"একী মাছটা ঠান্ডা তো" প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে সৌম্য পাকা রুই এর পেটি থেকে হাত তুলে নিল। বেশ কদিন হলো কচি পাঁঠা বা দেশী মুরগির থেকে মন তুলে নিয়েছেন। কিছুটা বাধ্য হয়ে - কোলেস্টেরল হাই। ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই তাই ইচ্ছাটাকে মেরে ফেলা খুব দরকারী হয়ে পরেছিল। কথায় বলে মনের ডাকে সারা দিতে হয় নাহলে মন পাশ ফিরে শোয়। সৌম্য তাই অবাধ্য মনটাকে পাশ ফিরিয়ে বাধ্য ছেলের মত এখন আপাতত মাছেই মনোনিবেশ করেছে।
অকাল বার্ধক্য চেপে ধরলেও বন্ধুদের যৌবনের সাথে তাল মেলাতে তো সবাই বাধ্য। তাই বন্ধু মহলে যখন মাঝে মাঝেই প্যাঁক খায় তখন বলে, " তোদের তো সব মিলিয়ে গোটা দশেক্ রান্না। পাঁঠা আর মুরগী দিয়ে factorial ২ এর বেশি তো উঠতে পারিস না। আমার দেখ কত ধরনের মাছ। ঝালে , ঝোলে , অম্বলে মিলিয়ে ,মিশিয়ে বেশ আছি। " বন্ধুরা বলে , "হ্যা ঠিক বলেছিস আমরাই অঙ্কে কাঁচা।" দুদিন আগে পর্যন্ত ভেজিটেরিয়ান দের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধের ভীষ্ম আজ অভিমন্যু।
এরকম অভিমন্যুর ছড়াছড়ি আমাদের চারপাশে। বাঙালির কচি পাঁঠার ঝোল ভুলে এখন অতিরিক্ততা ধীরে ধীরে বাঙালিকে মাংশ থেকে সরিয়ে আনছে। সুখের খবর হলো কাছে আনছে ঐতিহ্যের। আমরা বাঙালি , আমরা মাছ খাই। ফিস ফ্রাই না। কবিরাজি না। হালকা তেলে এপিঠ ওপিঠ ছোট মাছের ঝাল। যদিও পাকা রুই , মাগুর , বোয়ালের মত তেলালো মাছ এখনো বাড়িতে আসে। চিকচিকে ইলিশের চকচকে রূপের সামনে জিভ লকলক করলেও অন্তর্বাহী বল্লমের বিদ্রোহে অনেকেই এর প্রেম থেকে বাল্যকালেই সন্যাস নিয়েছে। এখন ফিলে খোঁজা সুখী বাঙালির পাতুরি আর ভেটকি ভেবে ভুল করে হাঙ্গরের ফিস ফ্রাই পেন ছেড়ে টাইপ করার মত দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছে।
সৌম্যর যেমন শারীরিক হুড়কো তেমনি অনেক প্রবাসীর অবস্থানগত হুড়কো। তেল কই , কই? পুঁটি মাছের খোঁজে মাঝে মাঝে মৌরলা পেয়ে গেলে অন্ধেরী তে পার্টি। ট্যাংরা টুংরো খুঁজলে পাওয়া যায় বটে তবে সুরমাই আর লইট্যা নিয়েই খুশি থাকতে হয় মুম্বাই এর বাঙালি গুষ্ঠির। লইট্যা??? ঘটি বাঙাল এক করে ফেললেন দাদা। আলাদা ছিল কবে? কাঁটা আছে বলে ইলিশ ছেড়ে চিংড়ি ধরেছ আর লইট্যার বেলায় আপত্তি। ঠিক আছে , না হয় লোটে বললে। বল। কিন্তু অভ্যাসে এলে কিন্তু ওটাও চরম উপাদেয়।
