Sunday, December 11, 2016

আধ্যানের ডায়রি - সান্ধ্র খাবার



কানাঘুঁষোতে শুনলাম আমাকে সলিড ফুড দেওয়ার কথা চলছে।  যাক বাবা লোকে অন্তত বুঝেছে যে বড়
হচ্ছি।  ওই ট্যালটেলে দুধ খাওয়ার বয়স শেষ।  মনে কি চরম আনন্দ হলো সে আর বলে বোঝাতে পারবো না।  কিন্তু দিনের পর দিন অপেক্ষা করে গেলাম - দুধ দুধ আর দুধ।  দুধ কে আদর করে  দুদু বললে তো আর টেস্ট বাড়ে না।  কিন্তু মা চেষ্টা করে যাচ্ছে।  সকাল সন্ধ্যে।  আমি ঘুমিয়ে পড়লে চেষ্টা করছে বেশি। কারণ আমি ঘুম থেকে উঠে বুঝতে পারছি আমার পেট ভর্তি।  কিন্ত এরকম করলে তো আর চলবে না।  পরিবর্তন চাই।   চেঞ্জ ইস দা অনলি কনস্ট্যান্ট।
ফোনের ওপার থেকে , সাত সমুদ্র তেরো নদীর পর থেকে আবার নিয়ন্ত্রকরা নিয়ম বলছে।  কি না অন্নপ্রাশন না হলে নাকি ভাত দিতে নেই।  আমার বলতে ইচ্ছা করে , “আর ইউ গাইস ম্যাড?” বলেওছিলাম কিন্তু লোকে ট্রান্সলেট না করতে পেরে মুখে দুধের বোতল ঠোসার চেষ্টা করছিলো।  তাই হাল ছেড়ে দিয়েছি।  বেবি ফুড খাওয়াতে অসুবিধা নেই, এমনকি প্যাকেটে আসা রাইস সিরিয়াল খাওয়াতে অসুবিধা নেই অথচ ভাত খাওয়াতে আগে লোক খাওয়াতে হবে ? হাউ ননসেন্স। ঠিক সেরকম যেমন সবাই বলে রাইস unhealthy কিন্তু ইডলি খুব হেলদি।  

এর মধ্যে দু চারটে ফলটল খাওয়ানো হয়ে গেছে। যদিও সেগুলো ফল না বলে ঘ্যাঁট বা পাঁক বললেও চলে।  কিন্তু তাও সবই দুধের থেকে খেতে ভালো। ডাক্তার আবার বলেছিলো এক বছর নুন চিনি বাদ।  খেলে নাকি ব্রেনের গ্রোথ হয় না।  থাক বাবা খাবো না ওসব।  খেলে এই সব আহাম্মক গুলোর মতোই  তৈরী হবো।  মায়ের ওপর যদিও ভরসা আছে , তবু ভরসা পুরো করা ভালো নয়।  

তাও মা চেষ্টা করলো অন্নপ্রাশনের। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো একটা মন্দিরে পুজো টুজো করে অন্নপ্রাশন দেওয়া হয়।  এই মন্দিরটা সেই মন্দির যেখানে আমার ২১ দিন বয়সে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। নিয়ে গিয়ে ঠাকুরের পায়ের কাছে শুইয়ে দিয়েছিলো। কি ইনসাল্টিং।  সবাই দাঁড়িয়ে আছে আর আমি শুয়ে তাও মাটিতে।  সবাই ওই জায়গায় হেঁটে চলে বেড়ায় , তাও আবার খালি পায়ে। ঠাকুরের পায়ের ধুলো তো পেলামই না , মাঝখান থেকে কার না কার পায়ের ডেড সেল গায়ে লাগিয়ে নিয়ে চলে এলাম। নাঃ ওখানে নিয়ে গেলে আমি অন্ন কেন কোন্নো খাবার খাবো না। .. আনলিমিটেড ফ্রি অনশন।

থ্যাংক টু দ্যাট আননোন গড।  বলে নাকি ভগবান না ডাকলে সেখানে যাওয়া হয় না।  তা সেই ভগবান আমাকে ডাকে নি আর আমার অন্নপ্রাশন খারিজ হয়ে গেছে। মায়ের পক্ষে একা অতদূর আমাকে নিয়ে যাওয়া বেশ চাপের। আমি একটাতে খুশি হলেও এই দুধের কেস এ একেবারে ব্যথিত।  যখন আর পারছি না দুধের জ্বালা সামলাতে তখন আমার ইনার ইন্স্টিক্ট জাগিয়ে মেটাবলিসম হাই করে গ্রোথ বা absorption কমিয়ে দিলাম।  শুধু যোগী মহাপুরুষরাই পারে না , আমিও পারি এসব কঠিন কঠিন জিনিস করতে।  ব্যাস ছ মাসের  ডাক্তার ভিসিটে, কেল্লা ফতে।  ওজন বাড়েনি , লম্বা হইনি , টোটাল কেয়স।  

