কমলকলি ভট্টাচার্য চক্রবর্তী - ফেসবুক এ নামটা দেখে বোমকে গেলাম। নিজের ফ্রেন্ড লিস্ট এ খুঁজে দেখলাম আরো এরকম কিছু ভয়ানক নাম পেলাম। পুরো পাতা জোড়া নাম। ফ্যাশন টা আজকের নয়। আমি নারী , আমি তোমার অস্তিত্ব নাড়িয়ে দিতে পারি। এই উত্তেজনার অভিব্যক্তি অনেক দিন ধরেই অনেক কিছুতেই দেখা যায়। ভালই লাগে। বোকাবোকা পৌরুষ দেখিয়ে কিছু ফালতু নপুংশক এত বছর ধরে যা ফালতু কাজ করেছে তার ফলাফল এই আন্দোলন। দুর্ভাগ্য এই যে যারা বহুকাল ধরে এই নিষ্পেষণের বাইরে তারা লোক দেখানি নারীবাদ করে অদরকারী জটিলতাও ডেকে আনছে।
বহুকালের হিসাব কন্যাদানের। খুব বাজে, কন্যা কি আর সামগ্রী যে দান করব। কিন্তু মন্ত্র পরে ছাদনাতলায় দাড়ালে তো দান করতেই হবে। তাহলে উপায়, রেজিস্ট্রি ম্যারেজ। না তাও তো হবে না। এই একমাত্র দিন যেদিন মেয়েরা সারাজীবনের সাজ একদিনে সেজে নেয়। তাই বিয়ে হবে তো নিয়ম মেনে। বেনারসী আর এক গা গয়না পরে অত্যুজ্বল আলোর সামনে ফটো না তোলালে কি আর বিয়ে করা হয়। বিগ ফ্যাট ইন্ডিয়ান বিয়ে। সবাই খুশি , বর খুশি বউ পাবে বলে, বউ খুশি সেজেছে বলে, বাবা খুশি কন্যাদান করে। উফ ওই শব্দতেই আটকে যাচ্ছে নারীবাদ। ওটাতে নারী বাদ।
বিয়ের শেষে হাপুস নয়নে মা বাবা মেয়েকে বলছেন , " আমাদের ভুলে যাস না যেন। " কন্যা তখন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ , অস্তিত্বের লড়াই শুরু। আমি নারী, আমি দুটো পদবি জুড়ে দিতে পারি। ব্যাস, গঙ্গোপাধ্যায়র সাথে মুখোপাধ্যায় জুড়ে গেল। জায়গা নেই তেই গাঙ্গুলী মুখার্জী। অথচ মেয়ে কিন্তু বাবা মায়ের আগের এই কথার আগের এক লাইন বেমালুম খেয়ে ফেলেছে , "ব্যাঙ্গালোরের মত , আমাদের ভুলে যাস না যেন।" ছ-মাস আগে মেয়ে ভুলেই গেছিল বাবা মার বিবাহবার্ষিকীর কথা কারণ হবু বর এর জন্মদিন ও একই দিনে। এখন থেকে আর ভুলব না আমি ছিলাম , আছি , থাকব গাঙ্গুলী হয়ে। শুধু মাঝে মাজে তোমাদের ফোন করতে ভুলে যেতে পারি।
কিন্তু ভাবুন এ রোগ কিন্তু আজকের নয়। দেবসেন, ঘোষদস্তিদার, রায়চৌধুরী তো অনেক কাল আগে থেকে। তবে পুরুষশাসিত সমাজে দুটো পদবি জুড়ে একটা পদবি হলো কি করে ? না জানিনা। তবে এখন যখন নারীবাদ প্রখর আর নারীত্বের প্রথম ধাপ হলো পদবি পরিবর্তনে বাধা তখন কিন্তু ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতেই হবে। মানে আমি ঘোষ করলাম বিয়ে কুন্ডুকে , গিন্নি নাম নিলেন নীলিমা ঘোষকুন্ডু , হলো মেয়ে , সেও নারীবাদী। বিয়ে করলো নারীবাদী আন্দোলনের নেতা জেমস বারিংহাউসকে , হয়ে গেল