Wednesday, October 7, 2015

এবার পুজোয় একটা মাল তুলব

নিল আকাশে পেঁজা পেঁজা মেঘের সারি, কাশ ফুলের দোল, কখনো ঠান্ডা কখনো গরম হাওয়া যখন একা করে দেয় তখন দীর্ঘশ্বাস থেকে একটা কথা ই বেরিয়ে আসে , "নাঃ ! এবার পুজোয় একটা মাল তুলব।"

দূর্গা পুজো আর একাকিত্ব কিছু ব্যক্তিত্বের জন্য সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ।  এদের অর্থ পার্থক্য নির্ণয় করতে হলে ব্যক্তির সঙ্গী বা সঙ্গিনীদের উপস্থিতির গুরুত্ব প্রধান মাপকাঠি। প্রকৃতির অবহেলায় কিছু পুরুষের ভাগ্যে নারী সঙ্গ জোটেনা।  কারণ? বহুধাবিভক্ত।  তাই বিচার বা ব্যাখ্যা অপ্রয়োজনীয়। সমষ্টি যখন অঙ্গসম্মেলনে পূজা প্রাঙ্গনে সর্বজনগৃহীত পৌরুষের প্রদর্শনী করে, এই হতভাগ্য তখন নিরবে মহোৎসব প্রদক্ষিন করে নিজ ভাগ্যের প্রতি করাঘাত করে।

আপন পৌরুষের প্রতি গর্ব থাকলেও গৌরবান্বিত হতে হলে তাদের প্রয়োজন অনুমোদন। সমাজ সমক্ষে সঙ্গ দেওয়ার স্বীকৃতি জনশূন্য স্থানে ওষ্ঠমিলনে প্রাপ্ত হলে এই পৌরুষ পূর্ণতায় পর্যবসিত হয়।  কিন্ত পুজোপ্রাঙ্গন নামক ক্রিড়াক্ষেত্রে  চার দিনের এই প্রদর্শনীর প্রস্তুতি তিনশ দিন আগে থেকে শুরু করতে হয়।  এই প্রজাতির পক্ষে ধৈর্য, অপেক্ষা ও পরিশ্রম কোনোটাই অপেক্ষনীয় নয়।  এরা তাই প্রকৃত অর্থে "মাল" চায়।

গেলাম দেখলাম পর্যন্ত এরা ঠিক আছে।  কিন্তু জয় করার পরিবর্তে এরা "পেলাম" বা "দিল" তে বেশি উত্সাহী। কারণ রমনীর রোমাঞ্চকর সঙ্গ  সহজলভ্য। ঘর্মস্নাত গ্রীষ্মে, প্লাবনপ্রসু বর্ষায়, কম্পমান শৈত্যে ( গনগনে গরমে, ঝম ঝমে বৃষ্টিতে, কনকনে ঠান্ডায়) প্রচেষ্টার প্রচার করে চলতে হয়।  তদুপরি লোহিত্গন্ধি প্রবাহিত উষ্ণ শোণিতকে উপেক্ষা করে হৃদিরঙ্গে রঞ্জিত গোলাপ পরিবেশন করতে হয়। উত্সাহ প্রবল থাকলেও, আলস্য এবং অতিরিক্ত মিতব্যয়িতা এই প্রজাতি কে প্রচেষ্টা থেকে ব্যাহত রাখে। কিন্তু সময়ের গতি অব্যাহত।

অসময়ে এই প্রজাতির গর্বিত ভবগুরে মুক্ত জীবনের উল্লাসগান বন্ধনপ্রীত নারীপিরিত পুরুষসমাজের কাছে ইর্ষনীয় হয়ে থাকে।  বঙ্কিম স্মিতহাস্যে এরা চুক্তিবদ্ধ বন্ধুদের আক্ষেপের সমব্যথী হয়। একাকিত্ব তখন উচ্ছসিত। বন্ধনহীন উন্মুক্ত আকাশে উদ্যেশ্যহীন যাত্রার রোমাঞ্চ তখন স্বাধীনতার শিকল ভাঙ্গার গান।  গরাদের পিছনের পূর্ণগ্রাস গ্রহণে নিমজ্জিত পুরুষদের তখন নখর উচ্ছেদ অভিযান। তাদের তখন সুসময়ের প্রস্তুতিতে আত্মভোলা উচ্চগ্রাম দেবীস্তুতি।

সময় যখন সামনে এসে দাড়ায়।  সম্ভাব্য প্রশ্নপত্র প্রশ্ন করে প্রস্তুতির। এই প্রজাতি তখন নিরব। অথচ পাশ না করলে অসম্মান। মুক্ত উড়ানের ডানায় লেগে থাকা পরাগরেনুর মাঝে মধু অন্বেষণে তীব্র প্রচেষ্টায় অসফল হয়ে নিয়তির পক্ষপাতিত্বে বিষদৃষ্টির অভিক্ষেপ করে। যেন তেন প্রকারেণ এই যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার প্রচেষ্টায় আবার নারী "মাল" এ পরিবর্তিত হয়।  সঘোষে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হুঙ্কার আসে, "পরের বারের জন্য এবারে মাল তুলতেই হবে।"

পরীক্ষার দিন পরীক্ষার সময়ে পরীক্ষা শুরু হয়।  এতকাল অন্ধকারে বন্ধ হয়ে দেবী বন্দনায় নিমজ্জিত বাল্মীকিরা সহস্র বন্ধন মাঝে মুক্তির স্বাদ উপভোগ করতে শুরু করে।  আর এই প্রজাতি চার দিনে "মাল" এর অন্বেষণ করে চলে। সাফল্য কঠিন হলেও, অসম্ভব নয়।  কারণ পরলিঙ্গেও এই প্রজাতি বর্তমান। সাথে আরো এক প্রজাতি প্রতি পুজোতে "মাল" হতে চায়।  তাদের উদ্যেশ্য ক্ষণেকের শান্তি আর লক্ষ্য "মাল"পিপাসুদের পকেট। তারা দেবী দুর্গার মতই দশ হাত বিস্তার করে এই চার দিনের জন্য তাদের করাল গ্রাসে নিয়ে আসে।  সমর্থ "মাল"পিপাসুরা পরীক্ষায় সফল হয়ে জর্জরিত পুরুষসমাজে ঈর্ষার সৃষ্টি করে বটে।  কিন্তু সফলতার সংখ্যা বরই সীমিত।

বিজয়ার সাথে সাথে এই "মাল"তৃষ্ণার অপ্রীতিকর পরিনাম "মাল"তৃপ্ত ও "মাল"রিক্ত বন্ধুযুগলের বিচ্ছেদ। তড়িৎগতিতে "মাল" অপ্রয়োজনীয় পদার্থে পরিবর্তিত হয়ে আবর্জনার স্তুপে নিক্ষেপিত হয়।  আবার বাতায়ন থেকে ভেসে আসে মুক্তির গান। এই প্রজাতি ফিরে যায় আপন জীবনে এবং আত্ম কে কেন্দ্র করে স্বার্থ সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করে।  সেই লক্ষনরেখা ধরে হাটতে হাটতে পরের পুজোয় আবার "মাল" এর প্রয়োজনে আক্ষেপ করে।  এই প্রজাতির চিরন্তন অনিত্য জীবন গতি স্বীয় গোষ্ঠিতে পরিচিত হয় তাদের আকাঙ্খিত উদ্যেশ্যের দাড়াই। তাদের বৃহত্তর সমাজে  "বৃহৎ মাল" বলা হয়।