বাড়ি গিয়ে বাবাকে ফোনে মোটামুটি আছাড় মেরে, তুলোধনা করে তারপর মা শান্ত হয়ে ঘোষণা করলো। “আর নয় , সময় এসে গেছে আধ্যানের শক্ত খাবার খাওয়ার।” আমি হেসে খুশিতে গড়িয়ে লাফিয়ে , গান টান গেয়ে বুঝিয়ে দিলাম তোমাদের মতি ফেরার জন্য ধন্যবাদ।

শেষে সেই দিন এসে গেলো যেদিন দুর থেকে লক্ষ্য করলাম মা একে একে একটু চাল, একটু মুগের দল , এক টুকরো গাজর, একটু বিন্স আর একটু আদা একটা ছোট্ট প্রেসার কুকারে ঢেলে সিটি মারতে লাগলো।  একটা করে সিটি পরে আর আমি এক পা এক পা করে এগোই বড় হওয়ার দিকে।  এবার আর চুষে নয় চামচে করে খাবো। ইনজেকশন এর সিরিঞ্জের মতো একটা কিছু দিয়ে আমায় ওষুধ খাওয়ায় , এর থেকে বড় অপমান আর কি আছে।  আর নয় আমার সাধের চামচ আসছে।

প্রেসার কুকার খুলে গেছে।  সারা ঘরে গন্ধে মো মো করছে। ঠিক যেমন বৃষ্টি পড়লে রান্না ঘর থেকে যেরকম গন্ধ আসে তেমন। মুগের ডালের খিচুড়ি।  উফফ।  মা একটা বাটিতে ঢেলে চটকাতে লাগলো। আমি আহা আহা করে চোখ বুজে ফেললাম শান্তিতে।

চোখ খুলল ঠোঁটের ওপর চামচের ছোঁয়ায়।  কি সুন্দর গন্ধ কিন্তু এ কি ? সলিড ফুড কৈ ? এ তো সেই ট্যালটালে।  বাবা তখন ফোনের থেকে উঁকি মারছে।  বাবাকে মা বললো জলটা বেশি হয়ে গেছে। সলিডের জায়গায় স্যুপ।  বাবা আবার বলে কিছুটা বেবি সিরিয়েল মিশিয়ে ঘন করতে। না-না, প্লিস না।  সব মাঠে মারা যাবে। এই ফিউসনের কারণে বীভৎস রকম বাজে খাবার দাবার মানুষ খাচ্ছে।  আমি অথেন্টিক আর গরমেট এ বিশ্বাস করি।  প্লিস কোনো ভেজাল নয়।  দাও সুপ্ ই খাই।  মা উঠে যাচ্ছিলো ঘন করে আনার জন্যে। আমি হাত বাড়িয়ে চামচ ধরে টানতে লাগলাম।  ব্যাস বাবা বুঝে গেলো আমার এটাই চাই।  মা বসে পড়লো।  আর আমার সলিড না হলেও সেমী সলিড বা সান্ধ্র খাবারের সূত্রপাত হলো।  এই দাঁত যতক্ষণ না বেরোচ্ছে ততক্ষন এইসব ভুলের মাসুল আমায় দিয়ে যেতে হবে। .. তবু দুদু খাবে , দুদু খাবে , দুদু খাও। … ন্যাকামির থেকে তো বাঁচবো। …

Saturday, November 26, 2016

সাহিত্যের ক্রোমোডায়নামিক্স .....

সাহিত্যের ক্রোমোডায়নামিক্স .....

সাহিত্য কি সে নিয়ে একদল ক্রমাগত বকে চলেছে।  আর কোনটা সুসাহিত্য আর কোনটা কুসাহিত্য তাই নিয়ে জল্পনা কল্পনা চিরন্তন। বিচারকের চেয়ারে সবসমই একদল লিবারেল একদল প্রোটেকশনিস্ট মানে উদার এবং সংরক্ষণশীল।  কিন্তু যা বয় তাকে বইতে দিতে হয়।  আটকালে সে টপকে বইবে বা উবে যাবে।  গুণগত মান বিচার করার ক্ষমতা পাঠকের।  আর যা একের কাছে ইলিশ তা অপরের কাছে চিংড়ি।  তাই ভালো খারাপ নির্ধারণ করা অযৌক্তিক।  তবে সর্বজন গ্রাহ্য বলেও একটা কথা আছে।  আর তার জন্যেই এতো চর্চা। 

আমরা যা পড়ি তাই শিখি আর শিখে কিছু করি।  সমাজের দ্রুতির সাথে সাহিত্যের শব্দসংখ্যা ক্রমাগত কমে এসেছে।  স্থিতিশীল শান্ত মনে যখন বিশাল উপন্যাসের রস নিতে হয় তখন দৌড়ে বাস ধরার ইচ্ছা থাকে না। তাই উপন্যাস থেকে বড় গল্প , থেকে ছোটো গল্প থেকে অনুগল্প থেকে চুটকি থেকে এখন দুলাইনের সাহিত্যের আগমন হয়েছে।  প্রতিনিয়ত ভাবসম্প্রসারণ এখন পাঠকের শব্দজব্দ।  আর শব্দের কারিগররা নানা জায়গা থেকে শব্দের আগমন ঘটাচ্ছেন। 