অর্পিতা ঘোষকুন্ডুবারিংহাউস। হলো মেয়ে বাবা মার শিক্ষায় মেয়ে নিল মায়ের পদবি আর করলো বিয়ে রাশিয়ান নারীবাদী লেখক মাইকেল দস্তভয়েস্কি হয়ে গেল ঘোষকুন্ডুবারিংহাউসদস্তভয়েস্কি। তাদেরও মেয়ে যখন স্কুলে গিয়ে ফুল নাম বলতে গেল, পড়ল ফাপরে। পিজা অর্ডার করতে গিয়ে হুলুস্থুলুশ কান্ড। G as gorilla থেকে y as yellow শেষ করতে করতে ফোন কেটে যেতে লাগলো। কি চাপ।
কিন্তু নারীবাদ ছাড়া যাবে না। আর এটাই নারীবাদের প্রথম উসুল। তাই আঁকড়ে ধরে বছর কুড়ি চলার পর ধরাম করে আমার নাতনি পড়ল প্রেমে। শেষমেষ আমার রক্ত ফিরে এলো দেশে। ছেলের নাম ভেঙ্কট। তামিল। চার পাঁচ বছর উত্তাল প্রেম করে যখন বিয়ের পিরিতে বসতে যাবে তখন আমার নাতনির খেয়াল এলো পুরো নামটা তো জানতে হবে ? বেরোলো চল্লিশ টা অক্ষর। ভেঙ্কটরামান পি ভি কে এস। নাতনি আঁতকে উঠলেও মুখে হাসি ফুটে এলো। বিয়ের পর নাতনির নাম নাতালিয়া GKBDPVKS . password এর মত পদবি হয়ে যাছে দেখে ভেঙ্কট সেটাকেই পাল্টে করে দিল ETC. আজ তারা খুশি।
এত গেল আমার ভবিষ্যতের কথা , কিন্তু বর্তমানে এই অত্যাচার নারীরা নিজের ওপর করে চলেছে। নারীবাদের নামে সহজ জিনিস জটিল করতে তাদের জুরি নেই। আরে বাপু আগে তো শশুর বাড়িতে ঘর করতে হত। এখন তো শশুর শাশুড়ির অস্তিত্ব তো ফোনে। অস্তিত্ব সংকট কিসের? দেশ সুযোগ দিয়েছে যে মেয়েরা চার ধরনের পদবি রাখতে পারে। কিন্ত বিষ থাকলেও কি খেতে হবে? যদি এতই সমস্যা তাহলে বরের পদবিটা বাদ দেওয়া হোক। কি দরকার ? না, তাহলে তো প্রেম নিবেদন হলো না।
একে তো বাঙালির নাম আর ইংলিশ বানানে সমস্যা। প্রচুর "অ" বঙ্গের গন্ডি পেরিয়ে "আ" হয়ে যায়। সাথে পদবির ঘোটালা। একমাত্র আমরাই একই পদবি দু ভাবে লিখতে পারি। chatterji - চট্টোপাধ্যায়। মাঝেই মাঝেই গুবলেট আর গুপি। লোকেদের বোমকে দেওয়াতে আমাদের জুরি নেই। আজকাল তো নাম রাখার জন্য সংস্কৃত ঘাটতে হয়। আর তার উচ্চারণ "অ" সমন্নিত বাঙালির অভিধানে পরিবর্তিত হয়ে অনুবাদিত হয় ইংরাজি অক্ষরে। সব মিলিয়ে মোরা দুর্বোধ্য।
এ এক জটিল যাতনা। ঠিক যেরকম ভাবে নারীদের "সাহসী" পদক্ষেপ হিসেবে নগ্নতাকে সম্মান করা হচ্ছে ঠিক সেরকম ভাবেই নারীরাও নিজেদের অসম্মান করছে এই সমস্ত ভুলভাল কাজ করে। নারী স্বাধীনতার মূল্য অনেক , সে স্বাধীনতা চিন্তার স্বাধীনতা। আজ নারী অস্তিত্বের লড়াই বলে যে লড়াই করছে সে লড়াই তারা আগেই জিতে গেছে। পুরুশের ক্ষমতা নেই সন্তানধারণের আর পৃথিবীর বুকে দাগ রেখে যেতে সে শরণাপন্ন নারীর। তাই অস্তিত্ব রক্ষা বা উত্থানের পথ নামের সাথে জড়িয়ে ভুল না করে যাতে উন্নতি হয় তাতে মনোনিবেশ করা উচিত। calcutta , কলকাতা হয়েও আজও বাঙালি বাঙালি কে সহ্য করতে পারে না।
