Sunday, January 26, 2014

তুলোর দলা

একটুকু  তুই তুলোর দলা , বাঁচালি  মোদের  প্রাণ ,
নিকোটিনের বিষের জলে , করলি রে তুই স্নান .
কোন সে দুরে , নদীর  পাড়ে , কার্পাস ফুল ফোটে ,
স্পর্শ নিলাম , তাহার মোরা নিলাম তোরে ঠোঁটে .
তর পরশে , নরম হলো , চরম দুঃখ গুলো ,
counter এর অশালিনতায় , তোকে ভিজিয়ে দিল .
কেউ ধরল চিপ্টে তোকে , প্রথমা বৃদ্ধান্গুষ্টিতে
কেউবা ধরল জাপটে তোকে , আপন করাল মুষ্ঠিতে
সকলে তোর শুষলো  অঙ্গ , সার্থক হলো ক্ষণ ,
শুভ্র বসন হলুদ হলো , মলিন হলো মন .
শেষের  টানে ফিরে এলি তুই , আমার ঠোটের পরে
গরম স্পর্শে বুঝিয়ে দিলি "রাখিও না আর ধরে ".
দিলাম তোকে পিষ্ট করে , আপন পদতলে
এক টোকাতে   ছুড়লাম আমি , কর্দমাক্ত জলে .
শুষলি  নিকোটিনের জালা , সইলি   পদাঘাত ,
নিস্প্রান তোর দেহ সইবে , কত না অপঘাত .
বলবে তারাই নোংরা তোকে , যারা করেছে তোরে ভোগ্য
হয় রে তুলো , তামাক পিরিত , দিল কত না দুর্ভাগ্য .

Saturday, January 25, 2014

রেগে আগুন স্ত্রী

রেগে আগুন স্ত্রী

রেগে  আগুন  তেলে  বেগুন  তেরে  বলেন  স্ত্রী
--"বুঝতে  আমি  পেরে  গেছি  বর  টাই  বিশ্রী"
নোংরা  মানুষ,  চ্যাংরা   ছেলে,  বস্তা  পচা  ভাষা,
জঙ্গি  খাটে,  মধ্য রাতে , সাজতে  গেলে  চাষা।
অসভ্য   তার  অঙ্গভঙ্গি,  রঙিন  কিছুই  নাই,
অর্থহীন  বকতে  থাকে,  কি  করি  বল  ভাই,
বিড়ির  গন্ধে,  ঘরের  লক্ষী,  পদ্ম নাকে  ঠোসে,
সারাদিন  নাক  খুটতে  থাকে,  সোফায়  বসে  বসে,
মুখ  খুললেই  ভাগার  ধার,  জীব  নড়লেই  বস্তি,
প্রাতঃ  ক্রিয়ায়  হাত  ধোয়  শুধু  , এটাই চরম  সস্তি। .
নাক  দিয়ে  সে   দামামা  বাজায়,  কুকুর  লুকায়  ভয়ে,
এমনি  করে  আর  কত  দিন  রইব  সয়ে  সয়ে,
গুল  মারা,  আর  ঢপ  মারা,  তার  নিত্য  ভজন  গীতি,
লোকের  কাছে  ধার  করা,  তার  নিত্য  কালের  রীতি। .
কান্না  ছোটাই , পাশ  ফিরে  শুই  তবুও  কিছুই  হয়  না
ল্যাপটপ  কে  জড়িয়ে  ধরে , আমায়  কাছে  চায়  না.

Friday, January 24, 2014

পোস্তয় মাখামাখি


"দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া,
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া,
একটি ধানের শিষের ওপর একটি শিশির বিন্দু।"

আজকাল পশ্চিম - বঙ্গসন্তানের রন্ধনকার্যে হাতেখড়ি হয় ম্যাগি দিয়ে বা পাঞ্জাবি খাদ্য প্রস্তুতিতে। কারণ পাঞ্জাবি খাদ্যের মূল স্তম্ভ হলো পেয়াজরসুনঅদাটমেটোলঙ্কা সব মিক্সি তে পিষে , পরে তেলে কষে যা ইচ্ছে ঢেলে দাও - একে একে বেরিয়ে আসবে রাজমামটর পনিরআলু মটরগোবি আলুচিকেন মসলা ইত্যাদি। এরপর যা ইচ্ছা মসলা যোগ করে তার বিস্তার করা যেতে পারে। কিন্তু ব্যাচেলার বঙ্গসন্তান যখন এর ওর তার মুখে শুনে বাড়িতে বা মেস  প্রথম পোস্ত  রান্না করে তখন বলে ওঠে, "আমারও পরানো যাহা চায় তুমি তাই , তুমি তাই। " আর ব্যাখা করে এই ভাবে,
"দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া,
রান্না ঘরের কৌটো খুলিয়া,
ছড়িয়ে থাকা সফেদ সফেনহাজার পোস্ত বিন্দু।"