কিন্তু এই টুইটার এর ১৪০ অক্ষরে কি আর মনকে ব্যক্ত করা যায়।  হয়তো যায়।  আমার দ্বারা হয়না।  হয় যেটা সেটা সাংবাদিকতা।  কিন্তু উদ্যেশ্য কি? মনোরঞ্জন।  যদি "সবথেকে ছোটো রেসিগনেশন লেটার। ..... থুঃ " এই লেখা পরে যদি পাঠক দাঁত বার করেন, তাহলে এটাই সাহিত্য।

বছরখানেক আগে ফেইসবুক এর একটি গ্রূপে আমার এক বন্ধু আমাকে অ্যাড করে।  গল্পের সন্ধানে।  প্রথমে ভেবেছিলাম সেই যেরকম সমস্ত লেখক লেখিকার গ্রূপ থাকে সেইরকম।  কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম , না।  এটা খনি।  সবাই লেখে , বা লিখতে চায়।  যা ইচ্ছা লেখে , গুণগতমান নিয়ে কোনো চর্চা নেই।  আছে 'পকেটে যা কাছে বার করো ' ভঙ্গিমা।  লাইনে দাঁড়িয়ে কে লাইন মারছে না ভাঙছে সেইটুকু বিস্তার করলেও এখানে লেখক হওয়া যায়।  প্রথমে নাক শিঁটকে , ভুরু কুঁচকে ঘুরে এসে আবার দেখলাম।  ভুল আমার।  এই যেমন খুশি লেখার মধ্যে ফুটে ওঠে এক অদ্ভুত স্বাধীনতা।  আর সাহিত্যের স্বাধীনতা সৃজনশীলতাকে বৈচিত্র দেয়।  যারা দু লাইন লেখে তারা লেখকের ১০০ লাইনের খোরাক যোগায়।  এটাও তো সাহিত্য। 

রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পের সংজ্ঞা, বনফুলের অনুগল্পের ব্যাখ্যা , বাণী বসুর উপন্যাসের বিশ্লেষণ আদপে সুষ্ঠ আখ্যান ছাড়া আর কিছু নয়।  চরিত্র মিশিয়ে , শব্দ বসিয়ে , ছন্দ জাগিয়ে কিছু ঘটনার বিবরণই সাহিত্য।  বঙ্কিমের দাঁতভাঙা বাংলা থেকে চন্দ্রিলের দাঁত "ক্যালানো" বাংলা সবই তো সাহিত্যের অঙ্গ।  শুধু লোকে মানতে চায়না।  বেরিয়ে আসে "ইশ" . মানছি , সবাই যখন কথা বলে তখন তাকে চ্যাঁচামেচি বলে।  কিন্তু সবাই যখন দান করে তখনি তো ভান্ডার পূর্ণ হয়। 

কেউ কেউ বলে নিম্নমানের শব্দে উচ্চমানের সাহিত্য বেরোয় না।  আচ্ছা তাই নাকি , "আমার পুত্র উজ্জ্বলজলজলবিভাষিতলোচনপ্রান্তে স্থিতিশীল আছে। " এর থেকে "ছেলেটা কাঁদছে" বললে কি ব্যঞ্জন রঞ্জিত হয় না? নবারুণের খিস্তিশীল সাহিত্যে যদি "বন্ধ্যা গজগামিনীর অন্থস্থলে মিশ্র অন্ডকোষ নিঃসৃত বিভ্রান্ত শুক্রাণুর পক্ষাঘাত " লাইনের সমাগম হতো তাহলে কি খুব ভালো হতো।  না। সাহিত্য তাই সর্বজনগ্রাহ্য হয় না।  একই লেখা কারো কাছে বালিশ , কারো কাছে ঠোঙা।

এই শব্দের কাঠামো গঠন করে সাহিত্য। আমরা সাহিত্যের গুণগত ম্যান বিচার করতে গিয়ে ভুলে যাই সমস্যা সেখানে নয় যখন লেখা আমাদের পাতে পরে।  তখন , যখন আমরা জঞ্জাল সাফ করতে করতে চর্চা করা ভুলে যাই।  আগামীর আহ্বান যেমন প্রয়োজনীয় , প্রাচীনের সংরক্ষণ তেমনই দরকার। শরদিন্দুর ঐতিহাসিক উপন্যাস পড়তে পড়তে মনে হয়েছিল কত শব্দ মুছে গেছে বাংলা ভাষা থেকে।  যা অনায়াসেই ছন্দে ফেলা যায়।  কত শব্দে কত আধুনিক বাক্য শ্রুতিমধুর হয়।  অথচ আমরা সেই বিবেচনার শক্তি হারিয়ে ছোট্ট করে একটা ইংলিশ শব্দ দিয়ে আমাদের ইচ্ছাপূরণ করি।  এখানে আমার আপত্তি। 

