Wednesday, October 7, 2015

এবার পুজোয় একটা মাল তুলব

নিল আকাশে পেঁজা পেঁজা মেঘের সারি, কাশ ফুলের দোল, কখনো ঠান্ডা কখনো গরম হাওয়া যখন একা করে দেয় তখন দীর্ঘশ্বাস থেকে একটা কথা ই বেরিয়ে আসে , "নাঃ ! এবার পুজোয় একটা মাল তুলব।"

দূর্গা পুজো আর একাকিত্ব কিছু ব্যক্তিত্বের জন্য সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ।  এদের অর্থ পার্থক্য নির্ণয় করতে হলে ব্যক্তির সঙ্গী বা সঙ্গিনীদের উপস্থিতির গুরুত্ব প্রধান মাপকাঠি। প্রকৃতির অবহেলায় কিছু পুরুষের ভাগ্যে নারী সঙ্গ জোটেনা।  কারণ? বহুধাবিভক্ত।  তাই বিচার বা ব্যাখ্যা অপ্রয়োজনীয়। সমষ্টি যখন অঙ্গসম্মেলনে পূজা প্রাঙ্গনে সর্বজনগৃহীত পৌরুষের প্রদর্শনী করে, এই হতভাগ্য তখন নিরবে মহোৎসব প্রদক্ষিন করে নিজ ভাগ্যের প্রতি করাঘাত করে।

আপন পৌরুষের প্রতি গর্ব থাকলেও গৌরবান্বিত হতে হলে তাদের প্রয়োজন অনুমোদন। সমাজ সমক্ষে সঙ্গ দেওয়ার স্বীকৃতি জনশূন্য স্থানে ওষ্ঠমিলনে প্রাপ্ত হলে এই পৌরুষ পূর্ণতায় পর্যবসিত হয়।  কিন্ত পুজোপ্রাঙ্গন নামক ক্রিড়াক্ষেত্রে  চার দিনের এই প্রদর্শনীর প্রস্তুতি তিনশ দিন আগে থেকে শুরু করতে হয়।  এই প্রজাতির পক্ষে ধৈর্য, অপেক্ষা ও পরিশ্রম কোনোটাই অপেক্ষনীয় নয়।  এরা তাই প্রকৃত অর্থে "মাল" চায়।

গেলাম দেখলাম পর্যন্ত এরা ঠিক আছে।  কিন্তু জয় করার পরিবর্তে এরা "পেলাম" বা "দিল" তে বেশি উত্সাহী। কারণ রমনীর রোমাঞ্চকর সঙ্গ  সহজলভ্য। ঘর্মস্নাত গ্রীষ্মে, প্লাবনপ্রসু বর্ষায়, কম্পমান শৈত্যে ( গনগনে গরমে, ঝম ঝমে বৃষ্টিতে, কনকনে ঠান্ডায়) প্রচেষ্টার প্রচার করে চলতে হয়।  তদুপরি লোহিত্গন্ধি প্রবাহিত উষ্ণ শোণিতকে উপেক্ষা করে হৃদিরঙ্গে রঞ্জিত গোলাপ পরিবেশন করতে হয়। উত্সাহ প্রবল থাকলেও, আলস্য এবং অতিরিক্ত মিতব্যয়িতা এই প্রজাতি কে প্রচেষ্টা থেকে ব্যাহত রাখে। কিন্তু সময়ের গতি অব্যাহত।

অসময়ে এই প্রজাতির গর্বিত ভবগুরে মুক্ত জীবনের উল্লাসগান বন্ধনপ্রীত নারীপিরিত পুরুষসমাজের কাছে ইর্ষনীয় হয়ে থাকে।  বঙ্কিম স্মিতহাস্যে এরা চুক্তিবদ্ধ বন্ধুদের আক্ষেপের সমব্যথী হয়। একাকিত্ব তখন উচ্ছসিত। বন্ধনহীন উন্মুক্ত আকাশে উদ্যেশ্যহীন যাত্রার রোমাঞ্চ তখন স্বাধীনতার শিকল ভাঙ্গার গান।  গরাদের পিছনের পূর্ণগ্রাস গ্রহণে নিমজ্জিত পুরুষদের তখন নখর উচ্ছেদ অভিযান। তাদের তখন সুসময়ের প্রস্তুতিতে আত্মভোলা উচ্চগ্রাম দেবীস্তুতি।

সময় যখন সামনে এসে দাড়ায়।  সম্ভাব্য প্রশ্নপত্র প্রশ্ন করে প্রস্তুতির। এই প্রজাতি তখন নিরব। অথচ পাশ না করলে অসম্মান। মুক্ত উড়ানের ডানায় লেগে থাকা পরাগরেনুর মাঝে মধু অন্বেষণে তীব্র প্রচেষ্টায় অসফল হয়ে নিয়তির পক্ষপাতিত্বে বিষদৃষ্টির অভিক্ষেপ করে। যেন তেন প্রকারেণ এই যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার প্রচেষ্টায় আবার নারী "মাল" এ পরিবর্তিত হয়।  সঘোষে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হুঙ্কার আসে, "পরের বারের জন্য এবারে মাল তুলতেই হবে।"

পরীক্ষার দিন পরীক্ষার সময়ে পরীক্ষা শুরু হয়।  এতকাল অন্ধকারে বন্ধ হয়ে দেবী বন্দনায় নিমজ্জিত বাল্মীকিরা সহস্র বন্ধন মাঝে মুক্তির স্বাদ উপভোগ করতে শুরু করে।  আর এই প্রজাতি চার দিনে "মাল" এর অন্বেষণ করে চলে। সাফল্য কঠিন হলেও, অসম্ভব নয়।  কারণ পরলিঙ্গেও এই প্রজাতি বর্তমান। সাথে আরো এক প্রজাতি প্রতি পুজোতে "মাল" হতে চায়।  তাদের উদ্যেশ্য ক্ষণেকের শান্তি আর লক্ষ্য "মাল"পিপাসুদের পকেট। তারা দেবী দুর্গার মতই দশ হাত বিস্তার করে এই চার দিনের জন্য তাদের করাল গ্রাসে নিয়ে আসে।  সমর্থ "মাল"পিপাসুরা পরীক্ষায় সফল হয়ে জর্জরিত পুরুষসমাজে ঈর্ষার সৃষ্টি করে বটে।  কিন্তু সফলতার সংখ্যা বরই সীমিত।

বিজয়ার সাথে সাথে এই "মাল"তৃষ্ণার অপ্রীতিকর পরিনাম "মাল"তৃপ্ত ও "মাল"রিক্ত বন্ধুযুগলের বিচ্ছেদ। তড়িৎগতিতে "মাল" অপ্রয়োজনীয় পদার্থে পরিবর্তিত হয়ে আবর্জনার স্তুপে নিক্ষেপিত হয়।  আবার বাতায়ন থেকে ভেসে আসে মুক্তির গান। এই প্রজাতি ফিরে যায় আপন জীবনে এবং আত্ম কে কেন্দ্র করে স্বার্থ সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করে।  সেই লক্ষনরেখা ধরে হাটতে হাটতে পরের পুজোয় আবার "মাল" এর প্রয়োজনে আক্ষেপ করে।  এই প্রজাতির চিরন্তন অনিত্য জীবন গতি স্বীয় গোষ্ঠিতে পরিচিত হয় তাদের আকাঙ্খিত উদ্যেশ্যের দাড়াই। তাদের বৃহত্তর সমাজে  "বৃহৎ মাল" বলা হয়।    

 




Monday, August 24, 2015

সোশ্যাল সন্যাস

ফোন টা অন্ধকার ঘরে জ্বলে উঠলো সাথে একমেবাদ্বিতীয় iphone রিংটোন।  এলার্ট টোনেও সেম রিংটোন।  চোখ কুচলে দেখলাম বারোটা বেজে গেছে। মাসের প্রথম  দিন শুরু। লেখা ভেসে উঠলো , "সন্যাস শেষ" . ও হ্যা তাইত। আজ থেকে আবার facebook, twitter, instagram, whatsapp ডট ডট ডট চালু। কিন্তু এ কি হলো। সন্যাস শেষ করার আনন্দে হাতে তো মোবাইল টা উঠে এলো না।  আঙ্গুল গুলও নড়ে উঠলো না।  কি চলছে, কেন চলছে , কে বলছে , কে বলছে , কি করছে , কেন করছে আর আমি কি করতে পারি প্রশ্ন গুলো তো মাথার মধ্যে গিজ গিজ করে উঠলো না।  দিব্যি পাশবালিশে মুখ গুঁজে আবার ফিরে গেলাম আমার নিদ্রার জগতে।