ঘটি বাঙাল করে তো লাভ নেই। প্রাণপাত করে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টায় নাওয়া খাওয়া ভুলে দৌরচ্চ আর বিদেশে আঁশটানি গন্ধের পরিতৃপ্তি কি এপার বাংলা করছে? নাহ। এব্যাপারে বাঙাল-ই সেরা বাঙালি নয়। দু চারটে ফোড়া ফুস্কুরির মত এপার বাংলার দোকান থাকলেও মাছ কিন্তু পদ্মার। যদিও সব ফসিল কিন্তু ওই বললাম দুধের স্বাদ ঘোলে। হোক ঘোল তবু বাটার মিল্ক এর মত গালভরা নাম তো আছে। পাতে কালিয়া দিয়ে চালিয়ে তো দেওয়া যায়। বাংলায় বসে "ও মা ! কি গন্ধ" বলে ডিস্কো থেকে ঢুকে পরে উদ্দাম নেচে ফিরতি পথে বোনলেস ইলিশে তো আর কাঁটাচামচ ডোবাচ্ছি না। যদিও ব্যাপারটা অবাক করার মত। ঠাকুমা পিসিমা কে জল খাওয়ার সময় খবরটা দিন, তাহলেই বুঝবেন।
সে থাক, মোটামুটি বোঝা গেল যে বাঙালি আজও মাছ খোঁজে। নানা ভাবে জোগাড়ও করে। দরকার পড়লে মাছ ধরতেও শেখে। কিন্তু একটা জিনিস বোঝা গেল না , সৌম্যর পাতে মাছটা ঠান্ডা কেন। চারপাশে মম করছে বিরয়ানী পোলাও এর গন্ধ। ভুরভুরে আতর আর ঝকঝকে সাজগোজে বিয়েবাড়ির আভিজাত্যে ঠান্ডা মাছের অবস্থান বরই বেমানান। কিন্তু দুর্ভাগ্য কুড়িটা টেবিলের অন্তত তিনটেতে দীর্ঘশ্বাস মাখা হয় রোজ। সব কিছু গরম থাকবে কিন্তু মাছ হবে ঠান্ডা।
বরযাত্রীর বড়কর্তা মাছ থেকে হাত তুলে নিলে থতমত পরিবেশক আমতা আমতা করতে থাকে। সৌম্য কিন্তু ঘুরে প্রশ্ন করে না। কিছুটা লজ্জায় - মানে একটু আওয়াজ দিলেই তো পরে আওয়াজ খেতে হবে। "চল্লিশ ও হয়নি এখনি এত ফ্যাকরা" থতমত পরিবেশকের অনড় অবস্থানের আকর্ষণে "কি হলো" "কি হলো" করে দূর থেকে ছুটে আসে কন্যাপক্ষের কেউ একজন। অবস্থা বুঝে , "এক্ষুনি গরম মাছ করে নিয়ে আয়." চোখ রাঙ্গানি তে অসহায় পরিবেশক ছুটে যায় রাধুনীর কাছে। পানের পিকটা পাশে ফেলে হেড রাধুনি বলে ওঠে "ওই দেখ আরেকটা মাল। কুন্ডু বাবুর প্লেট গুলো মাঠে মারা গেল। যা মাইক্রোওয়েভ এ ঢুকিয়ে দে।" ওদিকে কন্যাকর্তা , "হঠাত ঠান্ডা পরে গেছে তো !! তাই আর কি ?" সৌম্য পাশের বৌএর প্লেটের ধোয়া ওঠা বিরিয়ানির দিকে তাকিয়ে কন্যাকর্তার দিকে তাকাতে "আসছে আসছে !! এখুনি আসছে !! কই গেল রে? " ছুটে গেলেন রান্নাঘরের দিকে। রাস্তায় বাধা, সৌম্যর মত আরেক যুবকের আবদার , "কিরে সুবীর? আমারটাও তো ঠান্ডা। গরম পাওয়া যে কি? " সুবীর খেঁকিয়ে উঠে বলল , "তোর্ কি পিলে বড় নাকি মধুমেহ? ঠান্ডা খাওয়া ভালো গরম খেলে গ্যাস বারে। যা পেয়েছিস খা , আমি দেখি ওদিকে।" কথাটা আসতে আসতে বললেও কানে এলো সৌম্যর। বউ প্লেটটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল , "একদিন খেলে কিছু হবে না। খেয়ে নাও।"