সাহিত্য তাই অপাচ্য হয় না।  দুষ্পাচ্য হয়।  অধিকন্তু এখন খুব দোষায়।  পরিমিত শব্দে মনের ভাব বিস্তার করার দৌড়ে এখন সবাই দৌড়াচ্ছে।  নাক শিঁটকানো ছেড়ে হয় পড়ো নয় লেখো।  যা বইছে তাকে বইতে দাও।  ভালো লাগলে আবার পড়ো, খারাপ লাগলে উল্টে দাও।  কারো কথা না শুনে নিজের কথা শোনো। একদিন বই বেরোবেই "কোয়ার্ক (quark) বা গ্লউন (gluon)  সাহিত্য"। 


অম্বরিশ ও অর্পিতা

একটা হাথ এসে পরল অম্বরিশের গায়ে। 
এক তীব্র বিরক্তিতে হাতটা সরিয়ে দিতে গিয়ে , 
নরম হাতটা  হঠাত করে তার চোখটাকে সরিয়ে নিয়ে গেল , 
অন্ধকার ঘরে জলে থাকা ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে
পাশে শুয়ে থাকা অর্পিতার দিকে। 
বিরক্তিটা মিলিয়ে গেল। 
ঘুমে আচ্ছন্ন অর্পিতার বন্ধ চোখদুটির দিকে তাকিয়ে , 
হাতটাকে টেনে বুকের কাছে রাখল সে। 
এই একটু আগেও , "ঘুমিয়ে পর " বলে দশবার অম্বরিশের কাজে , 
ব্যাঘাত ঘটিয়ে ছিল এই হাতটাই। 
এই হাতটাই আজ থেকে অনেক বছর আগে , 
ছুঁতে চেয়েছিল অম্বরিশ। 
অর্পিতা চেয়েছিল সময়, আরো ভাবতে। 
মানসিক আর শারীরিক সমস্ত যোগ্যতা প্রদর্শনের তাগিদে , 
অম্বরিশ এক করে দিয়েছিল দিন রাত।
স্বপ্ন ওই হাত দুটো ধরার। 
সেই হাত সে আজ প্রত্যাক্ষান করতে চাইছিল ,
শুধু সেই হাত দুটো সামগ্রী দিয়ে ভরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছায়। 
অম্বরিশ তাকিয়ে ছিল নিষ্পলক, 
তার চোখ ছিল অর্পিতার  শ্রান্ত নিস্তব্ধ পলক দুটির দিকে, 
ঈর্ষা জেগে উঠছিল তার কর্মদগ্ধ , ক্লান্ত ভ্রুক্ষেপে। 
এই ইর্ষাই তার চাহিদা ছিল,
নিজের অস্তিত্বের প্রখর উত্তাপে , অন্য এক জীবন কে উষ্ণতা দেওয়ার। 
পরিবর্তে এক শান্তি, এক নরম স্পর্শ , 
আর নিভৃত একাকিত্বে নিরবিচ্ছিন্ন সখ্যতা। 
এই মধ্যরাতে, ঘুমন্ত অর্পিতার পাশে , তার হাত বুকে জড়িয়ে ধরে 
সেই শান্তির খোজে চোখ বুজে ফেলল অম্বরিশ। 

Wednesday, November 23, 2016

ইচ্ছা করে

ইচ্ছা করে পদব্রজে অসীম পথে চলি,
বনমধ্যে বিনা বাধ্যে তৃণগদ্য দলি।
ইচ্ছে করে চিরহরিৎ দিগন্ত পার করে ,
হাতের ওপর হাত রেখে হরেক কথা বলে।
ইচ্ছে করে অলস বেলায় নদীর ঢেউয়ে মেতে,
জলের খেলায় বাতাস দোলায় প্রাণবাদ্য পেতে।
ছেঁড়া ঘাসের নৌকাপানে মোহর চোখ রেখে,
সময় রবে নীরব হয়ে মোদের দেখে দেখে।
ইচ্ছে করে ঝিনুক জমা সাগর পারে তুমি ,
কোমল পায়ের ছাপ রাখা ওই বালির অঙ্গ চুমি।
ইচ্ছে করে শিলাচিত্র উচ্চতায় আঁকি ,
তোমার সাথে হরেক শৃঙ্গ বিজয় করতেথাকি  থাকি।
ইচ্ছে করে চন্দ্রদুগ্ধে সিক্ত  তোমা করে ,
আকাশ ভরা সূর্য তারায়  শৃঙ্গার করি তোরে।  
ইচ্ছা সবই অন্তরে আর বদ্ধ প্রেমের অন্দরে,
কোথায় তুমি লুকিয়ে আছো ইচ্ছামৃত্যু বন্দরে।  