হ্যা ঠিক এরকমই হয়েছিল যেদিন আমার এক মাসের সন্যাস শেষ হয়েছিল social networking site থেকে। শুরুটা যদিও ভয়ংকর। হঠাত কি মনে হলো একদিন , তিরিশ তারিখ সগৌরবে ঘোষণা করলাম এক মাস পর দেখা হবে।  পনের মিনিট এর মধ্যে বন্ধু বান্ধব রা আঁতেল, জ্ঞানের গুজিয়া, ন্যাকামো , ঢং, আর সাথে তীব্র খিস্তি সহযোগে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালো। কোনো উত্তর না দিয়ে ধীরে ধীরে সমস্ত app ডিলিট করে সুখনিদ্রায় মগ্ন হলাম।

পরের দিন সকাল থেকে শুরু হলো উসখুশানি। কিছু একটা নেই। আঙ্গুলের মাসল, চোখের পাতা, হাসির চোয়াল সবাই একসাথে অস্বস্তিকর এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করলো। ফোনটা পকেট এ রেখে অফিসে এলাম কিন্তু মাঝে মাঝেই ফোন হারিয়ে গেছে এরকম একটা অনুভূতি হতে লাগলো। বুঝলাম ফোনটা আর গরম হচ্ছে না।  তাই কিছু আছে পকেটে সেটাই বোঝা যাচ্ছে না।  এ তো নোমোফোবিয়া।  নাহ , সে তো ফোন হারিয়ে গেলে হয়।  কিন্তু সত্যি সারাটা দিন ফোন টা যেন পাথর হয়ে থাকলো। না ভাইব্রেশন না তুং তাং না কিছু। মাঝে মাঝেই তাকাচ্ছি ফোনের দিকে।  কিন্তু পাথর আর সোনা হচ্ছে না।

বিকালে বাড়ি ফিরে দেখি অঢেল সময়। দিন যেন শেষই হতে চায় না।  আচ্ছা মেইল টা কি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এর মধ্যে পরে।  ভাষাগত দিক থেকে তো পরে।  তাহলে কি ওটাকেও বাদ দিতে হবে।  বেশ কিছুক্ষণ চুলচেরা বিশ্লেষণের পরে ঠিক করলাম, মেইল টা বাদ দেওয়া যাবে না।  কত দরকারী কাজ থাকে। তাই সেটা থাক।  সন্যাস নেওয়ার চক্করে যদি ভাত না খাওয়া হয় তাহলে তো পটল তুলতে হবে।

মেইলটাই খুলে বসলাম। অর্কুট এর আগে মেইল ই ছিল সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং। আমিও ডাইনোসরের যুগের তাই যতই চল্লিশ টা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে নাম থাকুক না কেন yahoo গ্রুপ বা গুগল গ্রুপ গুলো থেকে এখনো নাম কাটাই নি।  আগে দিনে ৫০০ মেইল আস্ত সেটা এখন পাঁচটা মেইল এ ঠেকলেও কিছু লোক এখনো সেকেলে।  তারা এখনো সেখানে পোস্ট করে।  আমি খুব ই কম চেক করি।  কিন্তু এখন খুলে দেখি আমার হাতে পনের হাজার unread মেইল। আরিব্বাস ! পর পর চেক করতে থাকলাম।  বেশ ভালো লাগছিল।  কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই বোর।

ব্যাপারটা খুঁটিয়ে দেখতে বুঝতে পারলাম ব্যাপারটা ইন্টারেক্টিভ নয়।  মানে কেউ মেল পাঠিয়েছে , ভুলভাল পাঠিয়েছে, খিস্তি মেরে রিপ্লাই করলাম। কিন্তু দেখলাম মেলটা এক বছর পুরনো। reply এর reply ও মনে হয় এক বছর পর পাব।  এখন সব "এখনই" র যুগ।  শুধু তাই নয়।  instagram থেকে প্রথম ছবি নিয়ে ফেইসবুক আর tumbler এ পোস্ট করার যে কি আনন্দ সেটা মেল এ নেই।  একটা দুটো মেল ফরওয়ার্ড করলাম বন্ধুদের কিন্তু দেখলাম আমার আজকের সমস্ত বন্ধুদের মধ্যে কয়েকজনের ইমেইল id আমার কাছে আছে।  কি বিপদ। শুধু তাই নয়।  কয়েকজনার মেইল আবার বাউন্স করলো। তারা কালকে কি জামা পরেছিল সেটা আমি জানি কিন্তু তারা যে কলেজ লাইফের ইমেইল বন্ধ করে দিয়েছে তার কোনো খবর নেই।

বাঙালির কাছে তর্ক হলো হাজমোলার মত।  দূর বিদেশে ঠেক বা বেঞ্চি কিছুই নেই।  ফোন করে কনফারেন্স হয় না , সময়ের ব্যবধানের জন্য। ওরা যখন দু বোতল বিয়ার নিয়ে খোশ মেজাজে বঙ্গের উরুভঙ্গ করছে তখন আমি ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজছি।  আর ঠেক এর বদলে ওয়ান - টু - ওয়ান , দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর মত।  বাচিয়েছে এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট। বোমা মেরে লেপের তলায়। উঠে দেখো কামান এনেছে।  তুমিও জেট এর এক্সেলারেটর এ চাপ দিয়ে আবার লেপের তলায়। বেশ ভালো ছিল।  সন্যাসটা ঠিক হলো না।

এরকম করে দিন কাটতে লাগলো। ভয়ংকর এক একাকিত্ব বেতালের মত চেপে ধরতে লাগলো। শেষে "নিজেকে ভালবাস তুমি এবার" স্বার্থপরতা মুক্তির উপায়। ভুরির দিকে তাকিয়ে সময় কাটানোর এক অনবদ্য উপায় খুঁজে বার করলাম। দৈহিক পরিশ্রম করো , ক্লান্ত হও , ঘুমিয়ে পরো।  ভর্তি হলাম জিম এ।  প্রথম দিনেই বিশাল নাচানাচি করে দ্বিতীয় দিনে কমোট এ বসতে পারছি না।  অথচ পরের দিন যদি না যাই তাহলে এই যন্ত্রণা থেকে যাবে। আবার পরের দিন , এবার ভয়ংকর এক খিঁচ লেগে গেল। trademill এ সজ্যা।  trainer "কি হলো , কি হলো " করে দৌড়ে এসে বলল "একবার ওজনের দিকে দেখুন। আগে কমান তারপর দৌরণ।  আপাতত হাঁটুন আর লাউএর জুস খান।"

তাই করলাম। রোজ বিকালে অফিস থেকে ফিরে কানে হেডফোন লাগিয়ে লম্বা হাঁটা। detroit এ সামার বলতে ফুস্কুরির মত।  ভাগ্গিস শুরু হয়ে গেছিল। তাই হাঁটতে বেশ ভালই লাগছিল। কিন্তু চারপাশে ফুটে থাকা নানা ধরনের ফুল আর ল্যান্ড স্কেপ দেখে হাত টা বার বার মোবাইল কামেরার দিকে চলে যেতে লাগলো। কিন্ত তুলে কি হবে যদি শেয়ার ই না করতে পারি।  নিজে রাঁধি , নিজে খাই নিজেই বলি আহামরি যাই।  তবু থাক।  স্মৃতি তো বাড়ছে।

দশ দিনে দশটা পার্ক ঘোরা হয়ে গেল। আর মোবাইলটা পকেট থেকে বেরোচ্ছে না।  একই ছবি বার বার কি তুলব। কিন্তু একি দৃশ্য বার বার করে দেখে , বার বার নতুন নতুন জিনিস দেখতে পাচ্ছি। ঘাড়টা সোজা করে রাস্তায় হাটছি। কত কিছু চার পাশে। কত লোক কত অদ্ভূত ভাবে হাটছে। বড় বড় কানাডিয়ান গুস তার কাচ্চাবাচ্চা নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। রাস্তায় গাড়ি দাড়িয়ে পরছে তাদের জন্য।  ছবিটা আগেও দেখেছি কিন্তু গাড়ির ভেতর থেকে বিরক্তিসূচক অপেক্ষার প্রতিফলনে চোখ চলে গেছে মেসেজ এর ওপর।  এখন কিন্তু দেখতে পারছি একটা একটা করে তুলোর দলার মত ছোট ছোট বাচ্চা গুলো লাইন দিয়ে রাস্তা পেরোচ্ছে।

