Wednesday, August 14, 2013

একটি স্বাধীনতা দিবস

ছুটির দিন। আটটার সময় ঘুম থেকে উঠে গিন্নি কে অর্ডার করলাম, "একটু চা করবে?" গিন্নি তখন ঘুমে ঢুলছে। বলল, "আজকে একটু নিজে করে নাও না।" চা করাটা বেশ ঝামেলা। কোথায় কি রেখে দেয়। খুঁজতে খুঁজতেই চায়ের নেশা টা যাবে কেটে। তার থেকে চটিটা গলিয়ে রবিন্দার দোকানে গিয়ে হাজির হলাম। রবিন দাও ছুটির আমেজে। সবে দোকান খুলছে। বলে দিল, "পরে আয়। দুধ আসতে দেরী হবে।" মেজাজটা গেল খিঁচিয়ে, "র চা ই বানিয়ে দাও।" "উনুনে আঁচ দেব তারপর পাবি, বললাম না দেরী হবে, পরে আয়।"

ফিরে এলাম বাড়িতে খবর কাগজের প্রথম পাতায় বড় বড় করে লেখা স্বাধীন ভারত। বাহ ভুলে গেছিলাম কত বছর হলো। সাত্চল্লিশ থেকে একশ মাইনাস দিলে তিপ্পান্ন হয় প্লাস তেরো মানে ছেষট্টি। সত্তর হতে দেরী আছে। পাতা উল্টেই শুরু হয়ে গেল। খুন, মারামারি, ভোট, রেপ, বিকিনি, সেঞ্চুরি আর মাঝে মাঝে প্রগতি। এক কথায়, "কিস্যু হবে না এই দেশটার।"

এফ এম এ শুধু দেশাত্মবোধক গান চলছে। বেশ মিষ্টি। বন্দে মাতরম। মায়ের জন্য মন কেমন করে উঠলো। অনেকদিন দেখিনি। শুকনো বোদের জন্যও। অনেক দিন খাইনি। গানটা বেশ ভালো। কেন যে এটা জাতীয় সুর না হয়ে সঙ্গীত হলো বুঝতে পারলাম না। তখন তো জন্মায়নি। সব ভুলভাল বুঝিয়ে দিয়েছিল। সা রে  যাহা সে আচ্ছা গানটা শুধু পাকিস্থানির লেখা বলে বাদ পরে গেল। নাহলে তো অতি সেরা ছিল। তবে ভালই হয়েছে এখনো তো জাতীয় সুর, সঙ্গীত , পশু তো বাংলার ই  দখলে। আর কি চাই।

সাত পাঁচ ভাবছি। হঠাত আমেরিকা থেকে দিদির ফোন, "ভাই। হ্যাপি ১৫ আগস্ট।" বহু বছর আমেরিকা থেকে কালচার একেবারে গেছে। আমি উত্তর দিলাম, "হ্যাপী স্বাধীনতা দিবস।" "কিসের থেকে স্বাধিন হলি?" যাহ বাবা সকাল সকাল খালি পেটে রেলা পছন্দ হয়। ঝেড়ে দিলাম, "আমেরিকা যাদের থেকে স্বাধীন হয়েছে। তাদের থেকে।" "আরে না না। তুই কার থেকে হলি।" ধুর মশাই। দিদির এটা প্রত্যেক বছরের জ্ঞান। শেষমেষ বলবে ,"এখানে তো হ্যাপি ফোর্থ জুলাই বলে। independence day  বলে না। দু বছর আগে প্রাইস পেয়েছি ভেবে নাচন করার কি আছে।" কিচ্ছু হবে না দিদির। ম্লেচ্ছ দেশে বসে এইসব ডায়ালগ ঝেড়ে যাবে। কত স্বার্থত্যাগ কত বলিদানে পাওয়া এই স্বাধীনতা আমরা ভুলতে পারি। এই যাহ ছেলেটাকে তো প্রভাত ফেরিতে নিয়ে যেতে ভুলে গেলাম। পতাকা উত্তোলন হবে দশটায়। আর মোটে আধ ঘন্টা।

গিন্নি দেখি ছেলেটাকে রেডি করে ফেলেছে। ছেলেটাকে বগলদাবা করে  বেরোতে যাবো বিড়াল কাটলো রাস্তা। পেছন থেকে বউ এলো তেরে, আবার ঢুকলাম ঘরে। বিড়াল  যে আমার রাস্তায় হাঁটার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলো তার প্রতিবাদে বেরোনোর সময় থ্যাক করে থুতু ছুঁড়ে মারলাম বিড়ালটার দিকে। টিপ টা লাগলো না। আজকাল এই হয়। আগে বিড়ি খেয়ে থুতুটা যা গলাতাম না গরাদের ফাঁক দিয়ে। আজকাল টিপটা নষ্ট হয়ে গেছে। থাকগে পরে দেখা যাবে আগে তো এটাকে লোড করি।

ছেলের স্কুল হাঁটা পথে দশ মিনিট, দুটো বাস স্টপ।। কিন্তু এ রাস্তা চলার অযোগ্য। এখানে ভাঙ্গা ওখানে জল জমেছে। গভর্নমেন্ট শালা করে না কিছু শুধু ডায়লগ। রাস্তার পাশে নোংরা জমে জমে স্তুপ। হাঁটবো কোথায়। প্রতিটা স্তুপের পাশ দিয়ে যেতেই মুখ দিয়ে থুতু বেরিয়ে এলো। আমিও থুতু ছিটোতে চললাম। পেছনে হঠাত একটা বাসের আওয়াজ শুনে একটু শান্তি পেলাম। যদিও দুটো স্টপেজ মাত্র তবু হাত দেখাতে বাস টা দাড়িয়ে পড়ল যখন তখন উঠেই পরলাম। পেট্রলের সাথে বাসের ভাড়াও বেড়ে চলেছে। আর যখন ভাড়ায় এত দেব তাহলে রাস্তার মাঝখানেই বা বাস দার করাবো না কেন।

বাসে উঠেই প্রথমেই মনে হলো , "শালা স্বাধীনতা দিবসেও এত ভিড়?" এই পপুলেশন দেশটাকে খেয়ে ফেলেছে। আসছে ওপার থেকে আর বছরে বছরে এক গাদা করে বাচ্চা তৈরী করছে। কি যে হবে দেশটার। সব নষ্টের গোড়া এই ইল্লিগাল ইমিগ্রেশন। যাকগে পপুলেশন কমানোর দায়িত্ব তো আমার নয়। আমার তো একটাই পোলা। তার থেকে সামনের মেয়েটার খাঁজের দিকে নজর দি। ছেলের বাবা হলে কি হবে। মন তো এখনো কুড়ি। অনুভূতি রা কি বাধ্যতামূলক একই থাকে অহর্নিশ? কতদিন বলিনি মুখে, "মালটা কি ডবকা দেখ।"

বাস থেকে নামার তাড়া সবার। একটা বার শালা দরজার সামনে টুক টুক করে নামছে। দিলাম এক ধাক্কা। তাড়া তো আমারও  আছে নাকি। বার বয়সে বসে উঠতে গেছে কেন। যাইহোক নামতে না নামতে বাস দিল ছেড়ে। আর কালো ধোয়ায় সারা মুখ গেল ভরে। মিউনিসিপালিটি কেন যে এদের পের্মিস্সিওন দেয় ভগবান জানে। সব বৃথা। এ দেশে কিস্যু হবে না।

ছেলেটাকে স্কুলে ঢুকিয়ে পাশের ঘুমটি থেকে একটা সিগারেট কিনে  টান দিলাম। কি সুখ সকালের সিগারেটে। পাশ থেকে একটা রমনিকন্ঠ, "ধোয়া টা ওদিকে ছাড়বেন। এখানে বাচ্চারা আছে।" ঘুরে দেখলাম এক ভীষণা দর্শনা রমনী এক গাদা বাচ্চা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। একে কুরূপ তার ওপর ছোটলোক, অন্যের বাচ্চা সামলায়। আমি শালা multinational কোম্পানি তে কাজ করি আমায় শেখাছে। মেজাজ টা গেল খিচিয়ে, "বাস গুলোকেউ বলুন না। আর এখানে না দাড়িয়ে থেকে বাচ্চাদের ভেতরে নিয়ে গেলেই তো পারেন। ভেতরে তো নো স্মোকিং।" কিছু একটা বলে উঠলো মহিলা। পাত্তা না দিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা লাগলাম।

এই ঘুমটি গুলো যত নোংরার কারণ। সব ইল্লিগাল। তুলে দিলে রাস্তাটা পরিষ্কার থাকে। সব মাস্তানদের ঘুঁশ দিয়ে চলছে। যেখানে সেখানে ময়লা করছে। ডিমের খোলা, চায়ের পাতা তো সর্বত্র। কি যে হবে এই দেশটার। দেশের কথা ভাবতে ভাবতে হাতে সিগারেট টা শেষ হয়ে গেল। বাট টা ফেলে আবার রবিনদার চায়ের ঘুমটিতে গিয়ে বসলাম। অনিল এসে বসলো পাশে।