কারণ একটাইবাঙালি রান্নায় পোস্ত  ছাড়া এত সহজে আর কিছু রান্না করা সম্ভব নয়।  মানে এখন যদি আলুভাতেঘি ভাতের সাথে তুলনা করেন তাহলে চলবে না।
তবে সমস্যা আরো আছে।  আপনি কি পদ্মার এপারে না ওপারে। এপারে থাকলে আপাতত জিভে জল এসে গেছে। ওপারের হলে , "মালটা  কয় কি?" যদিও আমি এপারের তবু বিভিন্ন স্থানে থাকার এবং বিভিন্ন স্বাদের আস্বাদ গ্রহণ করে এখন আমি মোটামুটি সব জায়গাকার হয়ে গেছি। তাই দেখি এই অসামান্য মসলার কিছু সঠিক মূল্যায়ন করতে পারি কিনা।

বর্ধমানে জন্ম আর হুগলি তে লম্বা হওয়ার দৌলতে পোস্ত  নিয়ে বরাবরই  এক ঘ্যাম আছে।  মা প্রবাসী হওয়ার দরুনপোস্তর অতিরিক্ততা ছিল না বাড়িতে। তবু যখন কর্ম সুত্রে মুম্বাই পাড়ি  দিলাম তখন সঙ্গে " Magic Potion" এর মত এক কৌটো পোস্ত  ঝুলিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম। দুর্ভাগ্য,  সঙ্গী হলো উত্তর প্রদেশগুজরাতমহারাষ্ট্র আর বিহারের কিছু ছেলে। সবাই পক্কান্নে অপটু এবং খাদ্যরসিক ( মানে রেঁধে দিলে , কেঁদে খায়প্রথম দিকে ওরাই বানাচ্ছিল তাই খেয়ে নানা কমেন্টস মারছিলাম। তারা সকলেই veg  তাই তাদের কোনরকম expectation ছিল না আমার থেকে। কারণ যেমন দ্রাবিড় মানেই তেঁতুল আর সামবারবাঙালি মাত্রেই মাছের ঝোল আর ভাত।  আমরা যে পিয়াজ রসুন কেও আমিষ বলে এসব ছাড়াই অসাধারণ তরকারী রান্না করতে পারি সেটা আমরাও ছড়াই না , আর ওরাও জানে না।

যাইহোক ভেবেছিলাম ওস্তাদের মার শেষ রাত্রে। তাই এক সুন্দর ল্যাদ খাওয়া দুপুরে আমি পোস্ত বানালাম। ঝাল ঝাল আলু পোস্ত। বাচেলর দের যেরকম হয়একটা ডালএকটা ভাতআর একটা তরকারী। সেদিন সকলে শুধু ডাল ভাত খেয়েছিল আর বলেছিল, "তুমলোগ ইতনা সাদা খানা কইসে খা সকতে হো।সেই প্রথম গর্ব ভঙ্গ হয়েছিল। পরে যদিও অনেকবার হয়।   তাই একবার ভেবেছিলাম  লেখা টা ইংলিশ  লিখি , সবার জন্য। কিন্তু শেষে ভাবলাম থাকবাঙালির জিভে পোস্তদানার স্বাদ গ্রহনের কিছু বেশি কোষ আছে যেটা বাকিদের নেই।  দুর্ভাগ্য তাদের।

তবে একটা কথাপোস্ত  কিন্তু অনেক জাতিতে বেশ চলে।
 তবে সবাই গোটা পোস্ত বা কাজুর সাথে বেটে খায়। আর হ্যা , পোস্ত  কিন্তু কালো বা নীলচে স্লেট রঙেরও হয় , যেটা আমাদের সাদা পোস্তর থেকে অনেক বেশি জনপ্রিয় আরব দেশে বা রাশিয়ায়।

