Wednesday, August 14, 2013

একটি স্বাধীনতা দিবস

ছুটির দিন। আটটার সময় ঘুম থেকে উঠে গিন্নি কে অর্ডার করলাম, "একটু চা করবে?" গিন্নি তখন ঘুমে ঢুলছে। বলল, "আজকে একটু নিজে করে নাও না।" চা করাটা বেশ ঝামেলা। কোথায় কি রেখে দেয়। খুঁজতে খুঁজতেই চায়ের নেশা টা যাবে কেটে। তার থেকে চটিটা গলিয়ে রবিন্দার দোকানে গিয়ে হাজির হলাম। রবিন দাও ছুটির আমেজে। সবে দোকান খুলছে। বলে দিল, "পরে আয়। দুধ আসতে দেরী হবে।" মেজাজটা গেল খিঁচিয়ে, "র চা ই বানিয়ে দাও।" "উনুনে আঁচ দেব তারপর পাবি, বললাম না দেরী হবে, পরে আয়।"

ফিরে এলাম বাড়িতে খবর কাগজের প্রথম পাতায় বড় বড় করে লেখা স্বাধীন ভারত। বাহ ভুলে গেছিলাম কত বছর হলো। সাত্চল্লিশ থেকে একশ মাইনাস দিলে তিপ্পান্ন হয় প্লাস তেরো মানে ছেষট্টি। সত্তর হতে দেরী আছে। পাতা উল্টেই শুরু হয়ে গেল। খুন, মারামারি, ভোট, রেপ, বিকিনি, সেঞ্চুরি আর মাঝে মাঝে প্রগতি। এক কথায়, "কিস্যু হবে না এই দেশটার।"

এফ এম এ শুধু দেশাত্মবোধক গান চলছে। বেশ মিষ্টি। বন্দে মাতরম। মায়ের জন্য মন কেমন করে উঠলো। অনেকদিন দেখিনি। শুকনো বোদের জন্যও। অনেক দিন খাইনি। গানটা বেশ ভালো। কেন যে এটা জাতীয় সুর না হয়ে সঙ্গীত হলো বুঝতে পারলাম না। তখন তো জন্মায়নি। সব ভুলভাল বুঝিয়ে দিয়েছিল। সা রে  যাহা সে আচ্ছা গানটা শুধু পাকিস্থানির লেখা বলে বাদ পরে গেল। নাহলে তো অতি সেরা ছিল। তবে ভালই হয়েছে এখনো তো জাতীয় সুর, সঙ্গীত , পশু তো বাংলার ই  দখলে। আর কি চাই।

সাত পাঁচ ভাবছি। হঠাত আমেরিকা থেকে দিদির ফোন, "ভাই। হ্যাপি ১৫ আগস্ট।" বহু বছর আমেরিকা থেকে কালচার একেবারে গেছে। আমি উত্তর দিলাম, "হ্যাপী স্বাধীনতা দিবস।" "কিসের থেকে স্বাধিন হলি?" যাহ বাবা সকাল সকাল খালি পেটে রেলা পছন্দ হয়। ঝেড়ে দিলাম, "আমেরিকা যাদের থেকে স্বাধীন হয়েছে। তাদের থেকে।" "আরে না না। তুই কার থেকে হলি।" ধুর মশাই। দিদির এটা প্রত্যেক বছরের জ্ঞান। শেষমেষ বলবে ,"এখানে তো হ্যাপি ফোর্থ জুলাই বলে। independence day  বলে না। দু বছর আগে প্রাইস পেয়েছি ভেবে নাচন করার কি আছে।" কিচ্ছু হবে না দিদির। ম্লেচ্ছ দেশে বসে এইসব ডায়ালগ ঝেড়ে যাবে। কত স্বার্থত্যাগ কত বলিদানে পাওয়া এই স্বাধীনতা আমরা ভুলতে পারি। এই যাহ ছেলেটাকে তো প্রভাত ফেরিতে নিয়ে যেতে ভুলে গেলাম। পতাকা উত্তোলন হবে দশটায়। আর মোটে আধ ঘন্টা।