অকাল বার্ধক্য চেপে ধরলেও বন্ধুদের যৌবনের সাথে তাল মেলাতে তো সবাই বাধ্য। তাই বন্ধু মহলে যখন মাঝে মাঝেই প্যাঁক খায় তখন বলে, " তোদের তো সব মিলিয়ে গোটা দশেক্ রান্না। পাঁঠা আর মুরগী দিয়ে factorial ২ এর বেশি তো উঠতে পারিস না। আমার দেখ কত ধরনের মাছ। ঝালে , ঝোলে , অম্বলে মিলিয়ে ,মিশিয়ে বেশ আছি। " বন্ধুরা বলে , "হ্যা ঠিক বলেছিস আমরাই অঙ্কে কাঁচা।" দুদিন আগে পর্যন্ত ভেজিটেরিয়ান দের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধের ভীষ্ম আজ অভিমন্যু।
এরকম অভিমন্যুর ছড়াছড়ি আমাদের চারপাশে। বাঙালির কচি পাঁঠার ঝোল ভুলে এখন অতিরিক্ততা ধীরে ধীরে বাঙালিকে মাংশ থেকে সরিয়ে আনছে। সুখের খবর হলো কাছে আনছে ঐতিহ্যের। আমরা বাঙালি , আমরা মাছ খাই। ফিস ফ্রাই না। কবিরাজি না। হালকা তেলে এপিঠ ওপিঠ ছোট মাছের ঝাল। যদিও পাকা রুই , মাগুর , বোয়ালের মত তেলালো মাছ এখনো বাড়িতে আসে। চিকচিকে ইলিশের চকচকে রূপের সামনে জিভ লকলক করলেও অন্তর্বাহী বল্লমের বিদ্রোহে অনেকেই এর প্রেম থেকে বাল্যকালেই সন্যাস নিয়েছে। এখন ফিলে খোঁজা সুখী বাঙালির পাতুরি আর ভেটকি ভেবে ভুল করে হাঙ্গরের ফিস ফ্রাই পেন ছেড়ে টাইপ করার মত দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছে।
সৌম্যর যেমন শারীরিক হুড়কো তেমনি অনেক প্রবাসীর অবস্থানগত হুড়কো। তেল কই , কই? পুঁটি মাছের খোঁজে মাঝে মাঝে মৌরলা পেয়ে গেলে অন্ধেরী তে পার্টি। ট্যাংরা টুংরো খুঁজলে পাওয়া যায় বটে তবে সুরমাই আর লইট্যা নিয়েই খুশি থাকতে হয় মুম্বাই এর বাঙালি গুষ্ঠির। লইট্যা??? ঘটি বাঙাল এক করে ফেললেন দাদা। আলাদা ছিল কবে? কাঁটা আছে বলে ইলিশ ছেড়ে চিংড়ি ধরেছ আর লইট্যার বেলায় আপত্তি। ঠিক আছে , না হয় লোটে বললে। বল। কিন্তু অভ্যাসে এলে কিন্তু ওটাও চরম উপাদেয়।