বহুকালের হিসাব কন্যাদানের। খুব বাজে, কন্যা কি আর সামগ্রী যে দান করব। কিন্তু মন্ত্র পরে ছাদনাতলায় দাড়ালে তো দান করতেই হবে। তাহলে উপায়, রেজিস্ট্রি ম্যারেজ। না তাও তো হবে না। এই একমাত্র দিন যেদিন মেয়েরা সারাজীবনের সাজ একদিনে সেজে নেয়। তাই বিয়ে হবে তো নিয়ম মেনে। বেনারসী আর এক গা গয়না পরে অত্যুজ্বল আলোর সামনে ফটো না তোলালে কি আর বিয়ে করা হয়। বিগ ফ্যাট ইন্ডিয়ান বিয়ে। সবাই খুশি , বর খুশি বউ পাবে বলে, বউ খুশি সেজেছে বলে, বাবা খুশি কন্যাদান করে। উফ ওই শব্দতেই আটকে যাচ্ছে নারীবাদ। ওটাতে নারী বাদ।
বিয়ের শেষে হাপুস নয়নে মা বাবা মেয়েকে বলছেন , " আমাদের ভুলে যাস না যেন। " কন্যা তখন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ , অস্তিত্বের লড়াই শুরু। আমি নারী, আমি দুটো পদবি জুড়ে দিতে পারি। ব্যাস, গঙ্গোপাধ্যায়র সাথে মুখোপাধ্যায় জুড়ে গেল। জায়গা নেই তেই গাঙ্গুলী মুখার্জী। অথচ মেয়ে কিন্তু বাবা মায়ের আগের এই কথার আগের এক লাইন বেমালুম খেয়ে ফেলেছে , "ব্যাঙ্গালোরের মত , আমাদের ভুলে যাস না যেন।" ছ-মাস আগে মেয়ে ভুলেই গেছিল বাবা মার বিবাহবার্ষিকীর কথা কারণ হবু বর এর জন্মদিন ও একই দিনে। এখন থেকে আর ভুলব না আমি ছিলাম , আছি , থাকব গাঙ্গুলী হয়ে। শুধু মাঝে মাজে তোমাদের ফোন করতে ভুলে যেতে পারি।
কিন্তু ভাবুন এ রোগ কিন্তু আজকের নয়। দেবসেন, ঘোষদস্তিদার, রায়চৌধুরী তো অনেক কাল আগে থেকে। তবে পুরুষশাসিত সমাজে দুটো পদবি জুড়ে একটা পদবি হলো কি করে ? না জানিনা। তবে এখন যখন নারীবাদ প্রখর আর নারীত্বের প্রথম ধাপ হলো পদবি পরিবর্তনে বাধা তখন কিন্তু ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতেই হবে। মানে আমি ঘোষ করলাম বিয়ে কুন্ডুকে , গিন্নি নাম নিলেন নীলিমা ঘোষকুন্ডু , হলো মেয়ে , সেও নারীবাদী। বিয়ে করলো নারীবাদী আন্দোলনের নেতা জেমস বারিংহাউসকে , হয়ে গেল অর্পিতা ঘোষকুন্ডুবারিংহাউস। হলো মেয়ে বাবা মার শিক্ষায় মেয়ে নিল মায়ের পদবি আর করলো বিয়ে রাশিয়ান নারীবাদী লেখক মাইকেল দস্তভয়েস্কি হয়ে গেল ঘোষকুন্ডুবারিংহাউসদস্তভয়েস্কি। তাদেরও মেয়ে যখন স্কুলে গিয়ে ফুল নাম বলতে গেল, পড়ল ফাপরে। পিজা অর্ডার করতে গিয়ে হুলুস্থুলুশ কান্ড। G as gorilla থেকে y as yellow শেষ করতে করতে ফোন কেটে যেতে লাগলো। কি চাপ।