অফিসে রোজ দিনই কোনো না কোনো ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়।  সকালে ঘুম থেকে উঠে আধ ঘন্টা ফেইসবুক ঘাঁটলেই দেখা যায় কি চলছে পৃথিবীতে। তাই আলোচনার আগেই সব কিছু উগলে দিয়ে "আমি কি হনু" দেখানোটা আমার কাছে অভ্যাস হয়ে দাড়িয়েছিল। সন্যাস সেটাতেও বন্ধ সেধেছে। বয়স্ক collegue দের প্রাতরাশ এর CNN , BBC র ওয়েবসাইট খোলার ইচ্ছা আমার কখনই ছিল না।  সেই কারণে অভ্যাস করে টেলিগ্রাফ স্টেটসম্যান ও পরিনি বিশেষ। কিন্তু আজ তারাই বিজয়ী। আমি এখন শুধুই বিস্ময় সুচক "তাই??" বলে ওয়েবসাইট দেখতে লাগলাম। সবাই একটু চমকে গেছিল। যে মানুষটা নেপাল ভূমিকম্পর ২৫ মিনিট পরে সবাই কে donation দেওয়ার মেল করেছিল সে কি করে "নেট neutrality" র তোলপার থেকে বাইরে।

আমি তখন কাছের মানুষদের দেখছি। কি করে ব্রায়ান তার খুচরো যোগার করে ভেন্ডিং মেশিন থেকে, পাশের বাড়ির ছেলেটি মাঝ রাতে সিগারেট খেতে খেতে সোমালিয়ায় মায়ের সাথে কথা বলে, divorcee গোরা নাটালি তার দুই দত্তক নেওয়া কালো বাচ্চার সাথে কি করে খাবার খাওয়ায়, চীন থেকে সদ্য আসা তিন বুড়ো বুড়ি বিকেলে মাঠে martial আর্ট করে।  হয়ত খুব সাধারণ কিন্তু সত্যি আগে খেয়াল করিনি। রাতের আঁধারে ছুটে যাওয়া খরগোশের বাচ্চার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে একা নয়।  আরো দুটো হরিন দুরে দাড়িয়ে আছে।  ওদিকের সিগনাল গ্রীন থেকে রেড হওয়ার পর এক-দুই-তিন বললে তবে এদিকের সিগনাল গ্রিন হয়। সবার পায়ের শব্দ যেমন আলাদা, সবার টাইপ করার শব্দও আলাদা। গাড়ির সামনের জানলা না খুলে পেছনের দরজা খুললে একটা অদ্ভূত হাওয়ার শব্দ হয়।  আর গিন্নির কানের লতিতে হাত ছোয়ালে শরীরে শিহরণ জাগে।

ধীরে ধীরে সব কিছু কেমন যেন খুলে যেতে লাগলো।  পরিষ্কার।  পরিছন্ন।  এক অদ্ভূত স্বাদ সেই একাকিত্বের। সূর্যোদয় সূর্যাস্ত দেখছি কিন্তু এতদিন দেখতে পারছিলাম না পায়ের কাছের নরম আধভেজা বালিতে হেঁটে যাও শামুকটাকে।  কেউ আমাকে দেখছে না।  কারণ আমি দেখাচ্ছিনা।  যাদের দেখাতাম তারা কিন্তু কিছু করছে না।  যারা করছে তারা দেখাচ্ছে না যে তারা করছে। এক বিচিত্র খোল থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম সেই এক মাস।  ঠুলিটা নিজেই পরেছিলাম , কিন্তু ভুলেই গেছিলাম ঠুলি পরেছিলাম। নেশায় উন্মাদ হয়ে দৌড়ে , দৌড়ে ভুলেই গেছিলাম যে নেশার শেষে নিত্য পৃথিবী আছে।

এত দিন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এ ঢেউ দেখেছিলাম। এদের ফর এ এদের এগেইনস্ট এ কত লোকে কত তর্ক করে। গঙ্গাজলে পেচ্ছাপ করে গঙ্গাপুজো করে চরণামৃত খেতেও দেখেছিলাম। কিন্তু আজ দেখলাম গন্ডগোলটা নিজের। ছোটোবেলার সেই কথা, "কোনো কিছুই বেশি ভালো নয়."  এর ক্ষেত্রেও সত্য। এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট যেমন দুরের মানুষকে কাছে এনে দিয়েছে তেমনি , কাছের মানুষকে ভুলে যেতেও শিখিয়েছে।  আড্ডা যেমন বাঙালিকে সৃজনশীল বাঙালি করে তুলেছে তেমনি অকর্মন্য করে তুলেছে। তুমি কোন দলে সেটা তোমার ব্যাপার।

রাতের ঘুম শেষ করে সকালে যখন আবার নতুন করে সব apps ইনস্টল করলাম তখন বেশ ভালো লাগলো। hangover কেটে গেছে।  মনের থেকে প্রচুর টক্সিক এলিমেন্ট বেরিয়ে চলে গেছে। এখন হাড়িয়ার জায়গায় এক পেগ স্কচ আর জোকস এর বদলে খুশবন্ত সিং আর জাগ সুরাইয়া।







Wednesday, August 5, 2015

কিছু যায় আসে না

"You have successfully completed PMP exam" দেখে কি আনন্দই না হলো।  চার ঘন্টার বিনা জল আর বিনা বাথরুমে যুদ্ধ ক্ষেত্রে ধস্তাধস্তির পর যখন বিজয়ী বীর হয়ে বেরিয়ে এলাম তখন মনে হলো যেন "কি আমি হনু।" দাড়িয়ে দাড়িয়ে ল্যাজ দোলাচ্ছি , আর সবাই কে খবর দিচ্ছি।  মানে অফিসের লোকজন। সবাই খুব খুশি। মানে আমি খুশি তাদের বলে কারণ আমার "দ্যাখ কেমন লাগে" ফোনের উত্তরে তাদের মেকি খুশির অভিব্যক্তি বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছিলাম। "তুই ছেড়ে দে ভাই। .. তুম সে না হো পায়েগা" লোকগুলো গলা ফুলিয়ে "আমি জানতাম, তুই পারবি।" উফ কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। just ধরে রাখতে পারছিলাম না।

অফিসের খোরাক শেষ করে আয়েশে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে এবার পালা বাড়ির লোকেদের।  শেষ ন মাস ধরে এই পরীক্ষার জন্য আমি গর্ভবতী। সবাই কে জালিয়ে পুড়িয়ে  ছারখার করে দিয়েছি। যখন ইচ্ছা ফোন করেছি যখন ইচ্ছা ফোন রেখেছি। কেউ খুব একটা জিগ্গেস করেনি কি করছিস। শুধু কিছু একটা করছি এই  আশায় কেউ বেশি খোচায়নি।  মা মাঝে মাঝে বলে উঠত , "বাবু , ডিপ্রেশন এ যেন চলে যাস না।" একটা পরীক্ষা ফেল করলে কেউ ডিপ্রেশন - এ যায় ? এখন রেসাল্ট হাতে নিয়ে লিখতে বসে প্রচুর কপচাচ্ছি বটে তবে ফেল করলে সত্যি চলে যেতাম ডিপ্রেসন - এ। মা খুব ভালো করে জানে, কারণ আগের সমস্ত যুদ্ধের আগের ও পরের ঘ্যানঘ্যানানি মা ছাড়া আর বেশি কাকে সহ্য করতে হয়েছে।

ঘুম জড়ানো গলায় ফোন তুলে মা হ্যালো বলতে আমি প্রচন্ড উত্তেজিত খুশিতে "মা পাশ করেছি" বলে উঠলাম। লং ডিসটেন্স কল আর সাথে দুর্বল মেলিয়াস, ইনকাস , স্টেপিস কি বুঝলো জানিনা উত্তর এলো , "একটু ধর। আমি এখনো উঠিনি বিছানা ছেড়ে।" বেলুনটা চুপসে গেল।  তারপর কিছুক্ষণ নিরবতা। ঘুম থেকে উঠে বেশ কিছু ঠাকুর দেবতা স্মরণ টরণ করে এবার উত্তর এলো, "হ্যা বল.." আমি চেষ্টা করলাম আবার উত্তেজনা আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসতে।  পুরো হলো না।  তবু বুকে স্বাস টেনে আবার বলতে যাব হঠাত টিং টং।  "একটু ধর, কে এসছে।" আবার গ্যাদগ্যাদে হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম।  কাজের লোকের আগমন। "বাবু একটু পরে ফোন কর।  চা বানিয়ে তোর সাথে কথা বলছি।"