অনিল পার্টি করে। ম্যানেজমেন্ট পরে , পার্টি তে ঢুকেছে। বাবার পয়সার শ্রাদ্ধ। ব্যাটা এখন শুধু দুরে বেড়ায়। তবে হ্যা চাকরি করে কি আর কামাতো পার্টিতে থাকলে বড় হনু হয়ে যাবে কয়েকদিনের মধ্যেই। আমায় দেখে বলল, "কি দাদা , কেমন চলছে।" "তর কেমন চলছে বল। পার্টির খবর ঠিকঠাক।"
"হ্যা চলছে। প্রচুর খাটনি।"
"তা চাকরি বাকরির চেষ্টা করনা। এত ভালো স্কলার ছেলে। শেষে পলিটিক্স এ ঢুকলি?"
"কেন খারাপ কি আছে। চাকরি করে কারো দাসত্ব তো করতে হয় না।"
"তবু। সিকিউরিটি কি আছে? ওপরে উঠতে উঠতে তো বার হয়ে জাবি।"
"সে ঠিক আছে। চেষ্টা তো করি। ওসব চাকরি বাকরি আমার দ্বারা হবে না। তার থেকে একটু দেশের সেবা করি।"
ফ্যাক করে হেঁসে ফেললাম, "নেতা হয়ে দেশের সেবা করবি? সে আবার কি করে। দুদিন বাদেই তো ঘুঁশ খাবি।"
আমার বাক্যের প্রহারে ব্যাটা নেতিয়ে গেল। একটু চুপ থেকে পাল্টা প্রহার করলো , "তুমিই বা চাকরি করে কি করলে? সেই তো আমেরিকার সেবা করছ। দেশের জন্যও কিছু কর।"
"করছি তো। বিদেশ থেকে টাকা এনে তো দেশকেই দিচ্ছি। শোন দেশের উন্নতি নির্ভর করে রপ্তানির ওপর। ইকোনমিক্স তো পরেছিস। ঠিক  বলছি কি না বল।"
"হা তা ঠিক। কিন্তু সে তো গ্রাস রুট লেভেলে নয়। দেশের উন্নতির রসদ হলো এই রপ্তানি প্রসূত অর্থ যাকে কাজে লাগিয়ে দেশের লোকের সার্বিক উন্নতি করাই রাজনীতির কাজ।"
"দেখ তাহলে। আমরা আমাদের কাজ করছি। কিন্তু তোরা সেটা পকেটে পুরছিস। ঠিক কিনা বল।"
"ভুল করছ। তুমি একটা কথা বল। তুমি তোমার বাড়ির জন্য রোজগার করছ। বৌদিও করছে। কিন্তু তোমরা কি বাড়িটাকে বলছ যে পয়সা তো দিয়ে দিচ্ছি এবার নিজের মত চল। ঘরে নোংরা জমছে পরিষ্কার করছ। ঘরে নতুন নতুন আসবাব কিনে আনছ। সাজাচ্ছ। সব কিছুই তো তোমরাই করছ। তাহলে দেশের ক্ষেত্রে বিকল্প কেন?"
"ওরে শালা। তাহলে বাকি পুলিশ, কাজের লোক, মেথর এরা খাবে কি? সব যদি আমরাই করি।"
"তোমার বাড়িতে ভাকুয়াম ক্লিনার আছে, ফ্রিজ আছে, টি ভি আছে। সবার আলাদা আলাদা কাজ আছে। তবে কেউই কাজ করে না যদি তুমি না কাজ করাও। কিন্তু সবাই কাজ করতে তৈরী। না কাজ করলে পাল্টে দাও বা সরিয়ে নাও। তাই কি না ?"
"পলিটিক্স করে আর কিছু সিখিস না সিখিস বাতেলা দিতে ওস্তাদ হয়ে উঠেছিস। চল আমি যাই।"

পালিয়ে আসি নি। আমার সত্যি একটা কাজ মনে পরে গেল। বিকেলে বন্ধুরা আসবে তার বাজার করা বাকি আছে। সাথে আবার দুপুরের শো তে সিনেমা দেখতে যাব গিন্নি কে নিয়ে। একটু ইন্টারনেট এ রিভিউ পরে যেতে হবে। সবাই যা বলে তার ওপর নির্ভর করা উচিত।

সিনেমা দেখতে গিয়ে সে এক জালা। দেরী করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছি। তারাহুরো করে বাইক চালাতে পুলিশ ধরল রাস্তায়। ব্যাটা কিছুতেই ঘুঁশ খাবেনা। কি জ্বালাতন এদিকে টাইম বেরিয়ে যাচ্ছে। শেষে তিনশ টাকা  ফাইন দিয়ে ব্ল্যাক এ টিকিট কেটে তবে গিয়ে ঢুকলাম হলে। ভাগ্যিস ব্ল্যাক ছিলো। নাহলে আজ গিন্নির ঝাড় শুনতে হত। সিট্ টাও এমন জায়গায় পড়ল দু পাশে দুই বোরখা। হিন্দুস্তান যে কেন বলে বুঝে উঠতে পারিনা। দেখলেই ভয় লাগে। এই না বন্দুক বার করে।

সিনেমা মানেই তো এখন হয় নিউ ইয়র্ক না হয় সিডনি এ ছাড়া নাকি মার্কেট এ চলে না। যদিও আজকাল ভালো বাংলা সিনেমা বেরোচ্ছে। ভালই লাগছে দেখতে কিন্তু হলিউড এর ধরে কাছে যায় না। অরিজিনালিটির বরই অভাব। মৃনাল সেন , সত্যজিত রায় এর পর আর কেউ ভালো সিনেমা তৈরী করেছে বলে মনেই হয় না। চিন্তায় স্বাধীনতা নেই। সব কিছু টুকে টাকে। মাঝে মাঝে ভাবি সত্যি এ দেশের কিস্যু হবে না। আমি তো বাড়িতে বলে দিয়েছি ছেলেকে শুধু disney র মুভি দেখাবে। আর কিচ্ছু নয়।

বাড়ি ফেরার পথে আমার উকিল বন্ধুর কাছে ঘুরে গেলাম। ও না থাকলে আমার ইনকাম এর সবটাই ট্যাক্স এ চলে যেত। ফাক ফোকর যা জানে তাতে আমার ভালই চলে যায়। দেশ কে পয়সা দিয়ে হবে টা কি? সেই তো নেতারা পকেটে পুরবে। তার থেকে নিজের উন্নতি হোক ছেলে পুলেরা  খেয়ে পরে বাঁচবে।

পাড়ায় ঢুকতেই , "মেরে দেশ কি ধরতি , সোনা উগলে , উগলে হিরে মোতি।" গান ভেসে এলো। কোথায় সোনা। তিরিশ হাজারে পৌছেছে। এক রতি সোনাও তো ফলে না। তার থেকে যদি দুটো কোম্পানি খুলতো তাহলে কাজে দিত। এই চাষা গুলোই ব্যাগড়া দিল আর সব শেষ। নেতারাও ভোটের জন্য ওদের প্যালা দিয়ে চলেছে। নিচু জাত, অশিক্ষিত, সমাজের এই সব বোঝা গুলিকে গুলি করে মেরে ফেলা উচিত। তবে গিয়ে দেশের উন্যতি  হবে। ছেলে পুলেকে পড়াশুনো শিখিয়ে বিদেশে পাচার করতে পারলে বাঁচি। ভগবান করুক যেন পলিটিক্স না করে অনিলের মত।

  বিকেলে তার ছোটো মেয়ে কে নিয়ে হাজির হলো সুমিতাভ  আর তার গিন্নি প্রিয়াঙ্কা। দারুন ফ্যামিলি। সুমিতাভ একটা কোম্পানি খুলেছে। ভালো চাকরি করত। ছেড়ে দিয়ে নিজের বাড়িতেই একটা মেকানিকাল ডিসাইন এর কোম্পানি খুলেছে। প্রিয়াঙ্কা তার প্রথম কর্মচারী। সুমিতাভ দারুন সিন্থেসাইসার বাজাত। এখন ছেড়ে চুরে ঘোরতর কাজের মানুষ। ভেজালে বিশেষ থাকে না। আর এখন দশটা এমপ্লয়ী হয়েছে তার কোম্পানি তে। এসেই বলল , "দেশ তো জন্মে গেল ভায়া।"
"আর জন্মালো। শালা সবাই ভেঙ্গে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে ফেলছে। কিস্যু হবে না দেশটার।"
"ওসব তো চলতেই থাকে। যেদিন বুঝবে সেদিন ঠিক জুড়ে দেবে। জার্মানি জুড়েছিল মনে নেই।"
"আমাদের দেশে ওসব কিসু হবে না। সব চোর।"
"তুই চুরি করছিস নাকি?"
"আমি কে?? সব মহান মহান চরে ভর্তি। এখন আবার রেপিস্ট দের মার্কেট।"
"হা যা বলেছিস। কিছু একটা করতে হবে।"
"তুই আমি কি করব বল। পুলিশ আর গভর্নমেন্ট যদি সঙ্গ দেয় তাহলে তুই আমি কে? "
"যদিও আমাদের শহরটা  সেফ।"
"ছাড়। রাস্তা ঘাটে যা টোন টিটকিরি চলে। বোনকে নিয়ে বেরিয়েছিলাম। মাথা নিচু হয়ে গেছে।"
"উল্টে দিতে পারতিস।"
"বলা সহজ।"
"ঐটাই তো আমরা দারুন পারি ভাই। বলে দি। Pen is mightier than sword."
"তা ব্যবসা কেমন চলছে। প্রচুর কামাচ্চিস বল।"
"ব্যবসা ভালই চলছে। দশটা লোককে মাইনে  দিচ্ছি। ভালই বলতে পারিস।"
"কোনো লাভ নেই। দেশের তো কিছু বাড়ছে না। শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি এই অঙ্গীকার তো ঢপের।"
"চেষ্টা তো করে যেতে হবে ভাই। বসে থেকে ঘ্যান ঘ্যান তো বাচ্চারা করে। সেই চেষ্টাটাই করছি।"
"তা স্বাধীনতা দিবসে একটা কথা বল। দেশের জন্য কি করছিস?"
"কিছুই নয়। নিজের জন্য করছি। তাতে দেশেরও লাভ হচ্ছে। নেতা তো হতে পারলাম না। অত ক্ষমতাও নেই। যা ক্ষমতা আছে তার মধ্যেই করছি।"
"নেতা হতে ক্ষমতা লাগে নাকি।"
"দেখ আমি এই দশটা পাবলিক কে সামলাতে গিয়ে একটা ভালো জিনিস বুঝেছি। সেটা হলো পৃথিবীর সবথেকে কঠিন ক্ষমতা হলো। ম্যান ম্যানেজমেন্ট। আমার মেইন দেওয়া কর্মচারীদের হ্যান্ডেল করতে আমার পেছনে বাম্বু হয়ে যায়। আর এরা এত গুলো লোক কে হ্যান্ডেল করে  যাদের ৯০% কে তারা দেখেনি পর্যন্ত। কাজটা কত কঠিন সেটা ভাবার বাইরে।"
"ছাড়। আজ অনিলের সাথে সকালে দেখা। ঐযে পার্ট করছে যে মালটা চিনিস তো।"
"হ্যা ম্যানেজমেন্ট পড়তে পড়তে ছেড়ে দিয়েছিল।"
"ছাড়েনি। কমপ্লিট করেছে কিন্তু পার্টি করছে।"
"ক্ষতি কি। হাতে রাখ। পরে লবি বানাতে সুবিধা হবে।"
"তর শালা শুধু ধান্দা।"
"দেখো ভায়া, রাজত্বে রাজ পেয়াদাকেও গুটখা খাওয়াতে হয়। আমেরিকাতেও ওপেন লবি বাজি চলে। মানে নিজের কাজ করাতে পার্টির ক্যাম্পেইন এ পয়সা ঢালে লোকে।"
"আমেরিকা আমেরিকা করিস না তো। ওটাও শালা চোরের  দেশ।"
"দেখ এটা একটা উদাহরণ মাত্র। সব দেশেই এটা আছে। প্রকৃতিই তো ইটা বলে। ভোগ্য আর যোগ্য দুই ভাগে বিভক্ত পৃথিবী। তোর বাড়িতে যে কাজ করছে তার পরিশ্রম তো তুই ভোগ করছিস কারণ তুই যোগ্য। যে শক্তিশালী তাকে তেল মারতেই হয়। আর সাথে সাথে নিজেকেও শক্ত করতে হয়।"
"পারিনা মাসিমা। জ্ঞান তো সলিড দিলি। "
"লিকুইড এর ব্যবস্থা কি করেছিস?"
"নিয়ে এসেছি দুপুরে।"
"আজকে? কোথায় পেলি। আজ তো ড্রাই ডে।"
"বস এটা ইন্ডিয়া। গ্রেট ইন্ডিয়ান জুগাড়।"
"সত্যি দেখ। ফেইসবুক এ বড় বড় ফাটাচ্ছি আর স্বাধীনতা দিবসে মাল গিলছি। দু নম্বরী না থাকলে আমরা চলতাম কি করে বল। এই হিপোক্রেসী সত্যি জিন্দাবাদ।"
"নিজের কাজ করি। নিজের পয়সায় মাল খাই। দেশের যে কি ছেঁড়া যায় ভগবান জানে। বিন্দাস জিও আর চুটিয়ে দেশের নিন্দা কর তবেই না লোকে তোমায় আঁতেল বলবে। "