কিন্তু নারীবাদ ছাড়া যাবে না। আর এটাই নারীবাদের প্রথম উসুল। তাই আঁকড়ে ধরে বছর কুড়ি চলার পর ধরাম করে আমার নাতনি পড়ল প্রেমে। শেষমেষ আমার রক্ত ফিরে এলো দেশে। ছেলের নাম ভেঙ্কট। তামিল। চার পাঁচ বছর উত্তাল প্রেম করে যখন বিয়ের পিরিতে বসতে যাবে তখন আমার নাতনির খেয়াল এলো পুরো নামটা তো জানতে হবে ? বেরোলো চল্লিশ টা অক্ষর। ভেঙ্কটরামান পি ভি কে এস। নাতনি আঁতকে উঠলেও মুখে হাসি ফুটে এলো। বিয়ের পর নাতনির নাম নাতালিয়া GKBDPVKS . password এর মত পদবি হয়ে যাছে দেখে ভেঙ্কট সেটাকেই পাল্টে করে দিল ETC. আজ তারা খুশি।
এত গেল আমার ভবিষ্যতের কথা , কিন্তু বর্তমানে এই অত্যাচার নারীরা নিজের ওপর করে চলেছে। নারীবাদের নামে সহজ জিনিস জটিল করতে তাদের জুরি নেই। আরে বাপু আগে তো শশুর বাড়িতে ঘর করতে হত। এখন তো শশুর শাশুড়ির অস্তিত্ব তো ফোনে। অস্তিত্ব সংকট কিসের? দেশ সুযোগ দিয়েছে যে মেয়েরা চার ধরনের পদবি রাখতে পারে। কিন্ত বিষ থাকলেও কি খেতে হবে? যদি এতই সমস্যা তাহলে বরের পদবিটা বাদ দেওয়া হোক। কি দরকার ? না, তাহলে তো প্রেম নিবেদন হলো না।
একে তো বাঙালির নাম আর ইংলিশ বানানে সমস্যা। প্রচুর "অ" বঙ্গের গন্ডি পেরিয়ে "আ" হয়ে যায়। সাথে পদবির ঘোটালা। একমাত্র আমরাই একই পদবি দু ভাবে লিখতে পারি। chatterji - চট্টোপাধ্যায়। মাঝেই মাঝেই গুবলেট আর গুপি। লোকেদের বোমকে দেওয়াতে আমাদের জুরি নেই। আজকাল তো নাম রাখার জন্য সংস্কৃত ঘাটতে হয়। আর তার উচ্চারণ "অ" সমন্নিত বাঙালির অভিধানে পরিবর্তিত হয়ে অনুবাদিত হয় ইংরাজি অক্ষরে। সব মিলিয়ে মোরা দুর্বোধ্য।
এ এক জটিল যাতনা। ঠিক যেরকম ভাবে নারীদের "সাহসী" পদক্ষেপ হিসেবে নগ্নতাকে সম্মান করা হচ্ছে ঠিক সেরকম ভাবেই নারীরাও নিজেদের অসম্মান করছে এই সমস্ত ভুলভাল কাজ করে। নারী স্বাধীনতার মূল্য অনেক , সে স্বাধীনতা চিন্তার স্বাধীনতা। আজ নারী অস্তিত্বের লড়াই বলে যে লড়াই করছে সে লড়াই তারা আগেই জিতে গেছে। পুরুশের ক্ষমতা নেই সন্তানধারণের আর পৃথিবীর বুকে দাগ রেখে যেতে সে শরণাপন্ন নারীর। তাই অস্তিত্ব রক্ষা বা উত্থানের পথ নামের সাথে জড়িয়ে ভুল না করে যাতে উন্নতি হয় তাতে মনোনিবেশ করা উচিত। calcutta , কলকাতা হয়েও আজও বাঙালি বাঙালি কে সহ্য করতে পারে না।
এখন বিয়ের পর মেয়েরা পড়েছে ফাপরে । বিয়ের পর পদবি বদলাতে হয়। বদলে দিলে আবার সকলে সেকেলে বলবে । না বদলালে যদি আবার কিছু অকল্যাণ হয়! দুই নৌকায় পা রেখে দুটি পদবি অনেকেই চালাচ্ছেন শ্যাম এবং কুল দুটি রাখতে গিয়ে।
ReplyDelete