থাক সবার কথাঘটিদের পোস্ত নিয়েই বলি।  ঘটিদের পোস্ত  বড় অভিমানী।  সাথে কোনো মসলাকে সহ্য করতে পারে না। তাই পোস্তর সাথে কোনরকম মসলা চলে না।  কিছু ক্ষেত্রে পোস্তর সাথে কালোজিরেপাঁচফোড়ন আর টমেটো দেওয়ার চেষ্টা করলে বড্ড বিচিত্র এক স্বাদের সৃষ্টি করে , যাতে পোস্তর দাম ওঠে না।  কারণ এর স্বাদ অত্যন্ত হালকা এবং নিরীহ তাই কোনরকম ঝাঁঝালো স্বাদের উপস্থিতি এর স্বাত্ত্বিক স্বাদে ঘা  মেরে দেয়।  তাই আদারসুন বা টমেটো কোনটাই এর সাথে যায় নাসোজা কথায় কোনো ফোড়ন চলে না।   ঝাল বলতে কাঁচা
লঙ্কা আর শুকনো লঙ্কা ছাড়া গতি নেই।  ভুলেও যেন গোলমরিচের ব্যবহার না করা হয়।  পিয়াজ যদিও চলে কিন্তু সেটাও শুধু পিয়াজ পোস্ততে। একমাত্র এই যুদ্ধেই দুই রাজা গলা জড়িয়ে যুদ্ধ জয় করে।

ভালো  খারাপ পোস্ত  রান্নার এক বড় মাপকাঠি হলো সময়।  পোস্ত দিয়ে কখনো ফোটাতে নেই। ফোটালেই সে ফুটে যায়।  বলতে গেলে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া পোস্ত প্রস্তুতির পদ্ধতি সব ক্ষেত্রে এক। সবজি বা মাছ যা কিছুই একটু ভেজে নরম করে নাও আর তার পরে নামানোর আগে পোস্ত  দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়িয়ে নাও , ব্যাস পোস্ট রেডি।

আমি আজ পর্যন্ত যে যে সবজির সাথে পোস্ত খেয়েছি সেগুলো হলোআলুভিন্ডিকচি সজনে ডাঁটাঝিঙেপটলফুলকপিচিচিঙ্গে এবং সবশেষে বেগুন। বেগুন পোস্ত  আত্মহত্যার নামান্তর বলে আমার মনে হয়েছে।
 কিন্তু বাকি গুলো আমার স্বপ্নে রোজ  আসে ( পাতে কম )  এবার মিলিয়ে মিশিয়ে করতে গেলে আলু - ডাঁটাআলু - ঝিঙে অসাধারণ। কিন্তু খবরদার বাকি গুলো মিশিয়ে ফেলবেন না। 

পিয়াজ পোস্তর একটা আলাদা ক্লাস আছে।  পদ্ধতিও দু ধরনের। আমার পদ্ধতি পিয়াজ ভেজে লাল লাল করে তাতে পোস্ত ঢেলে শুকনো শুকনো খাওয়া। আর আমার গিন্নির ফাঁকিবাজি কিন্তু দ্রুত পদ্ধতি হলো পিয়াজ ভাজার সময় একটু জল ঢেলে দেওয়া। ব্যাস সম্পূর্ণ দুটো স্বাদ বেরিয়ে আসবে। তেল  কম লাগবে। গরম ভাতে পিয়াজ পোস্তর সাথে একমাত্র তুলনীয় হলো লইট্টা শুঁটকি চাটনি।

সবজি যখন হলো তখন শাক কেন  বাদ যাবে।যদিও একমাত্র পুই শাক পোস্ত আমার মুখে রুচেছে তাই এর কথাই  বলি।  যদি ভাবেন পুই শাকে পোস্ত দিলে পুই আর পোস্তর দুটোরই অপমান করছেন তাহলে  বলব একবার করে দেখুন। আমার এই লেখাটা চোখে ভাসবে। পুই রান্নার নিয়ম হলো গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজো  ইনি নিজের জলে নিজেই সেদ্ধ হন যদিও সব শাকই একই প্রকার তবু পুই ডাঁটা দেখলে মনে হয় , " গলার পাত্র নয়।তবে বিশ্বাস করুন শাক আর মহিলা নিজের প্রশংসাতেই  গলে যায়।  তাই যখন ঢাকা দিয়ে গলিয়ে ফেলেছেন , তারপর পোস্ত বাটা ঢেলে ঢাকা দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে নামিয়ে নিন। ব্যাস এইটুকুই।

শুধু সবজি আর শাক  থাকলে বাঙালির রসপূর্তি পূর্ণ হয় না।  তাই মাছ পোস্ত। কিছু মাছ আছে যার পোস্ত অনবদ্য। যেমন টাটকা ছোট রুই/কাতলা/মৃগেলতিলাপিয়াপুঁটি। তবে হ্যা মাছের রাজা ইলিশ কিন্তু পোস্ত সহ্য করতে পারে না। কিন্তু এই একমাত্র মাছের কারণে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খায়। ইলিশ মাছেরই একমাত্র সরষে পোস্ত  সম্ভব এবং তার স্বাদ ভেবেই টপ করে নাল পরে  গেল।  মাছ পোস্তর জন্যও একই রেসিপি কিন্তু রুই মাছ বেশি ভাজতে হয় আর বাকি মাছ কম ভাজতে হয় বিশেষ করে তিলাপিয়া।