গরম গরম পিয়াজির সাথে খোলা ছাদের স্বাধীন বাতাসে আমার মদ খাওয়ার স্বাধীনতা আমার আজকের সবথেকে বড় প্রাপ্তি। হ্যাপি স্বাধীনতা দিবস।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

উপরের গল্পটি শুধু আমার নয়। যারা পড়ছেন তারা কোনো না কোনো ভাবে এর অংশ। তাই খিস্তি টা শুধু আমায় না দিয়ে নিজেকেও দিন। সমালোচনার কোনো সমাধান নেই। পারালিসিস বাই এনালিসিস না হয়ে একটু একটু দায়িত্ব নিলে হয়ত সকল দেশের সেরা আমার জন্মভূমি হয়ত বিশ্বসভায় আবার শ্রেষ্ঠ আসন লবে। স্বাধীন হয়েছি অনেকদিন কিন্তু চিন্তায় স্বাধীনতা আনাটাই আসল স্বাধীনতা। একটু ভাবুন কোথায় কোথায় আপনার আমার চিন্তা পরাধীন হয়ে আছে দেখবেন এক এক করে উঠে আসবে ধর্ম, ইন্টারনেট, ডলার, এফ এম, সিরিয়াল, প্রথম পাতা, খারাপ বাসা, যৌনতা, ফ্রি স্যাম্পল, ফেইসবুক আর বার বার কানে বেজে ওঠা সনসানি খবর। এর সবথেকে মুক্তি লাভ করলে তবেই আসল স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়া যায় বলে আমি মনে করি। হ্যাপি ১৫ অগাস্ট।









 

 

Wednesday, July 31, 2013

ধর্ষণকারীদের প্রতি


বাবার মুখ থেকে ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি এক গ্রাম্য প্রবাদ। মানুষ সন্যাসী হয়
আউশে, পৌষে , মাগ মরা, নির্বংশে , ভয়ে , ভক্তিতে , পেটের দায়ে আর ড্যাসের দায়ে। এই ড্যাশ টা মহা সাংঘাতিক ড্যাশ। ভদ্রলোক কোনদিন শুন্যস্থান পূরণ করেননি। কিন্তু এই ড্যাসের ঠেলায় আজ আপনাদের মত মানুষরা তৈরী হয়েছেন। দুঃখের বিষয় যে আপনারা সন্যাসটাও নিতে পারেন না। আপনাদের অস্তিত্ব বহু পুরাতন। ইতিহাসের মলিন পাতায় টুকি মারেন মাঝে মাঝে। কিন্তু অধুনা ভূত মানে রিসেন্ট পাস্ট এ আপনাদের পদচিহ্ন স্বাপদের মত স্পষ্ট এবং অমলিন।

প্রাচ্যের দশ হাজার বছরের ইতিহাসে পুরুষরা শক্তি প্রয়োগ করে নারীদের দখল নিয়েছেন, এর নজির বহুল। নারী তাদের কাছে ছিল সামগ্রী। আর আপনাদের কাছে "মাল". তফাত শুধু এইটাই যে তারা নারীর হৃদয় ও দেহ  অধিকার করতেন  পুরুষদের পরাজিত করে। আর আপনারা নারীর দেহের অধিকার নেন  নারীর সযত্নে সংরক্ষিত আব্রু কে পরাস্ত করে। আপনারা তাতেই খুশি। যা পাই তাই লাভ। বিনা পয়সায় পাওয়া তো। যেটুকু লোটা যায়। ক্ষণেকের প্রচেষ্টা আধা প্রাপ্তি আধা বিজয়ের সুখ। কোনটাই পাওয়া নয়। যদিও তাতে কিছু এসে যায় না। খুঁটে খেতে আপনারা ভালই পারেন। পৃথিবী এগিয়ে যাক, আধুনিক হোক, আপনারা কিন্তু আদিমতার সংরক্ষক। আপনাদের উপস্থিতি টিকিয়ে রাখে আমাদের পূর্বপুরুষের অস্তিত্ব।

আপনাদের চিন্তার সরলতা হৃদয় স্পর্শ করে। যাও খাও চলে এস। ফিরে তাকিও না মাংসের হাড়ের দিকে। আবর্জনা কেউ না কেউ তো সাফ করবেই। সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে মোরা পরের তরে। আপনারা আপনাদের কাজ না করলে, পুলিশ , উকিল, সংবাদপত্র, সেল্ফ ডিফেন্স কোচিং ক্লাস  সব চলবে কি করে। আর আমরাই বা তর্ক করব কি নিয়ে। পশিমবঙ্গ তো এখন আপনাদের জন্যই বিখ্যাত। খেতে , শুতে , হাঁটতে চলতে এখন শুধু আপনাদেরই চিন্তা আর কিশোরীদের স্বপ্নে এখন তো হিরো রা হেরো। আপনারাই সেরা।

আপনাদের এই গেরিলা আক্রমন চে গেভারা যদি দেখতেন তাহলে সত্যি তাকে অকালে প্রাণ হারাতে হত না। আপনাদের মতই বেঁচে থাকতেন। মাঝে মাঝে খামচে এক মুঠো সম্মান কেড়ে নিয়ে পলিটিসিয়ানদের ধুতির নিচে লুকিয়ে পরার আপনাদের যে কৌশল তা সত্যি ভাবনার অতীত। রাজনীতির সবথেকে বড় অস্ত্র তো আপনারা। বোমার থেকে বিস্ফোরক আপনাদের কালিপটকা। মাফ করবেন কালিপটকা বলার জন্য। কিন্তু আপনাদের একটা কালিপটকা আর দুটি চকলেট বোমার কেরামতিই মনে হয় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটাবে। এখন তারই প্রস্তুতি জোর কদমে। নানকিং থেকে কঙ্গো , ইরাক থেকে চেচনিয়া রাজনীতির ধজা তো আপনারাই ধরেছিলেন। আপনারা না থাকলে বিপ্লবের সূত্রপাত হত কি করে। বঙ্গের রাজনীতির এত পরিবর্তন আনতে তো আপনাদের অবদান প্রথম। যেখানে শক্তি নিঃশেষ হয় সেখানে আপনাদের নিষেক কার্যকরী হয়।

আপনাদের দলগত  প্রচেষ্টা সকলের কাছে নিদর্শন হয়ে থাকা উচিত। একা জেতা সম্ভব নয়। পাঠ্য পুস্তকে লাঠি ভাঙ্গার উদাহরণের জায়গায় আপনাদের যৌথ উদ্যোগে সাফল্য লাভের কাহিনী পড়ানো উচিত। পুরুষ দৈহিক শক্তিতে নারীর থেকে বেশি , আর নারী মানসিক শক্তিতে। আপনাদের যৌথ উদ্যোগ কেমন করে ভেঙ্গে ফেলে সেই মানসিক শক্তি তা শিক্ষনীয়। একা ধরা পড়লে ধনঞ্জয় হয় , তাই আপনারা এখন যৌথভাবে ধরা পরে জেলের ভেতর থেকে ভগত সিংহের মত আপনাদের ঐতিহ্য প্রচার করে চলেছেন। ভাবতে ভালো লাগে আপনারা কি সুন্দর মাইল মিশে কাজ করেন। নারীর মত উপাদেয় খাদ্যবস্তুকে আপনারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। কর্পোরেট সেক্টরে HR গেম এ আপনাদের যৌথ ক্রীড়াকে introduce করা উচিত। টীম বিল্ডিং এর চূড়ান্ত নিদর্শন আপনাদের গ্যাং রেপ।