ফোন রেখে একটু ডাউন হয়ে গেলাম।  মায়ের খেয়ালই নেই যে আমার আজকে পরীক্ষা ছিল।  তারপর নিজেরই মনে পরে গেল , আমারই খেয়াল ছিল না মাকে বলার বা পরীক্ষার জন্য আশির্বাদ নেওয়ার। শোধ বোধ।  whattsapp খুলে বন্ধুদের গ্রুপ এ পোস্ট করলাম। উত্তর এলো , "এটা করে কি এমন বড় ইয়ে হলি।" কথাটা সত্যি। কাঁধের কাছে হাত দিয়ে দেখলাম ডানাটা নেই।  পরের জন , "CONGRATULATION.... " দু তিনটে smiley. মনে হলো কেউ তো বুঝলো।  কিন্তু তার পরের লাইনে লিখলো , "কিন্তু ও তো গু ঘাঁটা। ... ওপর থেকেও খিস্তি নিচের থেকেও খিস্তি।" ম্যানেজার হলে সত্যি দুপক্ষ থেকে খিস্তি খেতে হয় বটে।  কিন্তু তা বলে কি। ..... আরেকজন দেখলাম facebook messenger এ পিং করলো ,"হ্যা রে, ডাম্প কোথায় পেলি।" সেই আবার whatsapp মেসেজ করলো , "ইঞ্জিনিয়ারিং পরে শেষমেষ ম্যানেজমেন্ট।" রাগ হলেও মজা লাগলো।  ভাবলাম উত্তর দিই কিন্তু আরেকটা মেসেজ এলো , "ভাই পার্টি কবে দিচ্ছিস। .. স্কচ কিন্তু। " তারপরেই ঝর উঠলো , "না না। . ভদকা।" "ধুর ভদকা তো মেয়েরা খায়।" "ভাই PMP পাস করলে লোকে ছেলেবেলার Old Monk ভুলে যায়।" "এরকম খুশির খবরে বাংলা  চাই ভাই  ..  বাংলা।" "ব্যাটা গন্ধকুমার তুই খা বাংলা। আমাদের জন্য তুই ভাই স্কচ নিয়ে আসিস।" "শুধু নেশা আর নেশা।.. যারা নেশা করে না তাদের জন্য কি?" "ভাই হারুর জন্য বিয়ার আনিস।" সব অন্য দিকে চলে গেল।  আমি ভোদার মত দেখে গেলাম। ঝগড়া চলতে লাগলো কিছক্ষনের মধ্যে সবাই ভুলে গেল আসল তর্কের কারণটা কি।

মা মিস কল দিচ্ছে। গর্বে ফোলা বুক ততক্ষণে ঝুলে গেছে।  মা কে ফোন করতে।  " হ্যা বল এবার। .. এই কাজের লোকেদের জ্বালায় আর পারছি না।  একটু চোখ সরালেই সব গন্ডগোল।" এরপর কিছুক্ষণ পিন্ডি চটকানো হলো।  তারপর এখান ওখানের খবর।  আমিও ভুলে গেলাম যে আমি কিছু বলতে চাইছি। দিব্যি খোশমেজাজে হাবিজাবি গল্প করতে করতে কিছুক্ষণ পর হঠাত মায়ের খেয়াল হলো , "তুই কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলিস।" আমি বললাম, "ওই পরীক্ষা নিয়ে আর কি। " ততক্ষণে সব এনার্জি শেষ। ঘাম ঝরিয়ে পরীক্ষা পাশ করে যে ঘ্যাম হয়েছিল তার বিন্দু মাত্র অবশিষ্ট নেই।  মা বলল , "হ্যা তোর ওই পরীক্ষা আর পড়া আর tension. অনেক তো হলো।  এবার একটু বাচ্চা কাচ্চা নিয়েও তো চিন্তা করতে হবে না কি। বয়স তো পেরিয়ে যাচ্ছে। এত পড়ে কি করবি? " "মা এটা চাকরিতে আমাকে উন্নতি করতে সাহায্য করবে।" "আর তোর এই উন্নতির লোভ।  আরে যা লেখা আছে ভাগ্যে তাই হবে।  অত ambition থাকলে জীবন নষ্ট হয়। একটু ভালো করে সংসার কর আগে।"
হ্যা হু গা গু করে এখানেও কথা ঘুরে গেল।

কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকলাম।  তারপর নিজের গোপন ব্লগ খুলে লিখলাম, "আজ আমি PMP পাস করেছি। খুব খুশি হয়েছিলাম।  ভেবেছিলাম বিশাল কিছু একটা হয়ে গেছি। খুব কঠিন ছিল পরীক্ষা। ভেবেছিলাম সবাই খুব ভালো বলবে। বলেওছে।  কিন্তু নিজের লোকেদের কাছে এর মূল্য অত্যন্ত সাধারণ। ভুল আমারই। পার্সোনাল আর প্রফেশনাল এ ঘুলিয়ে ফেলেছিলাম । চাকরিতে আমি ভেবেছিলাম একটা কিছু করে হয়ত কেয়াবাত কেয়াবাত পাব।  কিন্তু তারা তো আমায় আমার উন্নতির মাপকাঠি দিয়ে দেখে না।  তাদের কাছে রোজগার চালু থাকলেই হলো।  তাদের কাছে আমার সৌন্দর্য্য আমার  সঙ্গ।  আমি খুশি হলে, না বুঝেই তারা খুশি।  কিন্তু খুশি আমার সাফল্য বা দুক্ষ আমার পরাজয়ে নয়। তাদের কাছে আমার জন্য কোনো মাপকাঠি নেই। তাই তাদের কিছু যায় আসে না। আর সত্যি তো আমি একটা ইঁট গেথে ভাবছি আমি বিশাল। কিন্তু আমার প্রিয়জনরা সেই ইঁট দেখে বুঝতেও পারবে না যে বাড়ি হয়ত সুন্দরও হতে পারে। তাদের কাছে "আমি" আমার সাফল্য নই।  মোদ্দা কথা , নিজের লোকেদের কাছে বেশি ভাও খেলে এরকমই চুপসে যেতে হয়। "







Tuesday, May 19, 2015

ম্যাগির ওপর ব্যান

ম্যাগির ওপর ব্যান। .... ভাবা যায়। .. প্রাণ নিয়ে টানাটানি পরে যাবে কত লোকের।.. এই ধংসাত্বক অপঘাত নিয়ে একটা ভবিষ্যতবাণী। ...



শাদী ডট কম উঠছে ফেঁপে,
sunny leone বন্ধ,
"মা এবার মেয়ে খোঁজো"
প্রতি পরিবারে দ্বন্দ।
শিক্ষা ফিক্ষা চুলোয় যাক
রন্ধন পটু গিন্নি চাই,
অফিস ফেরত ক্লান্ত দেহে,
জিভের দ্বারা শান্তি চাই।
রেস্তোরাতে পরছে লাইন ,
রাঁধুনি পাওয়া দুস্কর,
MLA  MP  সবাই চাপে,
জনতা বলছে "Push" কর।
অপুষ্টিতে bachelorhood
মায়ের কান্না চেপে হাপানি রোগ ,
যেমন কুকুর তেমন মুগুর,
স্বাস্থ্য বিভাগ এবার ভোগ।
রোজই টিফিন ফিরছে বাড়ি,
ছোট্ট খুকি খিটখিটে ,
কলা পাউরুটি ডিম সেদ্ধ ,
খায় কি কেউ চেটেপুটে।
মাসকাবারি বাড়ছে খরচ ,
কর্তা বাড়ি ফিরছে না,
ওভারটাইম করে করেও ,
সান্ধ্যভজন জুটছে না।
কত ভাঙ্গন মিষ্টি প্রেম এ ,
কারণ, "রান্না করতে পারব না"
অপরদিকে "রান্না ছাড়া
কমিট করতে পারব না। "
নব সিলেবাসে ফুল পেপার ,
নতুন বিষয় "রন্ধন"
সকাল  বিকাল হেড দিদিমনি,
চুলোর দোড়ায় বন্ধন।
বহুদেশিক ব্যবসায়ীরা
তল্পিতল্পা গুটিয়ে কাট,
কর্মীরা সব করছে দেরী,
সকাল অফিস গড়ের মাঠ।
সমাজ তত্ত্ব উল্টে গেল ,
ইকোনমিক্স ও ধন্দে ,
সরকারও তবে পাল্টে যাবে ,
এবার , "ম্যাগি বন্ধে।"

Wednesday, March 4, 2015

Sunny Leela Bhansali

Sunny Leela Bhansali
           As the name suggest, I am going to talk about three things. Sunny Leone, Ek Paheli Leela and Sanjay Leela Bhansali. Why this mix? Cause , the first thing came to my mind after seeing the trailer of “Ek Paheli Leela” movie releasing on April is why Sanjay leela Bhansali is not making a movie with Sunny Leone. I believe they are made for each other.