গিন্নি দেখি ছেলেটাকে রেডি করে ফেলেছে। ছেলেটাকে বগলদাবা করে  বেরোতে যাবো বিড়াল কাটলো রাস্তা। পেছন থেকে বউ এলো তেরে, আবার ঢুকলাম ঘরে। বিড়াল  যে আমার রাস্তায় হাঁটার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলো তার প্রতিবাদে বেরোনোর সময় থ্যাক করে থুতু ছুঁড়ে মারলাম বিড়ালটার দিকে। টিপ টা লাগলো না। আজকাল এই হয়। আগে বিড়ি খেয়ে থুতুটা যা গলাতাম না গরাদের ফাঁক দিয়ে। আজকাল টিপটা নষ্ট হয়ে গেছে। থাকগে পরে দেখা যাবে আগে তো এটাকে লোড করি।

ছেলের স্কুল হাঁটা পথে দশ মিনিট, দুটো বাস স্টপ।। কিন্তু এ রাস্তা চলার অযোগ্য। এখানে ভাঙ্গা ওখানে জল জমেছে। গভর্নমেন্ট শালা করে না কিছু শুধু ডায়লগ। রাস্তার পাশে নোংরা জমে জমে স্তুপ। হাঁটবো কোথায়। প্রতিটা স্তুপের পাশ দিয়ে যেতেই মুখ দিয়ে থুতু বেরিয়ে এলো। আমিও থুতু ছিটোতে চললাম। পেছনে হঠাত একটা বাসের আওয়াজ শুনে একটু শান্তি পেলাম। যদিও দুটো স্টপেজ মাত্র তবু হাত দেখাতে বাস টা দাড়িয়ে পড়ল যখন তখন উঠেই পরলাম। পেট্রলের সাথে বাসের ভাড়াও বেড়ে চলেছে। আর যখন ভাড়ায় এত দেব তাহলে রাস্তার মাঝখানেই বা বাস দার করাবো না কেন।

বাসে উঠেই প্রথমেই মনে হলো , "শালা স্বাধীনতা দিবসেও এত ভিড়?" এই পপুলেশন দেশটাকে খেয়ে ফেলেছে। আসছে ওপার থেকে আর বছরে বছরে এক গাদা করে বাচ্চা তৈরী করছে। কি যে হবে দেশটার। সব নষ্টের গোড়া এই ইল্লিগাল ইমিগ্রেশন। যাকগে পপুলেশন কমানোর দায়িত্ব তো আমার নয়। আমার তো একটাই পোলা। তার থেকে সামনের মেয়েটার খাঁজের দিকে নজর দি। ছেলের বাবা হলে কি হবে। মন তো এখনো কুড়ি। অনুভূতি রা কি বাধ্যতামূলক একই থাকে অহর্নিশ? কতদিন বলিনি মুখে, "মালটা কি ডবকা দেখ।"

বাস থেকে নামার তাড়া সবার। একটা বার শালা দরজার সামনে টুক টুক করে নামছে। দিলাম এক ধাক্কা। তাড়া তো আমারও  আছে নাকি। বার বয়সে বসে উঠতে গেছে কেন। যাইহোক নামতে না নামতে বাস দিল ছেড়ে। আর কালো ধোয়ায় সারা মুখ গেল ভরে। মিউনিসিপালিটি কেন যে এদের পের্মিস্সিওন দেয় ভগবান জানে। সব বৃথা। এ দেশে কিস্যু হবে না।

ছেলেটাকে স্কুলে ঢুকিয়ে পাশের ঘুমটি থেকে একটা সিগারেট কিনে  টান দিলাম। কি সুখ সকালের সিগারেটে। পাশ থেকে একটা রমনিকন্ঠ, "ধোয়া টা ওদিকে ছাড়বেন। এখানে বাচ্চারা আছে।" ঘুরে দেখলাম এক ভীষণা দর্শনা রমনী এক গাদা বাচ্চা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। একে কুরূপ তার ওপর ছোটলোক, অন্যের বাচ্চা সামলায়। আমি শালা multinational কোম্পানি তে কাজ করি আমায় শেখাছে। মেজাজ টা গেল খিচিয়ে, "বাস গুলোকেউ বলুন না। আর এখানে না দাড়িয়ে থেকে বাচ্চাদের ভেতরে নিয়ে গেলেই তো পারেন। ভেতরে তো নো স্মোকিং।" কিছু একটা বলে উঠলো মহিলা। পাত্তা না দিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা লাগলাম।