নারীর পোশাকের ঔধত্ব রুখতে আপনাদের যে অক্লান্ত পরিশ্রম মানুষ যেন ভুলে না যায়। পিতা তার কন্যার মিনি স্কার্ট এ আপত্তি জানালে কন্যা ঘর ছেড়ে দেয় , সেই কন্যা আপনাদের উদ্যোগেই ফিরে আসে পিতার কোলে। ধর্মীয় সংস্থান দোষ দেয় সেই কন্যার। আর আপনাদের জয়ধনী দেওয়া হয়। প্রকৃতির কাছে সকলেই শিশু, সেই প্রকৃতিই যখন নারীকে দুর্বল করেছে তখন সবলের উচিত তাকে সবলে ভোগ করা। এই সত্য আপনারাই তো পুনঃপ্রতিস্ঠান করেছেন। ফুল যদি পরাগ কে ঢেকে না রাখে তাহলে প্রজাপতি তো বসবেই। তাই আঢাকা খাবারের ওপর মাছির মত বসে আপনারাই শেখাচ্ছেন শালীনতা। নারী স্বাধীনতার বোকা বোকা বুলি বলা লেডিস কম্পার্টমেন্ট - এ চড়া নারী বাদীদের আপনারা শাস্তি দিয়েছেন লেডিস কম্পার্টমেন্ট এ উঠে। ঘাস সর্বদা পায়ের তলাতেই থাকে কিন্তু সুন্দর ফুল ফোটায়। তাদের ফুল মাথায় রাখতে আর ঘাসকে সারাজীবন দলতে হয়। তাদের বাড়তে দিলে সে বাঁশ হয়ে দাড়ায়। আহা কি অপরূপ শিক্ষা। গনেশ থাকলে মহাভারত পার্ট ২ বেরোতো।

কচি পাঁঠার ঝোল যদি ভালো লাগে , তবে কচি শিশুর স্বাদ কত সুন্দর হবে। এই ভাবনা সত্যিই আপনাদের আগে কেউ ভাবেনি। আম পাকার আগে আঁচার করে খাও। পাকা আম শুধু ফল হিসেবে খাওয়া যায়। কিন্তু কাঁচা আম দিয়ে  টক কর, আম তেল কর, শুকিয়ে চারু বানাও, আমচুর কর আরো কত কি। আপনারা শিশুদের সাথে প্রথম খেলেন পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর খেলা। সেক্স education এর জ্ঞানের থেকে আপনাদের হাতে কলমে শিক্ষাদানের প্রয়াস সেই শিশুরা সারা জীবন মনে রাখে। তারা বড় হযে ওঠার আগেই পরিনত হয়ে ওঠে। আর তাতেই তো বিশ্বসংসারের লাভ। শৈশব তো সমাজের বোঝা। fruitless ইনভেস্টমেন্ট। আপনারা তাদেরই একটু কাজে লাগিয়ে দেশকে আগে বাড়িয়ে নিয়ে চলেছেন। ধন্য আপনাদের বিচারবুদ্ধি। আর ব্যবহার করে ফেলে দিতেও সমস্যা নেই। পাউচ প্যাক তো। পুড়িয়ে দিলে কম ধোঁয়া বেরয় আর গর্তে ফেললে ছোটো জায়গা লাগে। optimization অফ resources.

আপনারা দর্শনে ভেদ বিভেদ করেন না। সকল নারীকেই সমান চোখে দেখেন। ভগবান যাদের কুত্সিত করে ঠেলে দিয়েছেন অন্ধকারে তাদেরও আপনারা কাছে টেনে নেন। যাদের দেখলে আমাদের মত সাধারণ পুরুষ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে, "ভগবান বোবা কলা করে দাও সুধু  হাত দুটো কেটো না।" আপনারা নিজ দেহ নির্যাস প্রদান করে তাদের ইহজীবন স্বার্থক করেন। দুর্গন্ধে পরে থাকা রাস্তার পাগলীও প্রসবিনী হয় আপনাদের দৌলতে। লোকে অর্থ উপর্জন করে দান করে , আর আপনারা নিজ দেহে সযত্নে লালিত স্নেহবিন্দু দান করেন। কি অসীম আপনাদের দান। কর্ণর নাম মুছে আপনাদের নাম লেখা উচিত দাতা হিসেবে।

পুরুষ বহুগামী এই সত্য মধ্যযুগীয়। নারীও তাই।  নারীকে পেষণ করা যায় কিন্তু তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়। আপনারা তাই যৌথ ভাবে তাদের বহু পুরুষের স্বাদ দিয়েছেন। কৃতার্থ করেছেন তাদের নারী জন্ম কে। তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছেন একদিনের , এক মুহুর্তের জন্য। তাদের ছিন্ন বসনে , অশ্রু বিসর্জনে জমেছে খুশির বাস্প। আচম্বিত কৌমার্য হরণে কিশোরী হয়েছে নারী। তাদের বহুগামিতার গোপন স্বপ্ন সার্থক করে তাদের ভবিষ্যত বানিয়ে দিয়েছেন আপনারা। কত নারীর পারিবারিক বন্ধন ভেঙ্গে হয়েছে পতিতা, বারবনিতা, কল গার্ল। আপনাদের মুগুর ভেঙ্গেছে দুয়ার এনেছে জ্যোতির্ময়। আপনাদের কর্মে তারা ছেড়েছে গৃহের আর পরিচিত সমাজের গন্ডি। পেয়েছে ফাইভ ষ্টার হোটেলে রাত জাগার সুধা। ভাতের ফ্যান ছেড়ে শ্যাম্পেনে দিয়েছে চুমুক। আপনাদের ক্ষুদ্র ত্যাগে তারা বিস্ববিজয়ের সোপান উড়িয়েছে। এনেছে টুরিস্ট , এনেছে বিদেশী মুদ্রা। ভাব বিভোর সংসার সামলানো ছেড়ে অর্থ রোজগারে নেমেছে। একই সাথে নারীত্বের পেষণ ও উত্থান আপনাদের দাড়ায় সম্ভব।

হে মহান আত্মা, অসীম পৌরুষের অধিকারী, হে শক্তির প্রচারক, হে নিরহংকার আত্মপ্রচার বিরোধী, হে নিদ্রাহীন কর্মী তবে কেন এই বাছবিচার। চ্যারিটি কেন begins at home নয়। কেন আপনার জন্মদাত্রী মাতা , আপনার কন্যা, আপনার ভগিনী এই মহান কর্ম থেকে বঞ্চিত হয়। কেন আপনাদের এই মহান প্রচেষ্টা তাদের দিয়ে শুরু হয় না। কেন তারা গোপনে অশ্রু বিসর্জন করে এই যজ্ঞের প্রথম আহুতি না হওয়ার জন্যে। তাদের নরম দেহ কেন অস্পৃশ্য আপনার কাঠিন্যের কাছে। কেন তারা এক সাথে অনেক পুরুষের স্বাদ পায়না। কেন তাদের শৈশব দেয়ালায় নষ্ট হয়। কেন আপনার স্নেহবিন্দু থেকে আপনার কন্যা প্রসবিনী হয় না। তাদের প্রতি এই নির্বিচার কেন? আমি তাদের হয়ে আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি। তারা আপনার। নির্গুণ স্বজন শ্রেয় , পরঃ পর সদা। হতে পারে তারা খাদ্য হিসেবে পক্ক নয় তবু নারকেল খেলে দাঁত শক্ত হয়। আপনার মহান উদ্যেশে তাদেরও সামিল করুন। Practise makes perfect. তাদের উপভোগ করুন এবং আপনার সাঙ্গপাঙ্গদের উপভোগ করার সুযোগ করে দিন। তবেই না একদিন আপনি সবার সামনে মাথা উঁচু করে ভারতমাতার ইজ্জতে হাত দেওয়ার মত কুশল হয়ে উঠবেন। উইকিপেডিয়ায় আমরাই হব শ্রেষ্ঠ। ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে।


Friday, July 19, 2013

খাই খাই চন্দননগর -- Part 2

বলাই এর চিকেন কাটলেট হাতে নিয়ে স্ট্র্যান্ড এর দিকে এগোতে ফাস্ট ফুড এর স্বর্গরাজ্যে এসে পরবে। আজ পর্যন্ত যত পার্ক ঘুরেছি , চন্দননগর স্ট্র্যান্ড এর মত খাওয়াদাওয়ার অতিরিক্ততা আর কথাও পাইনি। বঙ্গভূমিতে যত ধরনের চটপটা সান্ধ্য খাবারদাবারের নাম করা যায় মনে হয় সবকিছুই স্ট্র্যান্ড এ পাওয়া যায়। প্রেমিকাকে বগলদাবা করে ছোলার  চাট থেকে শুরু করে, বন্ধুদের সাথে কলেজ বিড়ি  বা বার্ধক্যের দাবা খেলতে খেলতে মসলা চায়ে চুমুক সবই হাতের কাছে পাওয়া যায়। স্ট্র্যান্ড এর ফরাসী কায়দার  চেয়ার ধরে ফুরফুরে গঙ্গার হাওয়ায় ঘন্টার পর ঘন্টা কাটানোর মজা নিয়ে যারা বড় হয়েছে তাদের আমি নিতান্তই ভাগ্যবান মনে করি। 