Sunday, November 20, 2016

অর্থ সঙ্কট


সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলতে বাই হাত পাতলো।  ভুলেই গেছিলাম মাইনে দিতে হবে।  ঘুম ঘুম চোখে মানিব্যাগে হাত দিতে হা হতোস্মি।  নেই নেই কিছু নেই , তবুও যা আছে কিছু বলতে যা বাঁধা নেই।  দু নয়নে ভয় আছে , মনে সংশয় আছে।  আর তিনটে ক্রেডিট কার্ড আছে দুটো ডেবিট   কার্ড আছে।  একাউন্ট এ গুচ্ছ টাকা আছে।  কিন্তু বাই কে মাইনে দেওয়ার মতো পয়সা নেই।  কত টাকা।  হাজার ওনলি।  গ্যাঁটে কত।  একশো কুড়ি। সামনে খরচা , শেয়ার অটো ২০ টাকা আসা , ২০ টাকা যাওয়া , একটা সিগারেট তেরো টাকা, সাথে একটা চুটকি।  বাকি আপাতত কার্ড এ চলে যাবে।  


হাত কচলিয়ে মুখ চুকিয়ে লজ্জার মাথা খেয়ে বাই এর "বরা আদমি" বললো , "একাউন্ট নাম্বার দিলে ট্রান্সফার করে দিতে পারি। নাহলে দেরি হবে পয়সা দিতে।" বাই বেশ কিছুক্ষন হতভম্ব র মতো তাকিয়ে থেকে বললো , "বাদ মে দেনা সাব।  চলেগা।" এমন দুচ্ছাই খুব মানে লাগলো।  এমনিতেই হাত পাতা ধার নেওয়া অভ্যেস নেই।  তার ওপর এরকম। নাঃ , বললাম ,"কেন একাউন্ট নম্বর নেই?" কথোপকথনের সারাংশ এই দাঁড়ালো। ম্যাডামের একাউন্ট আছে।  কিন্তু সে তার ব্যাপারে কিছু জানেনা।  তার স্বামী ওটা চালায়। এখন আমার বাড়ি আর কিছু বাড়ির মাইনে সে একাউন্ট এ দেয় না।  তার নিজের হাতে রাখে কারণ নেশাখোর বর যদি সব টাকা কোনোদিন কোনো মেয়েছেলের হাতে তুলে দেয় তাহলে তার আর কিছু বাঁচবে না।  তাই পরে দেওয়া চলবে , "সাব আপ পে ভারোসা হ্যায়  " প্রথম চাঁটি , " আপ কাহা ভাগোগে " দ্বিতীয় চাঁটি "পাইসা মিল জায়ে ফিরে দে দেনা।" তৃতীয় চাঁটির পর মলম , "তিনকা তিনকা জোরতে হ্যায় সাব , চোর থোরি হ্যায়।"


নাঃ খুব কষ্ট লোকেদের।  আমাদের মতো শিক্ষিত ক্রেডিট কার্ড ওয়ালা মানুষের আর কি কষ্ট।  অর্ধেক তো কার্ড swipe করলেই হয়। শুধু পয়সা বেশি দিতে হয় আর কি।  ম্যাকডোনাল্ড আর পিজা হাটে নিজেকে বেচে দেওয়া মানুষদের আর কি সমস্যা। কিন্তু আমার বেশ সমস্যা । আমার ওই বিদেশি খাদ্য বিদেশেই পছন্দ । দেশে আসলে আমার রোডসাইড ধুলোমাখা খাবার আমার ভিটামিন ডি বাড়িয়ে দেয়। তাই আমার অধিকাংশ খরচাই খুচরোতে । একটু বিস্তারিত বলি ।

 আমি যেখানে থাকি সেখানে দুটো বিশাল বড় মল বা শপিং চেম্বার আছে। দেখতে শুনতে ভালো সব কিছু ঝকঝকে। যারা আসেন তাদের গায়ে সুগন্ধ। মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত সব কিছুই ঠিক করার সামগ্রি পাওয়া যায়। কিন্তু দুইখান আপত্তি । টাটকা আর খরচা । 

বেশ কদিনের বাসি সবজি পাওয়া যায়। মানছি গরম কালে ফুলকপি,  শিতকালে এঁচোর পাওয়া যায় । কিন্তু আমার শীতকালে আম আর গরমকালে পালং শাক খেতে মোটেও ভালো লাগে না । আর সেই কারনে আমায় ছুটতে হয় ঠেলাওয়ালার কাছে। সময়ের সবজি নিতান্ত কমদামে পাওয়া যায় । হ্যাঁ একটু বেচে নিতে হয় বটে। তবে কানা বেগুন , বা ধ্বসা আলু আপাতত বুঝতে পারি, তাই আমার বিশেষ আপত্তি নেই। 

আর দ্বিতীয় হল এমআরপি। মল মানেই এমআরপিতে জিনিস বিক্রি করবে। মাঝে মাঝে নানা রকম সেল দিয়ে পুরনো স্টক ক্লিয়ার করা ছাড়া সব সময় ম্যাক্সিমাম রিটেল প্রাইসেই জিনিস্পত্র কিনতে হয়। কেন কিনব ? যখন পাড়ার দোকান আমাকে কম লাভ রেখে পাইকিরি দরের থেকে একটু বেশি দামে জিনিস বিক্রি করছে।তর্কের খাতিরে লোকে বলে ওঠে কেন ক্রেডিট কার্ডে তো এখন পয়েন্ট দেয়। ক্ষমা করে দিতে হবে, কারন অঙ্ক খুব কঠিন।