            As usual all of the media and so called social media started talking about the hot shot of Sunny Leone and the religious sect started tantrum about the porn star becomes movie star. It’s obvious for a fake sexually depressed community to talk about her. But you also agreed (may not but publicly) that she is the best in her trade. Now keep her career before 2012 aside and think about the back pose facing blue sea in a shadowy picture spreading hand and pandiculate. The picture was shadowy, even you cannot see the color of the bikini she was wearing, even you didn't see her flesh which you cherish in calm, but still your heart pounded on that 4 second. That’s the art, that’s where she is master. She knows the use of best weapon in the world. She knows how to come to your dream and virtual reality also.


                If you are successful in any field then you have the liability of keeping the success in that. But then you have plenty of option to grow. Then you chose a wrong field and get criticized in beginning and may be successful later or go back to your comfort zone. That exactly what happened in the movie “Ek Paheli Leela”( EPL). Did you notice the dialogue , “Leela nam hai mara , Leela” how pathetically she delivered it. That was a ultimate defeat of a star. She needs to choose the film which she really capable of. I understand everyone has to start somewhere but she is not doing the right way and she is already 32. So sorry for her. The movie itself a confusing musical. It have all the colors which never mixed.


                When you mix colors you may end up with Black. And who consciously mix them to create Black is called Sanjay Leela Bhansali. He is really a painter in motion. Take any movie he has directed, even the crappy “Sawariya” the gem of art was glittering. He stashes the dash of brush which flashes in blast. Rewind your memory when Deepika Padukone was sizzling with the red eye from the smoke in a white dress in a matt clumsy setup. Think about the petal eyes of Aishwarya dazzling in blue among the thousand shades of rainbow. Even the white towel wrapping and playing on Ranbir Kapoor gave an ultimate difference in traditional way of clown colors.

               Now go back and mix Sunny, Leela and Bhansali. It results the best colorful, exotic, romantic, erotic, sensual love story of a mute girl who speaks through her move. Her curves are the alphabet, coquetry is the phrase and expressions are the saga. Sparkle in her smile used to distract a focused stubborn heart and let him understand the meaning of life. We really want to see the exfoliating beauty of a diva nourished by a thoughtful imagination and presented in class.   

Monday, February 9, 2015

আঁতেল - নামা



"Left  intellectual, Pseudo-intellectual, disconnected due to perceived superiority" এইটা কিসের ডেফিনেশন জানেন। যাদের সকলেই দরকারে চায়, কিন্তু আড্ডায় যাদের উপস্থিতি বড়ই বেদনাদায়ক। প্রতিটি সমাজে, প্রতিটি ভাষায়, এই গোষ্ঠী নিজের অস্তিত্ব প্রকট করে এক একটি বিকৃত শব্দের উত্তোলনে। প্রথমে প্রতিবাদ পরে নিজের ওপর খিল্লি, তারপর কেটে পরে। কিন্তু কাটবে কোথায় , দরকারে মিষ্টি ভাষায় তাদের বক্ত্যব্য না জেনে ডিসিশন তো নেওয়া যায় না। এরা খিল্লিতে প্রকট, কিন্তু পরিবর্তনে প্রচ্ছন্ন।  এরা গ্রুপ চ্যাট এ চটচটে , কিন্তু পার্সোনাল এ মিহি।  আয়রে ভোলা খেয়াল খোলা আত্মভোলা বুঝিয়ে যা।  এরা "বকবি বক" আমরা "টুকতে থাকি", শুধু বাধা দিস না মোচ্ছবে। এই গোষ্ঠির প্রাধান্য জীবনে, আর বর্জনীয়  কোলাহলে।  এরা নিজের খেয়ালে চলে, যেখানে যা বলা চলেনা তাও বলে চলে।  “সবসময় কি ভুল শোনা যায় নাকি”।  বললেই খিল্লি , "প্রমান কর।" কি করে করব?  স্মার্টফোনে চার্জ নেই।  থাকলেও উইকিপেডিয়া তো ফ্রি , যে যা ইচ্ছা লিখতে পারে, মানলে চলবে!  মানিস না , আবার কিছু বলতে গেলেই , "থাম ভাই , অনেক হয়েছে" ।  ঠেকের আড্ডায় প্রচুর আওয়াজ খেয়ে চারটের জায়গায় দশটা বিড়ি ফুঁকে বাড়ি ফিরতে না ফিরতে ফোন , "হ্যা রে যেটা বললি কি সেটা সত্যি, লাভ হবে? " প্রথমে রাগ , কিছু উত্তেজনা কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই গলে জল।  উত্তরে প্রশস্তি। বুক ফুলিয়ে রাতে আবার একটা নতুন বই খোলে শ্রীমান আঁতেল।

এই আঁতেল নিয়ে দের মহা জ্বালা।  যদিও আঁতেল দের আরো বেশি জ্বালা।  কিন্তু আমি বলি কি, ভাই , পেটে জ্ঞান থাকলেই কি পেটো ছুড়তে হবে?  সবাই জানে পৃথিবীটা তো গোল, কিন্তু টিপছাপ লন্ঠনের আলোয় পদিপিসী বলবে , " না , ঘুরে ফিরে তো বাড়ি ফেরা গেল না " তাই কিসের এত চেষ্টা। তুই জানিস ভাই , আমরাও জানি তুই জানিস।  শুধু গম্ভীর হয়ে সন্ধ্যের চায়ের পিন্ডি চটকানোর কি কোনো মানে আছে?  ঝারি মারা যদি অভিক্ষেপ হয় তাহলে তোকে ভাই বাইরে নিক্ষেপ করেই শান্তি হয়।  মানছি আমরা যখন বসে বসে হাতি গন্ডার মারি , তুই তখন ল্যাম্প পোস্টের আলোয় হংসের বঙ্কিম লিঙ্গের অর্থনৈতিক উপলব্ধি মূল্যায়ন  করিস।  তাতে হয়ত দেশ দু চারপা আগে এগোয়।  কিন্তু ভাই , আমরা ভুলভাল না বকলে কোলাহল হবে কি করে। আমরা সুতো পেলে সারি বুনি, আর তুই সুতো দিলে বলে বসিস টেন পার্সেন্ট পলিয়েস্টার।  আরে বাবা গা তো ঢাকলেই হলো।  সব পড়েছ, কিন্তু এটা মিস করে গেছ ভাই যে অপাত্রে দান, আর সমুদ্রে পেচ্ছাপ কোনোটাই কাজে লাগে না।  ফাঁপা কলসির আওয়াজ বেশি , তুমি বাপু ভরা কলসি সেই ভাবেই থাক না। কবিও তো বলেছে , " যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই , যাহা পাই তাহা চাইনা " মাক্কালি বলছি তোমার জ্ঞান, আমার চায়ের কাপে ডোবাতে চাইনা। চন্দ্রিল ছাড়া আর সবই চন্দ্রবিন্দু।

এদের এই ভাষ্যের অদরকারী উদাহরণের ঠেলায় প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে তবু , "আরে শোন না। " থামতেই চায় না।  অবাক জলপানে , ঘোল খাইয়ে ছেড়ে দেয়।  শেষে "বুঝলি তো" আর সাথে "কি বলেছিলাম" তো আছেই।  খাবে বিড়ি আর ব্যাখা করবে লাইটার এর combustion ফুয়েল এর thermodynamics . দু ঘন্টা বাঁদর ঝোলা ঝুলে "ধুত্তেরিকা, এদেশের কিছু হবে না" বললেই বিপদ। নানা কিছু ইসম টিসম নিয়ে বিষম খাইয়ে ছেড়ে দেবে। কি দরকার বাবা।  খিস্তি আর ফোঁড়ার  উদ্ভবই তো অন্তরের বিষ বাইরে আনা।  সেটাতেও ব্যাগড়া দিবি!  খিস্তিতেও সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দযুগলের অর্থপার্থক্য নির্ণয় করতে হবে? পারলাম না। "কি করছিস?" এর উত্তরে আমাদের এখনো বেরোয় না , " একটা সরলরেখা খুঁজছি।" আমাদের জন্য হাজার ক্রিয়াপদ আছে।