কিন্তু স্ট্র্যান্ড এ যাওয়ার আগে চার্চ আর স্ট্র্যান্ড এর মাঝ খানে এক গুচ্ছ দোকানের মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া তিনটি দোকানের কথা এখানে বলব। এই লেখাটা শুরু করেছিলাম বেনারসী কে দিয়ে। তার রাজত্ব শুরু হয় এখানেই। এক সময় এই জায়গাই ছিল বড় বড় গাছ আর একদিকে দুপ্লের বাড়ির বিশাল পাঁচিল আর আরেকদিকে ডুপ্লে কলেজ। সে সময় কলেজের গায়ে লাগানো ছোট্ট একটু বাচ্চাদের পার্ক ছিল। আর তার সামনেই বসত চার পাঁচটা ফুচকাবালা। কিন্তু যখন এই জায়গাটা একটা প্যারিসের এক রাস্তার ( নামটা ভুলে গেছি ) অনুকরণের বানিয়ে তোলা হয় তখন ফুচকার ষ্টল গুলো প্রাধান্য পায় একটা গোল মত জায়গায়। চার্চ পেরিয়ে দান হাতে পরে সেই গোলটা। আর তার মাঝখানেই রমরমা বিসনেস বেনারসী সিং এর ফুচকার দোকান। আমার ছোটবেলায় সে আমাদের স্কুল( কানাই লাল বিদ্যামন্দির) এর সামনে টিফিনের সময় ফুচকা বেচতো। কচিকাঁচার দল সামলাতে সামলাতে তার অতিরিক্ত তিরিক্ষে মেজাজ মোটেই আমার ভালো লাগত না। কিন্ত বেশ কিছু বছর পর যখন প্রেমিকা বগলে নিয়ে তার কাছেই গেলাম ফুচকা খেতে , তখন তার আপ্যায়ন দেখে কে।  ফুচকা র বৈচিত্র তাদের পরিমাপের বৈচিত্রে নির্ভর করে। বেনারসী সেই সময় একমাত্র ফুচকাওয়ালা ছিল যে ফুচকার জলে পুদিনা আর লেবু রস দিত। আর তার বানানো ফুচকার মসলা তো অসাধারণ। আর সবথেকে বড় কথা রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট। যা চাইবে তাই পাবে। জল বেশি পুর কম, জল কম পুর বেশি, ঝাল বেশি ঝাল কম, কাঁচা লঙ্কার ঝাল বা গুঁড় লঙ্কার ঝাল সব তোমার ইচ্ছা। এতটাই customized যে মুডের সাথে পরিবর্তিত স্স্বাদের পূর্ণ পরিতৃপ্তির gurranty. তবে একটা কথা, ভিড় কিন্তু প্রচুর। অপেক্ষা না করতে হলে অন্য কথাও যেতে পারো। শুধু ভুলে যেওনা সবুরে মেওয়া ফলে। 

বেনারসীর জায়গা ছেড়ে আরেকটু এগিয়ে গেলেই পাওয়া যাবে গনেশের চাউমিন। একটা বিশাল তাওয়াতে করে চাউমিন তৈরী হয়েই চলেছে আর তোমার ইচ্ছামত customized করে দিচ্ছে তাওয়ার আরেক দিকে। ডিম মেশাও , চিকেন মেশাও , বেশি সস কম সস, হাফ প্লেট ফুল প্লেট, বাড়ি নিয়ে যাও বা দাড়িয়ে খাও যেমন চাও তেমন। যদিও স্বাদে হয়ত প্রথম তিনে রাখতে এখন সমস্যা কারণ মুম্বাই এর ফুটপাতে বাঙালি chowmin এর দোকানে, সেজওয়ান chowmin আমার কাছে এখনকার মত সেরা। তবু স্ট্র্যান্ড এ যদি যাও তাহলে ভুলেও অন্য জায়গায় chowmin খেয়ে পয়সা নষ্ট কর না। 

এবার একটু নিরপেক্ষতা হটিয়ে দিয়ে রবিনদার চায়ের দোকানের পক্ষপাতিত্ব করি। আমার লেখা , আমি যা ইচ্ছা করতে পারি। আর রবিনদার জন্য পক্ষপাতিত্ব করা নিতান্তই কিছু সুমধুর স্মৃতির pay-off. চায়ের পরিমান এবং কোয়ালিটিতে হয়ত রবিন্ দার চা প্রথম পঞ্চাশেও আসবে না। কিন্তু চায়ের দোকান হিসেবে আর দোকানের মালিক হিসেবে রবিনদার জুরি মেলা ভার। আর চায়ের দোকান চিরকালই একটা আড্ডার ক্ষেত্র, আর দোকানের মালিকের ছোট ছোট টিপ্পনি যখন আড্ডার গাড়িতে পেট্রল ভরে দেয় তখন লং ড্রাইভ তো করতেই হবে। দীর্ঘ সাত বছর তাই একটানা আমি বা আমাদের ঠেক রবিনদার পার্মানেন্ট খদ্দের। আমার মতে রবিনদার চায়ের দোকান হলো স্ট্র্যান্ড এর নিউস চ্যানেল আর রবিনদা তার একমাত্র journalist, রিপোর্টার আর নিউস রিডার। 

চায়ের ভাঁড় টা সঠিক জায়গায় না ফেললে ডায়লগ খেতে পর, তাই ঠিক dustbin এ ফেলে এবার ঢুকে পর স্ট্র্যান্ড এ। গঙ্গার ধারের এক কিলোমিটার বাঁধানো এই স্ট্র্যান্ড একটা কখনো না শেষ হওয়া মিলন মেলা। কলকাতার কফি হাউস এর মতই যেখানে সেখানে পরে থাকা স্মৃতি কুড়োতে কুড়োতে যে কোনো সময় যে কোনো ফাঁকা চেয়ার এ বসে স্মৃতি মন্থন বা চারণ করাই এখানে এক মাত্র কাজ। যৌবনের সৌন্দর্য মাখিয়ে হাজার স্মৃতি বানিয়ে ভবিষ্যতে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করার নাম ঠেক। প্রত্যেক চেয়ার কোনো না কোনো যুবক গোষ্ঠির ঠেক। ভদ্রতা অভদ্রতা মাইল মিশে একাকার। তাই প্রেমিকা নিয়ে কোনো চেয়ার এ বসলেও ভাববেন না যে সেটা সেই সন্ধ্যার জন্য আপনার। ঠিক সমযে এর চারপাশে জমে উঠবে কিশোর আর তরুনের ভিড়। তাদের নিরব প্রতিক্ষা ধীরে ধীরে কটাক্ষে পরিবর্তিত হার আগেই চেয়ার ছেড়ে চলে যান স্ট্র্যান্ড এর ঠিক মাঝ খানে যেখানে সিঁড়ি নেমে গেছে গঙ্গায়। বেছে নিন একটা ধাপ আর একটা দিক। শুধু ভুলে যাবেন না এক ঠোঙ্গা সেদ্ধ ছোলার মিক্সচার নিয়ে যেতে। কারণ এই ছোটো ছোটো মোড়ার ওপরে ছোলা আর মটর সেদ্ধ নিয়ে বসা দোকানি রা আজকাল আর ঘুরে বেড়ায় না। এর পাশেই সময়ে সময়ে পেয়ে যাবে ঘুগনির ঠেলা, বা ভুট্টা পোড়ানো। 

স্ট্র্যান্ড এর দুই কোণে  দুই দোকানের কথা বলব , দুটোই হয়ত স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় নয়। কিন্তু তাদের প্রয়োজনীয়তা যৌবনের জন্য অপরিসীম। একটি ধুম্রপানের  দোকান আর একটি একাকিত্বে যৌবন পানের দোকান। ধুম্রপান নিয়ে কিছু পসিটিভ কথা লিখলেই লোকে এখন তেড়ে আসে। অবশ্যয়ী তেড়ে আসার মতই ক্ষতিকারক কিন্তু মধ্যবিত্ত বঙ্গসমাজে সমাজে কৈশোর পর্যন্ত দুটি জিনিসকে বলা হয় , "বড়রা করে।" একটি ধুম্রপান আর একটি প্রেম। তাই বিড়ি না খেলে , হবে না বড় ছেলে। 

আমার হাতেখড়ি হয়েছিল বাংলাদেশী Goodleaf সিগারেট দিয়ে। ৫০ পয়সায় কিং সাইজ। সে যে কি অখাদ্য ছিল সে আর বলে লাভ নেই। কিন্তু ধীরে ধীরে যখন স্বাদ আর পয়সার মিল্বন্ধনে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলো বিড়ি, চারমিনার, ফ্লেক, ক্যাপস্টান , গোল্ড ফ্লেক এবং পরবর্তীকালে পাউচ তখন ভরসা ছিল এই দোকানটাই। SDO বিল্ডিং এর সামনে এই ছোট্ট দোকান টা ছিল সবার জন্য। সিগারেটের সবথেকে বেশি ভ্যারাইটি ছিল এখানে। পরে আরেকটি দোকান খুঁজে পেয়েছিলাম লক্ষীগঞ্জ বাজারে। কিন্তু উইলস ইনসিগ্নিয়া, নেপালি কাঁচি সিগারেট, চুরুট এবং পারুল বিড়ি এখানেই প্রথম পেয়েছিলাম। পাউচ এর তো প্রচুর ধরন ছিল। আমরা আবিষ্কার করেছিলাম মিনারের  পাউচ যা মনে হয় এখন আর চলেনা। আর সেটা পাওয়া যেত শুধু এই দোকানটিতে। তাই যখনি নতুন কিছু সিগারেটের ধরন টেস্ট করতে চান। চলে যান এখানে। 