এই ঘুমটি গুলো যত নোংরার কারণ। সব ইল্লিগাল। তুলে দিলে রাস্তাটা পরিষ্কার থাকে। সব মাস্তানদের ঘুঁশ দিয়ে চলছে। যেখানে সেখানে ময়লা করছে। ডিমের খোলা, চায়ের পাতা তো সর্বত্র। কি যে হবে এই দেশটার। দেশের কথা ভাবতে ভাবতে হাতে সিগারেট টা শেষ হয়ে গেল। বাট টা ফেলে আবার রবিনদার চায়ের ঘুমটিতে গিয়ে বসলাম। অনিল এসে বসলো পাশে।

অনিল পার্টি করে। ম্যানেজমেন্ট পরে , পার্টি তে ঢুকেছে। বাবার পয়সার শ্রাদ্ধ। ব্যাটা এখন শুধু দুরে বেড়ায়। তবে হ্যা চাকরি করে কি আর কামাতো পার্টিতে থাকলে বড় হনু হয়ে যাবে কয়েকদিনের মধ্যেই। আমায় দেখে বলল, "কি দাদা , কেমন চলছে।" "তর কেমন চলছে বল। পার্টির খবর ঠিকঠাক।"
"হ্যা চলছে। প্রচুর খাটনি।"
"তা চাকরি বাকরির চেষ্টা করনা। এত ভালো স্কলার ছেলে। শেষে পলিটিক্স এ ঢুকলি?"
"কেন খারাপ কি আছে। চাকরি করে কারো দাসত্ব তো করতে হয় না।"
"তবু। সিকিউরিটি কি আছে? ওপরে উঠতে উঠতে তো বার হয়ে জাবি।"
"সে ঠিক আছে। চেষ্টা তো করি। ওসব চাকরি বাকরি আমার দ্বারা হবে না। তার থেকে একটু দেশের সেবা করি।"
ফ্যাক করে হেঁসে ফেললাম, "নেতা হয়ে দেশের সেবা করবি? সে আবার কি করে। দুদিন বাদেই তো ঘুঁশ খাবি।"
আমার বাক্যের প্রহারে ব্যাটা নেতিয়ে গেল। একটু চুপ থেকে পাল্টা প্রহার করলো , "তুমিই বা চাকরি করে কি করলে? সেই তো আমেরিকার সেবা করছ। দেশের জন্যও কিছু কর।"
"করছি তো। বিদেশ থেকে টাকা এনে তো দেশকেই দিচ্ছি। শোন দেশের উন্নতি নির্ভর করে রপ্তানির ওপর। ইকোনমিক্স তো পরেছিস। ঠিক  বলছি কি না বল।"
"হা তা ঠিক। কিন্তু সে তো গ্রাস রুট লেভেলে নয়। দেশের উন্নতির রসদ হলো এই রপ্তানি প্রসূত অর্থ যাকে কাজে লাগিয়ে দেশের লোকের সার্বিক উন্নতি করাই রাজনীতির কাজ।"
"দেখ তাহলে। আমরা আমাদের কাজ করছি। কিন্তু তোরা সেটা পকেটে পুরছিস। ঠিক কিনা বল।"
"ভুল করছ। তুমি একটা কথা বল। তুমি তোমার বাড়ির জন্য রোজগার করছ। বৌদিও করছে। কিন্তু তোমরা কি বাড়িটাকে বলছ যে পয়সা তো দিয়ে দিচ্ছি এবার নিজের মত চল। ঘরে নোংরা জমছে পরিষ্কার করছ। ঘরে নতুন নতুন আসবাব কিনে আনছ। সাজাচ্ছ। সব কিছুই তো তোমরাই করছ। তাহলে দেশের ক্ষেত্রে বিকল্প কেন?"
"ওরে শালা। তাহলে বাকি পুলিশ, কাজের লোক, মেথর এরা খাবে কি? সব যদি আমরাই করি।"
"তোমার বাড়িতে ভাকুয়াম ক্লিনার আছে, ফ্রিজ আছে, টি ভি আছে। সবার আলাদা আলাদা কাজ আছে। তবে কেউই কাজ করে না যদি তুমি না কাজ করাও। কিন্তু সবাই কাজ করতে তৈরী। না কাজ করলে পাল্টে দাও বা সরিয়ে নাও। তাই কি না ?"
"পলিটিক্স করে আর কিছু সিখিস না সিখিস বাতেলা দিতে ওস্তাদ হয়ে উঠেছিস। চল আমি যাই।"