এই হল আমার সমস্যা। এর সাথে জদিও আরও আছে , গোয়ালার দুধ, অটোর ভাড়া , বারো টাকার বড়াপাও , কুড়ি টাকার ফুচকা, ষাট টাকা ডজন ডিম , বেল্ট এ ফুটো করানো , জুতোপালিশ, ছাতা সারানো , তিরিশ টাকার ধোসা ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যদি। মোদ্দা কথা হল একটু ধুলো , গন্ধ সহ্য করে নিলে যদি মানিব্যাগে পয়সা আর ফ্রেশ খাবারের আনন্দ মজুদ থাকে তাহলে কেন আমি মল এ ঢুকব । 

                তাই আমার পুরোটাই ক্যাশে যায়। পে টি এম এর থেকে  এটিএম  আমার কাছে বেশি শিহরণ জাগায়। কিন্তু এমন বাঁশ খেয়েছি যে আর কিছু করার নেই। সেই বাঁশ নামাতে গিয়ে টুক টুক করে হাঁটতে হাঁটতে হাজির হলাম সেই এটিএম এ যেখানে আমি গত এক বছর ধরে যাই । বন্ধ । সামনে নো ক্যাশ এর বোর্ড ঝোলানো । ঠিক আছে, নো প্রব্লেমোস । এখন তো যে কোনও এটিএম থেকে টাকা তলা যাবে । আশায় জল, গোবর , নাদি ঢেলে পরের পাঁচটি এটিএম এ একই উক্তি। একটা এটিএম এর সামনে কিছু লোকের জটলা দেখে দাড়িয়ে পরলাম। কি ব্যাপার? ক্যাশ আসছে । বন্যা পীরিত এলাকায় শুকনো খাবার আসছে । সবাই উত্তেজিত । আমিও । গল্পে কিছুক্ষন ভিড়ে গিয়ে বুঝতে পারলাম, পাঁচ মিনিট আগেই শেষ লোকটি টাকা তুলেছিল। পাঁচ মিনিট। আবার প্রশ্ন করলাম পাঁচ মিনিট । ওনলি পাঁচ মিনিট? ‘কেন দাদা বিশ্বাস হচ্ছে না?’ না সময়টা বিশ্বাস না করার মত কিছু নেই । আমি অবাক লোকের ধৈর্য দেখে। এরাই সেই লোকজন যারা কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা না করার জন্য প্রানপনে হর্ন বাজায়। আর এখন এরা আরও এক ঘণ্টা অপেক্ষা করবে এটিএম লোডিং এর জন্য। সত্য সেলুকাস কি বিচিত্র এই মোদীত্ব । 

                আমার অপেক্ষা করা সম্ভব নয় । কারন আমার বিবেচনা বলে যে এই ক্যাশ এর আগমন যে কোনও সময়ে বিলম্ব হয়ে যেতে পারে। তাই ডেলিপ্যাসেঞ্জের এর মত শ্রীরামপুর পর্যন্ত তো চলে যাই, ওখান থেকে না হয় পরের ট্রেনে চন্দননগর। কিন্তু একের পর এক এটিএম ঘুরেঘুরে ক্লান্ত হয়ে গেলাম । আমার আগেই এই এটিএম ট্যুরিজ্ম লোকে করেছে বুঝতে পারছি। কারন আমার পেছনের আর সাম নের কিছু লোক কে প্রতিটা এটিএম এই দেখতে পাচ্ছিলাম । 

                গলা শুকিয়ে কাঠ, জদিও সময়টা শীতকাল । কিন্তু মুম্বাই কি আর শীত জানে। তাই একটা কোল্ড ড্রিঙ্ক নিয়ে কান খাড়া করলাম। এখন যেখানে যা গ্যান আর নতুন খবর পাওয়া যায় তাই ভালো। নানা মুনির নানা মত থেকে মোটামুটি এইটা বুঝতে পারলাম যে এটিএম এ আট লাখ আশি হাজার টাকা একবারে লোড করা যায়। টার মানে চারশো চল্লিশ লোককে এক বারে টাকা দেওয়া যেতে পারে। হিসেব মত দু ঘণ্টায় একটা এটিএম ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে আর পরের লোড সবসময় সময় মেনে হচ্ছে না । অন্তত তেইশ হাজার কোটি টাকার দরকার আর মাসে ৩০০ কোটি টাকার বেশি ছাপানো সম্ভব নয়। হিসেব পরিষ্কার , চোখ বড়বড় , ঘাম ছুটছে , আমার কি হবে। 