কিন্তু দুর্ভাগ্য যে শেষ মেষ এদের কাছেই যেতে হয়,যখন সন্ধ্যের চা, আর রাতের  ঘুম শেষ হয়ে আসে আর দরকার হয় সাহায্যের।  আর তখনি সমস্যা শুরু আঁতেল দের। তাদের জ্বালা কে বুঝিতে পারে।  খিস্তি খাওয়ার মুহুর্তে মনে হয় , " ধুর , যত সব কম জানা মাথামোটা " কিন্তু জল চাইলে ভরা কলসি তো ডুগ ডুগ করবই।  চানক্য তো বলেইছে জ্ঞানই একমাত্র বস্তু যা ব্যয় করলে বৃদ্ধি পায়।  অথচ কালকেই আবার অবজ্ঞা।  নাহ , ক্ষমা করে দিলাম।  এতেই মহত্ব , এতেই উদারতা। কিছুক্ষণ নিজের মধ্যে এইসব বলে , "হ্যা, কি জিজ্ঞাসা করছিলিস?" উল্টো চাপ , অপাত্রে দান।  পাত্র বিচার করার জন্য অনেক সমসয় লাগবে, তার থেকে থাক।  যা চাইছে দিয়ে দি।  উত্তর না দিতে পারলে আবার খোঁজা শুরু।  মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস , " কেউ শুনলো না আমার কথা।"


পরের দিন ঠেকে আঁতেল আবার দুঃখী, তার কথাই সবার মুখে , নাম শুধু অন্যের।  যাঃ শালা। আর বলব না।  কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরেই , উচ্চারণে ভুল।  আকুলি বিকুলি।  আবার তত্ত্বে গ্যারা।  অন্তরে ছটফটানি। আবার ইতিহাসের ভুল তথ্য , আর পারা যায় না।  শেষে সত্য নিষ্পেষণে মিথ্যার ক্রমবিবর্তন ক্রমাগত হাতুড়ি নিক্ষেপ করে ভেঙ্গে ফেলে আঁতেল এর স্তব্ধতা। শুরু হয়ে যায় , "না ! এটা ভুল। " "আসলে কি হয়েছিল শোন।" "তথ্য অনুসারে।" ব্যস আর যায় কোথা।  সবে মিলি করি কাজ , আঁতেল থামাও নাহি লাজ। কিছুক্ষণ কুরুক্ষেত্রের পরে কুই কুই করে আঁতেল শেষ করে , " শুরু করেছিলিস urbun dictionary  যে ডেফিনেশন দিয়ে সেটা শেষ তো কর. This is a Bengali short from of "intellectual" pronounced with a French accept”        

Thursday, January 29, 2015

মোদী ও গদি



ওবামা দেশের মাটিতে পা রাখার পরই ফেইসবুক টুইটার ওয়াটসআপ এ ঝড়।  একজন বলে উঠল , "মোদী কি করলো দেখলি। " খবরের হেডলাইন , " সমস্ত প্রোটোকল ভেঙ্গে দিলেন মোদী" ভালো করে চোখ কচলে পুরোটা পরে বুঝলাম, জাদু কি ঝাপ্পি।  মোদী জড়িয়ে ধরেছে ওবামা কে।  আর তাতেই এত সরগরম।  কিন্তু সত্যি আমি বুঝতে পারলাম না এর মধ্যে বিশাল কি খবর আছে।  তাও যদি ইউক্রেন এর প্রধানমন্ত্রী কে জড়িয়ে ধরত।  না, পৃথিবীর দুই অন্যতম শক্তিশালী নেতৃত্ব নিজেদের মধ্যে কোলাকুলি করেছে তাতে এত উহু আহা করার কি আছে বাপু।  আর যেমন ওবামা ওবামা চলে তেমন মোদী মোদী চলে।  কখনো কথাও খবরে পরলাম না - ভারতের প্রধানমন্ত্রী জাপানে গিয়ে ড্রাম বাজিয়েছে। মোদী করেছে। মানে দেশের প্রধানমন্ত্রী হার মধ্যে কোনো ঘ্যাম নেই।  পাশের বাড়ির ভুটাই কে জিগ্গেস করলে বলবে , "বড় হয়ে মোদী হব।" প্রধানমন্ত্রী তো ভুলভাল লোকে হয়।  বা হয়ে , ভুলভাল হয়ে যায়।  বিচিত্র এক একনায়কতন্ত্র এখন পৃথিবীর হাওয়ায়।  শ্রীখন্ডি খোঁজার জন্য আনাচে কানাচে তল্লাশি। কেজরীওয়াল , মমতা, চন্দ্রবাবু এখন শাহরুখ খান।  ভোট ফর মোদী , পাঁচ সাল কেজরীওয়াল এসব নিয়ে দেশবাসী ভালই মেতে আছে।

চোখে ঠুলি পড়তে মানুষ যখন এতই ভালোবাসে তখন অন্তত সামনে যা ঘটছে সেটাতো ভালো করে দেখুক। মোদী জড়িয়ে ধরেছে সেটা নিয়ে "দেখলি মোদী কি করেছে?" বলার কি কিছু আছে? যা করেছে সেটা ক্যারিশমাটিক। বাংলা ঠিক বেরোলো না।  কিন্তু ক্যারিশমা দিয়ে তো চোখে ধাঁধা লাগে চোখ কচলে নিলেই তো সব  পরিস্কার। তখন শুধু সামনে ভেসে উঠবে ওবামার চোয়াল যেটা শক্ত করে একদিন এই মোদীকেই ভিসা দেয়নি।  আজ তার ক্যারিশমা বাড়াতে চুইনগাম চেবাতে চেবাতে হাজির হয়েছে প্রজাত্রন্ত্র দিবসের প্যারেডে। আর এখানেই মোদীকে ছাড়িয়ে গেছে তার গদি।

গদিতে তো অনেকেই বসেছে।  কিন্তু এইরকম গেম চেঞ্জার মনে হয় আগে কখনো বসেনি।  সিংহটা যখন Weiden+Kennedy র ঘর থেকে বেরিয়ে রাজপথে চলতে আরম্ভ করেছে তখন বোঝাই যাচ্ছে ওবামা হয়ত সামনের বার আবার যেতে পারে।  এখানেই সাফল্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ওরফে মোদীর। শিক্ষিত জনসংখ্যার ভারে আজ ভারতের কাছে পৃথিবীর ত্রাহি ত্রাহি রব।  আর ঠিক সময়ে মোদীর আগমন হাতে হাতুড়ি , সামনে গরম লোহা।  কিন্তু এতই ক্যারিশমার প্রতি নজর , প্রোপাগান্ডা তো গয়েবেল্স কেও ছাড়িয়ে যায়।  যদিও কথা কম কাজ বেশি।  কাজ এখনো বিশেষ কিছু দেখিনি বটে।  তবে হ্যা , ভেবেছিলাম দাঙ্গা হবে।  হলো না।  এখানে গদি মোদীকে দিল হারিয়ে।

দৃঢ় প্রত্যয়ী কর্মীর প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে সাবলীল উত্তেজক বক্তৃতা মোদী গদির সামনে রেখেছিলেন তার প্রভাব ঘরে ঘরে।  আর এই উত্তেজনায় একের পর এক রাজ্য দখল করে চলেছে দল।  দখল করা উদ্যেশ্য শাসন নয়।  টাইমস এর প্রথম ১০০ জনে নাম তোলা সহজ কথা নয়।  দলাই লামা উত্খাত।  শিক্ষিতদের টেবিলে উঠে এসেছে একগুচ্ছ মোদী।  ক্যারিশমাটিক বিদেশযাত্রা, বাজপেয়ীর ভঙ্গিতে থেমে থেমে প্রত্যয়ী বাক্যব্যয় , গাড়ি থেকে নেমে অস্ট্রেলিয়ায় শিশুকে আদর সবই কিরকম আচ্ছন্ন করা এক নেশার মত।  স্বস্তিকার নেশা। এতেই মোদী হারিয়ে দিয়েছে গদিকে।  

আমার জ্ঞানত কোনো প্রধানমন্ত্রীর,  এরকম সুঠাম অবয়ব আমি দেখিনি, এই ব্যক্তিত্ব আমি দেখিনি, এরকম বক্তৃতা আমি শুনিনি,  বিশ্ব সম্মেলনে এরকম উজ্জল হতে আমি কাউকে দেখিনি।   কিন্তু সকলের মত নেশা ছন্ন হতেও আমি পারলাম না।  কারণ এখনো ডলার ষাট টাকা। আশা ও অপেক্ষার উপেক্ষা যেন না হয় এই কামনা করি।