পালিয়ে আসি নি। আমার সত্যি একটা কাজ মনে পরে গেল। বিকেলে বন্ধুরা আসবে তার বাজার করা বাকি আছে। সাথে আবার দুপুরের শো তে সিনেমা দেখতে যাব গিন্নি কে নিয়ে। একটু ইন্টারনেট এ রিভিউ পরে যেতে হবে। সবাই যা বলে তার ওপর নির্ভর করা উচিত।

সিনেমা দেখতে গিয়ে সে এক জালা। দেরী করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছি। তারাহুরো করে বাইক চালাতে পুলিশ ধরল রাস্তায়। ব্যাটা কিছুতেই ঘুঁশ খাবেনা। কি জ্বালাতন এদিকে টাইম বেরিয়ে যাচ্ছে। শেষে তিনশ টাকা  ফাইন দিয়ে ব্ল্যাক এ টিকিট কেটে তবে গিয়ে ঢুকলাম হলে। ভাগ্যিস ব্ল্যাক ছিলো। নাহলে আজ গিন্নির ঝাড় শুনতে হত। সিট্ টাও এমন জায়গায় পড়ল দু পাশে দুই বোরখা। হিন্দুস্তান যে কেন বলে বুঝে উঠতে পারিনা। দেখলেই ভয় লাগে। এই না বন্দুক বার করে।

সিনেমা মানেই তো এখন হয় নিউ ইয়র্ক না হয় সিডনি এ ছাড়া নাকি মার্কেট এ চলে না। যদিও আজকাল ভালো বাংলা সিনেমা বেরোচ্ছে। ভালই লাগছে দেখতে কিন্তু হলিউড এর ধরে কাছে যায় না। অরিজিনালিটির বরই অভাব। মৃনাল সেন , সত্যজিত রায় এর পর আর কেউ ভালো সিনেমা তৈরী করেছে বলে মনেই হয় না। চিন্তায় স্বাধীনতা নেই। সব কিছু টুকে টাকে। মাঝে মাঝে ভাবি সত্যি এ দেশের কিস্যু হবে না। আমি তো বাড়িতে বলে দিয়েছি ছেলেকে শুধু disney র মুভি দেখাবে। আর কিচ্ছু নয়।

বাড়ি ফেরার পথে আমার উকিল বন্ধুর কাছে ঘুরে গেলাম। ও না থাকলে আমার ইনকাম এর সবটাই ট্যাক্স এ চলে যেত। ফাক ফোকর যা জানে তাতে আমার ভালই চলে যায়। দেশ কে পয়সা দিয়ে হবে টা কি? সেই তো নেতারা পকেটে পুরবে। তার থেকে নিজের উন্নতি হোক ছেলে পুলেরা  খেয়ে পরে বাঁচবে।

পাড়ায় ঢুকতেই , "মেরে দেশ কি ধরতি , সোনা উগলে , উগলে হিরে মোতি।" গান ভেসে এলো। কোথায় সোনা। তিরিশ হাজারে পৌছেছে। এক রতি সোনাও তো ফলে না। তার থেকে যদি দুটো কোম্পানি খুলতো তাহলে কাজে দিত। এই চাষা গুলোই ব্যাগড়া দিল আর সব শেষ। নেতারাও ভোটের জন্য ওদের প্যালা দিয়ে চলেছে। নিচু জাত, অশিক্ষিত, সমাজের এই সব বোঝা গুলিকে গুলি করে মেরে ফেলা উচিত। তবে গিয়ে দেশের উন্যতি  হবে। ছেলে পুলেকে পড়াশুনো শিখিয়ে বিদেশে পাচার করতে পারলে বাঁচি। ভগবান করুক যেন পলিটিক্স না করে অনিলের মত।

