সেদিন
খেলছিলাম আমার নতুন গাড়ি নিয়ে। এই
গাড়ি না আমার সাংঘাতিক ভালোবাসা। যেখানে
যাই সেখানে গাড়ি দেখলে আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারিনা। ছুটে ছুটে যাই। জড়িয়ে ধরি। আর তারপরেই বেরিয়ে আসে হুইলস ও দা বাস
গোস রাউন্ড এন্ড রাউন্ড। কিন্ত
কথাটা সেটা নয়। কথাটা
সেদিনের। ডে কেয়ার থেকে বাড়ি ফিরে আমি খেলছি আমার গাড়ি নিয়ে। ডে কেয়ারে একটু আগেই আমার নামে
কমপ্লেন ঠুকেছে। আমি
নাকি সব কিছু ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলি আর তাতে নাকি একটা টিচারের গায়ে লেগেছে আর সে
উন্ডেড হয়ে গেছে।
এস
ইউসুয়াল বাবা মা দুজনেই অপমান আমার ওট আর দই কোঁৎ করে গিলে নেবার মতো গিলে নিয়েছে।
আর বাড়ি আসতে আসতে আমার পিন্ডি
চটকেছে। এইখানে আমার একখান কথা আছে। গাড়ি আমি ছুঁড়েছি মানছি। আমার ভালো লাগে এখন জিনিস পত্র ছুঁড়ে
ফেলতে। কেন ছুড়ি তার কারণটা বুঝতে হবে। ‘ইয়া-য়া -য়া ‘ বলে যখন ছুঁড়ি তখন আমার
এক্সপেরিমেন্টাল বোন টিকল হয়। এক্সপেরিমেন্ট মানে কি ? ইমাজিন করো , ভাবো কিছু একটা হবে , করে দেখো, ফেল
করলে অন্য কিছু করো। দ্যাট
ইস এক্সপেরিমেন্ট। সব
সময় দেখি সব কিছু ওপর থেকে নিচে আসে। কিন্তু
নিচ থেকে ওপরে পাঠানোর জন্য আমাকে কি কি করতে হবে সেটা শেখাই উদ্যেশ্য। আমি সব কিছু ছুঁড়ে দেখেছি , যে যা
ছুঁড়বে , সেটা নিচেই ফিরে আসে। কেন
আসে? কি করলে সেটা ওপরে থাকে সেটা মাপতে থাকি। প্রত্যেক বার বেশ কিছুক্ষন জিনিসটা
ওপরে থাকে। যত জোরে
ছুঁড়ি তত বেশিক্ষন ওটা ওপরে থাকে। তাই
প্রত্যেক দিন এই ছোঁড়ার জোর বাড়িয়েই চলি। একদিন
ঠিক দেখবে আমি কিছু একটা ছুঁড়বো, আর সেটা কোনোদিন নিচে নেমে আসবে না। সেদিন আমার এক্সপেরিমেন্ট সাকসেসফুল
হবে।
এখন আবার
দুটো জিনিস দু হাতে ছুঁড়ে ছুঁড়ে দেখছি। দেখলাম
দু জায়গায় গিয়ে পড়লো। কিন্ত
ওতো উঁচুতে উঠলো না। আমি
চালিয়ে যাবো নানা ভাবে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো। ডে কেয়ারে যদি আমি কোনো জিনিস ছুঁড়ে দি
আর সেটা যদি আমার গায়ে এসে লাগে তাহলে আমি তো আমার টিচারের থেকে বেশি উন্ডেড হবো। হবো না কি ? তাহলে বাবা মার কি এটা
বলা উচিত ছিল না যে
উন্ডেড করার মতো জিনিস ডে কেয়ারে রেখেছেন কেন? এই ওল্ড স্পিসিস দের একটাই সমস্যা। এদের ব্রেন এর কেপাবিলিটি কমে যেতে
যেতে এমন হয়েছে , যে এরা ঠিক সময়ে ঠিক ঠাক রিয়াক্ট করতে পারে না। শুধু এর ওর তার
নামে দোষ দিয়ে ব্যাপারটা এভোইড করা ছাড়া আর কিছু হয় না।
সেম
ঘটনাটা বাড়িতে রোজ ঘটতে থাকে। আমরা
থাকি দোতলা তে। কাঠের
বাড়ি তাই আমি একটু লাফালাফি করলে নিচ থেকে কমপ্লেন আসে। আর নিচের লোকগুলোরও
বলিহারি। সব
কিছুতে কমপ্লেন করার কি আছে। তার
থেকে ফোন করে আমাদের বলে দিলেই হয়। আমি
গুড বয়। কিন্তু আমি সব সময় বুঝতে পারিনা এই
বড়দের কি চাই। নিজেরাই
কনফিউসড। আর আমাকে
বলতে আসে।
সেদিন