                আরে দাদা ব্যাংক থেকে তুলে নিন। ইসস কি বোকাই না আমি। ব্যাংকে গেলেই তো হবে। উইথড্রল স্লিপ দিয়েই তো সপ্তাহে চব্বিশ হাজার তুলতে পারবো । এক বার তুল্লেই তো অনেকদিন চলবে । মেয়ের বিয়ে দিতে এখনও বেশ দেরী । মোটামুটি বীরদর্পে গিয়ে একটা ল-অ-অ-ম্বা লাইনের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম । চুপসে গেলাম । এতক্ষন । কিন্তু শিওর শট । তাই অপেক্ষা করতে অসুবিধা নেই। অন্তত একশ লোকের পেছনে লাইন। ঢোকার আগে জিজ্ঞেস করে নিয়েছিলাম যে এটা ব্যাঙ্কের লাইন না এটিএম এর। লোকটি পানে আটকানো বন্ধ মুখ না খুলে বন্ধ এটিএম এর দিকে আঙ্গুল দেখিয়েছিলো । আমি নিশ্ছিন্ত মনে লোক দেখছিলাম । কেউ কেউ বই নিয়ে এসেছে, কেউ কেউ ইবুক রিডার , বাকীরা মোবাইলে ঘাড় ঝুনিকিয়ে আছে । দেদার সেলফি  আর হ্যাশ ট্যাগিং চলছে। কারো মুখে বিরক্তি নেই । ভবিতব্য মেনে কি শান্ত হয়ে লোকে দাড়িয়ে আছে। 

                সবাই দেখলাম একটা করে স্লিপ হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে । আমি আবার অবাক। অটো থেকে নেমে বড় ব্যাগ থেকে ছোটো ব্যাগ বার করে টার মধ্যে গোপন চেন খুলে যারা পাঁচশো টাকার নোট বার করে খুচরো চাইতো তারা আগে থেকে রেডি হয়ে থাকছে। ভাবা যায়। দেখলাম একটা টুল নিয়ে এক ভদ্রলোক বসে আছে, হাতে কিছু স্লিপ বই। পেছনের লোককে বলে লোকটার কাছে এগিয়ে যেতে একটা স্লিপ কেটে এগিয়ে দিল , কোনও কথা নেই । হাতে নিয়ে দেখি এ তো ডিপোসিট স্লিপ । জিজ্ঞেস করতে বুঝতে পারলাম যে লাইনটা নেওয়ার নয় দেওয়ার । ততক্ষনে আধঘনটা কেটে গেছে। আমার প্রশ্নোত্তরে বেশ কিছু লোকের মনরঞ্জন করে আমি সোজা চলে গেলাম দরজায়। কোনও লাইন নেই। তাজ্জব। 

                গেটকিপার আমায় দিব্যি ঢুকিয়ে দিল। আমি সোজা  ডিপোসিট কাউনটারে গিয়ে উইথড্র  স্লিপ ভরতে লাগলাম । চব্বিশ হাজার ভরে , স্লিপটা এগিয়ে দিতে নিতান্ত এক্সপ্রেসনলেশ ভঙ্গিতে মাদাম বললেন , “চলছে না। চলবে না।” কেন ? শুধু চেক । আমার তো চেক নেই । চেক নেই?  এ আবার কি? হ্যাঁ নেই । যখন কর্পোরেট অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে দিয়েছিল কম্পানি। চেক তো দেয়নি। আর লাগেও না কোথাও। তাই নাকি । অবজ্ঞা লুফে নিলাম। পরে অ্যাপলাই করেননি কেন? সরি । এখন চেক ছাড়া হবে যদি এই ব্রাঞ্চে অ্যাকাউন্ট থাকে। তাও ম্যানেজার এর আপ্প্রভাল লাগবে। অ্যাকাউন্ট কথাকার।  কলকাতার । পাল্টে নিন। সে তো অনেক সময় লাগবে। হ্যাঁ সাত থেকে চোদ্দ । এখন জদিও বলা জায়না কতদিন লাগবে। তাহলে উপায়। অ্যাড্রেস বদলে নিন। আর চেক অরডার করে দিন। তিন চার দিনে চলে আসবে। কি করে করা যাবে অ্যাড্রেস চেঞ্জ। ফর্ম ভরুন আর অ্যাড্রেস প্রুফ দিন। অ্যাড্রেস প্রুফ বলতে রেনট এগ্রিমেন্ট চলবে তো ? হ্যাঁ, রেজিস্ট্রেশান করানো আছে তো? না, নোটারাইস । তাহলে হবে না। কোনও বিল আসে আপনার নামে? হ্যাঁ। ইন্টারনেটের । এমটিএনএল ? না টাটার ইন্টারনেট। চলবে না । গভরমেন্ট অ্যাড্রেস প্রুফ লাগবে। তাহলে উপায়। 

                আরও দুচার উপায় লজ্জাজনক ভাবে ‘না’ বলে , শেষমেশ বেরিয়ে এলাম । আবার পরের এটিএম এর সন্ধানে !!!!!!!