দিতীয় দোকানটি স্ট্র্যান্ড এর অপর দিকে , রবীন্দ্রনাথ এর পাতাল বাড়ি আর ভাষা শহীদ স্মারকের ঠিক বিপরীতে রাসোই রেস্টুরান্ট। এর বৈশিষ্ট ছিল একান্ততা। ছোটো ছোটো পর্দাঢাকা কেবিনে কিশোর কিশোরী , তরুণ তরুণীর নিঃশব্দ একাকিত্ব এই দোকানটির খাদ্যমূল্য যথেষ্ট বাড়িয়ে তুলেছিল। স্ট্র্যান্ড এর মত খোলা জায়গায় হাতে হাত দিলেই লোকে ক্যামেরা তাক করে। তার থেকে কিছুক্ষণের নিস্তার ছিল এই শান্ত একান্ত পরিবেশ। এখানে যেন যা খেতাম তাই ভালো লাগত। তবে আমাদের প্রিয় ছিল মিক্স ফ্রাইড রাইস এন্ড চিলি চিকেন। দিদির বানানো চিলি চিকেনের পরই একে রাখব। যদি উচ্চাগ্র  স্বাদ আপনার ইচ্ছা হয় তাহলে এই চিলি চিকেন আপনার জন্য নয়। হালকা স্বাদের ফুরফুরে মেজাজ এই চিলি চিকেনের। তাই সত্যি যদি একটা চিচ্কেনের পিস কে অর্ধেক করে কেটে একটু ফ্রাইড রাইস এ মেখে প্রেমিকার মুখের দিকে এগিয়ে দিতে চান বা খেতে চান তার হাত থেকে , চন্দন্নগরে এর থেকে ভালো জায়গা পাবেন না। বাগবাজারের মোড়ে আরো একটা কেবিন দেওয়া রেস্টুরান্ট ছিল। কিন্তু মোড়ের ভিড়ে মন মেরে যায়। তার থেকে গঙ্গার ধারে উত্তেজনা বাড়িয়ে সঠিক খাদ্যে উদরপূর্তির জন্য রসই একদম appropriate ডেস্টিনেশন। 

অনেক হলো সুরসুরি। বেরিয়ে এসো বাছা। প্রেমিকাকে বগলে নিয়ে হাঁটতে থাকো  দ এর ধারের দিকে। অরবিন্দ স্কুল এর নিচেই একটা মিস্তির দোকান আছে। এখানে দাড়িয়ে সকাল ৯ টার মধ্যে গরম টেপা কচুরি খাওয়ার কথা ভুলোনা। টেপা কচুরি অনেকেই ভালোবাসে , আমার কিন্তু অখাদ্য লাগে। মানে লাগত, যত দিন না এই দোকানের গরম টেপা কচুরি খেয়েছি। মুচমুচে গোল গোল কচুরি যখন মাঝ খান থেকে ভেঙ্গে ভেতরের গরম ধোয়া ওঠা পুর এ জিভ লাগাবে তখন ভুলে যাবে গান্গুরাম বা হলদিরামের বিখ্যাত টেপা কচুরির কথা। 

এবার একটু লম্বা পথ তাই রিক্সাই চেপে বলুন ভজহরির দোকান। দেখবেন রিক্সা ওয়ালাও জিভ চেটে  নেবে। এ দোকানে যে যায়নি সে চন্দননগরে থাকে না, বা থাকলেও বেরসিক বা পেটরোগা বা নিতান্তই খাদুক মহলে অচল বা বলা যেতে পারে জীবনের তেত্রিশ আনাই মাটি। ভজহরির চপ এক আলাদা মাত্র আলাদা ঐতিহ্য নিয়ে হাটখোলার মুখ উজ্জল করে রেখেছে। ভজহরি মনে হয় মারা গেছে কিন্তু তার চপ চন্দননগরের ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। দোকানের পেছনেই ভজহরির দোতলা বিশাল বাড়ি, যার অর্থ যোগান দেয় ওই ছোট্ট দোকান। ব্যাটার টা এক হলেও ম্যাটার কিন্তু অনেক। বেগুনি, ভেজিটেবল , পটল, চিংড়ি, পিয়াজি ডট  ডট ডট। শেষ করা যাবে না। কারণ মরসুমী ফসলের সমস্ত কিছু দিয়েই চপ বানাতে পারে ভজহরি। দুখের বিষয় অতিরিক্ত হাইজিন এখন লোকেদের স্বাদ থেকে দুরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। তাই ঠোঙ্গায় করে করা করে ভাজা আলুর চপ আর মুড়ি লোকেদের আর পোষায় না। একবার যদি হাইজিন ছেড়ে একটা চপ ভেঙ্গে মুখে ফেলে দেন তাহলে আর ফিরে তাকাতে হবে না। দেখবেন ওখানেই বাড়ির প্লট খুঁজছেন। 

একটা কুমড়ো ফুলের চপ( খুব রেয়ার ) হাতে নিয়ে এগোতে থাকুন। ডান  হাতেই পরবে  মৃত্যুঞ্জয়ের আরেকটি শাখা। মৃত্যুঞ্জয়ের সমস্ত শাখার মিষ্টি আর দই এর যোগান এক জায়গা থেকে হয়। কিন্তু সিঙ্গারা আর ভাজাভুজি আলাদা আলাদা। এই দোকানটির সেরা ছিল সিঙ্গারা আর জিলিপি। সিঙ্গারার দাম সবথেকে বেশি ছিল চন্দননগরে কিন্তু এই সিঙ্গারার এক ঝাল মিষ্টি স্বাদ ছিল যা আমি আজ কোথাও পাইনি। সামোসা হয়ত অনেক জায়গায় অনেক ভালো খেয়েছি যেমন কলকাতার তিওয়ারির গ্রেনেডের সাইজের সামোসা। কিন্তু বাঙালি সিঙ্গারাই মৃত্যুঞ্জয় এখনো এক নম্বরে। বিশ্বাস না হয় খেয়ে আসুন। 

এখান থেকে বেরিয়ে এসে সোজা চলে আসুন জ্যোতির মোড়। মাঝে কিছু নেই। জ্যোতির মোড় থেকে বাঁ দিকে একটু হাঁটলেই পর্বে মডার্ন টি হাউস। চা তো অনেকেই বিক্রি করে কিন্তু  মডার্ন টি হাউস এর মত চা পেতে আপনাকে প্রচুর পয়সা ঢালতে হবে। ভদ্রলোকের ডায়লগ ছিল, "ব্লেন্ডিং টা ইম্পর্টান্ট। অতিরিক্ত দামী চা এর এক মুঠো চা এর সাথে খাজা চা এক বস্তা মেশালে তবে আসে মধ্যম স্বাদ। যা পকেট আর মন একসাথে ঠান্ডা করে।" সেই অসাধারণ ব্লেন্ডিং মডার্ন টি হাউস কে এখনো আমার কাছে এখনও এক নম্বর করে রেখেছে। ইটা শুধু আমার কথা নয় আমি মুম্বাই এবং আমেরিকা তেও সেই চা নিয়ে গেছি যা সকলের কাছে প্রচুর জনপ্রিয় হয়েছে। আমেরিকায় Teavana বলে একটা চায়ের দোকানে গোল্ডেন monkey বলে একটা চায়ে ঠিক সেই স্বাদ পাই কিন্তু তার দাম অনেক। তাই সস্তায় অসাধারণ চা খেতে চলে যান মডার্ন টি হাউস আর হা ফেরার সময় হাতে করে এক কিলো নিয়ে আসতে ভুলবেন না। 

মডার্ন টি হাউস এর পরেই একটা ঘুমটি , সেটা বাদ দিয়ে তার পরের দোকান k C Das এর মিস্তির দোকান। এই দোকান টা ছোটো বেলা থেকেই আমার কাছে অন্য একটা আকর্ষণ নিয়ে আস্ত। কারণ এর মিষ্টি গুলোর স্বাদে বাঙালিয়ানা কম ছিল। আর এই ভিন্নতাই এর বৈশিষ্ট। যদিও আমি কোনো মিস্টিকেই আমি উত্কৃষ্ট বলব না। তবে লস্যি আর কুলফি তে এর জুরি মেলা ভার। যারা ব্যারাকপুর স্টেশনে লস্যি খেয়ে ভাবেন সেরা খেয়েছি, বা অমৃতসরের লস্যি খেয়ে ভাবেন স্রষ্টা রাই শ্রেষ্ট তাহলে আমায় বলতে হয় একটা অতিরিক্ত পাতলা আর একটা অতিরিক্ত ঘন। কিন্তু  k C Das হলো পরিমিত। আর কুলফির স্বাদ হয়ত অনেক মারওয়ারী দোকানে অনেক ভালো পাওয়া যেতে পারে কিন্তু এই দোকানের প্লেট এ যে কুলফির decoration  থাকতো এবং সেই decorationএর নিজস্ব যে স্বাদ তা অনবদ্য। এই দোকানের আরও একটি ভালো জিনিস ছিল টক দই। অন্যান্য দোকানে হয় অতিরিক্ত টক নয় টক মিষ্টি দই পাওয়া যেত। এর টক দই আমার মতে চন্দননগরে সেরা। বাড়িতে লস্যি বানাতে চাইলে অন্য দোকান থেকে টক দই কিনে পয়সা নষ্ট করার কোনো মানে হয়না। 

লস্যি খেয়ে পেছনে ফিরে কিছুটা হেঁটে মানকুন্ডু স্টেশন রোড ধরে দু চারপা হাঁটতেই দান হাতে পাবে একটা ছোট্ট ঘুমটি। এখান থেকে ডিমের ডেভিল খেতে ভুল না। সেরা সেই ডিমের ডেভিলের স্বাদ নিতে নিতে আরেকটু হাঁটতেই ডানহাতে পরবে  একটা ছোট্ট মুদিখানার ঘুমটি। যারা নদিয়া বা বর্ধমানের traditional  মুদিখানা দেখেছে তারা এই দোকানটার মূল্য বুঝতে পারবে। এই দোকানে একটা জিনিস পাবে যা ধীরে ধীরে বাঙালি খাদ্য তালিকা থেকে প্রায় উঠে গেছে। যেটুকু আছে তার মান গেছে কমে। নলেন গুড়ের মুড়কি। মুড়কি আজকাল লোকে খায় না। কিন্তু যারা খায় তারা সাধারণ দোকান থেকে খেলে এখন নাক কুঁচকে লিস্ট থেকে বাদ দিয়ে দেয়। তাই তাদের উদ্দেশ্যে এই দোকানের খোঁজ দিলাম। এর স্বাদ আর গন্ধ অসাধারণ , শুধু উপাদানটা  মরশুমী। 