Friday, January 23, 2015

পদবি Merge-ওনা

কমলকলি ভট্টাচার্য চক্রবর্তী - ফেসবুক এ নামটা দেখে বোমকে গেলাম। নিজের ফ্রেন্ড লিস্ট এ খুঁজে দেখলাম আরো এরকম কিছু ভয়ানক নাম পেলাম। পুরো পাতা জোড়া নাম।  ফ্যাশন টা আজকের নয়।  আমি নারী , আমি তোমার অস্তিত্ব নাড়িয়ে দিতে পারি। এই উত্তেজনার অভিব্যক্তি অনেক দিন ধরেই অনেক কিছুতেই দেখা যায়।  ভালই লাগে। বোকাবোকা পৌরুষ দেখিয়ে কিছু ফালতু নপুংশক এত বছর ধরে যা ফালতু কাজ করেছে তার ফলাফল এই আন্দোলন। দুর্ভাগ্য এই যে যারা বহুকাল ধরে এই নিষ্পেষণের বাইরে তারা লোক দেখানি নারীবাদ করে অদরকারী জটিলতাও ডেকে আনছে।

বহুকালের হিসাব কন্যাদানের।  খুব বাজে, কন্যা কি আর সামগ্রী যে দান করব।  কিন্তু মন্ত্র পরে ছাদনাতলায় দাড়ালে তো দান করতেই হবে।  তাহলে উপায়, রেজিস্ট্রি ম্যারেজ।  না তাও তো হবে না।  এই একমাত্র দিন যেদিন মেয়েরা সারাজীবনের সাজ একদিনে সেজে নেয়।  তাই বিয়ে হবে তো নিয়ম মেনে। বেনারসী আর এক গা গয়না পরে অত্যুজ্বল আলোর সামনে ফটো না তোলালে কি আর বিয়ে করা হয়।  বিগ ফ্যাট ইন্ডিয়ান বিয়ে।  সবাই খুশি , বর খুশি বউ পাবে বলে, বউ খুশি সেজেছে বলে, বাবা খুশি কন্যাদান করে।  উফ ওই শব্দতেই আটকে যাচ্ছে নারীবাদ। ওটাতে নারী বাদ।

বিয়ের শেষে হাপুস নয়নে মা বাবা মেয়েকে বলছেন , " আমাদের ভুলে যাস না যেন। " কন্যা তখন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ , অস্তিত্বের লড়াই শুরু। আমি নারী, আমি দুটো পদবি জুড়ে দিতে পারি। ব্যাস, গঙ্গোপাধ্যায়র সাথে মুখোপাধ্যায় জুড়ে গেল।  জায়গা নেই তেই গাঙ্গুলী মুখার্জী।  অথচ মেয়ে কিন্তু বাবা মায়ের আগের এই কথার আগের এক লাইন বেমালুম খেয়ে ফেলেছে , "ব্যাঙ্গালোরের মত , আমাদের ভুলে যাস না যেন।" ছ-মাস আগে মেয়ে ভুলেই গেছিল বাবা মার বিবাহবার্ষিকীর কথা কারণ হবু বর এর জন্মদিন ও একই দিনে।  এখন থেকে আর ভুলব না আমি ছিলাম , আছি , থাকব গাঙ্গুলী হয়ে।  শুধু মাঝে মাজে তোমাদের ফোন করতে ভুলে যেতে পারি।

কিন্তু ভাবুন এ রোগ কিন্তু আজকের নয়। দেবসেন, ঘোষদস্তিদার, রায়চৌধুরী  তো অনেক কাল আগে থেকে।  তবে পুরুষশাসিত সমাজে দুটো পদবি জুড়ে একটা পদবি হলো কি করে ? না জানিনা।  তবে এখন যখন নারীবাদ প্রখর আর নারীত্বের প্রথম ধাপ হলো পদবি পরিবর্তনে বাধা তখন কিন্তু ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতেই হবে।  মানে আমি ঘোষ করলাম বিয়ে কুন্ডুকে , গিন্নি নাম নিলেন নীলিমা ঘোষকুন্ডু , হলো মেয়ে , সেও নারীবাদী। বিয়ে করলো নারীবাদী আন্দোলনের নেতা জেমস বারিংহাউসকে , হয়ে গেল অর্পিতা ঘোষকুন্ডুবারিংহাউস। হলো মেয়ে বাবা মার শিক্ষায় মেয়ে নিল মায়ের পদবি আর করলো বিয়ে রাশিয়ান নারীবাদী লেখক মাইকেল দস্তভয়েস্কি হয়ে গেল ঘোষকুন্ডুবারিংহাউসদস্তভয়েস্কি।  তাদেরও মেয়ে যখন স্কুলে গিয়ে ফুল নাম বলতে গেল,  পড়ল ফাপরে।  পিজা অর্ডার করতে গিয়ে হুলুস্থুলুশ কান্ড। G  as gorilla থেকে y as yellow  শেষ করতে করতে ফোন কেটে যেতে লাগলো।  কি চাপ।

কিন্তু নারীবাদ ছাড়া যাবে না।  আর এটাই নারীবাদের প্রথম উসুল।  তাই আঁকড়ে ধরে বছর কুড়ি চলার পর ধরাম করে আমার নাতনি পড়ল প্রেমে। শেষমেষ আমার রক্ত ফিরে এলো দেশে।  ছেলের নাম ভেঙ্কট।  তামিল। চার পাঁচ বছর উত্তাল প্রেম করে যখন বিয়ের পিরিতে বসতে যাবে তখন আমার নাতনির খেয়াল এলো পুরো নামটা তো জানতে হবে ? বেরোলো চল্লিশ টা অক্ষর। ভেঙ্কটরামান পি ভি কে এস। নাতনি আঁতকে উঠলেও মুখে হাসি ফুটে এলো।  বিয়ের পর নাতনির নাম নাতালিয়া GKBDPVKS . password এর মত পদবি হয়ে যাছে দেখে ভেঙ্কট সেটাকেই পাল্টে করে দিল  ETC. আজ তারা খুশি।


এত গেল আমার ভবিষ্যতের কথা , কিন্তু বর্তমানে এই অত্যাচার নারীরা নিজের ওপর করে চলেছে।  নারীবাদের নামে সহজ জিনিস জটিল করতে তাদের জুরি নেই।  আরে বাপু আগে তো শশুর বাড়িতে ঘর করতে হত।  এখন তো শশুর শাশুড়ির অস্তিত্ব তো ফোনে। অস্তিত্ব সংকট কিসের? দেশ সুযোগ দিয়েছে যে মেয়েরা চার ধরনের পদবি রাখতে পারে।  কিন্ত বিষ থাকলেও কি খেতে হবে? যদি এতই সমস্যা তাহলে বরের পদবিটা বাদ দেওয়া হোক।  কি দরকার ? না, তাহলে তো প্রেম নিবেদন হলো না।

একে তো বাঙালির নাম আর ইংলিশ বানানে সমস্যা। প্রচুর "অ" বঙ্গের গন্ডি পেরিয়ে "আ" হয়ে যায়।  সাথে পদবির ঘোটালা।  একমাত্র আমরাই একই পদবি দু ভাবে লিখতে পারি। chatterji - চট্টোপাধ্যায়।  মাঝেই মাঝেই গুবলেট আর গুপি।  লোকেদের বোমকে দেওয়াতে আমাদের জুরি নেই।  আজকাল তো নাম রাখার জন্য সংস্কৃত ঘাটতে হয়।  আর তার উচ্চারণ "অ" সমন্নিত বাঙালির অভিধানে পরিবর্তিত হয়ে অনুবাদিত হয় ইংরাজি অক্ষরে। সব মিলিয়ে মোরা দুর্বোধ্য।

এ এক জটিল যাতনা।  ঠিক যেরকম ভাবে নারীদের "সাহসী" পদক্ষেপ হিসেবে নগ্নতাকে সম্মান করা হচ্ছে ঠিক সেরকম ভাবেই নারীরাও নিজেদের অসম্মান করছে এই সমস্ত ভুলভাল কাজ করে। নারী স্বাধীনতার মূল্য অনেক , সে স্বাধীনতা চিন্তার স্বাধীনতা।  আজ নারী অস্তিত্বের লড়াই বলে যে লড়াই করছে সে লড়াই তারা আগেই জিতে গেছে।  পুরুশের ক্ষমতা নেই সন্তানধারণের আর পৃথিবীর বুকে দাগ রেখে যেতে সে শরণাপন্ন নারীর। তাই অস্তিত্ব রক্ষা বা উত্থানের পথ নামের সাথে জড়িয়ে ভুল না করে যাতে উন্নতি হয় তাতে মনোনিবেশ করা উচিত। calcutta , কলকাতা  হয়েও আজও বাঙালি বাঙালি কে সহ্য করতে পারে না।