  বিকেলে তার ছোটো মেয়ে কে নিয়ে হাজির হলো সুমিতাভ  আর তার গিন্নি প্রিয়াঙ্কা। দারুন ফ্যামিলি। সুমিতাভ একটা কোম্পানি খুলেছে। ভালো চাকরি করত। ছেড়ে দিয়ে নিজের বাড়িতেই একটা মেকানিকাল ডিসাইন এর কোম্পানি খুলেছে। প্রিয়াঙ্কা তার প্রথম কর্মচারী। সুমিতাভ দারুন সিন্থেসাইসার বাজাত। এখন ছেড়ে চুরে ঘোরতর কাজের মানুষ। ভেজালে বিশেষ থাকে না। আর এখন দশটা এমপ্লয়ী হয়েছে তার কোম্পানি তে। এসেই বলল , "দেশ তো জন্মে গেল ভায়া।"
"আর জন্মালো। শালা সবাই ভেঙ্গে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে ফেলছে। কিস্যু হবে না দেশটার।"
"ওসব তো চলতেই থাকে। যেদিন বুঝবে সেদিন ঠিক জুড়ে দেবে। জার্মানি জুড়েছিল মনে নেই।"
"আমাদের দেশে ওসব কিসু হবে না। সব চোর।"
"তুই চুরি করছিস নাকি?"
"আমি কে?? সব মহান মহান চরে ভর্তি। এখন আবার রেপিস্ট দের মার্কেট।"
"হা যা বলেছিস। কিছু একটা করতে হবে।"
"তুই আমি কি করব বল। পুলিশ আর গভর্নমেন্ট যদি সঙ্গ দেয় তাহলে তুই আমি কে? "
"যদিও আমাদের শহরটা  সেফ।"
"ছাড়। রাস্তা ঘাটে যা টোন টিটকিরি চলে। বোনকে নিয়ে বেরিয়েছিলাম। মাথা নিচু হয়ে গেছে।"
"উল্টে দিতে পারতিস।"
"বলা সহজ।"
"ঐটাই তো আমরা দারুন পারি ভাই। বলে দি। Pen is mightier than sword."
"তা ব্যবসা কেমন চলছে। প্রচুর কামাচ্চিস বল।"
"ব্যবসা ভালই চলছে। দশটা লোককে মাইনে  দিচ্ছি। ভালই বলতে পারিস।"
"কোনো লাভ নেই। দেশের তো কিছু বাড়ছে না। শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি এই অঙ্গীকার তো ঢপের।"
"চেষ্টা তো করে যেতে হবে ভাই। বসে থেকে ঘ্যান ঘ্যান তো বাচ্চারা করে। সেই চেষ্টাটাই করছি।"
"তা স্বাধীনতা দিবসে একটা কথা বল। দেশের জন্য কি করছিস?"
"কিছুই নয়। নিজের জন্য করছি। তাতে দেশেরও লাভ হচ্ছে। নেতা তো হতে পারলাম না। অত ক্ষমতাও নেই। যা ক্ষমতা আছে তার মধ্যেই করছি।"
"নেতা হতে ক্ষমতা লাগে নাকি।"
"দেখ আমি এই দশটা পাবলিক কে সামলাতে গিয়ে একটা ভালো জিনিস বুঝেছি। সেটা হলো পৃথিবীর সবথেকে কঠিন ক্ষমতা হলো। ম্যান ম্যানেজমেন্ট। আমার মেইন দেওয়া কর্মচারীদের হ্যান্ডেল করতে আমার পেছনে বাম্বু হয়ে যায়। আর এরা এত গুলো লোক কে হ্যান্ডেল করে  যাদের ৯০% কে তারা দেখেনি পর্যন্ত। কাজটা কত কঠিন সেটা ভাবার বাইরে।"
"ছাড়। আজ অনিলের সাথে সকালে দেখা। ঐযে পার্ট করছে যে মালটা চিনিস তো।"
"হ্যা ম্যানেজমেন্ট পড়তে পড়তে ছেড়ে দিয়েছিল।"
"ছাড়েনি। কমপ্লিট করেছে কিন্তু পার্টি করছে।"
"ক্ষতি কি। হাতে রাখ। পরে লবি বানাতে সুবিধা হবে।"
"তর শালা শুধু ধান্দা।"
"দেখো ভায়া, রাজত্বে রাজ পেয়াদাকেও গুটখা খাওয়াতে হয়। আমেরিকাতেও ওপেন লবি বাজি চলে। মানে নিজের কাজ করাতে পার্টির ক্যাম্পেইন এ পয়সা ঢালে লোকে।"
"আমেরিকা আমেরিকা করিস না তো। ওটাও শালা চোরের  দেশ।"
"দেখ এটা একটা উদাহরণ মাত্র। সব দেশেই এটা আছে। প্রকৃতিই তো ইটা বলে। ভোগ্য আর যোগ্য দুই ভাগে বিভক্ত পৃথিবী। তোর বাড়িতে যে কাজ করছে তার পরিশ্রম তো তুই ভোগ করছিস কারণ তুই যোগ্য। যে শক্তিশালী তাকে তেল মারতেই হয়। আর সাথে সাথে নিজেকেও শক্ত করতে হয়।"
"পারিনা মাসিমা। জ্ঞান তো সলিড দিলি। "
"লিকুইড এর ব্যবস্থা কি করেছিস?"
"নিয়ে এসেছি দুপুরে।"
"আজকে? কোথায় পেলি। আজ তো ড্রাই ডে।"
"বস এটা ইন্ডিয়া। গ্রেট ইন্ডিয়ান জুগাড়।"
"সত্যি দেখ। ফেইসবুক এ বড় বড় ফাটাচ্ছি আর স্বাধীনতা দিবসে মাল গিলছি। দু নম্বরী না থাকলে আমরা চলতাম কি করে বল। এই হিপোক্রেসী সত্যি জিন্দাবাদ।"
"নিজের কাজ করি। নিজের পয়সায় মাল খাই। দেশের যে কি ছেঁড়া যায় ভগবান জানে। বিন্দাস জিও আর চুটিয়ে দেশের নিন্দা কর তবেই না লোকে তোমায় আঁতেল বলবে। "