এক ঠোঙ্গা মুড়কি নিয়ে চেপে বসুন অটো তে। নামুন আমাদের শেষ ডেস্টিনেশন রথের সড়ক। অটো  থেকে নেমে রাস্তা পেরোতেই পাবেন এক পুরনো ধাঁচের মিষ্টির দোকান। সামনেই গনগনে আগুনের ওপর বসানো আছে করাই। তাতেই দিবারাত্র তৈরী হছে বিভিন্ন মিষ্টি। এই দৃশ্য আজকাল বিরল। তাই কিছুক্ষণ দেখুন, ভালো লাগবে। এই দোকানটির স্বাদ আপনাকে সারা দিন নিতে হবে। কোনো নাম নেই। advertise  একদম ই নেই। ফেমাস হওয়ার ইচ্ছাও নেই। কিন্তু দুই ভাই এর হাতের জাদু খেতে সকাল সন্ধ্যে বেশ কিছু মানুষ লাইন দেয় , কিন্তু কেউ গিয়ে বলে না কথাও যে কি অসাধারণ ডালের বড়া খেলাম। যাইহোক এই দোকানে সকালে নিমকি খাবেন, দুপুরে সন্দেশ (কড়া পাক হওয়ার  আগে ... গরম গরম) , সন্ধ্যেতে মটর ডালের বড়া আর রাতে গরম রসগোল্লা।  এই চারটে জিনিস বাদে শুকনো বোঁদে আর গরম দরবেশের স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে।  

অনেক তো হলো, এক চক্কর তো ঘুরিযে আনলাম চন্দননগরের। কিন্তু সূর্য মোদকের কথা না বললে তো কিছুই শেষ হয় না। কারণ কলকাতার প্রায় সমসাময়িক এই শহরের প্রাচিনতায় এক ঐতিহাসিক পূর্ণতা এনেছিলেন সূর্য মোদক এক শত বছর আগে। মিষ্ঠান্ন প্রিয় বাঙালি সম্প্রদায়ে প্রথম আধুনিকত্ব দেখিয়েছিলেন করাপাকের সন্দেশের মাঝে নরম রস ভরে। বানিয়েছিলেন চন্দননগরের একমাত্র একান্ত আপন মিষ্টি জলভরা। ব্যক্তিগত ভাবে আমি খুব একটা উত্কৃষ্ট মিষ্টির মধ্যে এটাকে ফেলবনা। এর কারণ আমার করা পাকের মিষ্টি বিশেষ জমে না। কিন্তু আবিস্কারের আধুনিক মনস্কতায় যেকোনো মিষ্টিকে দুরে সরিয়ে রাখতে পারে জলভরা। বারাসতে সূর্য্য মোদকের আদি দোকানে এই মিষ্টির প্রথম ছাঁচটা  আজ আছে। পারলে একবার চোখ দিয়ে ইতিহাস ছুঁয়ে আসবেন। 


অনেকের মতের সাথে আমার হয় না মিল । 
স্বাদের সাথেও তাই। 
কিন্তু আমার শহরের খাদ্যপ্রীতির জুরি নেই ভাই। 
সারা বঙ্গ , সঙ্গ করে হরেক খাবার থরে থরে। 
ভাবতে গেলেই এখন হঠাত মনটি কেমন করে।
আমার হয়ে সাঁটিয়ে খেও , বারে বারে এস ফিরে, 
সাজানো এই ছোট্ট শহর গঙ্গা নদীর তীরে।  
স্মৃতির পাতা উল্টে যখন উঠলো ঢেকুর টক, 
তখন কলম থামিয়ে ঘুমোতে যাওয়াই উচিত -- থামিয়ে বক বক।  

Wednesday, July 17, 2013

খাই খাই চন্দননগর -- Part 1

সময়টা বেশ তারাতারি গড়াচ্ছে। আমিও গড়িয়ে চলছি সময়ের সাথে সাথে। সব কিছু ধীরে ধীরে পাল্টে যাচ্ছে। পেটে লাঠি মারলেও এক কালে দু কথা ইংলিশ বেরোত না। আজ পেটের তাগিদেই সেই পেট থেকেই বেরিয়ে আসছে অতিরিক্ত "র" সমন্নিত বিদেশী বুলি। প্লিট দেওয়া টেরিকট ছেড়ে জিন্স এ দিব্যি জমিয়ে নিয়েছি নিজেকে। মফঃসল এর ছেলের ভয় ভয় চোখে কলকাতার বড় রাস্তা পেরোনোর ভীতি দুরে সরিয়ে দিব্যি এক্সেলারেটরে দিচ্ছি চাপ, পেরিয়ে যাচ্ছি সয়ে সয়ে মাইল। শুধু একটা জিনিস কিছুতেই পাল্টাচ্ছে না -- স্বাদ।

চন্দননগর বলতে লোকে বোঝে জগদ্ধাত্রী, কানাই লাল, ফরাসী আর স্ট্র্যান্ড। কিন্তু কথাও কখনো শুনিনি চন্দননগর খাওয়ার দাওয়ারে ফেমাস। কিছু লোকে চেষ্টা করেছে জলভরার পেটেন্ট টাকে ভিড়ের মধ্যে থেকে উঁচু করে ধরতে। কিন্তু ভায়া, চন্দননগর শুধু জলভরা তেই শেষ নয়। কড়া পাকের বন্ধনীতে নরম ভেজা ভেজা স্বাদ অবশ্যই অতুলনীয় কিন্তু সেই কড়া পাকের বেষ্টনীতে ঝাল ঝাল আলুর পুরে তেতুল-লেবুর জলের ছোয়ায় বেনারসী যা জাদু চালায় তা কি ভোলা যায়। চালায় না চালাত আমার কাছে খবর নেই। তবে ঢেকুর তুললে এখনো সেই স্বাদ এসে যায়।

এখানে বলে রাখা ভালো। আমার এই লেখার বিষয়বস্তু সেই সময়ের , যখন সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে চুটিয়ে প্রেম করছি। প্রেমের পান্তুয়ায় ফুটপাথের গোলাপ জল মাইল মিশে একেবারে গুলাব জামুন। এখন যদিও CCD বা ম্যাকডোনাল্ড না হলে নাকি প্রেমিকার কাছে মান থাকে না। আমার মফস্সলীয় প্রেম খালি পকেটের দিকে বিশেষ তাকাত না। তাই আমাদের ফুটপাথই সম্বল ছিল। ভুড়িটা তখনও গর্ভে। তাই পৌষ্টিক মূল্যের থেকে খাদ্যমূল্য বিচার করাটাই তখন প্রাথমিকতা।

সেই সময় আমি একটা লিস্ট বানিয়েছিলাম। কোথায় কোথায় কি কি ভালো খাওয়ার পাওয়া যায়। যদিও কচি বান্ধবীর হাত ধরে বাঁশবনে বাঁশপাতা চেবাতেও ভালো লাগে, তবু আমার জিভ আমার প্রথম প্রেম। তাই এই চতুর্থ ইন্দ্রিয়ের আগে সেবা করে তারপর বাকি ইন্দ্রিয়র দিকে ধ্যান যেত।

সে যা হোক। সে সময় আমার পরিধি ছিল চন্দননগর স্টেশন রোড থেকে মানকুন্ডু স্টেশন রোড এর মাঝের জায়গাটা। জগধাত্রী ঠাকুর দেখার রুট ধরেই শুরু করি আমার খাদ্যভিজান।

চন্দননগর স্টেশনের তিন নম্বর প্লাটফর্ম থেকে লাইন টপকে নিচে নামলে একটা ঘুমটি ছিল অমৃতির। সে অমৃতি এক নম্বর না হলেও আমার খাওয়া সেরা তিন এ সে সব সময় থাকে। তখন একটা মুসো লোক লুঙ্গি বেঁধে কালো করাই তে নিখুত ভাবে প্যাঁচ ছাড়ত আমি সেই প্যাঁচেই কাত। কুরমুরে অমৃতি ভেঙ্গে গড়িযে পরা রস সামলাতে সামলাতে KMDA র দিকে এগিয়ে যেতে নাকে আসতো  করাইসুতির কচুরির গন্ধ। কিন্তু প্যাক করে বাড়ি আনলে তার স্বাদ এক চতুর্থ হয়ে যেত। তাই ওখানেই বসে খাও। সাথে ধুলো।

খাওয়া শেষ হলে স্টেশনটাকে পেরিয়ে ডানহাতে পরত অম্বর এর দোকান। অনেকে বলে বিরয়ানী নাকি অসাধারণ বানায়। হতে পারে। কিন্তু এগ চিকেন রোল যা বানাতো তার তুলনা হয়না। পার্কস্ট্রিট এর কাঠি রোল এই রোলের বেশ কিছু পরে রাখব। বেহালা বাজারের হাজির রোল খাওয়া গর্বিত কলকাতা বাসীর প্রতি একটাই কথা, "ভালো খাবার বানাতে একটু যত্ন লাগে।" এদের লাচ্চার সাথে ডিম ও মুরগি এমন ভাবে মিলে মিশে একাকার হয়ে যেত যে কে আগে  এসেছে তার বিচার করাই ভুলে যেতাম।
গড়িয়ে পরা সস মুছে নিয়ে স্টেশন রোড ধরে আরো কিছুটা এগোতে ডান হাতের ফুটপাতে একটা চপের দোকান ছিল। লোকে ধোকা ভাজা কিনতে যেত। আমার কিন্তু প্রিয় ছিল পিয়াজি। তার প্রস্তুতির ধরন ছিল কিছুটা আলাদা। সাধারণত পিয়াজির মসলা মাখা হয় শুকনো শুকনো করে। যাতে ভাজার পর পিয়াজ গুলো আলাদা আলাদা দেখা যায়।  কিন্তু এর ধরন ছিল প্রথমে ফুলুরির মত করে পিয়াজের বরা ভাজা, আর তারপর সেটা হাতের তালু দিয়ে থেবড়ে আবার ভাজা। ভয়ংকর অসাস্থকর হলেও অসাধারণ খেতে ছিল সেই পিয়াজি।