      


Friday, November 4, 2016

মা বকেছে

মা বকেছে।  খুব বকেছে।  এখন বুঝতে পারছি কোথায় এসে পড়েছি। মা কে কি বিচ্ছিরি দেখতে লাগছিলো যখন বকছিল। আমিও যখন চ্যাচাই তখন মনে হয় আমাকেও ওরকম দেখতে লাগে। ব্যাপারটা খুব সাধারণ। মানে অতি সাধারণ। সকালের পর থেকে আর দুধ খাইনি।  এতে খোঁচে যাবার কি যে আছে জানিনা বাবা।  একটু ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম।  আমার হামাগুড়ি দেবার দিন এগিয়ে আসছে তো তাই চেকলিস্ট বানাচ্ছিলাম।  সকাল থেকে দিদার কোল ছাড়িনি আর ঘ্যান ঘ্যান করছিলাম।  কারণ আর কিছুই না ঘুরে ঘুরে আমার এলাকা দেখে নিচ্ছিলাম।  কোনটা ভাঙবো কোনটা ছুঁড়ে ফেলে দেবো , কোথায় ফেলে দেবো ইত্যাদি ইত্যাদি।  প্ল্যান না করে এগোলে বেশি ড্যামেজ করা সম্ভব নয়।  দু চার দিন ধরে যেখানে বসিয়ে দিচ্ছে সেখানের চার পাশ ছকে ফেলছি।  কিন্তু এখনো শর্ট টার্ম মেমোরি নিয়ে চলছি তাই বেশি ঘন্টা হয়ে গেলে ভুলে যাই।  তার ওপর এখনো লিখতে বা টাইপ করতে পারছি না।  তাই মনে রাখতে বার বার দেখতে হয়।  একটু একটু করে পোক্ত করতে হয় ডিটেলস গুলো।  চোখের মাপে বুঝতে হয় যে কোনটা আমার নাগালে আসবে কোনটা নয়।  কোনটা  হামাগুড়ির জন্যকোনটা হাঁটার জন্য সেই লিস্ট বানাতে হয়। কিছু লোক দেখে শেখে আর কিছু ঠেকে।  আমি ঠেকে শিখে সময় নষ্ট করার মতো উজবুক নই।  তাই বেশি কন্সেন্ট্রেশন লাগে এই হিসেব গুলো করতে।  সেটাই করছিলাম। যেই বসিয়ে দিচ্ছিলো আমি ঘ্যান ঘ্যান করছিলাম আর কখনো মা কখনো দিদা তুলে নিয়ে ঘুরে আসছিলো।  আর আমি গম্ভীর হয়ে আমার চেকলিস্ট বানাচ্ছিলাম।  হঠাৎ জানিনা কি হলো মা খ্যাপা বাঘের মতো তেড়ে এলো।  ঘপাৎ করে বোতলটা মুখে চেপে ধরলো।  আমি তখন গভীর চিন্তায় মগ্ন এই ভেবে যে ল্যাপটপের ওপর শুয়ে পড়বো না নাল ফেলবো কারণ দুটোতেই মা আমায় আটকায় অথচ ল্যাপটপ আমার নাগালের বাইরে থাকে নাস্পেশালি যখন আমি হামাগুড়ি দেব।  এই গভীর চিন্তায় ছেদ দিয়ে মা হালুম করে তেড়ে এলো।  আমার সমস্ত যোগ বিয়োগ গুন্ ভাগ সমীকরণ বিশ্লেষনে জল ঢেলে কেঁচিয়ে দিলো।  ইনটলারবলে ক্রূয়েল্টি।  আমি দু বার নিপল টা জিভ দিয়ে দু গালে ঠেসে দিলাম। দেখলাম মা কিছুতেই ব্যাকফুটে যাচ্ছে না।  আমার ঘ্যান ঘ্যানও কাজ করছে না।  শেষমেশ পরিত্রাহি করে চিৎকার সবে শুরু করেছি কিনা মা ফেটে গেলো।  ওরে বাপরে।  আমি রীতিমতো ভেবড়ে গেলাম।   আবার কেমন ধারা রূপ। ছুটে বেড়াচ্ছে দৌড়ে বেড়াচ্ছে আর চেয়েচিয়ে চলেছে।  দু তিনবার আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে অনেক কিছু আবোল তাবোল বকে গেলো। কিছুক্ষন থেমে দেখলো আমি ভোঁদার মতো তাকিয়ে আছি।  নো এক্সপ্রেশন।  বুঝলো ট্রান্সলেশন ঠিক হচ্ছে না।  তাই ঝাঁপিয়ে পড়লো দিদার ওপর।  ক্ষতবিক্ষত দিদা বেশ কিছুক্ষন লড়ে গেলো কিন্তু শেষমেশ হাল ছেড়ে , "তোর ছেলে তুই বোঝবলে হাত পা ছেড়ে আমায় নিয়ে বসে পড়লো।  এর মধ্যে বাবা মাঝখান থেকে ফোন করে কিছু একটা বলার চেষ্টা করতে সবথেকে বেশি ঝাড় খেয়ে গেলো।  বেচারা বাবাঝাড় খাওয়ার জন্যই মনে হয় জন্ম হয়েছে।  আমার থেকেও বেশি বোকা বোকা এবং অসহায় কিছু আওয়াজ বার করার পর বাবা যখন আসল ঘটনাটা জানতে পারলোতখন নিভু আগুনে ঘিয়ের মতো ফ্যাক করে হেসে ফেললো।  ব্যাস বাকিটা ইতিহাস।