  

Wednesday, January 21, 2015

মাছটা কিন্তু ঠান্ডা

"একী মাছটা ঠান্ডা তো" প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে সৌম্য পাকা রুই এর পেটি থেকে হাত তুলে নিল। বেশ কদিন হলো কচি পাঁঠা বা দেশী মুরগির থেকে মন তুলে নিয়েছেন। কিছুটা বাধ্য হয়ে - কোলেস্টেরল হাই।  ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই তাই ইচ্ছাটাকে মেরে ফেলা খুব দরকারী হয়ে পরেছিল।  কথায় বলে মনের ডাকে সারা দিতে হয় নাহলে মন পাশ ফিরে শোয়।  সৌম্য তাই অবাধ্য মনটাকে পাশ ফিরিয়ে বাধ্য ছেলের মত এখন আপাতত মাছেই মনোনিবেশ করেছে।

অকাল বার্ধক্য চেপে ধরলেও বন্ধুদের যৌবনের সাথে তাল মেলাতে তো সবাই বাধ্য।  তাই বন্ধু মহলে যখন মাঝে মাঝেই প্যাঁক খায় তখন বলে, " তোদের তো সব মিলিয়ে গোটা দশেক্ রান্না।  পাঁঠা আর মুরগী দিয়ে factorial ২ এর বেশি তো উঠতে পারিস না।  আমার দেখ কত ধরনের মাছ।  ঝালে , ঝোলে , অম্বলে মিলিয়ে ,মিশিয়ে বেশ আছি। " বন্ধুরা বলে , "হ্যা ঠিক বলেছিস আমরাই অঙ্কে কাঁচা।" দুদিন আগে পর্যন্ত ভেজিটেরিয়ান দের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধের ভীষ্ম আজ অভিমন্যু।

এরকম অভিমন্যুর ছড়াছড়ি আমাদের চারপাশে। বাঙালির কচি পাঁঠার ঝোল ভুলে এখন অতিরিক্ততা ধীরে ধীরে বাঙালিকে মাংশ থেকে সরিয়ে আনছে।  সুখের খবর হলো  কাছে আনছে ঐতিহ্যের।  আমরা বাঙালি , আমরা মাছ খাই।  ফিস ফ্রাই না।  কবিরাজি না।  হালকা তেলে এপিঠ ওপিঠ ছোট মাছের ঝাল।  যদিও পাকা রুই , মাগুর , বোয়ালের মত তেলালো মাছ এখনো বাড়িতে আসে।  চিকচিকে ইলিশের চকচকে রূপের সামনে জিভ লকলক করলেও  অন্তর্বাহী বল্লমের বিদ্রোহে অনেকেই এর প্রেম থেকে বাল্যকালেই সন্যাস নিয়েছে। এখন ফিলে খোঁজা সুখী বাঙালির পাতুরি আর ভেটকি ভেবে ভুল করে হাঙ্গরের ফিস ফ্রাই পেন ছেড়ে টাইপ করার মত দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছে।

সৌম্যর যেমন শারীরিক হুড়কো তেমনি অনেক প্রবাসীর অবস্থানগত হুড়কো।  তেল কই , কই? পুঁটি মাছের খোঁজে মাঝে মাঝে মৌরলা পেয়ে গেলে অন্ধেরী তে পার্টি। ট্যাংরা টুংরো খুঁজলে পাওয়া যায় বটে তবে সুরমাই আর লইট্যা নিয়েই খুশি থাকতে হয় মুম্বাই এর বাঙালি গুষ্ঠির।  লইট্যা??? ঘটি বাঙাল এক করে ফেললেন দাদা।  আলাদা ছিল কবে? কাঁটা আছে বলে ইলিশ ছেড়ে চিংড়ি ধরেছ আর লইট্যার বেলায় আপত্তি।  ঠিক আছে , না হয় লোটে বললে। বল।  কিন্তু অভ্যাসে এলে কিন্তু ওটাও চরম উপাদেয়।

ঘটি বাঙাল করে তো লাভ নেই।  প্রাণপাত করে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টায় নাওয়া খাওয়া ভুলে দৌরচ্চ আর বিদেশে আঁশটানি গন্ধের পরিতৃপ্তি কি এপার বাংলা করছে? নাহ।  এব্যাপারে বাঙাল-ই সেরা বাঙালি নয়।  দু চারটে ফোড়া ফুস্কুরির মত এপার বাংলার দোকান থাকলেও মাছ কিন্তু পদ্মার।  যদিও সব ফসিল কিন্তু ওই বললাম দুধের স্বাদ ঘোলে।  হোক ঘোল তবু  বাটার মিল্ক এর মত গালভরা নাম তো আছে।  পাতে কালিয়া দিয়ে চালিয়ে তো দেওয়া যায়।  বাংলায় বসে "ও মা ! কি গন্ধ"  বলে ডিস্কো থেকে ঢুকে পরে উদ্দাম নেচে ফিরতি পথে বোনলেস ইলিশে তো আর কাঁটাচামচ ডোবাচ্ছি না।  যদিও ব্যাপারটা অবাক করার মত।  ঠাকুমা পিসিমা কে জল খাওয়ার সময় খবরটা দিন, তাহলেই বুঝবেন।

সে থাক, মোটামুটি বোঝা গেল যে বাঙালি আজও মাছ খোঁজে। নানা ভাবে জোগাড়ও করে।  দরকার পড়লে মাছ ধরতেও শেখে। কিন্তু একটা জিনিস বোঝা গেল না , সৌম্যর পাতে মাছটা ঠান্ডা কেন। চারপাশে মম করছে বিরয়ানী পোলাও এর গন্ধ। ভুরভুরে আতর আর ঝকঝকে সাজগোজে বিয়েবাড়ির আভিজাত্যে ঠান্ডা মাছের অবস্থান বরই বেমানান।  কিন্তু দুর্ভাগ্য কুড়িটা টেবিলের অন্তত তিনটেতে দীর্ঘশ্বাস মাখা হয় রোজ।  সব কিছু গরম থাকবে কিন্তু মাছ হবে ঠান্ডা।

বরযাত্রীর বড়কর্তা মাছ থেকে হাত তুলে নিলে থতমত পরিবেশক আমতা আমতা করতে থাকে।  সৌম্য কিন্তু ঘুরে প্রশ্ন করে না।  কিছুটা লজ্জায় - মানে একটু আওয়াজ দিলেই তো পরে আওয়াজ খেতে হবে।  "চল্লিশ ও হয়নি এখনি এত ফ্যাকরা" থতমত পরিবেশকের অনড় অবস্থানের আকর্ষণে "কি হলো" "কি হলো" করে দূর থেকে ছুটে আসে কন্যাপক্ষের কেউ একজন। অবস্থা বুঝে , "এক্ষুনি গরম মাছ করে নিয়ে আয়." চোখ রাঙ্গানি তে অসহায় পরিবেশক ছুটে যায় রাধুনীর কাছে।   পানের পিকটা পাশে ফেলে হেড রাধুনি বলে ওঠে "ওই দেখ আরেকটা মাল।  কুন্ডু বাবুর প্লেট গুলো মাঠে মারা গেল। যা মাইক্রোওয়েভ এ ঢুকিয়ে দে।" ওদিকে কন্যাকর্তা , "হঠাত ঠান্ডা পরে গেছে তো !! তাই আর কি ?" সৌম্য পাশের বৌএর প্লেটের ধোয়া ওঠা বিরিয়ানির দিকে তাকিয়ে কন্যাকর্তার দিকে তাকাতে "আসছে আসছে !! এখুনি আসছে !! কই  গেল রে? " ছুটে গেলেন রান্নাঘরের দিকে।  রাস্তায় বাধা, সৌম্যর মত আরেক যুবকের আবদার , "কিরে সুবীর? আমারটাও তো ঠান্ডা।  গরম পাওয়া যে কি? " সুবীর খেঁকিয়ে উঠে বলল , "তোর্ কি পিলে বড় নাকি মধুমেহ? ঠান্ডা খাওয়া ভালো গরম খেলে গ্যাস বারে।  যা পেয়েছিস খা , আমি দেখি ওদিকে।" কথাটা আসতে আসতে বললেও কানে এলো সৌম্যর। বউ প্লেটটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল , "একদিন খেলে কিছু হবে না।  খেয়ে নাও।"