পিয়াজি হাতে ধরেই রিক্সায় আরো বেশ কিছুক্ষণ গেলেই মোদক সুইটস পরে রাস্তার বা হাতে। বনেদী চন্দননগর তখন দিধাবিভক্ত ছিল - মোদক আর সূর্য মোদক। সূর্য্য মোদকের কথা পরে বলব। তবে মোদকের স্বাদ ছিল অসাধারণ। মোদকের অনেক মিষ্টির নাম অনেকেই করবে তবে সেই সময় আমি শুধু মিহিদানা কিনতাম। বর্ধমানের মিহিদানার পরেই যদি কোনো মিহিদানা কে রাখতে হয় তাহলে আমি মোদক কেই রাখব। তখন কার দোকান দরের মেজাজ ছিল বড় চড়া। তবু ভলো জিনিসের জন্য লোকে লাইন দিত।

আর একটু এগোলেই কালিতলার ঠিক আগেই পরবে রয়াল বিরিয়ানি। সে সময় প্রথম কেউ টক্কর দিয়েছিল অভিনন্দন এর বিরিয়ানি কে। ইটা সম্পূর্ণ আমার মত। এদের চিকেন চাপ আর মটন বিরিয়ানি এক সময় আমাদের বাড়ির অথিতি অপ্পায়নের এক প্রধান উপাদান ছিল। আমিনিয়ার বিরয়ানী যখন প্রথম খেলাম তখন মনে হয়েছিল বড় হালকা , কিন্তু পরে বুঝেছিলাম সেটাই আমিনিয়ার বৈশিষ্ট। এত বছর ধরে একে একে কলকাতার আলু দেওয়া বিরয়ানী, হায়দ্রাবাদের paradise বিরয়ানী, লখনউ হাজী বিরয়ানী, মুম্বাই বিরয়ানী এবং বিদেশে বাংলাদেশী ও তুর্কিশ বিরয়ানী , শেষে সান মসলা দেওয়া বউ এর বিরয়ানী খাবার পর একটা জিনিস মনে হয়েছে যে বিরয়ানী আসলে ভাত আর মাংশ,  যে যেমন পারে বানায়। মসলার সামান্য এদিক ওদিক,  আর বিভিন্ন দোকানের বিরয়ানী বেরিয়ে আসে। তাই যার যেটা ভালো লাগে সেটাই সেরা হয়ে দাড়ায়। আমার কাছে এখনো হ্য্দেরাবাদ এর বিরয়ানী সেরা, কিন্তু দ্বিতীয় সেই রয়াল। যদিও পরে শুনেছি পয়সার লোভে স্বাদ দিয়েছে বিগড়ে। যদিও আমি তখনকার কথা বলছি যখন রয়াল বিরয়ানী একতলা ছিল।

ভুরভুরে জাফরান এর গন্ধ নাকে নিয়ে রাস্তার ওপারে তাকালেই দেখতে পাওয়া যাবে শাহজাদী রেস্তুরেন্ট। রয়াল খোলার আগে এর রমরমা সাংঘাতিক ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে শুকোতে লাগলো। আমি এখানে যেতাম মোগলাই খেতে। মোগলাই এর স্বাদ মোটামুটি সারা বঙ্গেই সমান। এর স্বাদে একটু ভিন্নতা এনে দিয়েছিল একটি অতিরিক্ত ডিম আর চিনেবাদামের গুড়ো। এর আগে আমি স্বপ্না সিনেমা হল এর কাছে এক দোকান থেকে মোগলাই খেতাম ( ক্লাস ওয়ান থেকে) . কোনো এক সন্ধ্যায় আমার দোকান পাল্টে দিল এর স্বাদ।

মোগলাই খেয়ে বেরিয়ে এবার বাগবাজারে ঢুকে কোর্ট মোড়ে পর্বে হালদার সুইটস। চকলেট রসগোল্লা, মালপওয়া আর রাধাবল্লভি এই তিনটি তে চন্দনগরে কেউ ধারে কাছে আসতে পারবে না। নবদ্বীপের চকলেট রসগোল্লা,  পুরীর মালপওয়া (জগন্নাথ এর ব্রেকফাস্ট) আর ভবানীপুর এর রাধাবল্লভী  যদিও প্রথম স্থান অধিকার করে তবু হালদার দ্বিতীয় নম্বরে অনায়াসে ঢুকে পরে।

হালদার ছাড়িয়ে জি টি রোড ধরে সুইট হার্ট আইস ক্রিম এর দোকান। সেসময় আর কোনো কায়দা মারা আইস ক্রিম এর দোকান ছিল না। তাই অগত্যা তাকেই বেস্ট মনে করে ছিলাম। কিন্তু পরে যখন আমেরিকায় কোল্ড স্টোন এর আইস ক্রিম খেলাম। তখন মনে হলো, বেচারারা যদি সত্যি জানত পাই ক্রাস্ট  আর পেকান এর কথা, আর স্ট্রবেরি যদি বঙ্গভূমির গাছে গাছে ফলত তাহলে সে ই হত সেরা। কিন্তু চার কিলোমিটার বাই চার কিলোমিটার শহরে তাদের এই উজ্যোগ ভাবা যায় না। আমি তখন নতুন প্রেম , ফুটপাথ থেকে যখনি চোখ তলার মত পয়সা হাত খরচা থেকে জমিয়ে নিতাম , তখনি দুজনে গিয়ে লম্বা গ্লাস এ স্যুট হার্ট স্পেশাল খেতাম। তখন কিছুই জানতাম না। তাই সবসময় স্পেশাল টাই বেছে নিতাম যাতে টপিং গুলো বলতে হত না। ওরাই বানিয়ে দিত। আর প্রত্যেক বারে নতুন নতুন টেস্ট করা যেত। ব্ল্যাক কারেন্ট ছিল আমার favourite flavour.

সেখান থেকে বেরিয়ে ছবিঘর ধরে ঢোকার আগেই পরবে মৃত্যুঞ্জয় সুইটস। যে সময়ের কথা বলছি তখন এই দোকানটা সদ্য খুলেছে। মৃত্যুঞ্জয় অনেক পুরনো দোকান। আদি দোকান ভদ্রেশ্বর এ। আমরা ভদ্রেশ্বর থেকে চলে আসার পর আমি চার কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে দই আনতে যেতাম সেই দোকান থেকে। বঙ্গের মিষ্টি দই বিশ্ববাসীর কাছে জনপ্রিয়। কিন্ত তারাই একমাত্র আসল মিষ্টি দই এর স্বাদ পাবে যে আসবে মৃত্যুঞ্জয় এ দই খেতে। আমি বহুবার বহুলোকের কাছে এই কথা বলে প্রথমে ঠাট্টার পত্র হয়েছি। পরবর্তীকালে তাদের সেই দই খাইয়ে আমার জিহ্বার হৃতগৌরব পুনরুদ্ধার করেছি। এর যে মোলায়েম স্বাদ এবং মিষ্টতা, তা সত্যি অতুলনীয়। নতুন এই দোকান হওয়ার পর সকালে মারা মারি পরে যেত দই নেওয়ার জন্য। সকাল ৮ টায় গাড়ি আসতো, আর সাড়ে ৮টার  মধ্যে তিরিশ হাঁড়ি দই শেষ। প্রায় ১০০ কিলোর উপর।
দই দিয়ে শুরু করলেও ধীরে ধীরে মৃত্যুঞ্জয় নিজের কৃতিত্ব দেখাতে লাগলো সব মিস্টিতেই। মোদক আর সূর্য্য মোদক থেকে অনেক বনেদী খদ্দের ধীরে ধীরে দোকান বদল করে ফেলল। যে মিষ্টি মৃত্যুঞ্জয় এ তৈরী হয় সেটাই হয়ে দাড়ায় সেরা। এবং শেষ মেষ আমার বিয়েতেও এরাই মিষ্টির যোগান দেয়। যদিও আমার খুঁতখুঁতে স্বাদ কে তৃপ্ত করার মত উল্ল্যেখযোগ্য ছিল রসমাধুরী। এ ছাড়া বিশেষ কিছু আমিএখানে লিখতে চাইনা।

বড় হাঁড়ির ওপর থেকে কেটে ১০০ গ্রাম এর একটা ছোট ভাঁড়ে নিয়ে, ছোটো চামচে ছোট ছোট কামর দিয়ে হাঁটতে থাকুন স্ট্র্যান্ড এর দিকে। দইটা যখন প্রায় শেষ দেখবেন ডান হাতে পরবে বলাই এর দোকান। কথাও কোনো লেখা দেখতে পাবেন না। কারণ রাস্তায় যেকোনো লোক কে ধরে জিগ্গেস করবেন বলাই এর দোকান কোথায় , সবাই দেখিয়ে দেবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দোকানের সামনে দাড়িয়ে ডানদিকে তাকান। রাস্তা পেরিয়ে চোখ যাবে, দাস বেকারীর দিকে, যেখান থেকে দুপুর তিনটের সময় আমি গরম পাউরুটি কিনে নিয়ে যেতাম। কিন্তু আমি সেটার কথা বলছি না। তার পাশেই দেখবেন একটা ভাঙ্গাচোরা  ছোটো স্টল -- পরিত্যক্ত। জানিনা এখন আছে কিনা। কিন্তু ওটাই ছিল বলাই এর আদি দোকান। চরম পরিচ্ছন্নতা আর পরিমিত স্বাদের এক অনবদ্য মিশ্রন হলো বলাই এর ফিস ফ্রাই। ছোটো দোকানে  সান ফ্লাওয়ার তেলে ভাজা ফিস ফ্রাই বঙ্গে বিরল। বলাই এর কবিরাজি (অনেকেই জানেন ইংলিশ Coverage থেকে এই নামের উত্পত্তি), চিকেন কাটলেট এখনো মুখে লেগে আছে। যারা পরিমিত পয়সায় স্বাস্থ্য ও স্বাদ দুটোই এক সাথে পেতে চায় তাদের জন্য অসাধারণ জায়গা। একটা কথা বলে রাখি, স্ট্র্যান্ড এ পাওয়া বাকি সব ফিস ফ্রাই তখন হাঙ্গরের মাংশে হত, বলাই শুধু ছিল ভেটকির। তাই দাম ছিল সবার থেকে বেশি কিন্তু স্বাদ ছিল অসাধারণ।