ঘটি বাঙাল করে তো লাভ নেই। প্রাণপাত করে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টায় নাওয়া খাওয়া ভুলে দৌরচ্চ আর বিদেশে আঁশটানি গন্ধের পরিতৃপ্তি কি এপার বাংলা করছে? নাহ। এব্যাপারে বাঙাল-ই সেরা বাঙালি নয়। দু চারটে ফোড়া ফুস্কুরির মত এপার বাংলার দোকান থাকলেও মাছ কিন্তু পদ্মার। যদিও সব ফসিল কিন্তু ওই বললাম দুধের স্বাদ ঘোলে। হোক ঘোল তবু বাটার মিল্ক এর মত গালভরা নাম তো আছে। পাতে কালিয়া দিয়ে চালিয়ে তো দেওয়া যায়। বাংলায় বসে "ও মা ! কি গন্ধ" বলে ডিস্কো থেকে ঢুকে পরে উদ্দাম নেচে ফিরতি পথে বোনলেস ইলিশে তো আর কাঁটাচামচ ডোবাচ্ছি না। যদিও ব্যাপারটা অবাক করার মত। ঠাকুমা পিসিমা কে জল খাওয়ার সময় খবরটা দিন, তাহলেই বুঝবেন।
সে থাক, মোটামুটি বোঝা গেল যে বাঙালি আজও মাছ খোঁজে। নানা ভাবে জোগাড়ও করে। দরকার পড়লে মাছ ধরতেও শেখে। কিন্তু একটা জিনিস বোঝা গেল না , সৌম্যর পাতে মাছটা ঠান্ডা কেন। চারপাশে মম করছে বিরয়ানী পোলাও এর গন্ধ। ভুরভুরে আতর আর ঝকঝকে সাজগোজে বিয়েবাড়ির আভিজাত্যে ঠান্ডা মাছের অবস্থান বরই বেমানান। কিন্তু দুর্ভাগ্য কুড়িটা টেবিলের অন্তত তিনটেতে দীর্ঘশ্বাস মাখা হয় রোজ। সব কিছু গরম থাকবে কিন্তু মাছ হবে ঠান্ডা।
বরযাত্রীর বড়কর্তা মাছ থেকে হাত তুলে নিলে থতমত পরিবেশক আমতা আমতা করতে থাকে। সৌম্য কিন্তু ঘুরে প্রশ্ন করে না। কিছুটা লজ্জায় - মানে একটু আওয়াজ দিলেই তো পরে আওয়াজ খেতে হবে। "চল্লিশ ও হয়নি এখনি এত ফ্যাকরা" থতমত পরিবেশকের অনড় অবস্থানের আকর্ষণে "কি হলো" "কি হলো" করে দূর থেকে ছুটে আসে কন্যাপক্ষের কেউ একজন। অবস্থা বুঝে , "এক্ষুনি গরম মাছ করে নিয়ে আয়." চোখ রাঙ্গানি তে অসহায় পরিবেশক ছুটে যায় রাধুনীর কাছে। পানের পিকটা পাশে ফেলে হেড রাধুনি বলে ওঠে "ওই দেখ আরেকটা মাল। কুন্ডু বাবুর প্লেট গুলো মাঠে মারা গেল। যা মাইক্রোওয়েভ এ ঢুকিয়ে দে।" ওদিকে কন্যাকর্তা , "হঠাত ঠান্ডা পরে গেছে তো !! তাই আর কি ?" সৌম্য পাশের বৌএর প্লেটের ধোয়া ওঠা বিরিয়ানির দিকে তাকিয়ে কন্যাকর্তার দিকে তাকাতে "আসছে আসছে !! এখুনি আসছে !! কই গেল রে? " ছুটে গেলেন রান্নাঘরের দিকে। রাস্তায় বাধা, সৌম্যর মত আরেক যুবকের আবদার , "কিরে সুবীর? আমারটাও তো ঠান্ডা। গরম পাওয়া যে কি? " সুবীর খেঁকিয়ে উঠে বলল , "তোর্ কি পিলে বড় নাকি মধুমেহ? ঠান্ডা খাওয়া ভালো গরম খেলে গ্যাস বারে। যা পেয়েছিস খা , আমি দেখি ওদিকে।" কথাটা আসতে আসতে বললেও কানে এলো সৌম্যর। বউ প্লেটটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল , "একদিন খেলে কিছু হবে না। খেয়ে নাও।"
No comments:
Post a Comment