে পারিনা যাতে
ক্ষণেকের উত্তেজনা আর হঠাত নিদাঘ
সাথে কালবৈশাখী শুরু হয়।
সেই সমস্যার আলোচনায় পাড়ার রকে ফেমাস
হতে পারিনা যার কোনো
শেষ নেই। আজ খবরের কাগজে
যা পড়লাম কালকে তা
নিয়ে bondhu বিচ্ছেদ করার পরের দিন
যখন ভুল খবরের জন্য
ক্ষমা চেয়ে লেখা বেরোলো তখন অনেক কিছু হারিয়ে
গেছে দুই বন্ধুর মাঝে। সেই খেলো কারণে পার্সোনাল জিনিস নিয়ে ল্যাং মারামারি আমি করিনা। তাই আমি ফেমাস নই। আমি বলছি না তর্ক বোকারা করে। কারন তর্ক
নামে এক শাস্ত্র আছে। আর শাস্ত্র তারাই লেখে বা পরে যারা
উচ্চকোটির ব্যাক্তিত্ব। আমার দ্বারাই হয়না।
আমার ভালো লাগে দেখতে। নানা কিছু দেখতে। যা ঘটছে তার পেছনের ব্যাকড্রপে কি কি ঘটছে সেই সব আন্দাজ করছে। চোখ কে অবজ্ঞা করে মনের বিশ্লেষণ করে, এক এক করে রহস্য উদ্ঘাতন করতে। না না ডিটেকটিভ নভেলের পোকা নই। হা কিছু পরেছি বটে। কিন্তু তার কোনও রেশ আমার ইচ্ছায় নেই। আমার ভালো লাগে সাধারন জীবন দেখতে। কে কি করছে। কে কি করতে চাইছে। আর কে কি করতে পারছে না। হলে গিয়ে চলচিত্র দেখার থেকে রাস্তার মোড়ে দাড়িয়ে থেকে চলমান জীবন দেখা আমার কাছে দর্শনীয়। তা বলে কি সিনেমা দেখিনা? দেখব না কেন। অনেক কিছুই তো আমার ছোট্ট গণ্ডীর মধ্যে থাকে না। আমার দিগন্ত প্রসারিত করতে আজকের মিডিয়া আমার কাছে সব কিছু এনে দিচ্ছে। আমি তাদের নিয়েও মশগুল। শুধু ভালো লাগে না এইসব নিয়ে ধস্তাধস্তি করতে।
আমি শুধু চুপ থাকতে পারিনা। কত কথা আটকে থাকে মনের মধ্যে। হাঁকপাক করে বেরিয়ে আসার জন্য। চিৎকার করে গালাগালি করতে ইচ্ছা করে যখন দেখি বিড়াল কে রুমাল করে বাহবা লুটছে। এক চেয়ারে বসে থাকা সদ্য প্রেমে পরা কিশোর কিশোরী মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে। ইচ্ছা করে দুজনের মাথা ঠুকে দিই যাতে তাদের সংজ্ঞা ফিরে আসে। যখন দেখি ঝাঁ চকচক রেস্তরাঁর মালিক সকাল বেলা হোলসেলে ফাটা ডিম কিনছে, তখন পাশের বাড়ির নাক উঁচু পায়েলের রাস্তার খাবারের দিকে “আনহাইজিনিক” অবজ্ঞার দিকে তাকিয়ে খ্যা খ্যা করে হাসতে ইচ্ছা করে। প্রতিবাদি কণ্ঠস্বরে যা “ঠিকঠাক” ঘটছে না তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে। কিন্তু না। আমি চুপ থাকি।
আমি চুপ থাকি কারন আমার অভ্যেস হয়ে গেছে কাদায় পরে মুখ মুছে সামনে এগিয়ে চলার। আমার অভ্যেস হয়ে গেছে “কি হবে বলে?” বলার। একটার পর একটা ইচ্ছাকে পাশ ফিরিয়ে রেখে দিতে দিতে ইচ্ছাগুলও আজ আর সাড়া দেয় না। বলে নিজের কাজ কর। নিজের কাজ করতে যেটুকু দরকার লাগে তাই কর। জীবিকা নির্বাহে যেটুকু নিজেকে জাহির করতে লাগে সেইটুকু ঢাক পিটিয়ে আমি চুপ হয়ে যাই। তাতে অন্য লোকেরা এসে আমার ঘাড়ে তাদের বোঝা চাপিয়ে দিলেও আমি চুপই থাকি। কারন “বলে কি হবে?”
তাই আমার যখন সোচ্চার হতে ইচ্ছা করে, তখন বাথ্রুমের দরজা টেনে সব কল খুলে দিই। আমার কুড়ি তলা ফ্ল্যাটের ছাদের ফাঁকা থাকার খোঁজ নিই। টেনে নিই পোষা কুকুরটিকে। বলতে থাকি কথা। কেউ না থাকলে ঠোঁটে করে খড়কুটো নিয়ে উরে আসে শালিকটার সাথেই গেঁজিয়ে নিই কিছুক্ষন। দু দিকের দুটো জালনা খুলে দিলে চুল ওড়ানো হাওয়া নানা লকের কথা ভাশিয়ে নিয়ে আসে। আমিও আমার কথা ভাশিয়ে দিই। আর সবথেকে বেশি যার সাথে কথা বলি সে আমার “ঐতিহাসিক” – আমার সাধের ডায়েরি।
লোকে তাই লক্ষ্মী ছেলে ভাবে। আর আমি
লক্ষ্মীর মত জীবন জাপন করি। ছবি হয়ে।