এতক্ষণ যা নিয়ে বকছিলাম তাতে পোস্ত ছিলো  মসলা। এবার যা বলব তাতে পোস্ত প্রাথমিক। পোস্তর বড়া আর কাঁচা পোস্ত বাটা। পোস্তর বড়া বানানোর জন্য পোস্তটাকে ঠিকঠাক  বাটতে হবে। অতিরিক্ত পাতলা হয়ে গেলেই গেরো। তাই যারা মিক্সিতে পোস্ত বাটে তাদের জন্য বলছি প্রথমে শুকনো পোস্ত দিয়ে মিক্সিতে ঘুরিয়ে / নিন তারপর একটু একটু জল দিয়ে থকথকে পেস্ট বানিয়ে তারপর গোল গোল করে ভাজুন। আমার গিন্নি আবার একটু পিয়াজ দেয়,বেটে না কেটে , মানে কুচিয়েতাতে যদিও স্বাদের কোনো তারতম্য  ঘটে না।


  পয়সার সাশ্রয় হয়। পয়সা সাশ্রয়ের আরেক ধান্দাবাজি হলো পোস্তর সাথে তিল বেটে নিন।  সাদা তিল।  কিন্তু স্বাদের তারতম্য বেশ বোঝা যাবে তাতে। পোস্ত প্রেমীদের এই ফাঁকিবাজি থেকে দুরে থাকা ভালো। কারণ বিবেকানন্দও পোস্ত  তিলের বড়া খেয়েই বলেছিলেন, "ফাঁকি দিয়ে কোনো মহত কার্য্য সম্পন্ন হয় না। " আরেক statutory warning দিয়ে রাখি এই বড়া যা তেল টানবে সেই তেল সহ্য করার ক্ষমতা থাকলে তবেই এই বড়ার প্রতি নজর দেবেন।

এরপর মহার্ঘ্য হলো পোস্ত বাটা।
 যেকোনো শারীরিক পরিস্থিতে ঝালের তারতম্য করে পোস্ত  বেটে নিন।  সাথে একটু সর্ষের তেল আর পিয়াজ কুচি আর নুন দিয়ে মেখে নিন।  আর গরম ভাতে মেখে খান।  জীবনের মানেই পাল্টে যাবে।  বর্ধমানে কোথাও কোথাও লোকে আবার মাছের ঝোলের সাথে ভাত মাখার পর পোস্ত বাটাও মেখে খায়।

পোস্তর এক দোসর হলো কাজু। এখানে পোস্ত passive  অনেক তরকারী মাখো মাখো করতে পোস্ত  কাজু বাটা ব্যবহার করা হয়।  অত্যন্ত ভারী হয় তবে মাংসর জগতে পোস্তর entry শুধু মাত্র  কাজুর হাত ধরে।   তাই সাধারণ মাংসের ঝোলকে অসাধারণ করতে জুড়ে দিন কাজু আর পোস্ত বাটা। সব স্বাদের সাধ পূর্ণ হয়ে যাবে। 

কিন্তু মিষ্টিমুখ না হলে কি আর সাধ পূর্ণ হয়।  আর এখানেই বাংলা ফেল মেরে গেছে। বাংলায় আমি দু তিনপ্রকার মিষ্টি খেয়েছি যাতে গোটা পোস্ত  দেওয়া থাকে। নাম যদিও ভুলে গেছি। কিন্তু বাংলার বাইরে আমি হাজার মিষ্টি খেয়েছি যার উপরের কভার পোস্ত  দিয়ে বানানো। এছাড়াও দক্ষিন ভারতে পায়েস বা rice pudding  এর মধ্যেও পোস্ত দেওয়া হয়।  বিদেশের মাটিতেও অনেক মিষ্টি খেয়েছি যার অন্যতম উপাদান হলো পোস্ত। কিছু নাম দিলাম Germknödel, Hamantashen, Kalach, Kołacz, Kutia, Mákos bejgli, Makowiec যেগুলো নানা দেশের মিষ্টি। wikipedia থেকে পরে নেবেন। তাই মিষ্টিপ্রিয় বাঙালির পোস্তপ্রীতি প্রস্ফুটিত হয়না বিশ্ব মাঝে। 

তো এই ছিল পোস্তর কাহিনী। এইবার প্রস্তুতি শুরু হোক।