যখন খেলছি , দরজায় নক পড়লো। দরজায়
নক পড়লেই আমি উত্তেজিত হয়ে উঠি। এমনিতে
তো কেউ আসে না। একটু
আসলে খুশিই হই। এই
খুশির চোটে আমি গিয়ে আগে দরজা খুলতে যাই। কিন্তু
খুলতে পারিনা। আমি
দরজার লক খুলতে শিখে গেছি অনেকদিন। একদিন
বেরিয়ে গেছিলাম যখন মা বাথরুমে। বেরিয়ে
গেছি কিন্তু ঢুকতে পারিনা। ভয়ে
সিঁটিয়ে গেছিলাম। ভাগ্যিস
বাবা তখনিই ঢুকেছিলো। সে কি ঝাড় দিয়েছিলো মা কে। তার পর থেকে আমার হাতের নাগালের বাইরে
আরেকটা লক লাগিয়ে দিয়েছে।
দরজায়
একটা ফুটো আছে। সেটা
দিয়ে বাইরে দেখা যায়। মা
দেখে বললো দুজন দাঁড়িয়ে আছে। একটা
ছেলে একটা মেয়ে। বাবা
বললো , ‘ নাও আবার মনে হয় নিচ থেকে ছেলের অন্য কমপ্লেন এসেছে। ‘ আগে থেকেই
স্পেকুলেশান। আমি তো
হাঁ। কি করলাম আমি। কিছুতেই মনে পড়ছে না কাল পরশু আমি
কিছু করেছিলাম কিনা। ভাবতে
ভাবতে দেখি বাবা দরজা খুলছে। আমি
বাবার পায়ে পায়ে গিয়ে দাঁড়াতে , ওরা বললো ওরা নিচেই থাকে। আমি ভাবলাম হয়ে গেলো।
বাবা
আগেই বলতে আরম্ভ করে দিলো , ‘ আই এম রিয়ালি সরি এবাউট দা নয়েস।’ আমি ততক্ষনে বাইরে
বেরিয়ে ওদের সাথে আলাপ জমানোর চেষ্টা করছি। বাবা
বলে চলেছে , ‘ হি ইস রিয়ালি নটি। আই এম সরি। রিয়ালি
সরি.’ লোকটা তখন বাবাকে থামিয়ে বললো, ‘নো , নো , দিস ইস নট ফর হিম। দিস ইস ফর দা অ্যাশ ইউ থ্রো ফ্রম দা
ব্যালকনি।’ বাবা মা কে জিজ্ঞেস করলো , ‘ আধ্যান কি এখন ছাইও ছুঁড়ছে নাকি বাইরে। ছাই কোথা থেকে পেলো। ‘ মহিলাটি বললো ,
‘নো নো , দ্যাটস দা সিগারেট অ্যাশ। ইউ নিড পুট ইট ইন ইওর অ্যাশ ট্রে। প্লিস ডোন্ট ক্লিয়ার ইট ফ্রম ইওর
প্যাটিও।’ লেঃ। বাবার
মুখ চুন। আমি
হিরো। সব কিছুতে দোষ ধরা তো। বাবা সিগারেট খেয়ে ছাই ঝেড়েছে সেটা গিয়ে
ওদের ব্যালকনি তে ঢুকেছে। আর
সেই নিয়ে বলতে এসেছে।
বাবা তার
কাজের জন্য দু চারবার সরি টরি চেয়ে আবার শুরু করলো , ‘আই উইল টেক কেয়ার অফ দা
অ্যাশ। ইফ ইউ হ্যাভ এনি আদার প্রব্লেম
রিগার্ডিং নয়েস প্লিস কল মি বিফোর কমপ্লেইনিং টু দা সোসাইটি।’ ওরা বার বার বলে
চললো , ‘উই হ্যাভ লিটিল কিড
টু। উই আন্ডারস্ট্যান্ড। ইউ নিড টু কন্ট্রোল ইওর অ্যাশ অনলি।
দ্যাটস অল।’ আমি তখন ঘরের মধ্যে ঢুকে গেছি। মুখে
মিচকি মিচকি হাসছি। হেব্বি
লেগেছে।
দরজা
বন্ধ হতেই মা শুরু হয়ে গেলো। কি
ঝাড় না ঝাড়লো মা, বাবাকে। বাবা
, যে এতক্ষন সব দোষ আমার ঘাড়ে চাপিয়ে বেঁচে যাওয়ার চেষ্টা করছিলো, সে ভিজে ন্যাতার
মতো পরে থাকলো। হু
হু বাবা। এতদিন বলেছি সিগারেট ভালো জিনিস না। মা
এতো চ্যাঁচানোর পরেও সিগারেট খাও। তোমার
সিগারেট খাওয়ার জন্য আমাকে এটিকেট থাকতে হয় আমার প্লে এরিয়া তে। তার পরেও এসব করো। লোকে বাড়ি বয়ে এসে অপমান করছে। ছি ছি। হেব্বি মনোলোগ দেওয়ার ইচ্ছায় ছিলাম। কয়েক বছর পর দেব। আপাতত জেনে রাখুক যে সব দোষ আমার নয়। আর আমার দোষ ও তোমাদের দোষ কারণ আমিও আমার নয় , তোমাদের।
No comments:
Post a Comment