গরম গরম পিয়াজির সাথে খোলা ছাদের স্বাধীন বাতাসে আমার মদ খাওয়ার স্বাধীনতা আমার আজকের সবথেকে বড় প্রাপ্তি। হ্যাপি স্বাধীনতা দিবস।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

উপরের গল্পটি শুধু আমার নয়। যারা পড়ছেন তারা কোনো না কোনো ভাবে এর অংশ। তাই খিস্তি টা শুধু আমায় না দিয়ে নিজেকেও দিন। সমালোচনার কোনো সমাধান নেই। পারালিসিস বাই এনালিসিস না হয়ে একটু একটু দায়িত্ব নিলে হয়ত সকল দেশের সেরা আমার জন্মভূমি হয়ত বিশ্বসভায় আবার শ্রেষ্ঠ আসন লবে। স্বাধীন হয়েছি অনেকদিন কিন্তু চিন্তায় স্বাধীনতা আনাটাই আসল স্বাধীনতা। একটু ভাবুন কোথায় কোথায় আপনার আমার চিন্তা পরাধীন হয়ে আছে দেখবেন এক এক করে উঠে আসবে ধর্ম, ইন্টারনেট, ডলার, এফ এম, সিরিয়াল, প্রথম পাতা, খারাপ বাসা, যৌনতা, ফ্রি স্যাম্পল, ফেইসবুক আর বার বার কানে বেজে ওঠা সনসানি খবর। এর সবথেকে মুক্তি লাভ করলে তবেই আসল স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়া যায় বলে আমি মনে করি। হ্যাপি ১৫ অগাস্ট।